ইফতারে কি খাওয়া উচিত | সেহরিতে কি খাওয়া উচিত

হাসিবুর
লিখেছেন -

ইফতারে কি খাওয়া উচিত — বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম অথবা কাবাব ইত্যাদি এসকল খাবার নয়। রমজান মাসে ইফতারিও হওয়া উচিত পরিমিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত। গরমকালে রোজা রাখা আমাদের জন্য বেশ কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কিন্তু সেহরি এবং ইফতারে উপযুক্ত পরিমাণে পুষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ্য রাখা যায়। বিশেষজ্ঞরা ইফতারের সময়ে এমন কিছু খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যেগুলাে পেট ভরার পাশাপাশি আমাদের শরীরের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সহায়তা করে।

ইফতারে কি খাওয়া উচিত

ডাক্তাররা আরো পরামর্শ দেন, গরমের সময় সারাদিন শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ঘামের মাধ্যমে বের হতে থাকে। আর রমজান মাসে রোজার দিনে শরীর এর পানির চাহিদা পূরণ করা যায়না। তাই শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য ইফতারে অনেক বেশি পানি পান করতে হবে। শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য যে কোনো রসালো বা তরল খাবার খেতে হবে যেমন-শরবত, ফলের রস, সুপ ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন। এতে করে সারাদিনের শরীরে পানির ঘাটতি কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, রমজান মাসে রোজার দিনে একেবারে বেশি বেশি পানি পান করা একদম উচিত নয়। ইফতার এর পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে কোন ভাবেই কৃত্রিম রং মেশানো জুস অথবা কোমল পানীয় পান করা ঠিক নয়। এতে করে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও সারাদিন কিছু না খেয়ে ইফতারের সময় আজেবাজে খাবার না খাওয়াই উত্তম।

ডাক্তাররা আরো বলেন, ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার জন্য অবশ্যই তেলসমৃদ্ধ এবং ভাজাপোড়া-জাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই হবে আপনার জন্য উত্তম। তবে যদি আপনি চান তাহলে হালকা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারেন বা আপনার ইফতারের তালিকায় রাখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন তার পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয়ে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রমজান মাসের আমল | রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল

ডাক্তারদের দেওয়া আরও অন্যান্য পরামর্শগুলো হচ্ছে

সরাসরি ইফতারে মিষ্টি বা বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার না গ্রহণ করে পুডিং, মিষ্টি ফল খেতে পারেন। ঠিক ইফতারের সময় দুধ এর তৈরি মিষ্টিজাতীয় খাবার গুলো হচ্ছে- সেমাই, পায়েস ইত্যাদি খাবার গুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে এই ধরনের খাবার গুলো ইফতারের শেষে খেতে পারেন। রমজান মাসে ইফতারে খেজুর হচ্ছে একটি আদর্শ খাবার। খেজুর মিষ্টি ফল হওয়ার কারণে খুব তারাতারি রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও খেজুর ডাইজেস্টিভ এনজাইম পরিবেশক হিসেবে কাজ করে থাকে যা খাবার হজম করার জন্য সাহায্য করে।

ইফতারে শুধুমাত্র খেজুরই নয় অন্য যেকোন ফল আপনার ইফতারের তালিকায় রাখুন। এতে করে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের চাহিদা সহজেই পূরণ করা যাবে। তাছাড়া ফল আঁশজাতীয় খাবার হওয়ায় তা অন্যান্য খাবার হজম করতে সাহায্য করে। ইফতার এবং সেহেরিতে আঁশজাতীয় ফল খাওয়াই উত্তম। কেননা এই ধরনের ফলমূল অনেক সময় ধরে শরীরে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে। তাই ফলমূল এবং সবজি শরীরকে ‘ডিটক্সিফাইন’ করতে সহায়তা করে। ফলে শরীর সুস্থ্য থাকে।

ইফতারের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে চা ও কফি এবং কোমলপানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা বেশি পরিমাণে চা এবং কফি শরীরের মধ্যে পানি শূন্যতার তৈরি করে। অনেক সময় চা ও কফি পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। ইফতারের সময় পেট ঠাণ্ডা থাকে এমন ধরনের খাবার খেতে হবে যেমন- দুধচিড়া অথবা দই-চিড়া কিংবা মুড়ি খাওয়াই ভালো। দই খাওয়ার ফলে পেটের সার্বিক সুস্থ্যতা রক্ষা করতে সহায়তা করে।

অনেকেই আছেন যারা ইফতারে বিরিয়ানি, তেহারি, কাবাব ইত্যাদি ধরনের খাবার গ্রহণ করে থাকেন। যা গ্রহণ করা শরীর এর জন্য ক্ষতিকর। কোনভাবেই এই সকল খাবার ইফতারে খাওয়া উচিত নয়। কেননা এই খাবার গুলো পেট গরম করে তোলে, যার ফলে শরীরে নানা ধরনের পেটের অসুবিধা দেখা দেয়। তাই রমজানে সুস্থ্য থাকতে ইফতারের সময় বেশি বেশি করে তরল জাতীয় খাবার এবং ফলমূল খেতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রোজায় শরীরের ক্লান্তি দূর করার সহজ উপায়

ডাক্তাররা আরও বলেন, ইফতার শুরু করার সময়ে খুব বেশি তাড়াহুড়া করে খাবার খাওয়া উচিত নয়। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া উচিত। ইফতারে প্রথমেই দুই তিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করা। তারপরে কিছু সময় আনুমানিক ১০-১৫ মিনিট পরে ভারী খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কেননা আমাদের মস্তিষ্কে খাদ্যে সংবেদন পৌঁছাতে একটু সময় লাগে। নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই যদি খাওয়া শুরু করা হয়ে থাকে তাহলে অধিক ভোজনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় যা ওজন বাড়ার জন্য অন্যতম কারণ।

সেহেরিতে কি খাওয়া উচিত — আত্নশুদ্ধির মাস রমজান মাস। রমজান মাসে অনেকেই মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকে সেটা হচ্ছে সেহরিতে খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাবার গুলো রাখলে সুস্থ্য এবং সফল ভাবে সারা দিন সারা মাস রোজা রাখা যাবে। প্রথমত আমাদেরকে খেয়াল রাখা উচিত সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ইফতার ও সেহরি উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমরা ইফতারের উপর যে আমরা যত বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি, ঠিক সেহরিতে তত বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি না। যার কারণে আমরা রোজা রেখে হয়ে যাই অতিরিক্ত ক্লান্ত। চলুন জেনে নেই সেহেরিতে আমাদের কি কি খাওয়া উচিৎ এবং সেহরিতে কি খাওয়া উচিৎ না।

সেহরিতে যা যা খাবেন

প্রচুর আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণঃ যেসকল খাবারে প্রচুর পরিমাণে আঁশসমৃদ্ধ রয়েছে সেই সকল খাবার গুলো শোষণ করতে শরীর বেশি সময় নিয়ে থাকে। যার ফলে রোজা রাখা অবস্থাতে আমাদের শরীর বেশি সময়ের জন্য শরীর থাকে শক্ত সামর্থ্য এবং শরীরে ক্ষুধা কম লাগে। আঁশসমৃদ্ধ খাবার গুলো হচ্ছে- আম, গাজর, কলা, বাদাম, আপেল ও ডাল আঁশসমৃদ্ধ খাবার এর উদাহরণ।

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুনঃ সেহেরিতে উঠে কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করে নিন। রোজা রেখে আমাদের প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি গ্রহণ করা উচিৎ। প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি পান করার ফলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহয়তা করবে এবং এই পদ্ধতিতে আপনি বেশি পরিমাণে পানিও পান করতে পারবেন।

পানি সমৃদ্ধ ফল এবং সবজিঃ যেসকল ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে যেগুলো খেলে শরীরে পানির তৃষ্ণা কম পাবে। শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে সেহরিতে খেতে পারেন তরমুজ, আপেল, তাল অথবা কমলা।

আরও পড়ুনঃ পবিত্র মাহে রমজানের সুন্নত আমল

ডিমঃ ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা খাওয়ার ফলে মাংসপেশি হবে শক্তিশালী এবং আপনি পাবেন সারা দিন রোজা রাখার মতো প্রয়োজনীয় শক্তি।

অল্প ফ্যাট সমৃদ্ধ দুধ পান করুনঃ অল্প ফ্যাট সমৃদ্ধ দুধ শরীর এর জন্য খুবই প্রয়োজন। সেহরীতে এক গ্লাস দুধ আপনার সারাদিনের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারঃ রোজা রাখা অবস্থায় আপনার শরীরে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেটের জুড়ি নেই। এই উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সেহেরিতে পরিমিত পরিমাণে আলু, ভাত, সুপ অথবা দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।

সেহরিতে যা যা খাবেন না

ক্যাফেইন ড্রিংকসঃ সেহরিতে চা ও কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় আপনার শরীরে তৃষ্ণা এবং শরীরের তাপমাত্রাকে আরও বৃদ্ধি করে দিবে।

অধিক পরিমাণ বা ভারি খাবার গ্রহণঃ রোজা রাখা অবস্থাতে যেন আমাদের ক্ষুধা না লাগে সেইজন্য অনেক এই সেহরিতে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ করে থাকে যেটা করা কখনোই আমাদের জন্য উচিত না। আর যদি আপনি এই কাজটি করে থাকেন তাহলে আপনার পাকস্থলীর উপরে পড়বে অতিরিক্ত চাপ এমনকি হতে পারে আপনার হজমজনিত সমস্যা।

মাত্রাতিরিক্ত পানি পান পরিহার করুনঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে সেহরিতে অনেক বেশি পরিমাণে পানি পান করার ফলে আপনার শরীরে আসতে পারে হজমজনিত সমস্যা। তবে এটা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনি কতটুকু পানি পান করে অভ্যস্ত সেটার উপরে। 

লবণযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কারন এই জাতীয় খাবার গ্রহণ করার ফলে দেহে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়।

সবশেষে সবাই রমজান মাসে পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবার গ্রহণ করবেন এটাই প্রত্যাশা থাকবে।

আরও পড়ুনঃ লেবুর অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা

ব্লগ ক্যাটাগরি: