ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় — ছোট হোক কিংবা বড় সকলেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন। অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি নেই এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। তৈলাক্ত এবং ভারী খাবারই মূলত গ্যাস্ট্রিক এর জন্য দায়ী। বাইরের ভাজা, পোড়া বেশি খাওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া, খাবার সময়মতো খাবার খাওয়া হয়না অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, পরিমাণ মতো পানি না খাওয়া, জাঙ্কফুড খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা ইত্যাদি কারণে গ্যাস্ট্রিক এর মতো সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণগুলো হচ্ছে বদহজম, পেটে জ্বালা-পোড়া করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি করা, খাওয়ার পর উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। প্রথম দিকেই সচেতন না হলে পরবর্তীতে আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকেই গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য অর্থাৎ গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঝুঁকে পরেন ওষুধের দিকে। 

ঔষধ খাওয়ার কারণে সাময়িক সময়ের জন্যে মুক্তি মিললেও মূলত এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে হ্যাঁ এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত গ্রহণ করা গেলে খুবই সহজে আপনার গ্যাস্ট্রিক চিরতরে দূর করতে সহায়তা করবে। গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য জেনে নিন কিছু গ্যাস্ট্রিক দূর ঘরোয়া উপায়। এবার জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো এবং কোন কোন খাবার দ্রুত গ্যাস্ট্রিক কমায়ঃ

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়

১। আদা - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য আদা খুবই কার্যকরী। আদা হলো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার। আদাতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যে উপাদানগুলো গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সহায়তা করে। আদাতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান গ্যাসের সমস্যা, হজমে সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত সমাধানে সক্ষম। 

আদা খাওয়ার কারণে বদ হজম, বমি সমস্যা, গ্যাস হওয়া কমে যায়। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হলে আদা কুচি কুচি করে লবণ দিয়ে খান দেখবেন দ্রুত সময়ের মাঝে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে। আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে এবং রাতে খাওয়ার পূর্বে এটি খেয়ে নিন। আদা কুচি কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। 

১০ মিনিট সময় ধরে ডেকে রাখুন তারপর সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে চায়ের মতো করে বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২ থেকে ৩ বার করে পান করুন। কয়েকদিন খাওয়ার পরে নিজেই বুঝতে পারবেন ফলাফল। অথবা আপনি চাইলেই আস্ত আদাকে ধুয়ে কুচি কুচি করে অথবা কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন। গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় এ আদা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

আরো পড়ুনঃ লম্বা হওয়ার উপায় ও ব্যায়াম

২। রসুন - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য রসুনের কোনো ধরনের বিকল্প হয়না বললেই চলে। এক্ষেত্রে ১ কোয়া রসুন খাওয়া হলে স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যার কারণে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করে অর্থাৎ গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ কমতে থাকে।গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য আপনি রসুন খেতে পারেন।

৩। দই - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য দই গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে কাজ করে। দইয়ের মাঝে থাকে বিফিডাস, ল্যাকটোব্যাকিলাস এবং অ্যাসিডোফিলাসের মতো আরো বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এসকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুততার সাথে খাবার হজম করতে সহায়তা করে সাথে পেটে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। 

নিয়মিত ২ থেকে ৩ চামচ করে দই খান। দই খাওয়ার কারণে আমাদের পাকস্থলীকে "এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া" থেকে রক্ষা করে যে ব্যাকটেরিয়া মূলত গ্যাস্ট্রিক হওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া দই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। 

আপনারা চাইলে কলা, দই এবং মধু এক সঙ্গে পেস্ট করে খেতে পারেন দ্রুততার সাথে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হ্রাস করার জন্যে। তাই দই খেলে হজম ভালো হয় সাথে গ্যাস কমে। সেজন্য খাবার খাওয়ার পরে দই খাওয়াটা বেশ কার্যকর। বিশেষ করে টক দই অনেক বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে।

আরো পড়ুনঃ কেক বানানোর রেসিপি

৪। শসা - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পেট ঠান্ডা রাখার জন্য বেশ কার্যকরী খাবার হচ্ছে শসা। কাঁচা শসা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শসাতে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং ফ্লেভানয়েড উপাদান যেগুলো পেটে গ্যাসের সমস্যা হ্রাস করে। এছাড়াও শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা এবং ভিটামিন-সি। যা মানবদেহের ওজন হ্রাস করতে আদর্শ টনিক হিসাবে কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়া গেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৫। পেঁপে - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পেঁপেতে পেপেইন নামক এনজাইম উপাদান রয়েছে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত যদি পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে গ্যাসের সমস্যা হ্রাস পাবে। পেঁপে আপনি কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতে খেতে পারেন। সবটাতেই আপনি উপকার পাবেন। তাই গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য বেশি বেশি পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৬। পানি - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পানির রয়েছে বহুগুণ। পানি পানের সুফলের কথা আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন। প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে ২ গ্লাস করে পানি পান করবেন, লক্ষ্য করবেন সারাদিন আর আপনাকে গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা ভুগতে হবেনা। কেননা পানি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখার জন্যেও কাজ করে।

৭। কলা - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

যদি আপনি বেশি বেশি করে লবণ খান তবে আপনার গ্যাস্ট্রিক এবং হজম সমস্যা হতে পারে। কলাতে যে পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে তা শরীরের সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। কলা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কলা খাওয়ার কারণে দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বাহির করে দেয়।

আরো পড়ুনঃ মধু ও রসুন এর উপকারিতা

৮। আনারস - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

আনারসের মাঝে আছে ৮৫% পানি ও ব্রোমেলিন নামক উপাদান এটি হজমে সহায়তাকারী প্রাকৃতিক এনজাইম। এই উপাদানটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র ক্লিয়ার রাখতে কাজ করে। এছাড়াও আনারস ত্বকের জন্যেও অনেকবেশী উপকারী একটি ফল।

৯। আলুর রস - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করার অন্যতম ভালো উপায় হচ্ছে আলুর রস। আলুর অ্যালকালাইন উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণগুলোকে রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। ১ বা ২টি আলু নিয়ে গ্রেট করে নিন। এই গ্রেট করা আলুগুলো থেকে রস বাহির করে নিন। তারপর আলুর রসের সঙ্গে গরম পানি মিক্সড করে নিন। এই পানীয়গুলো দিনে ২ থেকে ৩ বার খান। প্রতি বেলায় খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পূর্বে খেয়ে নিন আলুর রস। তবে অন্তত এই এই পানীয় ২ সপ্তাহ খাওয়ার চেষ্টা করুন।

১০। হলুদ - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

হজম সংক্রান্ত সকল ধরনের সমস্যার সমাধানে হলুদ অনেকবেশী কার্যকর ভুমিকা পালন করে। হলুদ চর্বিজাতীয় খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদে রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান, যা প্রদাহ হ্রাস করে।

১১। ডাবের পানি - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

ডাবের পানি খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই দূর হয় অর্থাৎ ডাবের পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। ডাবের পানিতে আছে ফাইবার, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পাশাপাশি এসিডিটি হ্রাস করে। এছাড়াও বুক জ্বালাপোড়া করা ও পেট ব্যাথার উপশম করতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

আরো পড়ুনঃ পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

১২। পুদিনা পাতার পানি - গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব দূর করতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতাতে ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট’ ও ‘মেন্থল’ এবং ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্টয়ের প্রাচুর্য থাকে। এই উপাদানগুলো হজমের জন্যে প্রয়োজনীয় অ্যানজাইম তৈরি করে। পুদিনা পাতার এসেন্সিয়াল অয়েলয়ের রয়েছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা। পাশাপাশি সেটা পাকস্থলিকে ঠান্ডা করে, অম্লীয় খাবার সামাল দিতে সহায়তা করে। যার কারণে পেটের গোলমাল হ্রাস পায়।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু না। উপরোক্ত উপায়গুলো নিয়মিত অনুসরণ করে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভবপর হবে ইনশাআল্লাহ। শুধুমাত্র আপনাকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে নিজের খাওয়া দাওয়ার প্রতি।

অবশ্যই সেই সঙ্গে খাবারে অনিয়ম এবং তৈলাক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারগুলো খাওয়া বন্ধ করতে হবে। উপরে উল্লেখিত খাবারগুলোর সাথে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে প্রতিদন খাওয়া শুরু করার চেষ্টা করুন তবে দেখতে পারবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবেনা। 

আর কিনতে হবেনা গ্যাস্ট্রিক দূর করার ওষুধ ফলে সাশ্রয় হবে আপনার উপার্জিত টাকা। গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আমাদেরকে। আমাদের টিম আপনাকে উত্তর দেয়ার জন্য সবসময়ের জন্য চেষ্টা করবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)