সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

সফটওয়্যার কি - সফটওয়্যার কাকে বলে - সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা - সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ - সফটওয়্যার পাইরেসি কি — বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ব্যাপক হারে চাহিদা তৈরি হচ্ছে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের। গুগল, ফেসবুক সহ বিভিন্ন নামি দামি টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুলোতে বিভিন্ন দেশের মানুষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাচ্ছে। একটি কম্পিউটার তার নিজস্ব কমান্ড অনুযায়ী চলতে পারে। কমান্ড অনুযায়ী রান করানোর জন্য প্রয়োজন হয় সফটওয়্যারের। একটি কম্পিউটারের প্রাণ বলা হয় সফটওয়্যারকে।

সফটওয়্যার কি

আজকের এই পোষ্টটিতে আমরা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কি, সফটওয়্যার কি, সফটওয়্যার কাকে বলে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা, সফটওয়্যার কত প্রকার, সফটওয়্যার কী, সফটওয়্যার কাকে বলে বাংলা, সফটওয়্যার পাইরেসি কি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু তুলে ধরবো। কিভাবে আপনিও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবেন, কোথায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করবেন ইত্যাদি। সফটওয়্যার সম্পর্কে যদি বিস্তারিত ভাবে ধারণা পেতে চান তাহলে আজকের পোষ্টটি সম্পুর্ণ পড়ার চেষ্টা করুন।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি

পেজ সূচীপত্রঃ 

সফটওয়্যার কি

সফটওয়্যার সম্পর্কে যদি কথা বলতে হয় প্রথমেই আসে সফটওয়্যার কি? সফটওয়্যার মুলত কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা বা কোডিং। একজন গেম ডেভলপার যেমন একটি গেম বানিয়ে থাকে ঠিক তেমনি অনেক কঠিন কাজ গুলো সহজে করার জন্য তৈরি করা বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার।

সফটওয়্যার কাকে বলে

সফটওয়্যার কাকে বলে সেই সংজ্ঞা অনেক ভাবেই দেওয়া যায়। সফটওয়্যার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সফটওয়্যার হচ্ছে কম্পিউটার পরিচালনা এবং নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য কিছু ইনস্ট্রাকশন, ডেটা বা প্রোগ্রাম। সহজ ভাষায় সফটওয়্যার কম্পিউটারকে বলে দেয় যে কিভাবে কাজ করতে হবে। সফটওয়্যারকে আপনি চোখে দেখতে পাবেন না এবং স্পর্শ করতে পারবেন না। কারণ সফটওয়্যার বিভিন্ন কোড এবং কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে তৈরি। কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইসে চালিত অ্যাপ্লিকেশন, স্ক্রিপ্ট বা প্রোগ্রামের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।

আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে যখন কোনো প্রকার সফটওয়্যার থাকবে না সেটা দিয়ে কিন্তু কোনো কাজ এই করা সম্ভব না। আপনার প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সিস্টেম ব্যাবহার করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, আপনি ইউটিউবে ভিডিও দেখার জন্য আপনাকে ইউটিউব অ্যাপস সফটওয়্যার কিংবা ওয়েব ব্রাউজ সফটওয়্যারের প্রয়োজন পরে। আমাদের ডিজিটাল সময়ে আমরা সফটওয়্যার ছাড়া একে বারেই অচল।

একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাদেরকে এই ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ওয়েব ব্রাউজার হচ্ছে একটি এপ্লিকেশন সফটওয়্যার আর এই ওয়েব ব্রাউজার ছড়া কিন্তু আপনারা আমার এই আর্টিকেলটি পড়তে পারতেন না। অর্থাৎ সফটওয়্যার ছাড়া আপনি ওয়েব ব্রাউজারে কোনো কিছু সার্চ করতে, কোন তথ্য পড়তে বা ডাউনলোড করতে পারতেন না। সফটওয়্যার কম্পিউটারের কত গুরুত্বপূর্ণ একটি কম্পোনেন্ট। আশা করি এটি বুঝতে পারলেন।

আরো পড়ুনঃ পুরাতন ল্যাপটপ কেনার আগে করণীয়

সফটওয়্যার কত প্রকার

সফটওয়্যারকে সাধারণত ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি ভাগের আবার আলাদা কিছু উপশাখা বা প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায়। যেমনঃ ১। সিস্টেম সফটওয়্যার ২। অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ৩। ইউটিলিটি সফটওয়্যার।

১. সিস্টেম সফটওয়্যার

আমাদের ডিভাইস গুলো যেমনঃ কম্পিউটার বা মোবাইল কিন্তু কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলতে সক্ষম। প্রতিটি ডিভাইসের একটি হার্ডওয়ার সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। সিস্টেম সফটওয়্যার গুলো হার্ডওয়্যারের সাথে কানেক্ট করে দেয়া হয়। উদাহরণস্বরুপ- আপনি যখন একটি নতুন কম্পিউটার চালু করবেন। সেখানে ডিফলট ভাবে আপনি একটি ব্রাউজার, মাই কম্পিউটার এগুলো দেখতে পাবেন। এই সফটওয়্যার গুলোকেই সিস্টেম সফটওয়্যার বলে।

সিস্টেম সফটওয়্যার এর মধ্যেও আবার ২ টি ভাগ রয়েছে- ১। অপারেটিং সিস্টেম ও ভাষা ট্রান্সলেটর। অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার হলো যেসব সফটওয়্যার গুলো আপনার ডিভাইসকে একটিভ রাখতে সহায়তা করে। যেমন- কালি লিনাক্স, ইউন্ডোজ, এন্ড্রোয়েড, কাইওএস, আইওএস ইত্যাদি।

২. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার

অ্যাপ্লিকেশান সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়। প্রয়োজনে সে চাইলে ইন্সটল করে ব্যাবহার করতে পারে। অতিরিক্ত কাজ করার নিমিত্তে তৈরি করা। আমরা যে সব অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে কাজ করি এগুলো সব অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হিসেবে ধরা হয়। অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বিভিন্ন প্রকার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। উদাহরণ স্বরুপ- Microsoft Office, Excel, Word, Powerpoint, Chrome, Firefox, Adobe Lightroom ইত্যাদি যত রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

৩. ইউটিলিটি সফটওয়্যার

আমাদের কম্পিউটার ব্যাবহার করার জন্য অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ে সতর্ক হওয়ার পরেও বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস আক্রমণ করে। এইসব ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন এন্টিভাইরাসের। আর মূলত এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলোকে ইউটিলিটি সফটওয়্যার বলা হয়ে থাকে। যেমন- Avast, Antivirus, Disk Clean ইত্যাদি। 

সফটওয়্যার পাইরেসি কি

সফটওয়্যার পাইরেসি হলো কোনো সফটওয়্যারকে ক্লোন করা। অর্থ্যাৎ, প্রতিটি সফটওয়্যার তৈরি করা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং এর উপর। সে প্রোগ্রামিং গুলো চুরি করে এক রকম একটি সফটওয়্যার তৈরি করা ও নিজ কোম্পানির প্রোমোশন করাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলে। ধরুন, আপনি Microsoft Word সফটওয়্যারের সকল সোর্স কোড গুলোকে কপি করলেন। 

সে কোডগুলো দিয়ে ভিন্ন নামে একটি সফটওয়্যার বের করে বিক্রি করা শুরু করলেন। এগুলোই হলো সফটওয়্যার পাইরেসি। প্রতিটি সফটওয়্যারের একটি কপিরাইট থাকে। আপনি যদি কপিরাইট না মানেন সেক্ষেত্রে সেটা সফটওয়্যার পাইরেসির মধ্যে চিহ্নিত করা হয়।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

অনেকেই রয়েছেন যারা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করতে অনেক আগ্রহী। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পড়ার জন্য কি রকম কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং যেহতু একটি বিস্তর প্লাটফর্ম এখানে আপনার কিছু বিষয়ের উপত যোগ্যতা থাকার কোনো বিকল্প নেই। একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি আপনাকে প্রাক্টিকালি কিছু যোগ্যাতা থাকে অনেক বেশী প্রয়োজন। নিচে সেগুলো দিয়ে দিলাম -

১. একাডেমিক রেজাল্ট

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পড়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে যে যোগ্যতাটি থাকতে হবে সেটা হলো আপনার এসএসসি ও এইচ এসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো পয়েন্ট নিয়ে পাস করতে হবে। কতটা পয়েন্ট প্রয়োজন এটি নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা দিয়ে থাকে। তবে আপনি যদি এসএসসি এর পর "কম্পিউটার সাইন্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং " এ ডিপ্লোমা করেন সেক্ষেত্রে বেশ ভালো একটি সুযোগ পেয়ে যাবেন।

আরো পড়ুনঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কি

২. কোডিং শিখুন

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি পড়াশোনা করে পাস করে গেলেন সেটা সম্ভব নয়। এখানে, আপনাকে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজেক্টের উপরে কাজ করার দক্ষতা থাকা চাই। কোডিং সম্পর্কে ধারণা নিন। সব সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে কোডিং করার অভ্যাস অনেক বেশী প্রয়োজন। ছোট ছোট কিছু সফটওয়্যারের প্রজেক্ট তৈরি করার চেষ্টা করুন। 

৩. প্রোগ্রামিং ভাষা শিখুন

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পুর্ণ বেজটা দাঁড়িয়ে আছে প্রোগ্রামিং এর উপর। আপনার প্রোগ্রামিং ভাষা সব গুলো শিখা থাকলে আপনার জন্য পরবর্তী পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে। প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন- Python, Java, C++, Ruby ইত্যাদি ভাষা গুলোতে আপনার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এগুলো সম্পর্কে আপনার সিমিত জ্ঞান অবশ্যই আপনাকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে সক্ষম নয়। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য ভালো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান - বাংলাদেশে বেশ কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। সেখান থেকে সেরা ৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিস্ট নিচে দিলাম-

  • Bangladesh University of Engineering and Technology (BUET)
  • University Of Chittagong, (CU)
  • Dhaka University, (DU)
  • Jahangirnagar University (JU)
  • Daffodil International University (DU)
  • BRAC University
  • RUET-Rajshahi University of Engineering & Technology
  • Shahjalal University of Science & Technology
  • Khulna University of Engineering & Technology: KUET
  • Chittagong University of Engineering & Technology - CUET

ইত্যাদি ছাড়াও বেশ কিছু ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেখানে আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ আইপি এড্রেস কত প্রকার ও কি কি

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করে খরচ বলা সম্ভব নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি কম খরচে পড়াশোনা কর‍তে পারবেন। তবে আপনি যদি প্রাইভেটে পড়াশোনা করেন সেখানে ১০/১২ লাখ টাকার বেশী ব্যায় হতে পারে। এখানে আপনার স্কলারশিপের উপর অনেকাংশে খরচ নির্ভর করে। আপনি যে ইউনিভর্সিটিতে পড়তে আগ্রহী সেখানে আলোচনা করে দেখতে পারেন। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন অনেক বেশী। এখানে জুনিয়র ও সিনিয়র এর একটি ব্যাপার রয়েছে। আপনি শেষ করেই অনেক বেশী বেতন পাবেন না। আপনার কয়েক বছর যোগ্যাতা থাকলে বাংলাদেশে আপনি ৪০- ৯০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন। যেহেতু বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর জন্য তেমন ভালো বড় প্লাটফর্ম নেই তাই বেতন অনেক বেশী কম। আর আপনি বাহিরে যেতে পারলে মাসে ২০-৩০ লাখ ও বেতন পেতে পারেন সম্পুর্ন নির্ভর করে আপনি কতটা কাজের উপর দক্ষ। গুগল বা ফেসবুকে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন প্রায় ৮০ লাখ টাকার উপরে নতুন জয়েন হলেও।

শেষ কথা

বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। যারা গুগল, ফেসবুকের মত নামি দামি প্রতিষ্ঠানে অনেক বেশী বেতনে চাকরি করছে। আপনার প্রতিষ্ঠানকি সেটার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আপনি কতটা ডেডিকেটেড কাজের উপর। যেহেতু এখানে মুখস্থ বিদ্যার দাম নেই। কাজ দিয়ে আপনাকে প্রমান কর‍তে হবে। 

আশা করি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও সফটওয়্যার কি, সফটওয়্যার কাকে বলে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা, সফটওয়্যার কত প্রকার, সফটওয়্যার কী, সফটওয়্যার কাকে বলে বাংলা, সফটওয়্যার পাইরেসি কি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)