পেট ব্যাথা কমানোর উপায় | পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেট ব্যাথা কমানোর উপায় | পেট ব্যাথার ঘরোয়া সমাধান — পেটে ব্যাথা হচ্ছে খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। পেট ব্যাথা একবার শুরু হলে সেটা যেন আর সহজে থামতেই চায়না। তবে হ্যাঁ কখনো এই পেট ব্যাথা দূর করার জন্য ভুলেও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত কোনো ঔষধ খাবেন না। যদি আপনি এমনটি করেন তাহলে বরং আপনি নিজেই আপনার ক্ষতি করছেন। 

পেট ব্যাথার সমস্যা সমাধানের জন্য বেঁছে নিন ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো পেট ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে। জেনে নিন কয়েক ধরনের পেট ব্যাথার দারুণ কয়েকটি সমাধান যা পেট ব্যাথার মতো সমস্যা দূরে রাখবে চিরকাল। জেনে নিন পেট ব্যাথা কমানোর সহজ উপায় গুলো।

পেট ব্যাথা কমানোর উপায়

বিভিন্ন কারণে আমাদের পেট ব্যাথা হয়ে থাকে। কখনো কখনো খাবারের কারণে অথবা পাকস্থলিতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে পেট ব্যাথা হয়ে থাকে। পেট ব্যাথা হলে আমরা সেটা সহ্য করতে পারিনা। পেট ব্যাথার সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অনেকেই আমরা অনেক কিছুই খেয়ে থাকি। কিন্তু হ্যাঁ সেগুলো পেট ব্যাথার সমাধানে সবসময় ভালোভাবে কাজ করেনা। পেট ব্যথা কমানোর উপায় বা আজকের এই আর্টিকেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা এবং পেটের সমস্যা থেকে বাঁচার বিভিন্ন উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করবো। তার আগে চলুন জেনে নেই পেটের ব্যাথা কি কারনে হয়ে থাকেঃ

পেটের ব্যথা কি কারনে হয়

১। কিডনিতে পাথর কিংবা কিডনিতে প্রদাহ ইত্যাদির কারনেও কিন্ত পেট ব্যাথা হতে পারে। এই ব্যাথা ক্রমশ নিচে নেমে তলপেটে ব্যাথার সৃষ্টি করে। সঙ্গে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর চলে আসতে পারে।

২। জাঙ্কফুট কিংবা ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়ার কারণে পেট ব্যাথার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পাতলা-পায়খানা, পেটে শব্দ ইত্যাদি হয়। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পেট ব্যাথা হয়ে থাকে।

৩। বর্তমানে এপেন্ডিসাইটিস সমস্যার কারণে পেট ব্যাথার সমস্যা হয়ে থাকে। নাভির মাঝখান থেকে ব্যাথা যদি ক্রমশ তলপেটের ডান দিকে যায়, সেখানে হাত দিলেই ব্যাথা অনুভূত হয় এবং ধীরে ধীরে ব্যাথা বৃদ্ধি হতে থাকে তাহলে এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কি-না ভাবতে হবে। যদি এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। কেননা এপেন্ডিসাইটিস রোগীর পেট ব্যাথা বৃদ্ধি পেলে মৃ- ত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।

পেটের ব্যাথা কমানোর উপায়

১। ডায়রিয়া এবং ডিসেন্ট্রি জনিত ব্যথা ১ কাপ পরিমাণে বেদানার রস প্রতিদিন দুই বার পান করুন। এতে করে আপনার পেট ব্যাথা তো দূর হবেই সেই সঙ্গে দূর হবে আপনার ডায়রিয়ার সমস্যা।

২। পেটে হজম সমস্যা ও অরুচি জনিত পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য আদা স্লাইস আকারে কেটে নিন। তারপর লেবুর রসে লবণ মিশিয়ে সেখানে আদা ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। তারপর সেই আদাগুলো রোদে শুকিয়ে নিন। প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার পরে এই আদাগুলো খেলে পেটে ব্যাথার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বা পেট ব্যাথা দূর হয়ে যাবে চিরকালের মতো।

৩। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা জনিত কারণে অনেক সময় পেটের উপরের দিকে এবং মাঝখানে পেট ব্যাথা হয়ে থাকে। কখনো কখনো বমিবমি ভাব, টক ঢেকুর এবং পেট পাপা হয়। আপনার পেটে যদি এই রকম সমস্যা হয় তখন এন্টাসিড জাতীয় বা অন্য কোনো গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খান। এতে করে আপনার পেট ব্যাথা নিমিষেই কমে যাবে। 

৪। অ্যাসিডিটি এবং গ্যাসের জ্বালাপোড়ার ব্যাথা কমাতে ২০টি কিসমিস ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত ধরে। সকাল বেলা উঠে খালি পেটে কিসমিস গুলোকে পিষে খেয়ে নিন। এতে করে আপনার পেট ঠান্ডা হবে এবং অ্যাসিডিটি এবং গ্যাসের জ্বালাপোড়ার ব্যাথা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

৫। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে পেটে ব্যাথার সমস্যা ১ চা চামচ ত্রিফলা কুসুম গরম পানিতে মিলিয়ে প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে পান করুন। এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে এবং পেটে ব্যাথার সমস্যা এমনকি গ্যাস ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকেও সহজেই রেহাই পাবেন।

৬। নারীদের মাসিক জনিত পেট ব্যাথা, অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই সমস্যার সমাধানে ১ মুঠো তুলসি পাতা ছেঁচে রস বাহির করে নিন এবং ২ চা-চামচ তুলসি পাতার রস ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার পান করুন। দেখবেন অনেক ভালো উপশম হবে।

পেট ব্যাথা কমানোর উপায়

১। আদাঃ পেট ব্যাথা কমানোর জন্যে আদা চা খান। আদা চা তৈরির জন্য এক কাপ গরম পানির মধ্যে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে পানি ফুটান। এর মধ্যে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে পান করুন। এছাড়া আদা ছোট ছোট কুচি করে চিবাতে পারেন।

২। তুলসি পাতাঃ অনেক সময় নারীদের মাসিকের সমস্যার কারণে পেট ব্যাথার সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। ২ চা-চামচ তুলসি পাতার রস ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার করে পান করুন। এতে করে পেট ব্যাথা চিরদিনের জন্য ভালো হয়ে যাবে।

৩। কিসমিসঃ আপনি যদি অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যাই ভুগে থাকেন তাহলে ২০ টি কিসমিস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সেগুলো খেয়ে নিন। এই কাজটি করার মাধ্যমে আপনার পেটের গ্যাসের বা অ্যাসিডিটি সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

৪। ত্রিফলাঃ যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যাই ভুগেন তাহলে ১ চা চামচ ত্রিফলা কুসুম গরম পানির মাঝে মিলিয়ে ঘুমানোর পূর্বে নিয়মিত পান করুন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও এটি পেটের অন্যান্যা সমস্যার ও সমাধান কাজ করবে।

৫। গরম পানির সেঁক দিনঃ দ্রুত পেটের ব্যাথা কমাতে গরম পানির সেঁক খুবই ভালো কাজ করে। একটি ব্যাগে গরম পানি ভরে কিছুক্ষণ রাখুন। তারপরে গরম পানির সেঁক নিন। তবে গরম পানি সেঁক নেয়ার সময় একটু সতর্ক থাকুন। তা নাহকে হলে পুড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এটিও ব্যাথা কমাতে কাজ করবে। 

৬। জিরাঃ জিরা সাধারণত মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এটি শুধুমাত্র মশলার মধ্যেই আবদ্ধ নয়। এটি পেটের অনেক সমস্যা প্রতিরোধের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। পেটে ব্যথা, বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা হলে জিরা গ্রহণ করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জিরা ভেজে নিন এবং দিনে দুই থেকে তিনবার চিবিয়ে খেলে বদহজমের সমস্যা দূরে হয়ে যাবে। এছাড়াও জিরাতে উপস্থিত এনজাইম গুলি হজমে ভালো কাজ করে।

পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

আমরা সকলেই জানি যে, ব্যাথানাশক বিভিন্ন ঔষধের অনেক ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। এক্ষেত্রে আপনার পেটের ব্যাথা সমাধানের জন্য বেছে নিতে পারেন প্রকৃতিক সমাধান। তাহলে সেটা আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি না করে সহজেই দূর করতে পারবেন পেটে ব্যাথার সমস্যা। এজন্য আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে জেনে নিন পেট ব্যাথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়ঃ

টোস্ট

টোস্ট বিস্কুট বা ওভারকুক করা রুটি পেট ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। কারণ এতে তেমন কোনো তেল থাকেনা। আর এছাড়া একটু পোড়া রুটি অথবা টোস্ট বমি বমি ভাব কমাতেও সাহায্য করে।

কলা ও আপেল

কলা এবং আপেলের মাঝে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। যার কারণে এগুলো পেটের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়াতেও বেশ উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

পুদিনা পাতা

পেটের ব্যাথা এবং বমি বমি ভাব কমাতে এবং পেটের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক সহায়ক একটি প্রাকৃতিক সমাধান হচ্ছে পুদিনা পাতা। এটির প্রকৃতিক ব্যাথা নাশক বৈশিষ্ট আছে। তাই পেট ব্যাথা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধান হিসাবে চায়ের সাথে অথবা চিবিয়ে পুদিনা পাতা খেয়ে দেখতে পারেন।

ভাত

ভাতে কোনো মশলা কিংবা লবণ থাকেনা। তাই এটি পেটের ব্যাথা থাকলে তা নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। পেটে ব্যাথা হলে ভারি এবং বেশি মশলা জাতীয় খাবার পরিহার করে একটু নরম করে ভাত খেতে পারেন। আর চেষ্টা করবেন তার সাথে একটু হালকা এবুং পাতলা জাতীয় কিছু খেতে।

আদা বা আদা চা

প্রচীনকাল থেকেই ব্যাথা কমাতে এবং বমি বমি ভাব দূর করার জন্য আদাকে প্রকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধী গুণ যার কারণে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রকৃতিক ভাবে পেটের ব্যাথা কমাতে আদা কুঁচি করে কিংবা চিবিয়ে খেতে পারেন।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মাঝে অ্যাসিড স্টার্চ থাকার কারণে সেটা হজম করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে সুস্থ্য রাখে। আর এই কারণে এটি পেটের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তার জন্য এক কাপ পানিতে এক চা-চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং এক চা-চামুচ মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।

হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন

পেটের ব্যাথা কমাতে পেটে হালকা গরম করার মতো হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। এটি যেকোনো ধরনের ক্রাম্পিং বা ব্যাথা নিরাময়ে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি এটি বমি বমি ভাব কমাতে ও সাহায্য করে। এজন্য আপনি গরম পানির ব্যাগ অথবা বোতলে হালকা গরম পানি নিয়ে পেটের উপরে ধরে রাখলেই অনেকটা স্বস্তি পাবেন। তবে এটা খুব বেশি সময় ও অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

আশা করি উপরোক্ত এই নিয়মগুলো মেনে চললে পেট ব্যাথা সমস্যার সুফল পাবেন। যদি আপনার এই পেট ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। নিজে সুস্থ থাকুন অন্যদের ও সুস্থ থাকতে সহয়তা করুন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)