রমজান মাসে কি কি করা উচিত

রমজান মাসে কি কি করা উচিত - প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজান মাসে কি কি করা উচিত? এ বিষয়ে সম্পর্কে আলোচনা করব। আর কিছুদিন পর শুরু হতে চলেছে মুসলমানদের কাছে সবথেকে বড় ধর্মীয় ইবাদত এর মাস মাহে রমজান। আমরা অনেকেই জানিনা রমজান মাসে কি কি করা উচিত? তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে রমজান মাসে কি কি করা উচিত? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

রমজান মাসে কি কি করা উচিত

পেজ সূচিপত্রঃ রমজান মাসে কি কি করা উচিত

আপনি যদি রমজান মাসে কি কি করা উচিত? জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে রমজান মাসে কি কি করা উচিত? অর্থাৎ রমজান মাসে কি আমল করা উচিত এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকাঃ রমজান মাসে কি কি করা উচিত

প্রতিটি মুসলমানের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস হলো রমজান মাস। আমরা অনেকেই রমজান মাসের তাৎপর্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কে জানি। আল্লাহ তায়ালার কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং পছন্দের মাস গুলোর মধ্যে রমজান মাস অন্যতম একটি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজান মাসে কি কি করা উচিত? এ বিষয়ে আলোচনা করব।

এছাড়া রমজান মাস কত তারিখ থেকে? রমজান মাসের ফজিলত, রমজান মাসের ইবাদত সমূহ, রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর সময় নষ্ট না করে উক্ত বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালের রমজান মাসের ক্যালেন্ডার

রমজান মাস কত তারিখ?

রমজান মাস কত তারিখ থেকে শুরু এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। যেহেতু রমজান মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস তাই রমজান মাসের একটি পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। যেন আমরা আল্লাহ তায়ালার খুশির জন্য সব কয়টি রোজা আদায় করতে পারি।

2023 সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছর রমজান মাস শুরু হবে মার্চ মাসের শেষ থেকে। সাধারণত ১৪৪৪ হিজরী ক্যালেন্ডার এবং ২০২৩ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছর রমজান মাস শুরু হবে মার্চ মাসের ২৪ তারিখ থেকে। যদিও প্রতিটি হিজরী মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। তাই প্রথম রোজা কবে হবে সেটি সম্পন্ন চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের ফজিলত এবং বরকত অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়। এছাড়া রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে সকল কবরবাসীর কবরের আজাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখান থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি যে রমজান মাসের ফজিলত এবং গুরুত্ব কতটা বেশি।

রমজান মাসে রোজাদারের রোজা থাকার কারণে মুখের গন্ধ আল্লাহতালার কাছে অনেক প্রিয়। রমজান মাসে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য ইফতার করা পর্যন্ত ইস্তেগফার ও গুনাহ মাফ চাইতে থাকে।রমজানের প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, " আমার রোজাদার বান্দারা অচিরেই তাদের পরিশ্রম ও কষ্ট দূরে সরিয়ে তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।"

রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। যে রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। এ রাতের কল্যাণ থেকে যে বঞ্চিত হয় সে সকল ধরনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। রমজান মাসের শেষ রাত্রে রোজাদারদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজের সমতুল্য। এবং একটি ফরজ ইবাদত ৭০ টি ফরজের সমতুল্য।

রমজান মাসের ফজিলত অনেক বেশি। এর ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারো"

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন," রোজাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেসওয়াকের চেয়ে বেশি ঘ্রাণযুক্ত।" আরো বলেন,"ইফতার পর্যন্ত রোজাদারদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন।" রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়। এ হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে রমজান মাসের গুরুত্ব এবং ফজিলত কত বেশি।

আরো পড়ুনঃ সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২৩ ঢাকা

রমজান মাসের ইবাদত সমূহ

রমজান মাস হল ইবাদত বন্দেগীর মাস। আল্লাহতালা রমজান মাসে ইবাদতের অত্যন্ত মর্যাদা দিয়ে থাকেন। একই ইবাদত আমরা অন্যান্য মাসে করে যে নেকি পাওয়া যায় তার থেকে 70 গুণ বেশি নেকি পাওয়া যায় একটি ফরজ আদায় করলে। এছাড়া রমজান মাসে যদি একটি নফল আদায় করা হয় তাহলে একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।

রমজান মাসে প্রত্যেক সুস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের জন্য রোজা করা ফরজ। এর পাশাপাশি নামাজ আদায় করা ফরজ। নফল নামাজ আদায় করতে পারেন বেশি বেশি। এছাড়া রমজান মাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে সবথেকে গ্রহণযোগ্য ইবাদত এর মধ্যে অন্যতম হলো কোরআন তেলাওয়াত। রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন।

বিশেষ করে রমজান মাসের রাতে নফল ইবাদত করতে পারেন। নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে নামাজ আদায় করা। রমজান মাসে আপনি বেশি বেশি নামাজ আদায় করতে পারেন। একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদত করার সমান নেকি আমলনামায় লেখা হয়। তাই আমরা যত সম্ভব রমজান মাসে এবাদত করার চেষ্টা করব।

রমজান মাসে কি কি করা উচিত

যেহেতু রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘ এক বছর পর এই মাস আমাদের কাছে আসে তাই রমজান মাসে কি কি করা উচিত এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সম্পন্ন ধারণা থাকতে হবে। রমজান মাসের গুরুত্ব এবং ফজিলত আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক বেশি। আল্লাহর তালার নৈকট্য অর্জন করা হলো রমজান মাসের অন্যতম লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,' হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রোগ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারো' রোজা পানাহার এবং শারীরিক চাহিদাকে সংযম করার মাধ্যমে আল্লাহতালার নির্দেশ জীবন পরিচালনা করতে হয়।

রমজান মাসে বেশি বেশি নামাজ আদায় করতে হবে। বিশেষ করে নকল ইবাদত এর মধ্যে নামাজ আদায় করতে হবে বেশি। এছাড়া রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। আল্লাহতালার কাছে সবথেকে গ্রহণযোগ্য এবং প্রিয় ইবাদত গুলোর মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত অন্যতম। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে।

রমজান মাসে অসহায় এবং গরিব দুঃখী মানুষকে দান করতে হবে। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অথবা অন্য কোথাও কোন অসহায় ব্যক্তিকে দেখতে পেলেই তাদেরকে দান করতে হবে। এলাকার আশেপাশে কোন গরিব ব্যক্তি থাকলে তাদেরকে খুঁজে রমজান মাসে রমজানের সামগ্রী গুলো পৌঁছে দিতে হবে।

এছাড়া রমজান মাসের অন্যতম একটি সেরা ইবাদত হলো রোজাদারকে ইফতার করা। কেউ যদি একজন রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে সে একটি রোজার সমান সওয়াব অর্জন করবে। তাই রোজার মাসে আমাদেরকে রমজান মাসে রোজাদারকে ইফতার করাতে হবে।

রমজান মাসের গুরুত্ব

ফরজ নামাজ ও রোজা, এশার নামাজের পর তারাবিহ পড়া, সেহরির আগে তাহাজ্জুদ পড়া, যথাসম্ভব জিকির ও কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে সময় কাটানো উচিত। সেই সঙ্গে দান সাদকা করা, আশেপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হক আদায় করা বাঞ্ছনীয়।

অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, অন্যের হক খাওয়া, সুদ ও জুয়াসহ সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে তো সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরজ, রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায়।

প্রিয় নবীজি সাঃ এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেছেন, রাসুল সাঃ এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। {বুখারী, মুসলিম}

অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাঃ ইরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। {বুখারী, মুসলিম}

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেছেন, হুজুর সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। {বুখারী, মুসলিম}

আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালের রমজানের ঈদ কত তারিখ

শেষ কথাঃ রমজান মাসে কি কি করা উচিত

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজান মাসে কি কি করা উচিত? রমজান মাস কত তারিখ থেকে? রমজান মাসের ফজিলত, রমজান মাসের ইবাদত সমূহ, রমজান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)