Technical Care BD https://www.technicalcarebd.com/2021/11/Home-Remedies-for-Gauge-Disease.html

গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা | গেজ রোগের চিকিৎসা – গেজ কিংবা অ্যানাল ফিসার হচ্ছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও অস্বস্তিকর একটি পায়ুপথের রোগ। ডাক্তারগণ প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের জন্য কিছু ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে এই রোগটি পুরাতন হলে ঔষধ ব্যবহারে কাজ হয়না, ফলে পরবর্তীতে অপারেশনের দরকার হয়। তবে হ্যাঁ গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এর মাধ্যমে আপনারা এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন। কিন্তু হ্যাঁ বিরক্তিকর এই রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য রোগটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা দরকার। চলুনে তাহলে জেনে নেই গেজ রোগের কারণ এবং গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কেঃ

গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

গেজ রোগের কারণ

প্রধানত কোষ্ঠকাঠিন্যকেই মূলত গেজ রোগের জন্য দ্বায়ী করা হয়ে থাকে। পায়খানা করার সময়ে অতিরিক্ত ভাবে চাপ প্রয়োগ করা কিংবা কোঁত দেয়া অথবা শক্ত মল বের হওয়ার সময়ে পায়ুপথ ফেটে গেলে কিংবা ঘা হলে এই রোগ অর্থাৎ গেজ রোগ হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও ডায়রিয়া, স্থুলতা, হাইপোথাইরয়ডিজম, টিউমার ইত্যাদির কারনেও কিন্ত গেজ রোগ হয়ে থাকে। 

মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ওজন, জন্মগতভাবে দুর্বল ধমনি, দীর্ঘদিনের কাশি, ভারী বস্তু বহন করতে হয় এমন কাজ, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি। এই রোগের চিকিৎসা না করা হলে প্রায়ই মলের সাথে রক্তপাতের জন্যে ধীরে ধীরে রক্তশূন্যতাও হতে পারে, প্রায়ই ব্যাথা হয় এবং সংক্রমণ হয়। গেজ রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার কিছু ধাপ আছে। প্রথম দিকে ঔষধ এবং নির্দিষ্ট জীবনাচরণ প্রণালি মেনে চললে কাজ হতে পারে, তবে জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচারও কিন্ত করা লাগতে পারে।

আরও পড়ুনঃ পেট ব্যাথা কমানোর উপায় | পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

গেজ রোগের লক্ষণ

গেজ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে পায়ুপথে ব্যাথা করা। মলত্যাগ করার পরবর্তী সময়ে ব্যাথা শুরু হয় এবং কখনো কেটে যাওয়ার মতো, কখনো তীব্র আবার কখনো পিন দিয়ে খোচা দেয়ার মতো ব্যাথা হয়ে থাকে। এছাড়াও চুলকানি, পায়ুপথে জ্বালাপোড়া করা, ব্যাথার সঙ্গে রক্ত যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা যায়। তবে হ্যাঁ গেজ রোগে অনেক বেশি পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়না, মলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে রক্ত লেগে থাকতে পারে। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানলাম গেজ রোগের কারণ এবং গেজ রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। এবার চলুন জেনে নেই গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কেঃ

গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে গেজ রোগের কারণে সৃষ্ট ব্যাথা কিংবা জ্বালা-যন্ত্রণা হ্রাস করা এবং নিরাময় প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে করা যায়। যেমনঃ

সিজ বাথ

সিজ বাথ হচ্ছে গরম পানিতে পায়ুপথ ও তৎসংলগ্ন এরিয়া ভিজিয়ে রাখা। একটি বড় বোলের মাঝে হালকা গরম পানি দিয়ে তার মধ্যে কিছুটা লবণ যুক্ত করে নিন। তারপর সেখানে নিতম্ব ডুবিয়ে ১০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিটের জন্যে বসে থাকুন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যাথা, জ্বালাপোড়া করা, চুলকানি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন। এই পদ্ধতি হচ্ছে গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে একটি অন্যতম পদ্ধতি। 

অথবা গেজ রোগের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আরেকটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি সেটা হলো বরফ। যখন পায়ুপথ কিংবা মলদ্বারের জায়গাটা ফুলে যায় তখন আপনি সেখানে বরফ লাগাতে পারেন। বরফ রক্ত চলাচল সহজ করে তোলে এবং ব্যথা উপশমে খুবই ভালো কাজ করে থাকে। এছাড়াও কয়েক টুকরো বরফকে একটি কাপড়ে দিয়ে পেঁচিয়ে অন্তত ১০ মিনিট ধরে সেই জায়গায়তে রাখুন। এই ভাবে দিনে কয়েকবার করুন। ঘরোয়া উপায়ে গেজ নিয়াময়ে বরফ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

মল নরমকারী ঔষধ

কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলো মলকে নরম করতে সহায়তা করে থাকে। আপনার যদি মল শক্ত হয়ে থাকে তবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাত্রায় মল নরম করার ওষুধ খেতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা | মধু খাওয়ার উপকারিতা কি

বেশি পরিমাণ পানি পান করুন

পানিশূন্যতা কিন্ত কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ সৃষ্টি করতে ভুমিকা রাখে যা পরবর্তীতে গেজ রোগে আক্রান্ত রোগীদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে তোলে। প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করলে মল নরম এবং স্বাভাবিক থাকে। তাই নিয়মিত ভাবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করুন।

পায়ুপথ এবং পার্শ্বপর্তী ত্বকের যত্ন

প্রতিদিন গোসল করার সময় কিংবা পায়খানার পরে নিয়মিত ভাবে পায়ুপথের পার্শ্ববর্তী এরিয়ার ত্বকের যত্ন নিন। এটি করার মাধ্যমে জীবানু অথবা ফাঙ্গাস আক্রমণের মাধ্যমে ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রেহাই পাবে। মলদ্বারে যদি আপনি অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করেন তাহলে ব্যথা অনেক উপশম হয়। বিশেষ করে টয়লেটে যাওয়ার পূর্বে ব্যবহার করুন। এছাড়াও চাইলে নিয়মিত ১চা চামচ করে অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। এতে করে শরীরের জ্বালাপোড়াও কমবে। অর্শ রোগেও খুবই ভালোভাবে সাহায্য করবে।

আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়া

যাদের কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা আছে তাদের সর্বপ্রথম এই সমস্যা থেকে সমাধান নিতে হবে। কোষ্টকাঠিন্যের জন্য আপনি খাদ্য তালিকায় কলা রাখতে পারেন এটি চমৎকার কাজ করে। কলা খেলে আমাদের মলত্যাগের সময় কোন চাপের প্রয়োজন হয়না। যার কারণে পাইলস হওয়ার সমস্যা থাকেনা। আর কলা যসি সোয়াবিনের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে আরও দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও গেজ রোগ থেকে মুক্তির জন্য উপযুক্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার মলকে খুবই কঠিন অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা খুবই তরল অর্থাৎ ডায়রিয়া হতে দেয়না। নরম মল গেজ রোগে আক্রান্ত স্থানে আঘাতজনিত সমস্যা কম করে থাকে, যার কারণে সমস্যা আর বৃদ্ধি পায়না। 

কিছু আাঁশযুক্ত খাবার যেমনঃ ছোলা, মটরশুটি, মুগডাল, কুমড়ো বীজ, সয়াবিন, ফল (আমড়া, বেল, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, নারিকেল, পাকা আম, আপেল, পাকা কাঁঠাল ইত্যাদি), শাক (পুঁই শাক, কলমি শাক, মুলা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার শাক, মিষ্টি আলুর শাক, ডাটা শাক ইত্যাদি), সবজি (ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, শিম, কটু, বরবটি, পটল, সজনে, কলার মোচা, ইত্যাদি) খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখুন।

এছাড়াও গেজ রোগে আক্রান্ত রোগীরা কিছু পদ্ধতি মেনে চললে ভালো থাকতে পারেন। চলুন জেনে নেই সেই পদ্ধতিগুলোঃ পায়ুপথের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, ফুলে গেলে বরফ দেওয়া যায়, কুসুম গরম পানিতে দিনে কয়েকবার ভিজিয়ে নিন, প্রদাহ বা সংক্রমণের দ্রুত চিকিৎসা নিন, চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত মলম ব্যবহার করুন, প্রতিদিন প্রচুর আঁশযুক্ত সবজি, ফলমূল ও খাবার গ্রহণ করবেন, মাংস, কম আঁশ এবং বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি পরিহার করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন, কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করুন, প্রচুর তরল ও দিনে ৬ থেকে ৭ গ্লাস পানি পান করুন, মলত্যাগে কখনো বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না, আটকে রাখবেন না, নিয়মিত ব্যায়ামে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

আমাদের শেষ কথা

বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো করে আমাদের দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে অনেক মানুষ এই গেজ রোগে আক্রান্ত, যে রোগটি অনেকেই প্রকাশ করতে লজ্জ্বাবোধ করে। তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি এই কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন। পাশাপাশি এটি সমস্যা নিরাময়ের প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করবে।

আরও পড়ুনঃ নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা

0 Comments