সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম — মানব জীবনে সকলের যেমন ভালো সময় আসে ঠিক তেমনি ভাবে আসে খারাপ সময়। প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। আমরা অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকি। যেটার পরিত্রাণ শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজে করতে পারেন। না কোনো মানুষ সেখান থেকে উত্তোলন করতে পারে না। সালাতুত সালাতুল হাজত নামাজকে প্রয়োজনীয় নামাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

আজকের পোষ্টে আমরা সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানতে চলেছি। প্রতিটি মুসলিম নর ও নারীর সালাতুত হাজত নামাজ সম্পর্কে জানা অনেক বেশী প্রয়োজনীয়। আপনি যদি সালাতুত হাজত নামাজের নিয়ম জানতে চান তাহলে পোষ্টটি সম্পুর্ণ পড়ুন।

আরো পড়ুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

পেজ সূচীপত্রঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুত হাজত কি?

সালাতুত হাজতকে বিপদের মুহুর্তের ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন সংকটময় মুহুর্তে যেখানে, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সাহায্য করতে পারবে না। তখন সালাতুত হাজত নামাজ পড়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্যের প্রার্থনা করা। বান্দা প্রভুর খুব সন্নিকটে আসে যখন সে নামাজরত অবস্থায় থাকে। আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হলো নামাজের মাধ্যমে চাওয়া।

এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আল্লাহ তায়ালা সমাধান করতে পারেনা। আমাদের প্রত্যহিক জীবনের সকল চাওয়া কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। বিপদে আল্লাহকে স্বরণ করার মাধ্যমে প্রভুর কাছে সাহায্যের প্রার্থনা তুলে ধরা যায়। সালাতুত হাজত এর উত্তম প্রমাণ হিসেবে যদি বলা হয় তাহলে বলতে হয়। 

হাদিসে এসেছে- হযরত ইব্রাহিম (আ) এর স্ত্রী যখন অপহুত হয়ে মিশরের লম্পট সম্রাট এর নিকট নীত হলেন এবং তার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলেন। তখন ইব্রাহীম (আ) স্ত্রী অযু করে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইলেন। অতঃপর সাথে সাথে লম্পট সম্রাট এর হাত পা অবশ হয়ে গেছিলো। পরপর ৩ বার চেষ্টার পর ব্যার্থ হয়ে ইব্রাহীম (আ) স্ত্রীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। (বুখারী হাদিস ২২১৭)

উক্ত ঘটনা থেকে আমরা সালাতুত হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বুঝতে পারি। যখন বিশ্বের কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাইলেই আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ বাজারে যাওয়ার দোয়া

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুত হাজত নামাজের নির্ধারিত কোনো নিয়ম নেই। শুধুমাত্র হারাম সময় ব্যাতিত (সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত) সকল সময়ে পবিত্রতা অর্জন করে এ নামাজ পড়া যায়। সালাতুত হাজতকে ২ রাকাআত নফল নামাজ ও বলা হয়। অনেকেই জানেন না সালাতুত হাজত নামাজ কত রাকাত? মূলত সালাতুত হাজত নামাজ ২ রাকাত পড়তে বলা হয়েছে। 

মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা বিপদের সম্মুখীন হবে, অযু করে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিবে। অন্যান্য নামাজের মতই সুরাহ মিলিয়ে আপনাকে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে বৈধ ভাবে দোয়া পাঠ করা। এমম কিছু চাওয়া উচিত নয় যেগুলো মানুষের অকল্যাণ ডেকে আনে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়তঃ হাজত নামাজের জন্য নিয়ত করবেন, মনের হাজত পূর্ণ হওয়ার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আল্লাহর নামে আদায় করতে নিয়ত করলাম..আল্লাহু আকবার। আরবিতে অন্যান্য নামাজের মতই সামান্য পরিবর্তন করে বলবেন, হাজত নফল এই কথাটা।

আরো পড়ুনঃ ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া

সালাতুত হাজত শেষ করার পরে প্রয়োজনে এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন- ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢ"ُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ"

উচ্চারণঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শারীরিক-মানসিক, পারিবারিক-সামাজিক সহ যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ ও দুঃশ্চিন্তায় মহান আল্লাহর কাছে নামাজ ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত কিংবা বিপদে নামাজ ও দরূদ পড়ার বিকল্প নেই। বৈধ পন্থায় বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সালাতুল হাজতের ভূমিকাই অনন্য।

শেষ কথা

প্রতিটি মুসলমানের এক মাত্র আশ্রয়স্থল শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। আল্লাহ তায়ালা তার স্বীয় বান্দাদের দোয়ার মাধ্যমে চাইতে বলেছেন। বিপদের সময়ে আমাদের উচিৎ সবর রেখে আল্লাহর প্রার্থনা করা। মানুষের কার্যকম যেখানে শেষ আল্লাহ তায়ালা সেখান থেকেই শুরু করতে পারেন। সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: