জন্ম নিবন্ধন সংশোধন - জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন — জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন - জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম ২০২২ — জন্ম নিবন্ধন সনদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটি নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। জন্ম নিবন্ধন সনদ যেহেতু একটি জাতীয় পর্যায়ের পরিচয়পত্রের আওতাভুক্ত হয়, তাই এটি খুবই প্রয়োজনীয় যে এই নিবন্ধনে সমস্ত তথ্য নির্ভুল থাকা অবশ্যই জরুরি। 

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদে ভুল ধরা পরে যা পরবর্তীতে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের সুবিধা দিয়েছে সরকার। অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করা যাবে এক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন কপি নিজের কাছে পাওয়া যাবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের জন্য কিছু প্রমান দরকার যা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। যেমনঃ অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ, অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনকারীর বাবার জন্ম নিবন্ধন সনদ, অনলাইনে নিবন্ধিত আবেদনকারীর মায়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ, আবেদনকারীর টিকা সনদ, আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন সার্টিফিকেট অথবা অন্যান্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সনদ যা সঠিক তথ্য প্রমাণ করে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ পুণর্মুদ্রণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নীতিমালা অনুযায়ী তথ্য সংশোধনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ফি প্রদান করার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করা যাবে। বিভিন্ন সংশোধনের আবেদনের ক্ষেত্রে সংশোধন ফিতে ও ভিন্নতা হয়ে থাকে। নিচে সংশোধন ভেদে কিছু ফি এর পরিমান তুলে ধরা হলোঃ

সংশোধন তথ্য দেশ-বিদেশ
উভয় ভাষায় বাংলা ও ইংরেজিতে মূল সনদ বা তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি সরবরাহ বিনামূল্যে
উভয় ভাষায় বাংলা ও ইংরেজি সনদের নকল সরবরাহ ৫০ টাকা -১ ডলার
নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য (জন্ম তারিখ ছাড়া) ৫০ টাকা - ১ ডলার
তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা - ১ ডলার

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার ক্ষেত্রে সহায়ক তথ্য

জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রে বাবা ও মায়ের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী সংশোধনের ভিন্নতা রয়েছে। সংশোধন করার ধরনের উপর নির্ভর করে তা কতটুকু সহজ বা কতটুকু ঝামেলা যুক্ত হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড

জন্ম নিবন্ধন বাবা ও মায়ের নাম সংশোধন করার ক্ষেত্রে

প্রথমত দেখতে হবে বাবা ও মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ নিবন্ধিত আছে কিনা। আর যদি ডিজিটাল নিবন্ধন সনদ থেকে থাকে তাহলে তা সঠিক কিনা। যদি জন্ম নিবন্ধন সনদ সঠিক হয়, আর আবেদনকারী যদি জন্ম নিবন্ধনের সময় তার বাবা ও মায়ের ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে আবেদন করে থাকে তাহলে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার বাবা ও মায়ের নাম সংশোধিত দেখা যাবে। তারপর সেই সংশোধিত নামসহ জন্ম নিবন্ধন সনদটি প্রিন্ট করে নিলেই হবে।

যদি আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ করার সময় তার বাবা ও মায়ের ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার না দিয়ে থাকে তাহলে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধনের সাথে তার বাবা ও মায়ের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। এতে আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করার পর আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের নাম সংশোধিত অবস্থায় দেখা যাবে।

বাবা ও মার জন্ম নিবন্ধন যদি না থাকে আর তারা যদি আলহামদুলিল্লাহ জীবিত থাকে তাহলে আবেদনকারীর জন্ম তারিখ অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে। আবেদনকারীর জন্ম যদি ২০০১ সাল বা এরপর হয় তাহলে আগে বাবা ও মায়ের জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন এর সাথে আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের জন্ম নিবন্ধন ম্যাপ করতে হবে। এরপর আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করার পর আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের নাম সংশোধিত অবস্থায় দেখা যাবে।

আর যদি আবেদনকারীর জন্ম ২০০০ সাল বা তার আগে হয় তাহলে বাবা ও মায়ের জন্ম নিবন্ধন কপির দরকার হবে না শুধুমাত্র অনলাইন সংশোধনের আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজ সাবমিট করতে হবে।

আবেদনকারীর বাবা ও মা জীবিত না থাকলে আর তাদের জন্ম নিবন্ধন ও যদি না থাকে এবং আবেদনকারীর জন্ম যদি ২০০১ সাল বা তার পরের হয় সে ক্ষেত্রে সরাসরি আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করে আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের নাম সংশোধন করা যাবে। তবে অবশ্যই আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের মৃ- ত্যুর প্রমাণ পত্র দেখাতে হবে। এই ধরনের আবেদনের জন্য সরাসরি নিবন্ধন কার্যালয় উপস্থিত থেকে যোগাযোগ করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ টিন সার্টিফিকেট কি - টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করবো

জন্ম নিবন্ধনে ইংরেজি তথ্য সংযুক্ত করন

বর্তমানে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ এ ইংরেজি তথ্য সংযুক্ত হয়েছে যা আগে জন্ম নিবন্ধন সনদ এ দেয়া ছিল না। যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ ইংরেজি তথ্য সংযুক্ত করা নেই তারা তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ এ ইংরেজি তথ্য নিজেই যুক্ত করতে পারবে। সংশোধন হিসেবে তথ্যের পরিবর্তন, সংযোজন বিয়োজন করা হয়ে থাকে। সেজন্য উপরিউক্ত কোন কাজের একটি করতে হলে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন করতে হবে তথ্য সংশোধনের জন্য।

জন্ম নিবন্ধন সনদ বয়স বা জন্ম তারিখ সংশোধন

যথোপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা দিতে পারলে জন্ম নিবন্ধন সনদের বয়স সংশোধন বা জন্ম তারিখ সংশোধন করা যাবে। পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র, টিকার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এগুলো যেকোনোটি প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করলে আবেদনের অনুমোদন কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে সংশোধন করা হয়।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার নিয়ম ২০২২

জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ বার আবেদন করা যাবে এবং অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন সনদ ডিজিটাল বা অনলাইনে নিবন্ধিত থাকতে হবে। জন্ম সনদ সংশোধনের আবেদন স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটার দুটো দিয়েই করা যায়, যেহেতু ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে হবে তাই কম্পিউটার দিয়ে করলেই ভালো হয়।

আরো পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড সংশোধন করার নিয়ম | স্মার্ট কার্ডের ভুল সংশোধন

 প্রথম ধাপ

যে ডিভাইস দিয়ে আবেদন করতে ইচ্ছুক সেই ডিভাইসের ব্রাউজার অপশন ওপেন করে জন্ম নিবন্ধন এর ওয়েবসাইট লিঙ্কটি দিতে হবে। https://bdris.gov.bd/br/correction লিংকে প্রবেশ করার পর দেখা যাবে এখানে তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের অপশন রয়েছে। এরপর যে জন্ম নিবন্ধন সনদের সংশোধন প্রয়োজন সেই জন্ম নিবন্ধন সনদের ১৭ ডিজিট নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

দ্বিতীয় ধাপ

এই পেইজে আবেদনকৃত জন্ম নিবন্ধন সনদ এর সম্পূর্ণ তথ্য দেয়া থাকবে। এখানে আবেদনকৃত জন্ম সনদের আবেদনকারীর নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা দিতে হবে। সঠিক ঠিকানা দেয়ার পর ডান দিকের নিচের নির্বাচন করুন অপশনে ক্লিক করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

আরো পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

তৃতীয় ধাপ

এর পরের পেজে সংশোধিত তথ্য নির্বাচন করতে হবে। আবেদনকারী যে সকল তথ্য জন্ম নিবন্ধন সনদ এ পরিবর্তন করতে চায় সেই তথ্য বাছাই করতে হবে এবং অবশ্যই তার পাশে সংশোধনের জন্য যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

চতুর্থ ধাপ

সংশোধন এর তথ্য ও কারণ দেয়ার পর এর নিচে জন্মস্থান এর ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে পূরণ করে দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

আরো পড়ুনঃ নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা

পঞ্চম ধাপ

এরপর আবেদনকারীর নাম ঠিকানা ও ফোন নাম্বার যোগ করে দিতে হবে। আবেদনকারী নিজে না হয়ে অন্য কেউ হলে তাহলে তার সম্পূর্ণ তথ্য দিতে হবে। আবেদনকারী অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে এবং তার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিলে আবেদনকারীর হয়ে তার বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী বা আইন অনুযায়ী যে অভিভাবক সে এই কাজটি করতে পারবে। যে আবেদন করবে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ নাম্বার ও জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর সহ সংযুক্ত করতে হবে। এরপর সবুজ রং এর বক্সে সংযোজন লেখায় ক্লিক করে প্রমাণ পত্র স্ক্যান করে তার কপি যুক্ত করে দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন অনলাইন

ষষ্ঠ ধাপ

এরপর পেমেন্ট অপশনে গিয়ে বাছাই করতে হবে যে আপনি কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের ফি দিতে চাচ্ছেন। অনলাইন পেমেন্ট করতে চাইলে ফি আদায় লেখাতে ক্লিক করতে হবে। আর যদি ব্যাংক থেকে চালান এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয় তাহলে চালানের মাধ্যমে লেখায় ক্লিক করতে হবে।

আবেদন সফলভাবে করার পর একটি রেফারেন্স নাম্বার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে দেয়া হবে, যা আবেদনকারীর ফরম পূরণ করার সময় দেয়া হয়েছিল। একটা আবেদন এর কপি প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক এর অফিসে জমা দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন সনদটি যেই জায়গার যেমন- সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের আওতাধীন হলে সেই জায়গায় জমা দিতে হবে।

যেহেতু জন্ম নিবন্ধন সনদ একটি জাতীয় পর্যায়ের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র তাই এটি অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল থাকা দরকার। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। জীবন যাত্রার মান স্থিতিশীল ও সুন্দর রাখার জন্য সঠিক তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে হবে। যদিওবা এতে কোনো ধরনের ভুল দেখা দেয় তাহলে সংশোধনের মাধ্যমে তা ত্রুটিমুক্ত করে নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)