ওমিক্রন এর লক্ষ্মণ - ওমিক্রন এর লক্ষ্মণ কি কি

ওমিক্রন ভাইরাসের লক্ষ্মণ - ওমিক্রন এর লক্ষ্মণ কি কি - অমিক্রন ভাইরাসের লক্ষণ — করোনা ভাইরাসের নতুন রুপ বা ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ওমিক্রণ যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তুলেছে। ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

এই ভেরিয়েন্টের রূপান্তর ঘটেছে অনেক ধরনের যা কোনো বিশেষজ্ঞের চোখে আগে কখনো ধরা পড়েনি। এতে বুঝা যায় যে কিছু একটা অস্বাভাবিক সংক্রমণ ঘটছে ওমিক্রণ দ্বারা যা সকলকে নাড়া দেয়।

ওমিক্রন কি 

বিশেষজ্ঞদের মতে এইচআইভি বা এইডস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রণ তার রূপান্তর ঘটিয়েছে। এমন রোগী যার এইচআইভির কোনো চিকিৎসা করানো হয়নি এবং ব্যক্তিটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল প্রকৃতির। এই ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ২৪ নভেম্বর যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানো হয় দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক। 

আগের ভেরিয়েন্টগুলো থেকে ওমিক্রণের সংক্রমণ অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার পর এটি দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের বায়োলজিস্ট ডক্টর ল্যারি কোরি বলেছেন, এখন আমাদের কাছে আরো বেশি তথ্য আছে যা থেকে ধারণা করা যায়- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে।

নতুন ভেরিয়েন্টের এই ভাইরাস ৫০ বার তার পরিবর্তন ঘটিয়েছে যার মধ্যে স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন হয়েছে ৩০ টির ও বেশী। যা অমিক্রণ ভ্যারিয়েন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। অথচ মাত্র ৭ বার স্পাইক প্রোটিনের পরিবর্তন হয়েছিল ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে। সারাবিশ্বে গবেষণা করে দেখা যায় এই ভাইরাস অতিদ্রুত ও কম সময়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ারও দীর্ঘ সময় শরীরে থাকার সম্ভাবনা আছে তাদের শরীরে যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যাধিক দুর্বল। 

আরো পড়ুনঃ রাত জেগে মোবাইল চালালে কি হয়

যদিও SARS-CoV-2 অল্প সময়ের মধ্যে শরীর থেকে দূর হয়েছে। ব্যাক্তির মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে এই ভেরিয়েন্ট এই তত্ত্বর উপর বেশিরভাগ বিজ্ঞানী সমর্থন করছে। উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট হিসেবে প্রথমবারে এটিকে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১০১ দিন পর মৃ- ত্যু ঘটে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হওয়া ওই রোগীর যা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া গিয়েছিল যুক্তরাজ্যে।

ক্যান্সার আক্রান্ত বা এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগী অথবা কোন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এমন রোগীর শরীর সাধারণত দুর্বল হয় ও তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এ ধরনের রোগীর মধ্যে ভাইরাসটি অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ সৃষ্টি করে। ডক্টর লেসেলস এর মতে অমিক্রণ এর সাথে বড় ধরনের পার্থক্য পাওয়া যায় বর্তমানে যেসব ভেরিয়েন্ট রয়েছে তাদের থেকে।

দক্ষিণ আফ্রিকা বসবাসরত এইচআইভি আক্রান্ত নারীর করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করে ডক্টর লেসেলস ও তার সহকর্মী দল। তারা জানতে পারেন আক্রান্ত ওই নারীর কোন ধরনের চিকিৎসা করানো হয়নি এইচআইভি এর জন্য। সেই নমুনার জেনেটিক অনেকবার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে সেই নমুনায়। 

৮০ লাখের মত মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত আফ্রিকাতে সাহারা মরুভূমির আশে পাশের দেশগুলোতে, যাদের আ্যন্টি রেট্রোভাইরাল এর কার্যকরী থেরাপি দেয়া হয়নি বা দেয়া হচ্ছে না। এবং এমন আরো অনেক ব্যক্তি রয়েছে যাদের এই রোগের ব্যাপারে কোনো পরীক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি। ডক্টর ল্যারি কোরির মতে, তারা অমিক্রণ এর জেনেটিক বিশ্লেষণ করে ধারণা করেন যে মানবদেহেই এই ভেরিয়েন্ট এর উৎপত্তি সাধিত হয়েছে।

দ্বিতীয় ধারণা মতে অমিক্রণ এর উৎপত্তির ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে এটি একজন ব্যক্তির দেহে জন্ম হয়নি বরং একটি এলাকার ভিতরে লোক জনের সংক্রমণের মাধ্যমে ঘটেছে। গামা ভেরিয়েন্ট এর উৎপত্তির সাথে অমিক্রণ এর মিল খুঁজে পান ব্রাজিলের বায়োলজিস্ট ও গবেষক ডক্টর ইমারিনো। 

ডক্টর মাইকেল হেড যিনি যুক্তরাজ্যে সাদম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় এ আছেন তিনি বলেন, নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট বের হয়ে আসার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু টিকার এই অন্যায্যতা এর অন্যতম প্রধান কারণ। আমি বিশ্বাস করি আফ্রিকায় এই অসাম্যের কারণেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটেছে।

আরো পড়ুনঃ ফুসফুস ইনফেকশনের লক্ষণ | ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ

ওমিক্রন এর লক্ষ্মণ - ওমিক্রন এর লক্ষ্মণ কি কি

দ্রুত বিস্তারকারী করোনার এই নতুন রূপের প্রজাতি অমিক্রণ অন্যান্য ভেরিয়েন্ট থেকে আরও বেশি ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে। অমিক্রণের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা ভিন্ন ধরনের। যেমনঃ (১) আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় (২) শুকনো কাশির সাথে গলা ব্যথা (৩) পেশি বা শরীর ব্যথা দেখা দেয় এছাড়া রোগী প্রচুর ক্লান্তিতে ভোগে (৪) ৪০ বছরের কম বয়সের লোকেরা বেশিরভাগ ওমিক্রণে আক্রান্ত হয়। 

তাছাড়া রক্তে অক্সিজেন লেভেল কম হওয়ার যে বিষয়ে করোনা ভাইরাসে লক্ষণীয় ছিল তা এই অমিক্রণ ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। ব্যাথার কিছু উপসর্গ দেখা গেলেও স্বাদ হীনতা ও গন্ধহীনতার কোন উপসর্গ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। জ্বর, স্বাদ ও গন্ধ হীনতা এবং কাশি এ তিনটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে কোভিড-১৯ এর যা এখন পর্যন্ত সময়ে ও করোনার প্রথম ও প্রধান উপসর্গ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ওমিক্রণ তার হালকা ও মৃদু উপসর্গ নিয়ে এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর মৃদু ধরনের জন্যই এটি এতদিন শনাক্ত হয়নি।

বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনার এই নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন। সরকারি সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত ২৪ জন বাংলাদেশী নাগরিকের শরীরে ওমিক্রন ভাইরাসের অবস্থান জানান দিয়েছে। ১২৮ টি দেশে অমিক্রণ ছড়িয়েছে যা জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে। তাই এর দ্রুত বিস্তার রোধ করতে হলে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সোশ্যাল ডিসটেন্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। যেকোনো ধরনের জনসমাগম বা সমাবেশ পরিহার করতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক যা অনিবার্য করতে হবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)