কম্পিউটার ভাইরাস কি | কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

কম্পিউটার ভাইরাস কি - কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় - কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ — কম্পিউটার ভাইরাস কি আপনি কি সেই সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই ভাইরাসের নাম শুনেছেন। কম্পিউটার ভাইরাস এই নামটি ইন্টারনেটের জগতে একটি অতি পরিচিত নাম এর সাথে এটি একটি খুবই ভীতিকর নাম। কারণ এটি আপনার কম্পিউটার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অর্থাৎ, যদি এটি একবার কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে, তবে এটি সিস্টেমটিকে নষ্ট করতে পারে এবং আপনার সিস্টেমে থাকা ডেটা গুলোকে ধ্বংস করতে পারে।

কম্পিউটার ভাইরাস কি

ভাইরাসগুলো যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় এবং এগুলো আমাদের শরীরে নানা রোগ ছড়ায়, ঠিক তেমনি এই কম্পিউটার ভাইরাসগুলো কম্পিউটার সিস্টেমেও অনেক ক্ষতি করে। অতএব, সমস্ত কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানা থাকা ভালো।

অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে কিছু জানেন, কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং কম্পিউটার ভাইরাস কি করে। এছাড়াও আরো অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটার ভাইরাসের নাম শুনেছেন কিন্তু আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস কি করতে পারে তা তারা জানেন না। 

তাই আজ এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের বলতে যাচ্ছি কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং কিভাবে ভাইরাস ডিলিট করা যায়, কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়, কম্পিউটার ভাইরাস কি করতে পারে? কম্পিউটার ভাইরাসের ধরন কি কি? কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ, Computer ভাইরাস এড়ানোর ব্যবস্থা কি? আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

পেজ সূচীপত্রঃ

কম্পিউটার ভাইরাস কি

VIRUS শব্দটির পূর্ণরুপ হচ্ছে Vital Information Resources Under Siege. কম্পিউটার ভাইরাস হল একটি ছোট সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা আপনার কম্পিউটারের অপারেশন এবং কম্পিউটারের ডেটা ধ্বংস বা ক্ষতি করার জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে। আমাদের মনের অজান্তেই কম্পিউটার ভাইরাস সিস্টেমকে এমনভাবে নষ্ট করতে পারে যে আমাদের পক্ষে এটি ঠিক করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার চলে শুধুমাত্র অনেক সফটওয়্যার প্রোগ্রামের মাধ্যমে, কোন প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার কাজ করতে পারে না।

কম্পিউটার সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সফটওয়্যার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয় আবার কম্পিউটারের কাজ নষ্ট করার জন্য কিছু প্রোগ্রামও তৈরি করা হয় যাকে মূলত কম্পিউটার ভাইরাস বলা হয়। কম্পিউটার মানুষ আবিষ্কার করেছে চালানোর জন্য তার প্রোগ্রাম তৈরি করেছে এবং আমি বলেছি ভাইরাসও একটি ছোট প্রোগ্রাম, এটিও মানুষ তৈরি করেছে। 

কম্পিউটার ভাইরাস প্রাকৃতিক নয়, এটি নিজের দ্বারা তৈরি নয়, এটি প্রোগ্রামারদের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয় যাতে তারা অন্য কম্পিউটারগুলিকে নষ্ট করতে পারে। অথবা আমরা এটাও বলতে পারি যে ভাইরাস আসলে কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা উৎপাদনশীল না হয়ে ধ্বংসাত্মক। এর মূল উদ্দেশ্য সাহায্য প্রদানের পরিবর্তে ক্ষতি সাধন করা।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার কারন | কম্পিউটার স্লো হওয়ার কারন

কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস

কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে গোটা বিশ্বের সকল কম্পিউটার ইউজারের প্রধান মাথা ব্যথার কারণ। যদি আপনাকে বলা করা হয় যে, এই কম্পিউটার ভাইরাসের জন্ম কোথায়? কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস এসেছে? তাহলে কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুলে বসতে হবে। কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য এতো ঝামেলাতে না গিয়ে চলুন সহজেই জেনে নেয়া যাক কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাস।

রবার্ট থমাস , তিনিই প্রথম প্রকৌশলী যিনি বিবিএন টেকনোলজিসে কাজ করার সময় 1971 সালে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেছিলেন। এই প্রথম ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছিল "ক্রিপার ভাইরাস" এবং এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম যা টমাস জি নিজে ডিজাইন করেছিলেন আরপানেটের মেইনফ্রেমগুলিকে সংক্রামিত করার জন্য।

সম্পূর্ণ কম্পিউটার ভাইরাসের ইতিহাসে প্রথম ট্র্যাক করা আসল বন্য কম্পিউটার ভাইরাসটি ছিল " এলক ক্লোনার"। এই এলক ক্লোনার এর আগে ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে Apple II অপারেটিং সিস্টেমকে সংক্রামিত করেছিল। এই ভাইরাসটি 1982 সালে রিচার্ড স্ক্রেন্টা দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, যিনি সেই সময়ে একজন কিশোর ছিলেন।

এই ক্ষতিকারক প্রোগ্রামগুলির নাম "কম্পিউটার ভাইরাস" প্রথম ব্যক্তি ছিলেন ফ্রেড কোহেন, যিনি 1983 সালে এটির নামকরণ করেছিলেন। এই নামটি সামনে এসেছিল যখন তিনি "Computer Viruses - Theory and Experiments" শিরোনামের একটি একাডেমিক পেপারে এই প্রোগ্রামগুলির নামকরণ করেছিলেন যেখানে তিনি এই ক্ষতিকারক প্রোগ্রামগুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য লিখেছেন যেমন এটি কীভাবে কাজ করে, এটি কী করতে পারে ইত্যাদি।

১৯৪৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জনভন নিউম্যান সর্বপ্রথম কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে কথা বলেন। কোন একটি প্রোগ্রামের সেইম নকল প্রোগ্রাম হিসাবে তার অনুমানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে এটাই কম্পিউটার ভাইরাস হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। প্রথম দিকে বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর গবেষণাগারে কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি ও কম্পিউটার ভাইরাসের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কাজ চলতো।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর গবেষণাগার ব্যতীত তৈরি হওয়া প্রথম যে কম্পিউটার ভাইরাসটি বিভিন্ন কম্পিউটারের মাঝে বিস্তার লাভ করে সেটার নির্মাতা হলেন এলক ক্লোনার ও এই কম্পিউটার ভাইরাসের প্রোগ্রামিং করেন রিচার্ড স্কেন্টা এবং তিনি ছিলেন সেই সময়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন স্কুল শিক্ষার্থী।

সেই সময়কার কম্পিউটার ভাইরাসগুলো ফ্লপি ডিস্কগুলোর সাহায্য কম্পিউটারে প্রবেশ করতো। যার কারণে কম্পিউটার ভাইরাসগুলো নিরাপত্তায় খুবই বেশি প্রভাব ফেলতে পারতো না। ইন্টারনেটের সাহায্য ১৯৯০ সালের শুরুতে কম্পিউটার ভাইরাস বিস্তার শুরু করলেও সবথেকে বড় আক্রমণটি হয়েছিলো ১৯৯৯ সালে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক ডেভিড এল স্মিথ এই কম্পিউটার ভাইরাসটি ডিজাইন করেন। ‘মেলিসা’ নামক এই ভাইরাসটি ই-মেইলের সাহায্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তো। এই প্রক্রিয়াতে ই-মেইলের সঙ্গে একটি ওয়ার্ড ফাইল অ্যাড করে দেওয়া হতো, যে ফাইল ওপেন করার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার ইউজার তার সিস্টেমে ভাইরাস দারা আক্রান্ত হতো। 

এছাড়া এই কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত ইউজারের কাছ থেকে তার ই-মেইলে থাকা আরও পঞ্চাশ জনের কাছে অটোমেটিক্যালি মেলিসা ভাইরাস অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে যেতো। যার কারণে মেলিসা ভাইরাসের ফলে অসংখ্য ইমেইল একাউন্ট বন্ধ করার জন্য বাধ্য হোন কম্পিউটার ইউজাররা।

মেলিসা নামক ভাইরসের পরে আসে 'ওয়ার্ম' এর আক্রমণ। ওয়ার্ম ভাইরাস নিজ থেকেই সকল কম্পিউটারে বিস্তার লাভ করতে সক্ষম যেটা অন্য কোনো কম্পিউটার ভাইরাসের পক্ষে সম্ভবপর নয়। মে মাস ২০০০ সালের দিকে লাভ-বাগ নামের একটি 'ওয়ার্ম' গোটা বিশ্বে বিস্তার লাভ করে। ওয়ার্মে আই লাভ ইউ লেখা একটি চিঠি যুক্ত থাকতো, যে ফাইল ওপেন করলেই কম্পিউটার 'ওয়ার্ম' আক্রমণের শিকার হতো। 

এরপর ২০০৭ সালের দিকে শুরু হয় ট্রোজান হর্স ভাইরাষের আক্রমণ। এটি হচ্ছে এক ধরনের ম্যালওয়্যার। ম্যালওয়্যার বলতে মূলত ক্ষতিকারক সকল ধরনের সফটওয়্যারকে বলা হয়ে থাকে। ম্যালওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত আছে ভাইরাস, স্পাইওয়্যার, ট্রোজান হর্স, ওয়ার্ম, ইত্যাদি। সবশেষ ও বর্তমানে আমরা যে কম্পিউটার ভাইরাসের নাম শুনছি সেটা হচ্ছে "র‌্যানস্যামওয়্যার"।

আরও পড়ুনঃ পুরাতন কম্পিউটার কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার

বন্ধুরা, আমি আশা করি এখন আপনি বুঝতে পেরেছেন কম্পিউটার ভাইরাস কি? কিন্তু কম্পিউটারের ভালো পারফরমেন্স এবং নিরাপত্তার জন্য আপনাকে জানতে হবে কম্পিউটার ভাইরাসের ধরন কি এবং সেগুলো আপনার কম্পিউটারে কিভাবে প্রবেশ করে? এবং এই ভাইরাসগুলি আপনার কম্পিউটারে কতটা এবং কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? তাহলে আসুন বিস্তারিতভাবে জানা যাক কত ধরনের Computer ভাইরাস আছে? কম্পিউটার ভাইরাস অনেক ধরনের আছে, তার মধ্যে কিছু প্রধান ভাইরাসের তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ

১। বুট সেক্টর ভাইরাস (Boot Sector Virus) ২। ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস (File Infector Virus) ৩। মাইক্রো ভাইরাস (Micro Virus) ৪। ট্রোজান – Trojans ৫। ম্যালাওয়্যার – Malware ৬। স্পাইওয়্যার – Spyware ৭। ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস (Browser Hijacker Virus) ৮। রেসিডেন্ট বা বাসিন্দা ভাইরাস (Resident Virus) ৯। পার্টিশন টেবিল ভাইরাস (Partition Table Virus) ১০। সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাস (Direct Action Virus)

আরো পড়ুনঃ technical bangla blog site

কম্পিউটার ভাইরাস মূলত কত প্রকার এবং কম্পিউটার ভাইরাস কি কি?

এমনিতে ভাইরাস এর প্রকারভেদ অনেক। কিন্তু, কিছু বিশেষ ধরনেক computer virus রয়েছে যেগুলি ৯০% লোকেদের কম্পিউটারে গিয়ে ক্ষতি সাধন করে। সেগুলি হলো –

১. Worms – এই ভাইরাস গুলিকে self -replicating বলা হয়। মানে, এগুলি আপনার সিস্টেমে কন্টিনিউ প্রবেশ করতে থাকে এবং আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পরে। এগুলি নিজেদের কোড এমন ভাবে বদলে নেয় যে, এগুলিকে খুঁজে বের করা অনেক কঠিন।

২. Trojans – এই ধরণের ভাইরাস বেশিভাগ হ্যাকার (hacker) রা ছড়ায় এবং ব্যবহার করে। এদের দ্বারা, হ্যাকাররা আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক দ্বারা প্রবেশ করে তাতে থাকা পার্সোনাল এবং লুকায়িত তথ্য চুরি করে নিতে পারে।

৩. Browser Hijackers – এই ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস আপনার সিস্টেমে “ডাউনলোড” এর মাধ্যমে ঢুকে যেতে পারে। মানে, যখন আপনি কোনো ফাইল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেন, তখন এই ভাইরাস গুলি সেই ফাইলের সাথে “plugin” বা “extension” হিসেবে আপনার কম্পিউটারে ঢুকে যায়। আর, তারপর সেই virus গুলি আপনার web page বা ইন্টারনেট ব্রাউজারে অনেক রকমের ক্ষতিকারক বিজ্ঞাপন দেখায়, popup বিজ্ঞাপন দেখায়, আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য ওয়েবসাইট খুলে যায়।

৪. Overwrite Viruses – এই ভাইরাস গুলি আপনার কম্পিউটারে ঢুকে, সিস্টেম ফাইল বা যেকোনো ফাইল ডিলিট করে দিতে পারে এবং ফাইল ডিলিট করে এগুলি নিজের মতো সেই ফাইল গুলি এডিট করে আপনার সিস্টেমে ক্ষতি সাধন করে।

৫. Malware – এই ধরণের সিস্টেম ভাইরাস বানানো হয় আপনার কম্পিউটারকে damaged (ক্ষতিগ্রস্থ) করার জন্য বানানো এবং ছড়ানো হয়। এগুলি বেশিরভাগ অন্য কম্পিউটার থেকে ফাইল কপি করার সময় এবং infected usb device ব্যবহার করার সময় আপনার সিস্টেমে ছড়ায়।

৬. Spyware – spyware virus গুলির ব্যবহার করে, আপনার কম্পিউটার এবং ব্রাউজার ব্যবহারের ওপরে নজর রাখা হয়। এগুলি বেশিরভাগ ইন্টারনেট থেকে আপনার সিস্টেমে ঢুকতে পারে।

তাহলে, ওপরে আমি কিছু সাধারণ এবং সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কম্পিউটারের কিছু ভাইরাসের নাম বললাম। এগুলি সবচে বেশি, ইন্টারনেট এবং অন্যদের থেকে ফাইল কপি পেস্ট করার সময় আপনার কম্পিউটারে আসতে পারে।

৭. Adware virus – এইগুলি আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করার সময় ঢুকে। এর বাইরেও, কিছু নিরাপত্তাহীন ওয়েবসাইটে গেলে নিজের থেকেই এমন কিছু ফাইল popup এর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে যায় যেগুলিতে এই adware ভাইরাস গুলো থাকে। এই ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে ঢুকে নিজে নিজে বিজ্ঞাপনের ওপর বিজ্ঞাপন দেখাতে থাকে যেগুলি আপনি কোনো মতেই বন্ধ করতে পারবেননা।

৮। সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাস (Direct Action Virus) - সরাসরি অ্যাকশন ভাইরাসকে অনাবাসিক ভাইরাসও বলা হয়। এই ভাইরাসটি সাধারণত এক্সটেনশান (যেমন- Com, EXE ইত্যাদি) দিয়ে ফাইলগুলিকে বেশি সংক্রমিত করে। একবার এই ভাইরাসটি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করলে, এটি আপনার কম্পিউটারের মেমরিতে লুকিয়ে থাকে।

এই ভাইরাসের বিশেষ বিষয় হল এই ভাইরাসগুলো তাদের উপর ক্লিক করে খোলা না পর্যন্ত এরা কার্যকরী হয় না। এই ভাইরাস একটি নির্দিষ্ট ধরনের ফাইলের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ভাইরাস আপনার সিস্টেমের পাশাপাশি আপনার ফাইলেরও ক্ষতি করতে পারে। যাইহোক, এটি স্বস্তির বিষয় যে এই ভাইরাসটি খুব বিপজ্জনক নয়, এটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামের সাহায্যেও রিমুভ করা যায় এবং এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা এবং সিস্টেম পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করে না।

৯। রেসিডেন্ট ভাইরাস (Resident Virus) - রেসিডেন্ট ভাইরাস হলো এমন একটি ভাইরাস যা কম্পিউটারের RAM মেমোরিতে নিজেকে সংরক্ষিত রেখে সংক্রমণ কাজ পরিচালনা করে। কখনও কখনও এই ভাইরাসগুলি অ্যান্টিভাইরাসের সাথে যুক্ত হয়। বিভিন্ন ধরণের রেসিডেন্ট ভাইরাস রয়েছে এবং তারা বিভিন্ন উপায়ে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে কিছু ভাইরাস খুব দ্রুত কাজ করে এবং কিছু কিছু অনেক ধীরে কাজ করে থাকে।

রেসিডেন্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কম্পিউটার সিস্টেমেও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে কোন ডেটা অপারেট, শাট ডাউন এবং কপি-পেস্টে সমস্যা হয়। এই রেসিডেন্ট ভাইরাস চিনতে পারাটাও একটু কঠিন কাজ। 

কম্পিউটার ভাইরাস কি করতে পারে - কি কি ক্ষতি ভাইরাসের দ্বারা হতে পারে

কম্পিউটার ভাইরাস কম্পিউটারে উপস্থিত ডেটা নষ্ট বা মুছে ফেলতে পারে। কম্পিউটার ভাইরাস আপনার হার্ড ডিস্কে সংরক্ষিত ডেটা সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারে। কম্পিউটার ভাইরাস ই-মেইল সংযুক্তির মাধ্যমে অন্য কম্পিউটারে গিয়ে তাদের কম্পিউটার নষ্ট করে। ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়। এটা আপনার ফাইল এবং প্রোগ্রাম ধ্বংস করে দিতে পারে।

৬০% লোকেদের কম্পিউটারে এই ক্ষতিকারক ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা থাকে এবং তারা সেটা বুঝতেই পারেনা। কারণ, অনেক রকমের ভাইরাস আছে যেগুলি আপনার কম্পিউটারে বিশেষ রকমের ক্ষতি করতে পারেনা। সাধারণ ভাবে, জোর করে বিজ্ঞাপন দেখানো adware ভাইরাস গুলির কাজ। এই ভাইরাস কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালু করলে তার কাজ শুরু করে। তাই, ইন্টারনেট চালু না করলে আপনার এই ভাইরাস থাকার কোনো অনুভব হবেনা।

এর বাইরে, কিছু এমন malware, overwrite, Trojan বা worms ভাইরাস আছে যেগুলি আপনার সিস্টেমে ঢুকে বিভিন্ন program files ড্যামেজ (damage) করতে পারে, কিছু ফাইলস (files) ডিলিট করতে পারে বা নতুন ক্ষতকারক ফাইল বানাতে পারে। সাধারণে কম্পিউটার স্লো করা, ইন্টারনেটের ব্যবহার না করতে পারা, সিস্টেম হ্যাং করা, system crashing এবং freezing করা, সফটওয়্যার এবং hardware পার্টস খারাপ করা, কম্পিউটার বার বার রিস্টার্ট করা আদি একটি কম্পিউটার ভিরাসের মূল ক্ষতিকারক কাজ।

এর বাইরে, spyware ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে ঢুকে, আপনার পার্সোনাল ফাইল, ডাটা, পাসওয়ার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্টের ডিটেলস এবং মিডিয়া চুরি করেনিতে পারে। Spyware virus সবথেকে বেশি ক্ষতিকারক, কারণ এরা আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের ওপর পুরো নজর রাখে।

কম্পিউটার ভাইরাস আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে উপস্থিত ডেটা, ফাইল, ফোল্ডার, ডকুমেন্ট মুছে বা নষ্ট করতে পারে। একটি কম্পিউটার ভাইরাস আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত ডেটাও মুছে দিতে পারে। ইমেইলের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়

কম্পিউটারে ভাইরাস কিভাবে ঢুকে?

আপনার কম্পিউটার বা সিস্টেমে অনেক সহজে কিছু মূল কারণে ভাইরাস ঢুকে যেতে পারে। সেগুলি হলোঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে – যদি আপনি কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে অনলাইন অনেক সংক্রমিত ওয়েবসাইটের থেকে আপনার computer এ ভাইরাস ঢুকতে পারে। ৭০% লোকেদের কম্পিউটারে অ্যাডওয়্যার এবং malware, spyware ভাইরাস ইন্টারনেট থেকেই সিস্টেমে এসে পড়ে। এছাড়াও আপনি যদি অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার, সিনেমা, গান ইত্যাদি ডাউনলোড করেন তবে আপনার কম্পিউটারও সংক্রামিত হতে পারে।

(USB) ইউ এস বি ডিভাইস থেকে – আমরা অনেক সময় অনেক রকমের USB device যেমন, pen drive, অন্য mobile থেকে, hard disk থেকে অনেক রকমের ফাইল নিজের কম্পিউটারে কপি করে রাখি। এবং এই ফাইল গুলি কপি করার সময় আমাদের কম্পিউটারে অন্যদের কম্পিউটার থেকে ভাইরাস অনেক সহজে ঢুকে যায় এবং আমরা বুঝতেও পারিনা। 

আপনার কম্পিউটার এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে, আপনি আপনার কম্পিউটার চালু করার সময় এই ভাইরাস আপনার অপারেশন সিস্টেম লোড হতে বাধা প্রদান করে। আর অপারেটিং সিস্টেম লোড না হওয়ার কারনে আপনার কম্পিউটারটি ওপেন হয়না। এই ভাইরাসটি কম্পিউটার থেকে অপসারণ করা অত্যন্ত কঠিন। সিস্টেম থেকে এই ভাইরাস রিমুভ করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিস্টেমকে ফরম্যাট করতে হয়।

Email attachment থেকে – আমাদের মেইল আইডিতে প্রতিদিন অনেক রকমের ইমেইল আসে। এবং এই আশা ইমেইল গুলিতে ফাইল এটাচমেন্ট (attachment) এর মাধ্যমে ভাইরাস ঢুকতে পারে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য ইমেলকে মাধ্যম হিসেবে ব্য্যবহার করে এবং পিসিকে সংক্রমণ করে। এই ধরনের ম্যালওয়্যার ইমেইল সংযুক্তি গুলিতে লুকানো থাকে এবং যত তাড়াতাড়ি আপনি সংযুক্তিটি ডাউনলোড বা খুলতে সক্ষম হন এটি ছড়িয়ে পড়ে।

ম্যাক্রো ভাইরাস - একটি ম্যাক্রো ভাইরাস সাধারণত মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফ্ট আউটলুক, পাওয়ার পয়েন্ট, স্প্রেডশীটের এবং অনুরূপ অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ভাইরাসটিকে ডকুমেন্ট বা ইমেইলে এমবেড করা হয়। এবং আপনি যদি কোনোক্রমে ফাইলটি খোলেন, তাহলেই ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং অন্যান্য ফাইল এবং ফোল্ডারে ছড়িয়ে যেতে পারে।

যখনই আপনি আপনার সিস্টেমে মাইক্রো ভাইরাস সংক্রমিত সফটওয়্যারটি খুলবেন, তখন এই মাইক্রো ভাইরাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার কাজ শুরু করে। যার কারণে আপানার কম্পিউটারে উপস্থিত থাকা অন্যান্য সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনগুলিও প্রভাবিত হয়। এই ভাইরাসটি সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ছড়ায়। অতএব, এই ভাইরাসটি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমকেও সংক্রামিত করতে পারে (উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাকওএস, আইওএস ইত্যাদি)।

একটি ডিভাইসকে অন্য ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমেও ভাইরাস প্রবেশ করে। আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের অনুপস্থিতি। পাইরেটেড বা ক্র্যাক করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা। ব্লুটুথ এর মাধ্যমে ফাইল ট্রান্সফার করলে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। অজানা বা প্রতারণামূলক ইমেইলে সংযুক্ত থাকা লিঙ্ক ওপেন করলে।

আরও পড়ুনঃ ফার্মওয়্যার কি | ফার্মওয়্যার কাকে বলে | ফার্মওয়্যার কোথায় সংরক্ষিত থাকে

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ - কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকলে কিভাবে বুঝবেন

আপনি সহজেই কম্পিউটার ভাইরাস সংক্রমণ লক্ষণ সনাক্ত করতে পারেন। একটি প্রধান ইঙ্গিত আপনার পিসি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। আরেকটি লক্ষণ আপনার বিদ্যমান ফায়ারওয়াল সুরক্ষা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। আপনার পিসির রানিং অ্যাপ্লিকেশনগুলো ঘন ঘন ক্র্যাশ করতে পারে। অন্যান্য এলার্ট যেমন হার্ড ড্রাইভ malfunction, এরর মেসেজ এবং অন্যান্য পপ আপ হতে পারে।

অনেক সময় এরকম হয়, সিস্টেমে ভাইরাস ধুকে থাকে কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা দেয়না। লক্ষণ, আলাদা আলাদা ভাইরাসের আলাদা আলাদা হতে পারে। সেটা নির্ভর করে তার কাজের ওপরে এবং তাকে কিসের জন্য বানানো হয়েছে সেটার ওপরে। উদাহরণ স্বরূপ, যদি, আপনার কম্পিউটারে নিজে নিজেই বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে, ব্রাউসারে pop-up পেজ খুলছে, automatically অন্য অন্য ওয়েবপেজ বা ওয়েবসাইট খুলে যাচ্ছে, তাহলে সম্ভব এটাই যে আপনার কম্পিউটারে “Adware virus” রয়েছে।

অনেক সময়, আপনার সিস্টেমের ভেতরে ভাইরাস চুপ করে বসে থাকে এবং আস্তে আস্তে সিস্টেম বা প্রোগ্রাম ফাইল গুলি এডিট করে তাতে নিজের কোড বসিয়ে দেয়। যেমন, self -replicating ভাইরাস। এক্ষেত্রে, আপনি তাদের ধরতে পারবেননা কিন্তু কিছু সাধারণ অসুবিধা যেমন, কম্পিউটার নিজেই রিস্টার্ট হওয়া, অত্যাধিক হ্যাং হওয়া, (error) মেসেজ আশা আদি আপনার সন্দেহের কারণ হতে পারে।

এর বাইরেও, ইন্টারনেট স্লো চলা। কম্পিউটার অসাধারণ ভাবে কাজ করা। হটাৎ এক জায়গায় হ্যাং হয়ে যাওয়া। (Sudden freeze and crash). নিজে নিজে এপ্লিকেশন (application) চালু বা বন্দ হয়ে যাওয়া। সিস্টেম এরর দেখানো। হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার (hardware বা software) প্রব্লেম পাওয়া। এই ধরণের অসুবিধা বা জিনিস আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে পাচ্ছেন, তাহলে এগুলি কম্পিউটারে ভাইরাসের লক্ষণ হতে পারে।

আর, এগুলি সত্যি virus এর লক্ষন কি না তা জানার জন্য, আপনি একটি কাজ করতে পারেন। আপনি, কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে, স্ক্যান করে দেখতে পারেন। যদি ভাইরাস থাকে তাহলে সে স্ক্যানের মাধ্যমে ধরা পরবে।

আরও পড়ুনঃ android ফোনের জন্য এন্টিভাইরাস | এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর নাম

কম্পিউটার সিস্টেমে ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ কি

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য কম্পিউটারের ভাল কর্মক্ষমতা এবং সুরক্ষার জন্য কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষণ সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই লক্ষণ থেকে আপনি তাৎক্ষণাত বুঝতে পারবেন যে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তাই আসুন আমরা আজকে আপনাকে এমন কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করিঃ

১। আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের কর্মক্ষমতা হঠাত কমে যাওয়া ২। যেকোন ফাইল অথবা ফোল্ডার অটোমেটিক মুছে যাওয়া ৩। ইন্টারনেটের গতি ধীর ৪। আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের ডিসপ্লেতে অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপন দেখানো ৫। নতুন ফোল্ডার বা প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারে ইনস্টল হয়ে যায় ৬। অপ্রয়োজনীয় ইমেইলের আগমন ৭। ব্রাউজার ব্যবহার করার সময় আপনার স্ক্রিনে ত্রুটি বার্তা বা সতর্কতা বার্তা প্রদর্শিত হবে ৮। কিছু ফাইল নিজে থেকে, প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়া ৯। যদি আপনার ডিভাইস হ্যাং হয়ে যায়, এর মানে হল যে আপনার কম্পিউটার সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে।

তাই বন্ধুরা, যদি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে এরকম কিছু ঘটে থাকে, তাহলে বুঝে নিন আপনার কম্পিউটার সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। এবং এটি থেকে আপনার কম্পিউটার সিস্টেমকে রক্ষা করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ভাইরাসগুলি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমের ডেটা মুছে বা ধ্বংস করতে পারে।

যদি আপনার সিস্টেমে এই ধরনের সতর্কবার্তা দেখানো হয় তবে আপনার জানা উচিত যে আপনার সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। তাই শীঘ্রই একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডাউনলোড করে স্ক্যান করুন।

আরও পড়ুনঃ এন্টিভাইরাস এর সুবিধা ও অসুবিধা

কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

আমাদের কম্পিউটার virus দ্বারা আক্রান্ত হলে কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার বার বার হ্যাং হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়। যার কারনে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। আর এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আপনাকে জানাব ভাইরাস থেকে বাঁচার কিছু উপায় সম্পর্কে। আমাদের বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পারবেন বলে আশা করছি। আপনি আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে একটি খুব ভাল অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত এটি আপডেট করতে থাকেন।

একটি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারে অবশ্যই ব্যবহার করবেন। Avast, Kaspersky এন্টিভাইরাস আপনি ফ্রীতেই পেয়ে যাবেন। এন্টিভাইরাস, আপনার কম্পিউটারে বাইরের থেকে ভাইরাস ঢুকতে দিবেনা। যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে internet security antivirus ব্যবহার করবেন। নিজের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলি up to date করে রাখবেন।

আপনি যদি বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে আপনি প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাসও ব্যবহার করতে পারেন। বিনামূল্যের সফটওয়্যারের পরিবর্তে একটি প্রিমিয়াম অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করুন কারণ ফ্রি সফটওয়্যারটি 100% সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম নাও হতে পারে।

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে। অতএব, বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইট নিরাপদ নয় (http) সেগুলো ব্যবহার থেকে। যে সাইট গুলো জনপ্রিয় এবং নিবন্ধিত নয়, সেই সকল ওয়েবসাইট ভিজিট না করাই সবচেয়ে ভালো হবে। খারাপ ওয়েবসাইট (প-র্ণ) থেকে দূরে থাকুন। আপনি যদি চান যে ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ না করুক, তাহলে আপনার কম্পিউটারে কখনোই প-র্ণ ওয়েবসাইট ওপেন করবেন না। কারণ প-র্ন ওয়েবসাইট গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভাইরাস থাকে।

পেনড্রাইভ, ফোন, ডিস্ক বা যে কোন এক্সটারনাল ডিভাইস পিসিতে ব্যবহার করার আগে তা অবশ্যই স্ক্যান করুন। আপনার কম্পিউটার সিস্টেমকে নির্দিষ্ট সময় পরে পরে অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করতে থাকুন। যদি আপনার কোন ইমেইল প্রেরক সম্পর্কে কোন তথ্য না থাকে, তাহলে এই মেইল খুলবেন না। বিশেষ করে মেইলে থাকা কোন লিঙ্কে ক্লিক করবে না। অননুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে কিছু ডাউনলোড করবেন না। যেমন- কোন মুভি, এমপি থ্রি বা সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি। ডাউনলোড করা জিনিসটি সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিন। কারণ এগুলোর মধ্যে ভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি।

যে বিজ্ঞাপনগুলি আপনাকে এখানে ক্লিক করতে এবং লটারি জিততে প্রলুব্ধ করে, তারপরে কখনই এই ধরনের অ্যাডগুলিতে ক্লিক করুন। একই ধরনের লোভ আমাদের কাছে ই-মেইলেও আসে, তাই সেই মেইলটি কখনই খুলবেন না কারণ এতে ম্যালওয়ার থাকার সম্ভাবনা বেশি।

আরও পড়ুনঃ ২০২১ সালের সেরা ৫টি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার | এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডাউনলোড

কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস মোকাবেলা করবেন?

উপরের আলোচনার পরে আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারে যে কোন ভাবে প্রবেশ করে, তাহলে আমরা কিভাবে এটিকে মোকাবেলা করব, কিভাবে আমরা এটি কম্পিউটার থেকে বের করতে অথবা রিমুভ করতে পারি। তাই আসুন আমরা আপনাকে কিছু উপায় বলি যার মাধ্যমে আপনি আপনার এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে ভাইরাস রিমুভ করতে নিচের স্টেপগুলো অনুসরণ করুন –

ধাপ 1: একটি নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন

যদি আপনার কম্পিউটারে ইতিমধ্যেই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করা থাকে এবং এটি থাকা অবস্থায় আপনার পিসি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি যে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছিলেন তা ভালো অ্যান্টিভাইরাস নয়। আপনাকে একটি ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে।

ধাপ 2: অ্যান্টিভাইরাসের মাধ্যমে ফুল সিস্টেম স্ক্যান করুন

প্রথমে আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ওপেন করুন এবং স্ক্যান শুরু করতে স্ক্যান বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ 3: ম্যালওয়্যার রিমুভ করুন

স্ক্যান করার পরে, আপনি ফলাফল দেখতে পাবেন যেখানে বলা হয়েছে যে কম্পিউটারে কতগুলি ভাইরাস আছে। যদি আপনার পিসিতে ভাইরাস থাকে, তাহলে তার পরে অপসারণ করার জন্য ডিলিট বা রিমুভ অপশন দেখতে পাবেন। এরপর ডিলিট বা রিমুভ বোতামে ক্লিক করে, আপনি আপনার কম্পিউটার সিস্টেম থেকে অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা সনাক্ত করা ভাইরাস গুলোকে সরিয়ে ফেলতে পারবেন।

ধাপ 4: ভবিষ্যতে সংক্রমণ প্রতিরোধ করুন

ভবিষ্যতে কম্পিউটারে যেন ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য, আপনার স্ক্যানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারন করে রাখা উচিত যাতে আপনার কম্পিউটার সপ্তাহে এক বা দুইবার অটো স্ক্যান হয়, এভাবে আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে আরও বেশী সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি | কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার

কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

তো চলুন এখন আমরা আপনাকে কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম বলি যা খুবই বিপজ্জনক।

১। এসকিউএল স্ল্যামার – SQL Slammer ২। নিমডা – Nimda ৩। ব্লাস্টার – Blaster ৪। কোড রেড – Code Red ৫। আই লাভ ইউ – ILOVEYOU ৬। দ্যা মরিস ওয়ার্ম – The Morris Worm ৭। ক্রিপার – Creeper ৮। মরিস ওয়ার্ম – Morris Worm ৯। মাইডুম – Mydoom ১০। স্টাক্সনেট – Stuxnet ১১। ক্রিপ্টলকার – CryptoLocker ১২। স্যাসার অ্যান্ড নেটস্কি – Sasser & Netsky ১৩। অ্যানা কুর্নিকোভা – Anna Kournikova.

আমি এখানে যে সকল ভাইরাসের নাম উল্লেখ করেছি সেগুলো সবই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভাইরাস, এগুলো ছাড়াও বর্তমানে অনেক কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে এবং প্রতিদিন নতুন নতুন ভাইরাস আবিস্কার হচ্ছে।

আমাদের শেষ কথা

আমি আশা করি আপনি অবশ্যই আমার আর্টিকেলটি পছন্দ করেছেন কম্পিউটার ভাইরাস কি। আপনাদের ভাইরাসের ধরন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য আমার সর্বদা প্রচেষ্টা ছিল, যাতে তাদের সেই আর্টিকেলের প্রেক্ষাপটে অন্য কোনও সাইট বা ইন্টারনেট অনুসন্ধান করতে না হয়। এতে আপনাদের সময়ও বাঁচবে এবং তারা সব তথ্য এক জায়গায় পেয়ে যাবেন। 

বন্ধুরা, কম্পিউটার ভাইরাস কি বা কাকে বলে হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন। এবং, শেষে আমি আপনাদের এতটুকু বলবো যে, আপনার কম্পিউটারে যদি অনেক পার্সোনাল ডাটা বা ফাইল থাকে, তাহলে অবশ্যই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে। নিজের সিস্টেমে অবশ্যই একটি antivirus software ব্যবহার করবেন। অন্যদের থেকে ফাইল কপি করার আগে দেখে নিবেন সেই ডিভাইসটি সুরক্ষিত কি না।

ইন্টারনেটের ব্যবহার যদি করেন তাহলে অবশ্যই মনে রাখবেন, যেকোনো সাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করবেন না। কেবল, বিশ্বাসী সাইটে যাবেন এবং তাদের থেকে ডাউনলোড করবেন। ইন্টারনেট, ভাইরাসের মূল জায়গা এবং এইগুলির থেকে বেঁচে থাকা আপনার অনেক প্রয়োজন। সাধারণ জিনিসের ধ্যান রাখুন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন, এতে আপনি সুরক্ষিত থাকবেন এবং আপনার কম্পিউটার ও সুরক্ষিত থাকবে।

আপনার যদি এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকে বা আপনি চান যে এটিতে কিছু উন্নতি করা উচিত, তবে আপনি এটির জন্য কম মন্তব্য লিখতে পারেন। আপনি যদি কম্পিউটার ভাইরাস কি এই পোস্টটি পছন্দ করেন বা কিছু শিখতে পারেন, তাহলে অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি ফেসবুক, টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতে শেয়ার করুন৷

আরও পড়ুনঃ এপ্লিকেশন সফটওয়্যার কি? এপ্লিকেশন সফটওয়্যার কত প্রকার

পোষ্ট ক্যাটাগরি: