গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা — যদি আপনি গর্ভবতী মা হোন তবে আমাদের আজকের এই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা আর্টিকেলটি আপনার জন্যে। প্রত্যেকটি শিশুর জন্য মা হচ্ছেন ‍একটি বটবৃক্ষের ন্যায় আশ্রয়স্থল। মায়ের স্নেহ, ভালোবাসায় শিশুটি পৃথিবীতে বেড়ে ওঠে। তবে হ্যাঁ একজন মা যখন সন্তান গর্ভধারণ করেন, তখন মায়ের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার দরকার হয়।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

পেজ সূচীপত্রঃ

সুস্থ থাকার জন্যে সব সময়ই সুষম খাবার খাওয়া দরকার। কিন্তু গর্ভাবস্থার জন্য এই সুষম খাবার আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশি চর্বীযুক্ত খাবার যেমন শিশুর ও মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি আবার পুষ্টিহীনতায়ও আছে স্বাস্থের জন্য সমান ঝুঁকি। গর্ভের শিশুটি যেন প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ খাবার পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। মাতৃত্ব অনুভব করা অনেক বেশি আনন্দদায়ক। 

কিন্তু তার সাথে এই সময়টা একজন মায়ের জন্য অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক। প্রায় ১০ মাস গর্ভে সন্তান ধারণ করে চলা তো সহজ বিষয় নয়। তাই পরিবারে নতুন সদস্যের সুস্থভাবে আগমনের জন্যে একজন গর্ভবতী মায়ের সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করাটা অতীব জরুরি। অনেকেই আছেন যারা তাদের নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারনাই রাখেন না, জানা থাকেনা কি কি করলে সন্তানের ভালো কিংবা খারাপ হতে পারে। 

তাই গর্ভধারণের এই প্রথম পর্যায়টি অনেকের জন্যেই ক্ষতিকর হতে পারে, যদি সঠিক যত্ন না হয়। তাই প্রতিটি মাকে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছেঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কিংবা গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা কিভাবে করবেন সেই সম্পর্কে?

আরো পড়ুনঃ আ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা - গর্ভবতী মায়ের প্রথম মাসের খাবার তালিকা

সুস্থ এবং স্বাভাবিক শিশু জন্মদানের জন্যে প্রধান শর্ত হলো গর্ভবতী মায়ের সঠিক পরিচর্যা নেওয়া। গর্ভধারনের প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মায়ের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকে। যার কারণে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যায়, বমি বমি ভাব হয়, কিছু ক্ষেত্রে আবার ওজন হ্রাস পাওয়া এবং রক্ত শূণ্যতার মতো সমস্যা দেখা যায়। তাই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা তে রাখতে হবে সুষম এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার।

অনেকেই আছেন যারা বলেন গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি খাওয়া দরকার। কিন্তু হ্যাঁ এই কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নাই। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার আপনার ওজন বৃদ্ধি করে। পরে সেজন্য অনেক ক্ষতি হয় মা ও শিশুর। তাই গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের খাবার পরিমাণ মতো গ্রহণে সচেষ্ট হোন। গর্ভবর্তী অবস্থায় বেশি খাবার নয় বরং এসময়ে পরিমাণ মতো খাওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ যতটুকু খাবার আপনার জন্যে যথেষ্ট, ততটুকু খাবার গ্রহণ করা দরকার।

যখন আপনি মা হতে যাচ্ছেন, তখন আপনার খাবার সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করছে কি-না, সেটা নিশ্চিত করে নিতে হবে। তাই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা জানা আপনার জন্য অতীব জরুরী। কেননা, গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে যেসকল পরিবর্তনগুলো হয় সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য তার শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন আছে।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম মাসে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা দরকার এবং খাবার তালিকায় কি কি খাবার যুক্ত রাখা প্রয়োজন তার একটা নমুনা ও খাবার গুলোর গুণাগুণ নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভধারণের প্রথম মাসে যে সকল খাবারগুলো খাদ্য তালিকাতে রাখবেনঃ যখনি আপনি প্রেগনেন্সি পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক পাবেন সেসময় গর্ভধারণের ২ সপ্তাহের অধিক সময় পার করবেন। 

তাই যদি আপনি গর্ভবতী মা হতে চান তবে আপনাকে দ্রুত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া শুরু করে দিতে হবে। এছাড়া আপনাকে জাঙ্ক ফুড, তামাক কিংবা অ্যালকোহল ও ড্রাগস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভধারণের প্রথম মাসের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফল এবং সবজি জাতীয় খাবার রাখা প্রয়োজন। সুস্থ গর্ভধারণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা যে খাবারগুলো রাখা দরকার এমন সকল খাবারের তালিকা নিম্নে দেয়া হলোঃ

আরো পড়ুনঃ স্বপ্ন নিয়ে উক্তি

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোর মধ্যে হচ্ছে একটি। গর্ভবতী মায়ের এই প্রথম তিন মাসে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। এই সময়ে শিশুর অন্য সময়ের থেকে দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি হয়। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত একটি হার্টবিট শোনা যায় ও ১২ সপ্তাহের শেষে শিশুর হাড়, পেশী ও দেহের সমস্ত অঙ্গ গঠিত হয়। তাই এই সময়টিকে সঠিক পন্থা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা গুলো কি কিঃ

১। ফল

সাধারণত ফলের মধ্যে থাকে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই ফলমূল গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশের জন্যে কার্যকরী খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা তে যেসব ফলগুলো খাবার তালিকায় রাখতে পারেনঃ কলা, ডালিম, তরমুজ, আভোকাডো, পেয়ারা, কমলালেবু, আপেল, মিষ্টিআলু জাতীয় ফল ইত্যাদি।

২। শাঁকসবজি

শাকসবজি সমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও পুষ্টির ঘাটতির মতো জটিলতা এড়াতে সহায়তা করে। কেননা শাঁকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফাইবার ব্যতীত আরো আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি এবং ফলিক অ্যাসিডের মতো পুষ্টি। শাকসবজি খাওয়ার কারণে শিশুর স্বাস্থ্যকর জন্মগত ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে, রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমিয়ে দিবে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে এবং মায়ের স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি করে। গর্ভাবস্থায় টমেটো, মটরশুঁটি, ব্রকলি, মিষ্টিআলু, গাঢ় সবুজ শাঁকসবজি, ধনেপাতা ইত্যাদি খাওয়া জরুরি।

আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি - আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

৩। রঙিন সবজি

গর্ভধারনকালে প্রচুর পরিমাণে রঙিন সবজি খাওয়া প্রয়োজন। ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি রঙিন সবজি থেকে পাওয়া যায়। রঙিন সবজিগুলোর মধ্যে খাদ্য তালিকাতে রাখতে পারেন যেসকল সেগুলো হলোঃ পালং শাক, গাজর, কুমড়ো, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, সজনে ডাটা, ভুট্রা, বেগুন ইত্যাদি।

৪। গোটা শস্যদানা

গোটা শস্যদানা খাবার গুলো হচ্ছেঃ বার্লি, ডালিয়া, বাজরা, মিরেট, বাদামী চাল, পাস্তা, ওটামিল ইত্যাদি। এই সকল খাবারের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, ডায়েট যোগ্য ফাইবার, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়ামের মতো খনিজের স্বাস্থ্যকর উৎস। এই সকল খাবার গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ও শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করে থাকে।

৫। স্টার্চ জাতীয় খাবার

লাল আটার রুটি, আলু, লাল চালের ভাত, পাস্তা ইত্যাদি এই খাবারগুলো হচ্ছে স্টার্চ সমৃদ্ধ। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় এই সকল খাবারগুলোকে রাখতে হবে।চাইলে আপনি পাস্তা, লাল আটার রুটি, আলু এগুলো সকালের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। লাল চালের ভাতের সঙ্গে বেশি পরিমাণে সবজি নিয়ে খেলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়

৬। ফোলেট জাতীয় খাবার

ফোলেট জাতীয় খাবার বলতে বুঝানো হয় যেসকল খাবারে ফোলিক অ্যাসিডের সম্পূরক থাকে। ফোলিক অ্যাসিড বাচ্চার স্নায়ূতন্ত্রের যথাযথ বিকাশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং ফোলিক অ্যাসিড মেরুদন্ডের কোষে বিকশিত হয়ে থাকে। ফোলেট খাবার গুলো হচ্ছে গাঢ় সবুজ শাক- সবজি। 

ফোলেট জাতীয় খাবার যেমনঃ বাঁধাকপি, পালংশাক, শতমূলী, মুসুর ডাল, বীনস, লেবুবর্গীয় ফল, আভোকাডো, মটরশুটি, ভেন্ডি বা ঢ্যাঁড়শ ও ছোঁটো বাধাকপি ইত্যাদি। [বিঃদ্র] অ্যাভোকাডোতে উচ্চ পরিমাণে মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, পটাসিয়াম, ফাইবার থাকে যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৭। দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার

দুগ্ধজাত খাবার যেমনঃ দই, দুধ এবং শক্ত চীজ কিংবা পনির ইত্যাদি। এই সকল খাবারে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফোলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় প্রথম মাসের খাবারের মধ্যে দই, দুধ এবং শক্ত চীজ বা পনির জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

আরো পড়ুনঃ ২০২২ সালের রমজানের সময় সূচি

৮। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ করার জন্য রঙিন শাকসবজি এবং ফলমূল বেশি বেশি খেতে বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের রঙিন সবজি যদি একসঙ্গে মিক্স করে খেতে পারেন তবে এটি থেকে ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। এগুলো খাওয়ার পাশাপাশি রঙিন ফলমূল খেতে হবে। 

এছাড়াও কলিজাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন-এ। তবে হ্যাঁ প্রেগনেন্সির সময় কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকার কারণে এটি খাওয়াতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। কেননা ভিটামিন-এ এর পরিমাণ বেশি হলে সেটা প্রেগনেন্সিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

৯। ডিম ও হাঁস-মুরগির মাংস

গর্ভধারণের প্রথম মাসে ডিম এবং হাঁস-মুরগির গোস্ত পরিমাণ মতো খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভধারণের প্রথম মাস ব্যাতীত পরবর্তী খাদ্য তালিকাতে এগুলো অন্তভুক্ত রাখা প্রয়োজন। ডিম থেকে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি-২, বি-৫, বি-১২, ডি, ই, ও ভিটামনি-কে এবং ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজগুলো পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে ডিম এবং হাঁস-মুরগির মাংস খাওয়ার কারণে শিশুর ভ্রূণের সুস্থ বিকাশকে নিশ্চিত করবে।

আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

১০। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

দুধ, দই, পনির ইত্যাদি খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর দাঁত হাড় এবং মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন ১ গ্লাস করে দুধ খাওয়ার অভ্যাস করবেন। যদি দুধ খেতে সমস্যা হয় তবে দই কিংবা দুধের তৈরি অন্যান্য খাবারগুলো খেতে পারেন। তবে হ্যাঁ অবশ্যই খাদ্য তালিকাতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন। 

ক্যালসিয়াম ছাড়াও দুগ্ধজাত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাবার। অন্য সময়ের তুলনায় গর্ভবস্থায় একজন মায়ের বেশি ক্যালরি এবং পুষ্টির প্রয়োজন হয়। সেজন্য গর্ভবতী মায়ের খাবার গ্রহণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, যখনই ক্ষুধাবোধ হবে তখনই খাবার খাওয়া এবং কম কম করে বারবার খাবার খাওয়া।

১১। মাছ

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় মাছ একটি সেরা উৎস হতে পারে পুষ্টির জন্য। মাছ হচ্ছে কম ফ্যাট, প্রোটিনের শক্তিশালী উৎস। এছাড়াও মাছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি-২, ডি ও ই এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। মাছের মধ্যস্থ অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী মায়ের এবং সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো উপাদান হচ্ছে মাছ।

মাছ শিশুর ত্বক, চুল, হাড় এবং মাংসপেশীর জন্য কোষগুলো গঠন করতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মা যদি হাইপার টেনশনে ভুগেন, সেক্ষেত্রে মাছ খেলে রক্তচাপ হ্রাস করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। মাছ খাওয়ার কারণে রক্ত জমে যাওয়া ও রক্তে ফ্যাটের মাত্রাও হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে, যা গর্ভবতী মহিলাদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছা

১২। মাংস

মাংসের মধ্যে ভিটামিট-বি, প্রোটিন, জিঙ্ক এবং লোহ থাকে। তবে হ্যাঁ মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে চর্বিযুক্ত মাংস না খেয়ে ফেলেন। গর্ভবস্থায় খাবার তালিকায় চর্বিহীন মাংস রাখতে পারেন। এটি মায়ের এবং আপনার সন্তানের জন্য ভালো।

১৩। মুরগির মাংস

মুরগির মাংস হচ্ছে গর্ভবতী মহিলাদের দ্বারা গ্রহণ করার জন্যে প্রস্তাবিত খাবারগুলোর মধ্যে একটি। কেননা এটি প্রোটিনের খুবই ভালো একটি উৎস এবং এছাড়াও মুরগির মাংস অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজগুলো সরবরাহ করে থাকে।

১৪। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়েদের জন্যে আয়রন অনেক বেশি দরকার। গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবেন, দৈনিক খাদ্য তালিকা থেকে যেন কোনোভাবে আয়রন বাদ না যায়। আয়রন গর্ভের শিশুর বিকাশে সহায়তা করে এবং প্রসবকালে মায়ের রক্তপাতের পরিমাণ কম হবে। যদি শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে তাহলে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন পাবেনা।

বিভিন্ন খাবার থেকে আয়রন পাওয়া যায় যেমনঃ কিসমিস, খেজুর, কচুশাক, পালংশাঁক, সামুদ্রিক মাছ, ডাল, বাদাম, ডার্ক চকলেট, আপেল ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে ২ থেকে ৩টি করে খেজুর এবং কিছু কিসমিস খেতে পারেন। 

এতে করে আপনার শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হবে। এই খাবারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামও পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনার দৈনিক খাবারে কচুশাক, ডার্ক চকলেট, ডাল, মুরগীর মাংস, মাছ, ডিম এগুলো রাখতে পারেন। সারাদিনে কিংবা রাতে একটি করে আপেল খাওয়া গেলে শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।

আরো পড়ুনঃ কি খেলে গায়ের রং ফর্সা হয়

 ১৫। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমনঃ মালটা অথবা কমলা, কাঁচা মরিচ, আমড়া ও পেয়ারা।

১৬। ভিটামিন-ডি গ্রহণ

গর্ভাবস্থায় বেবির জন্য ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-ডি বেবির মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে। বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশের জন্যে গর্ভবতী মায়ের গর্ভবস্থায় প্রথম থেকেই ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা অতীব জরুরি। ভিটামিন-ডি এর প্রধান হচ্ছে সূর্যের আলো। আমরা মূলত সূর্যের আলো থেকে ৮০% পর্যন্ত ভিটামিন-ডি পায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-ডি পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় মায়েরা মিনিমাম ৩০ মিনিট সময় ধরে সরাসরি যতটুকু সম্ভব হয় স্ক্রিনে সূর্যের আলোর তাপ লাগাবেন। যার ফলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশের পাশাপাশি শিশুর হাড় গঠনে সহায়তা করবে।

১৭। বিভিন্ন বীজ ও বাদাম

বিভিন্ন প্রকার বীজ এবং বাদামে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্ল্যাভোনিয়েডস, খনিজ, এবং ফাইবার। সুস্থ শিশুর জন্যে গর্ভধারনের প্রথম মাসে এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবার তালিকায় রাখবেন।

আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম

১৮। তরল খাবার খাওয়া

তরল খাবারের মধ্যে গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী বিষয়। আর যদি বেশী পানি পান করতে সমস্যাবোধ হয় তাহলে ডাবের পানি এবং সেলাইন যুক্ত করে খেতে পারেন। সাধারণ পানি ছাড়াও চিকেন সুপ, ভেজিটেবল সুপ এই জাতীয় তরল খাবারগুলো খেতে পারেন। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১৮ গ্লাস থেকে ২০ গ্লাস পরিমাণে পানি পান করতে বলা হয়। বেশি বেশি পানি পান করার কারণে শিশুর বৃদ্ধি ও তার হরমোনকে ব্যালেন্স করার জন্যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে রাখা একজন মায়ের জন্যে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা ভুল খাবার খাওয়ার কারণে বাচ্চা মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মূলত সেজন্য একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই খাবারের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। 

সকল ধরনের খাবারে প্রয়োজনীয় উপাদান থাকলেও কিছু কিছু খাবার গর্ভধারণের প্রথম মাসে না খাওয়ায় ভালো। কারণ ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্য ক্ষতি করতে পারে এসব খাবার। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা যে সকল খাবারগুলো এড়িয়ে চলে উচিৎ তা নিম্নে দেয়া হলোঃ

১। কাঁচা কিংবা আধা পাকা পেঁপে

কাঁচা কিংবা আধা পাকা পেঁপে গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিপদজনক হতে পারে বলে করা হয়। যার ফলে এই কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়ার জন্য নিষেধ করা হয়ে থাকে। কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যার ফলে কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কি খেলে মোটা হওয়া যায়

২। প্রক্রিয়াজাত করা খাবার

প্রক্রিয়াজাত করা এবং প্যাকেট করা খাবারগুলো গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া মায়ের জন্য এবং শিশুর জন্য ভালো না। যেমনঃ মাইক্রোওয়েভ প্রস্তুত খাবার, জুস, বিস্কুট, কেক এবং কনডেন্সড দুধ ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার বিশেষ করে ক্যানড খাবারগুলো গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কিছু প্যাকেটযুক্ত খাবারে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকতে পারে, যা খাবারে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

৩। আনারস এবং আঙ্গুর

গর্ভধারনকালে আনারস এড়িয়ে চলা ভালো। কেননা আনারসে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি পদার্থ যা সার্ভিক্সকে নরম করে তুলে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে সার্ভিক্স নরম হওয়ার কারণে গর্ভপাত কিংবা অকাল প্রসবের মতো ঘটোনা ঘটতে পারে। গর্ভাবস্থায় থাকা সময়ে আনারস এবং আঙ্গুর খাবেন না। কেননা আনারস এবং আঙ্গুর গর্ভপাত ঘটাতে পারে বলে মনে করা হয়। বেশি পরিমাণে আনারস এবং আঙ্গুর ফল খেলে হজমের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের বেশি আনারস এবং আঙ্গুর খাওয়া উচিত না।

৪। কাঁচা ডিম বা আধা সিদ্ধ মাংস

অনেকেরই কাঁচা ডিম কিংবা আধা সিদ্ধ মাংস খাওয়ার অভ্যাস থাকে। আর চর্বিহীন মাংস গর্ববতী মায়ের খাওয়া গেলেও সেটা যদি কাঁচা কিংবা আধা সিদ্ধ হয়ে থাকে তবে সালমেনেলা, ব্যাকটেরিয়া, লিষ্টারিয়া ইত্যাদি দ্বারা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং যার ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে, যা গর্ভজাত শিশুর বিকাশকে অনেক বেশি প্রভাবিত করতে পারে। সেজন্য প্রেগনেন্সির সময় গর্ভবতী মায়েরা ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে তারপর খাবেন। আর মাংস ভালোভাবে রান্না করে তারপর খাবেন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে লম্বা হওয়া যায়

৫। অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ

গর্ভবস্তায় খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ কিংবা লবণাক্ত খাবারকে পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে লবন খাওয়ার কারনে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি পায়ে পানি চলে আসা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৬। কলিজা ও সামুদ্রিক মাছ

কলিজাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ। অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ শিশুর জন্য ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় এটি খাওয়ার জন্য নিষেধ করা হয়ে থাকে। গর্ভধারনকালে সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলা মায়েদের উচিৎ। সামুদ্রিক মাছে আয়রন এবং ওমেগা-৩ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু হ্যাঁ সামুদ্রিক মাছে পারদের মাত্রা বেশি পরিমাণে থাকে। 

যা ভ্রুণের মস্তিষ্কের ক্ষতি ও বিকাশের বিলম্ব হতে পারে। অর্থাৎ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। তাই গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকার মাঝে সামুদ্রিক খাবার বাদ দিন। সেজন্য গর্ভাবস্থায় সামুদ্রিক মাছের বিপরীত হিসেবে দেশীয় মাছ বেশি বেশি খেতে বলা হয়। সামুদ্রিক অন্য মাছের মাঝে থেকে গর্ভাবস্থায় ইলিশ মাছ খেতে পারেন।

৭। চিনিযুক্ত খাবার

প্রচুর পরিমাণে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি এবং গর্ভাবস্থায় ডায়াবেডিস হওয়ার ঝুকি থেকে যায়। তাই এই সময়ে চিনিযুক্ত খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ কি খেলে টিউমার ভালো হয়

৮। মা-দ-ক সেবন পরিহার

মাদ-কজাতীয় পানীয় গর্ভাবস্থায় একদম খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ অ্যালকোহল ভ্রুণের বিকাশের জন্যে অনেক বেশি বিপদজনক আর এটি গুরুতর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্যে সবসময় মদ্য-পান করা এড়িয়ে চলা দরকার।

৯। কামরাঙ্গা

কামরাঙ্গাতে কিছু এনজাইম উপস্থিত থাকে যা ভ্রুণের ক্ষতি করতে পারে। তাই গর্ভধারণের প্রথম মাসে কামরাঙ্গা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফলিক এসিড অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য প্রেগনেন্সি প্লানিং অনুসারে খাবার গ্রহণ করা ভালো উপায়। কেননা, গর্ভাবস্থার তিনমাস পূর্বে থেকে চিকিৎসকগণ ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টারি খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন। গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

যে সকল মায়েরা কোন খাবার থেকে কতটুকু পরিমাণে ক্যালরি কিংবা পুষ্টি গ্রহণ করবেন বুঝতে পারেন না, তারা অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিবেন। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসে সঠিক পরিকল্পনা কিংবা সঠিক ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার খাওয়া জরুরি।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: