ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যোগ্যতা

হাসিবুর
লিখেছেন -

ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যোগ্যতা - ফ্রিল্যান্সার হতে যা যা প্রয়োজন — বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং অন্যতম আকর্ষণীয় পেশা হয়ে উঠছে এবং বহু মানুষ ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজেই নিজের বস হয়ে উঠছে।

ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে প্রাথমিক ভাবে কি কি দরকার তা জেনে নেওয়া যাক যাতে আপনিও নির্বিঘ্নে আপনার ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যাত্রা শুরু করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ মুভি দেখার ওয়েবসাইট

পেজ সূচীপত্রঃ ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যোগ্যতা

ফ্রিল্যান্সিং কি

প্রথমেই জানা যাক ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটা আসলে কি? ফ্রিল্যান্সিং হল এমন একটি পেশাদারি ব্যবস্থা যাতে কোনো এক ব্যাক্তি (freelancer) কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একইসাথে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যাক্তির জন্য অর্থের বিনিময়ে অনলাইনের মাধ্যমে স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজ করে থাকে।

এই ক্ষেত্রে তারা কখনই স্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করে না। সহজ কথায় ফ্রিল্যান্সিং হল অনলাইনে টাকার বিনিময়ে পেশাদারিভাবে কোনো সংস্থা বা ব্যাক্তিকে পরিষেবা প্রদান করা। ফ্রিল্যান্সিং এ একজন একইসময়ে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারে কিন্তু স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হওয়া কখনই সম্ভব নয়।

পারস্পরিক চুক্তির দ্বারা স্বল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিষেবা দেওয়া হয় এবং কাজ অনুযায়ী রোজগার বা টাকার পরিমাণ ঠিক হয় যা কখনই নির্দিষ্ট নয়। ফ্রিল্যান্সিং হল স্বাধীন ও স্বনির্ভর জীবিকা এখানে কাজের শর্ত, মার্কেটিং, ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করা এবং তাদের কাজ নেওয়া ও পরিষেবা দেওয়া পুরোটাই ফ্রিল্যান্সার এর নিজের দায়িত্ব।

ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা পাওয়ার চাবিকাঠি হল কাজের প্রতি নিষ্ঠা, আগ্রহ এবং ধৈর্য্য। ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে প্রবেশ করা মাত্রই টাকার বন্যায় ভেসে যাবেন এরকম না ভাবাই বাঞ্ছনীয়। সময় ব্যবস্থাপনা, ক্লায়েন্ট নেটওয়ার্কিং ও আর্থিক পরিকল্পনা ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নিজের কাজে খুব পারদর্শীও হয়ে থাকেন তবুও আপনাকে আরো কিছু জিনিস শিখতেই হবে।

আরো পড়ুনঃ ফ্রি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স ইন বাংলাদেশ

ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং কোনো চাকরি নয় তাই এতে আয়ের পরিমাণ কখনোই নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। তবে একজন প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার কোনো উচ্চপদে কর্মরত চাকরিজীবীর থেকেও বেশি আয় করতে পারে। কাজের সময় ও টাকা ফ্রিল্যান্সার নিজেই ঠিক করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং এ আয় সাধারণত ৩ ভাবে ঠিক হয় ১। প্রতি ঘন্টা হিসেবে (per hour rate) ২। প্রতি দিন হিসেবে (per day rate) ৩। প্রতি কাজ হিসেবে (per assignment rate)

চাকরি ও ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে কি পার্থক্য?

স্থায়ী বেতনভিত্তিক চাকরিঃ ১। প্রতিনিয়ত একই কাজ, পদ্ধতি এবং প্রায় অপরিবর্তনীয় বেতন ২। কাজের জায়গা ও সময় নির্দিষ্ট এবং একঘেয়ে রুটিন ৩। একভাবে সচেতন হয়ে একটানা কাজ করতে হয়, সাংগঠনিক ভাবে কাজ করার জন্য

ফ্রিল্যান্সিংঃ ১। নানারকম কাজ, বিভিন্ন পদ্ধতি, রোজগারের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই ২। সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং যে কোনো জায়গা থেকেই কাজ করা সম্ভব (শুধু ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে) ৩। এক্ষেত্রে আপনি স্বাধীন, কখন বিশ্রাম নেবেন আর কখন কাজ করবেন পুরোটাই আপনার ইচ্ছে।

৫ টি আবশ্যকীয় জিনিস ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য

এবার যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে একটা ধারণা আপনারা পেয়ে গেছেন তাই এবার সময় কিছু প্রাথমিক বিষয় জানার যাতে আপনিও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন।

১. কম্পিউটার/ল্যাপটপ ও সুস্থিত ইন্টারনেট সংযোগ: ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি বাড়ি বা আপনার পছন্দের অন্য যেকোনো জায়গা থেকেই কাজ করতে পারবেন। কিন্তু সেজন্য আপনার কাছে ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ ও তাতে ইন্টারনেটের সংযোগ থাকতেই হবে।

২. নিজস্ব পোর্টফোলিও: একজন স্বাধীন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি কি কি পরিষেবা দিতে চান সে সম্পর্কে আপনার একটি নিজস্ব পোর্টফোলিও থাকা খুব জরুরী। কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলে একটি পেশাদারি প্রোফাইল তৈরী করুন এবং ভালো রিভিউ অর্জন করতে থাকুন। কিন্তু যদি কোনো প্ল্যাটফর্মে যুক্ত না হন তাহলে অতি অবশ্যই নিজের পোর্টফোলিও খুব ভালো করে তৈরী করুন এবং সেটি নিজের ওয়েবসাইট, ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করুন।

৩. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস/প্ল্যাটফর্ম: ফ্রিল্যান্সিং এ বিভিন্ন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সঠিক ক্লায়েন্ট পাওয়া একটা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলি ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে এই সমস্যার সমাধান করে।

কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস/প্ল্যাটফর্ম এ যুক্ত হওয়ার আগে যে বিষয়গুলি লক্ষ্য করবেন

১। তাদের শর্তাবলী (Terms & Conditions) ২। ওই প্ল্যাটফর্ম এর সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ৩। তাদের হেল্প পেজ ও ডকুমেন্টেশন ৪। তারা কোন পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করে এবং সেটা আপনার জন্য উপযোগী কিনা ৫। নিশ্চিতভাবে জানুন তাদের সাপোর্ট সিস্টেম সম্পর্কে এবং তারা লাইভ সাপোর্ট দেয় কিনা ৬। তাদের fees structure খুব ভালো করে বুঝে নিন ৭। একসাথে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত না হয়ে যে কোনো একটি সম্পর্কে বিশদভাবে জানুন তারপরে অন্যগুলোর খোঁজ নেবেন।

৪. Payment Method (আয়ের পদ্ধতি): ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য আপনার ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ করার মতো কোনো ডিজিটাল ওয়ালেট বা কোনো ব্যবস্থা অবশ্যই থাকা দরকার যার মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম বা ক্লায়েন্টদের থেকে সরাসরি টাকা নিতে পারবেন। এই ব্যাপারে সচেতন না হলে আপনি কাজ করেও টাকা না পেতে পারেন বা অযথাই আপনার পেমেন্ট আসতে দেরি হতে পারে।

প্রত্যেক পেমেন্ট মেথডেরই কিছু সুবিধা ও কিছু অসুবিধা থাকে যা আপনার ভৌগোলিক অবস্থান ও কারেন্সীর ওপর নির্ভর করে, তা সত্ত্বেও বহু ফ্রিল্যান্সারদের ব্যবহৃত সেরা তিনটি পেমেন্ট মেথড হলো Paypal ও Payoneer ও Skrill.

৫. Non-Disclosure Agreement: NDA-র দ্বারা ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্ট আইনসম্মতভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়।ক্লায়েন্ট এর গোপনীয় বা সংবেদনশীল তথ্য কখনই ফ্রিল্যান্সার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বা প্রকাশ করতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে টাকা আয় করতে চাই

ফ্রিল্যান্সিং এ কমিউনিকেশন স্কিল এর প্রয়োজনীয়তা

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও কিছু কমিউনিকেশন স্কিল এর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও যদি ক্লায়েন্ট এর সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন না করতে পারেন তাহলে আপনার ফ্রিল্যান্সিং এর যাত্রা শুরুতেই থেমে যাবে। সুন্দর বাচনভঙ্গি বা সুন্দরভাবে লেখার দক্ষতা ক্লায়েন্ট এর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ক্লায়েন্ট এর সাথে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখলে আপনি সহজেই অন্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।

Listening skill বা শোনার ক্ষমতা – খুব দরকারি গুণ, ক্লায়েন্ট ঠিক কি চায় তা খুব মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং ঠিক তার কথামতোই কাজটি সঠিক সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করুন।

Negotiation skill বা দরদাম করার ক্ষমতা – এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল যা আপনাকে রপ্ত করতেই হবে যাতে আপনি পেশাদারি ভাবেই ক্লায়েন্ট এর সাথে এমনভাবে চুক্তিবদ্ধ হবেন যাতে উভয়েই লাভবান হতে পারেন।

Written Skill প্রধানত Email রাইটিং – এই স্কিলটি আপনাকে নিজের স্বচ্ছতা ও পেশাদার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সাহায্য করবে।

Proposal রাইটিং – এই গুণটির মাধ্যমে আপনি ক্লায়েন্টকে আশ্বস্ত করবেন যে কাজের পরিমাণে তাকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে তা সঙ্গত। ইমেইলের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য সহজ, মার্জিত কিন্তু আকর্ষণীয় ভাবে পেশ করতে পারা একটি আবশ্যকীয় দক্ষতা।

কমিউনিকেশন স্কিল এর দক্ষতা বৃদ্ধির কিছু উপায়ঃ ১। নিয়মিত পড়া ও লেখার অভ্যেস করা ২। প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সারদের ইন্টারভিউ দেখা ও তাদের থেকে শেখা ৩। ইন্টারনেটে উপস্থিত বিভিন্ন resource কাজে লাগিয়েও কমিউনিকেশন স্কিল বৃদ্ধি করা সম্ভব ৪। সারা বিশ্বের নানা ক্লায়েন্ট পেতে হলে ইংরেজি ভাষা ভালো করে শিখতেই হবে

কিছু সাধারণ টিপসঃ ১। সক্রিয় থাকুন এবং দ্রুত প্রতি উত্তর দিন। যদি ক্লায়েন্ট এর দেওয়া সময়মতো কাজ করে উঠতে নাও পারেন তাতেও শান্ত থাকুন ২। অপরপক্ষের মানুষটির জায়গায় নিজেকে বসিয়ে সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করুন, সহজ ও বোধগম্য শব্দ ব্যবহার করুন ৩। সময়ের সঠিক ব্যবহার - সময়ের ব্যবস্থাপনা হল ফ্রিল্যান্সিং এর প্রাথমিক ও মুখ্য উপাদান, সময়ই ফ্রিল্যান্সারদের প্রিয় বন্ধু অথবা সবচেয়ে খারাপ শত্রু হয়ে উঠতে পারে ৪। ফ্রিল্যান্সিং এ আপনি নিজেই নিজের কাজের মালিক, কেউ আপনাকে বলবে না যেকোন কাজটা কখন করতে হবে এবং এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে আপনি নিজের অজান্তেই বহু মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলতে পারেন যদি আপনি নিয়মানুবর্তী না হন।

কোনো নির্দিষ্ট কাজে ঠিক কতটা সময় লাগবে তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। কারন সেটি কাজের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে এবং প্রত্যেক কাজেই ভিন্ন সময় লাগে। সময় ব্যবহারের সামান্য ভুলচুকের ফলে আপনি ক্লায়েন্ট হারিয়ে ফেলতে পারেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়ের ব্যবহার আপনার কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং আপনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও বেশি সময় বাঁচাতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে মোবাইলে আয়

সময় ব্যবহারের কিছু কৌশল

১. To – do লিস্ট: প্রতিদিনের কাজের রুটিন আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ও তা মেনে চলা সময় ব্যবহারের শ্রেষ্ঠ উপায়। যদিও একদিনের লিস্টে অতিরিক্ত কাজ রাখা উচিত নয়, যতটা স্বাভাবিকভাবে শেষ করা সম্ভব ততটাই রাখতে হবে।

২. Time – tracking: সময়ের হিসাব রাখলে আপনার প্রতি কাজে গড়ে কতটা সময়ের দরকার পড়ছে তার একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। ভবিষ্যতের কাজগুলি করার জন্য আপনার কতটা সময় লাগবে তা বুঝতে এটি সাহায্য করবে। 

৩. মনসংযোগ: বারবার সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল দেখা ফ্রিল্যান্সারদের মনসংযোগ নষ্টের অন্যতম কারণ, এগুলির জন্য আলাদা সময় রাখুন এবং প্রতিদিনের কাজের ওপর মন দিন। কাজের সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। শুধুমাত্র সেইসব অ্যাপ চাইলে ব্যবহার করতে পারেন যেগুলো ক্লায়েন্টদের কাজ সম্পূর্ণ করতে বা মনসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।

৪. ছোটো ছোটো বিরতি নিন: একটানা কাজ করা কখনই ভালো নয়, অন্তত আধঘন্টা কাজ করার পর মিনিট পাঁচ দশের বিরতি নিন এতে আপনার মন কাজের চিন্তা থেকে সরে কিছুটা শান্তি পাবে। ফ্রিল্যান্সারদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর এই পদ্ধতি Pomodoro Technique নামে পরিচিত।

৫. না বলতে শিখুন: ফ্রিল্যান্সাররা প্রায়শই ক্লায়েন্টদের খুশি রাখতে সময়ের অতিরিক্ত কাজের বোঝা নিয়ে ফেলে যা ঠিক নয়। কোনো কাজ ভালোভাবে শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের দরকার তা আপনার হাতে না থাকলে ক্লায়েন্টকে মার্জিতভাবে না বলুন।কারন আপনার পরিবার ও নিজের জন্য সময় দেওয়াও একান্ত দরকারি।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট স্কিল: স্ট্রেস বা কাজের চাপ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নিঃশব্দ ঘাতকের মতো কাজ করে, প্রথম থেকেই এর প্রতি নজর দেওয়া উচিত নয়তো স্ট্রেস উদ্বিগ্নতা এমনকি শারীরিক অসুস্থতাও ডেকে আনতে পারে। যখন মনে হবে সময়ের তুলনায় বাকি থাকা কাজের পরিমাণ অনেক বেশি এবং আপনি তা শেষ করতে চাইলেও সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবেন না তখনই স্ট্রেস আসতে শুরু করবে।

আরো পড়ুনঃ কোন সফটওয়্যার দিয়ে টাকা ইনকাম করা যায়

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের কিছু কৌশল

১. নির্দিষ্ট কাজের সময়: ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে আপনার কাজ করার সময় আপনি নিজেই ঠিক করতে পারেন কিন্তু এই কারণেই অধিকাংশ সময়ই ফ্রিল্যান্সাররা পুরো দিনটাকেই তাদের কাজের সময় বানিয়ে ফেলে। আপনি কোন সময় কাজ করবেন এবং একটানা কতক্ষন কাজ করবেন তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখুন।

২. নির্দিষ্ট অবকাশের সময়: কাজের সময়ের মতোই কতক্ষন অবসর সময় কাটাবেন সেটাও ঠিক করে রাখা দরকার তা না করলে যখন আপনি অবকাশ পাবেন তখন ঠিক করেই উঠতে পারবেন না যে ওই সময়টা কিভাবে কাটাবেন ফলে ওই সময়টা আপনি নষ্ট করে ফেলবেন। স্ট্রেস কমানোর জন্য এবং সমস্ত কাজ করেও আনন্দে থাকার জন্য অবসর সময় কাটানো খুব দরকার।

৩. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন: ফ্রিল্যান্সারদের কাজের ক্ষেত্রে কোনো সহকর্মী বা বন্ধুবান্ধব থাকে না তাই একা কাজ করতে করতে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন না। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অবসাদ ডেকে আনে, সমস্ত কাজ করেও সামাজিকভাবে মিশুন, সামাজিক অনুষ্ঠান ও কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন, কারন মানুষ সমাজবদ্ধ জীব।

৪. সচল থাকুন এবং ব্যায়াম করুন: একজায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা শরীরের জন্য ভালো নয়, নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীরই নয়, মনকেও ভালো রাখে। ব্যায়াম সরাসরি মন, ঘুম, শারীরিক সক্ষমতা, মেজাজ ইত্যাদির উপর প্রভাব ফেলে এবং স্ট্রেস কম রাখতে সাহায্য করে।

Proposal রাইটিং স্কিল: নিয়মিতভাবে কাজ পাওয়ার জন্য আবেদন করার দক্ষতা রপ্ত করা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বাধ্যতামূলক। একটা সুন্দরভাবে লেখা প্রপোসাল দ্বারা আপনি বহু অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদেরও পিছনে ফেলে দিতে পারেন। একটি সুন্দর প্রপোসালের জন্যই ক্লায়েন্ট আপনাকে তার কাজের জন্য পেতে চাইবে। এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় কিন্তু সময়ের সাথে আপনি এ বিষয়েও দক্ষ হয়ে উঠবেন।

আরো পড়ুনঃ মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়

সুন্দর প্রপোসাল লেখার কিছু কৌশল

১. কাজ এবং যিনি কাজ দিয়েছেন সেই ক্লায়েন্টকে বিশ্লেষণ করা: কাজের বিবরণ খুটিঁয়ে পড়া দরকার যাতে আপনি বুঝতে পারেন ক্লায়েন্ট ঠিক কি চাইছে, ক্লায়েন্টের চাহিদা ভালোভাবে না বুঝলে সঠিক প্রপোসাল লেখা সম্ভব নয়। কাজের বিবরণ থেকেই তৈরী করা প্রপোসাল ক্লায়েন্টকে অবশ্যই খুশি করবে।

২.নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা: প্রপোসাল এ সেই সমস্ত কিছুই উল্লেখ করবেন যে বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনি আত্মবিশ্বাসী। অযথা বাড়তি কথা লিখবেন না।

৩. দৃঢ়ভাবে আবেদন করুন: প্রপোসাল এ কখনই যেন কাজ সম্পর্কে আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব না চোখে পড়ে, এমনভাবেই লিখুন যাতে ক্লায়েন্ট এর মনে হয় এই কাজটি করার জন্য আপনিই সেরা।

৪. নির্দিষ্ট হন: কাজটি ঠিক কি কি ধাপে করবেন এবং কিভাবে করবেন তা সম্পর্কে আগেই একটা ধারণা তৈরি করুন এবং প্রপোসালের মাধ্যমে ক্লায়েন্টকেও তা জানান এতে ক্লায়েন্ট বুঝবে যে আপনি কাজটি নিয়ে ভাবছেন এবং যত্ন সহকারেই কাজটি করবেন। বিভিন্ন ধরনের প্রপোসালের টেম্পলেট আপনি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

৫. ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল: নিজের কাজে দক্ষতা ছাড়াও নিজের প্রচার এবং সঠিক ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া ও তার কাছে পৌঁছনোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি। আপনার কাজ ডিজিটাল মার্কেটিং সংক্রান্ত না হলেও এটি প্রযোজ্য কারণ ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সার খোঁজার জন্য ইন্টারনেটেই সার্চ করবে তাই আপনার অনলাইন উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আপনার প্রত্যেক সফল কাজের রিভিউ এবং সঠিক পোর্টফোলিও অনলাইনে তুলে ধরতে হবে, নিজের কাজের দক্ষতা সম্পর্কে ছোটো ছোট ভিডিও তৈরি করতে পারেন যাতে ক্লায়েন্ট এর আপনার প্রতি বিশ্বাস বাড়ে। 

নিজের অনলাইন পরিচয়ের প্রসার করার জন্য পোর্টফোলিওর SEO করা দরকার, সোশ্যাল মিডিয়া শুরু থেকেই ফ্রিল্যান্সারদের খুব কাজের জিনিস এর মাধ্যমে আপনারা নিজের প্রচার করতে পারেন (ফেসবুক পেজ, লিংকডইন ও ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল বা টুইটার অ্যাকাউন্ট)।

৬. আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত স্কিল: ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ, নিজের পেশার উন্নতির সাথে সাথে আর্থিক সমস্ত বিষয়ের দিকেও নিজেকেই নজর রাখতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে থেকেই এই আর্থিক লেনদেন, সঞ্চয়, বিনিয়োগ সবকিছু সম্বন্ধে অবগত থাকতে হবে যাতে পরবর্তী সময়ে আপনার কাজ এইসব কারণে ব্যাহত না হয়। 

ফ্রিল্যান্সিং এ আয়ের পরিমাণ কখনই নির্দিষ্ট থাকে না, কোনো মাসে অনেক কাজ পেয়ে আপনি অনেক টাকা কামাতে পারেন আবার কোনো মাসে কাজ না পেলে আপনার আয় খুবই কমে যেতে পারে তাই এই ব্যাপারে মনকে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে।

যদি আপনি কাজ পাওয়ার জন্য কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস/প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন তবে আপনাকে নিজের কাজের মূল্য অনেক কিছু মাথায় রেখে ঠিক করতে হবে। যেমন – ওই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাসিক চার্জ, টাকা withdraw করার ফীস, ডিজিটাল ওয়ালেট এর transaction বা ট্রান্সফার ফীস প্রভৃতি। ট্যাক্স অ্যাকাউন্ট, লিভিং অ্যাকাউন্ট, এমার্জেন্সি অ্যাকাউন্ট, রিটায়ারমেন্ট অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি আগে থেকেই আলাদা আলাদা করে রাখুন। 

আরো পড়ুনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব

কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। যে কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ১। ট্র্যাডিশনাল ২। নন ট্র্যাডিশনাল

ট্র্যাডিশনাল – এই ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট তার কাজটি পোস্ট করে এবং যে ফ্রিল্যান্সাররা কাজটি করতে ইচ্ছুক হয় তারা তাদের ফীস অনুযায়ী বিড করে। ক্লায়েন্ট তাদের বিড ও প্রোফাইল দেখে তাদের মধ্যে থেকে ফ্রিল্যান্সার নির্বাচন করে।

নন ট্র্যাডিশনাল – এই ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজের দক্ষতা তুলে ধরে gig তৈরি করে, এতে তাদের কাজ সম্পর্কে ভিডিও, মূল্য এবং বিবরণ থাকে, ক্লায়েন্ট এই gigs গুলি বিশ্লেষণ করে ঠিক করে যে কে তাদের কাজের জন্য উপযোগী হবে। এই দুই মাধ্যমের কোনটি বেছে নেবেন নাকি দুটোই ব্যবহার করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।

কোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার আগে অবশ্যই দেখবেন সেটার ব্যবহার সুবিধাজনক কিনা, বিভিন্ন ক্লায়েন্ট এর দেওয়া পারিশ্রমিক তুলনা করার সুবিধা যেন থাকে। অনলাইনে সার্চ করে দেখে নিন আপনি যে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে চলেছেন সেটা ক্লায়েন্টদের মধ্যে কতটা জনপ্রিয় এবং বাজারে তার স্বচ্ছতা কতটা।

এই অনিশ্চিত রোজগারের পেশায় এসেও আপনি রোজগার সুনিশ্চিত করতে পারেন যদি আপনার পছন্দ করা মার্কেটপ্লেস /প্ল্যাটফর্মটি সঠিক হয়। প্ল্যাটফর্মের পেমেন্ট পদ্ধতি কতটা মসৃণ তা খেয়াল করবেন, আপনার কাজের পারিশ্রমিক পেতে অযথা দেরি যাতে না হয়।

প্ল্যাটফর্মের সাপোর্ট সিস্টেম যেন সর্বদা দ্রুত প্রত্যুত্তর দেয়, স্ক্যাম হলে তা ওই প্ল্যাটফর্ম কিভাবে সামলায় এবং ফ্রিল্যান্সারদের কিভাবে সাহায্য করে তাও দেখে রাখতে হবে এজন্য প্ল্যাটফর্মের সুনাম যাচাই করা জরুরি। নীতিগত ভাবে ঠিক থাকুন: নিজের কাজে সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং নীতি মেনে কাজ করা আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জনে সাহায্য করবে।

প্রতিটি কাজই একইরকম গুরুত্ব সহকারে করুন, ঠান্ডা মাথায় ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝুন, বিশ্বস্ততা বজায় রাখুন, মনঃসংযোগের সাথে ত্রুটিহীনভাবে কাজ সম্পন্ন করুন। ক্লায়েন্ট যেন দরকার অনুযায়ী আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে, কাজ নেওয়ার পর কখনই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন না কারণ যে কোনো মুহূর্তে ক্লায়েন্ট তার চাহিদা বদলাতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ পৌঁছে দিন নয়তো শুধু যে আপনার খ্যাতি নষ্ট হবে তাই নয় আপনার ক্লায়েন্ট ও সমস্যায় পড়তে পারে।

কাজের প্রতি উদারতা দেখান, যে সমস্ত ফ্রিল্যান্সাররা তাদের নির্ধারিত মূল্যের বাইরেও কিছু কাজ দরকার মতো করে দেয় তারা ক্লায়েন্টদের কাছে বেশি পছন্দের হয়, কোনো ভুল করলেও তা মার্জিতভাবে ক্লায়েন্টকে জানান। শুরু থেকেই সব একদম ঠিকঠাক হতে হবে এরকম ভাববেন না, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলাই সফলতার শ্রেষ্ঠ পথ, তাই দেরি না করে যাত্রা শুরু করুন।

ব্লগ ক্যাটাগরি: