তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় — তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারিত নফলের মধ্যে তাহাজ্জুদ সর্বোৎকৃষ্ট আমল। আর এই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় কিংবা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সময় কখন অনেকেই আছেন সেই সম্পর্কে জানতে চান। তাহাজ্জুদ নামাজ ঘুম ত্যাগ করে গভীর রাত্রিতে আদায় করতে হয় তাই এই নামাজের প্রতিদানও অনেক বেশি। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

অর্থাৎ এশার সালাত আদায় করার পরে থেকে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় এবং রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত সময় থাকে। তবে হ্যাঁ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সর্বোত্তম সময় হচ্ছে রাতের শেষ অংশ। কিংবা ফজরের নিকটবর্তী সময়, যে সময়টা রাতের ১ তৃতীয়াংশ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। 

তাহাজ্জুদ নামাজ নবীজি (সা.) নিয়মিত পড়তেন। তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত, অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এই নামাজ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য ছিলো। এই তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা ৮, ১২ থেকে ২০ পর্যন্ত উল্লেখ পাওয়া যায়। ৪ রাকাত বা ২ রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে। এই নামাজকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘কিয়ামুল লাইল’ নামাজও বলা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী (সা.) কে এই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়তোবা আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন (মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন)।’ [সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত:৭৯]

হজরত আলী (রা.) বলেন: যাঁরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে ঊর্ধ্বারোহণ করেছেন; তাঁরাই সাহার বা শেষ রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (দিওয়ানে আলী (রা), নাহজুল বালাগা)। তাহাজ্জুদ নামাজের আগে এবং পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা খুবই উপকারী। 

এ সময় সূরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর-রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন। 

আল্লাহর নৈকট্য লাভঃ আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন, এরপর বলেন- কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো? কে আছে আমার কাছে কোনো কিছু চাইবে আর আমি তাকে তা দেবো? (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৪/৪৬)

মধ্যরাতের পরে কিংবা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রাত ২ টার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে অর্থাৎ ফজর নামাজের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা ভাবে আজান দেয়া হতো।

আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

বর্তমান সময়ে মক্কা শরিফে এবং মদিনা শরিফে এই নিয়মটি চালু রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজের আজানের পরেও (ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত) সাহরি খাওয়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা একা পড়াই উত্তম। তাই অন্য সকল সুন্নত এবং নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সুরা কিরাআত নিম্ন স্বরে পড়তে হয় এবং এর জন্য ইকামাতেরও প্রয়োজন হয়না। 

নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে করাই বাঞ্ছনীয়। তবে ‘তাহাজ্জুদ নামাজ অন্ধকারে পড়তে হয়’ বা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে জিন আসে’ অথবা ‘তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করলে নিয়মিত আদায় করতে হয়’ এ ধারণা সঠিক নয়। কারও ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং প্রচারের মানসিকতা যেন না থাকে এ বিষয়ে যত্নশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারলে তা অতি উত্তম। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

শেষ রাতে বিতর-তাহাজ্জুদঃ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেনঃ ‘যে রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ আদায়ের ব্যাপারে আশঙ্কা করে, সে যেন রাতের প্রথম ভাগে বিতর নামাজ পড়ে নেয়। আর যে শেষ ভাগে জেগে নামাজ আদায়ে আশা রাখে, সে যেন রাতের শেষ অংশে বিতর আদায় করে। কেননা, রাতের শেষ ভাগে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সাক্ষ্য রয়েছে এবং এটি সর্বোত্তম।’(মুসলিম, হাদিস : ৭৫৫)

এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, তাহাজ্জুদ আদায়ের সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ অংশ। তবে যার আশঙ্কা হয় যে, রাতের শেষ ভাগে জেগে তাহাজ্জুদ আদায় সম্ভব নয়; তার জন্য শুরুর ভাগে তাহাজ্জুদ আদায় করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)