এটিএম কার্ড কি? এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

এটিএম কার্ড কি ও কত প্রকার এবং এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম — এটিএম কার্ডের ব্যবহার সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে এটিএম কার্ড কি। চলুন জেনে নেই এটিএম কার্ড কি এবং এটিএম কার্ড কত প্রকার ও এটিএম কার্ড এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা এই আর্টিকেলে যেসব বিষয়ে আলোচনা করবো চলুন এক নজরে তার একটি ছোট সূচিপত্র দেখে নেইঃ

এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

পেজ সূচীপত্রঃ

এটিএম কার্ড কি?

এটিএম কার্ড এর পূর্ণরুপ হলো Automated Teller Machines যার বাংলা শব্দের অর্থ স্বয়ংক্রিয় গণনাকারী যন্ত্র। এই যন্ত্রে এটিএম কার্ড দিয়ে নির্ধারিত নিয়‌মে ব‌্যাক্ত‌ির ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট‌ে জমাকৃত টাকার মধ‌্যেই যত পরিমাণ টাকা তার দরকার তা স‌ে উত্ত‌োলন করত‌ে পারব‌ে। 

এ‌‌টিএম কার্ড কত প্রকার ও কি কি? 

সাধারণত একজন ব‌্যাক্ত‌ির তার জমাকৃত ব‌্যাংকের টাকার উপর ক‌ি ধরন‌ের সুয‌োগ-সু‌বিধা পে‌তে চান তার উপর ভিত্ত‌ি ক‌রে এটিএম কার্ডকে আমরা সাধারণত তিন ভা‌গে ভাগ কর‌তে পারি। 

১। Master Card (মাস্টার কার্ড) 

২। Credit Card (ক্র‌ে‌ডিট কার্ড) 

৩। Dual Currency Note (ডু‌য়েল কা‌রেন্স‌ি নোট)

আরও পড়ুনঃ ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি

কিভাবে এ‌‌টিএম কার্ড পাওয়া যাবে?

এ‌‌টিএম কার্ড পাওয়ার জন‌্য শুরু‌তেই যেক‌োনো এক‌টি ব‌্যাংক‌ে এক‌টি একাউন্ট খুল‌তে হ‌বে। একাউন্ট খোলার পর সাথ‌ে সাথেই আপনার একাউন্ট চালু হব‌েনা বরং 7-10 দিন ‌কিংবা ক‌োন কোন ব‌্যাংক‌ে 15-20 দিন বা তার‌ো বে‌শি সময় লাগ‌তে পা‌র‌ে। একাউন্ট চালু হওয়ার পর য‌দি আপনি এ‌‌টিএম কার্ড প‌েতে‌ চান তাহলে আপনা‌কে ব‌্যাংক‌ের ‌নির্ধা‌রিত ‌নিয়ম অনুযায়ী এক‌টি কাগজ‌ে আ‌‌বেদন করত‌ে হব‌ে। তারপর কিছু‌দিন পরেই আপনার এক‌াউন্ট‌ের না‌মে এট‌িএম কার্ড আসব‌ে। 

‌কিভাবে এ‌‌টিএম কার্ড‌ে পাসওয়ার্ড দিয়ে কার্ড এক্ট‌িভ করব

এট‌িএম কার্ড এক্ট‌িভ করার জন‌্য শুরু‌তেই আপনা‌কে একট‌ি স্ট্রোং পাসওয়ার্ড আগ‌ে থেক‌েই সেট কর‌ে রাখত‌ে হব‌ে। এরপর আপন‌ি যেই ব্যাংকে একাউন্ট খু‌লে‌ছেন তার অফিসিয়াল কাস্ট‌োমার কেয়ার নাম্বার‌ে আপনা‌কে যোগা‌যোগ কর‌তে হ‌বে।‌ সেখা‌নে তারা আপনাক‌ে দ‌েয়া কার্ড‌ের স‌াথে চার ‌ডিজ‌ি‌টের নাম্বার চেয়ে তারা আপনার কার্ড এক্ট‌িভ কর‌ে দিব‌ে। 

এট‌িএম কার্ড দি‌য়ে এক‌দিন‌ে সর্ব‌োচ্চ কত‌ বার কত টাকা উত্তোলন করা যায়?

আমা‌দের অনেকের মন‌ে একট‌ি প্রশ্ন আ‌‌সে য‌ে এক‌দি‌নে এটিএম কার্ড দিয়ে কত টাকা কয়বার উত্তোলন করা যায়। এটি আসলে সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করবে আপনি কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলেছেন। কারণ এক এক ব্যাংকের ধরন এক এক রকম। তবে সার্বিকভাবে একটি কথা বলা যায় যে এটিএম কার্ড দিয়ে দিনে পাঁচবার বিশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দৈনিক তোলা সম্ভব হয়। তবে ব্যাংক ভেদে এর কম বা বেশিও হতে পারে। 

কীভাবে এটিএম কার্ড ব্যবহার করবো

আমরা আগেই জেনেছি এটিএম কার্ড প্রধানত ৩ প্রকার। আমরা এই তিন ধরনের এটিএম কার্ড এর কোথায় কোথায় এবং কখন ব্যবহার করা যায় তা জানবো। 

(১) Master Card (মাস্টার কার্ড) এর ব্যবহার

মাস্টার কার্ড মূলত এটিএম কার্ডের একটি রুপ। সাধারণত আমাদের ব্যাংক সমূহ শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে। যার কারণে আমরা ওই দিন গুলোতে ব্যাংক সেবা পাই না। এছাড়াও ব্যাংক থেকে দূরবর্তী কোন জায়গায় গেলে তৎক্ষনাৎ যেকোনো পরিস্থিতিতে টাকা প্রয়োজন হয় হতে পারে। এক্ষেএে এই মাস্টার কার্ড দিয়ে খুব সহজেই আমরা এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারি।

তবে এখানে একটি বিষয় আমাদের জেনে রাখা ভালো যে আপনি যেই ব্যাংক থেকে এই এটিএম কার্ড নিয়েছেন সেই ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করলে তার চার্জ ফি সম্পূর্ণ ফ্রী (কারণ তার চার্জ ফি প্রতি এক বছরের জন্য আপনার একাউন্ট থেকে ব্যাংক কেটে নিয়েছে)। কিন্তু অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করলে তার জন্য আপনার থেকে প্রতি হাজারের জন্য ১৫-২০ টাকা চার্জ ফি তারা কেটে নিবে। 

আরও পড়ুনঃ ভিসা কার্ড এবং মাস্টার কার্ডের মধ্যে পার্থক্য

(২) Credit Card (ক্র‌ে‌ডিট কার্ড) এর ব্যবহার

ক্রেডিট কার্ডও এক প্রকার এটিএম কার্ড তবে তা ডেবিট কার্ড থেকে ভিন্ন। সাধারণত ডিজিটাল পদ্ধতিতে পে সিস্টেমের এক সহজ মাধ্যম হলো ক্রেডিট কার্ড। এর মাধ্যম যেকোনো ধরনের পেমেন্ট বা বিল অনলাইন সিস্টেমে খুব সহজেই পরিশোধ করা যায়। 

(৩) ডুয়েল কারেন্সি এটিএম কার্ড

ডুয়েল কারেন্সি এটিএম কার্ড সাধারণ এমন এক কার্ড যা শুধু মাত্র আামাদের দেশেই নয় বরং দেশের বাইরেও এটি ব্যবহার করা যায়। উপরে উল্লেখিত ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড শুধু মাত্র আমাদের দেশই ব্যাবহার করা যায় কিন্তু ডুয়েল কারেন্সি এটিএম কার্ড দেশ ও দেশের বাইরে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও বর্তমান যুগের অনলাইন বিজনেস বা ই-কমার্স সাইটের জন্য এটি খুবই জরুরী হয়ে উঠেছে। 

এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার নিয়ম

এটিএম বুথ থেকে কিভাবে টাকা তুলতে হয়? আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা এখন পর্যন্ত ATM কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনা। যার কারণে আমাদের এটিএম কার্ডের বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয় ও এটিএম কার্ড লক হয়ে যায়। এছাড়াও এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময়ে কিছু সঠিক নিয়ম কানুন অবলম্বন করার প্রয়োজন হয়। আর এই নিয়ম কানুন না অনুসরণ করলে যেকোনো সময়ে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই আপনি কিভাবে এটিএম কার্ড ব্যবহার করবেন এবং এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আজ আমরা আপনাদেরকে জানাবো। নিচে এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হলোঃ

এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার নিয়ম

ব্যাংক হতে আপনাকে যে একটি প্লাস্টিকের কার্ড প্রদান করা হবে সেটি হতে পারে একটি ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড। কার্ডটি কি ধরনের হতে পারে সেটা আপনার হিসাবের উপর নির্ভর করবে। ব্যাংক থেকে আপনাকে যে এটিএম কার্ডটি প্রদান করবে সেটা এটিএম মেশিনে ড্রপ করতে হবে। তবে হ্যাঁ কিছু কিছু কার্ড রয়েছে যেগুলোকে swapping করার প্রয়োজন হয়। মেশিনের ভিতরে থাকা একটি চৌম্বকীয় শক্তির সহায়তায় আপনাদের কার্ডের সকল ইনফরমেশন এটিএম মেশিনে চলে যাবে।

এটিএম মেশিনের মাঝে আপনার কার্ডটি প্রবেশ করানোর পর সেখানে আপনার ৪ ডিজিটের গোপন পিন চাইবে। ৪ ডিজিটের গোপন পিন নম্বর দেয়ার পরে আপনারা কয়েকটি অপশন দেখতে পারবেন এবং সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিবরণ মেশিনের স্ক্রিনে কিছু লেখা চলে আসবে। অপশনগুলো হলোঃ ১। Withdrawal-টাকা উত্তোলন ২। Balance/Statement-ব্যালেন্স/স্টেটমেন্টস ৩। Fund Transfer-ফান্ড ট্র্যান্সফার ৪। Pre-paid Card-প্রি-পেইড নাম্বার ক্রয় ৫। Fast Cash-দ্রুত টাকা উত্তোলন ৬। Pin Change-Pin পরিবর্তন ৭। Remitance-রেমিটেন্স ৮। Bills/Fees/Top-up-বিল/ ফি/ টপআপ। এই সকল প্রত্যেকটি অপশনগুলো পাশে আপনারা একটি করে বাটন দেখতে পারবেন। এখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাটন সিলেক্ট করুন।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার পদ্ধতি দেখাবো। এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য টাকা উত্তোলন নামের একটি বাটন আছে সেখান চাপ দিন। তারপর আপনি দেখতে পারবেন সেখানে কত টাকা আপনি তুলবেন। এরপর মেশিনের নিচের দিকে খেয়াল করুন বাটন আছে এখান থেকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টকার পরিমাণ দিয়ে দিন। টাকার পরিমাণ সিলেক্ট করার পর ডানদিকে ২টি অপশন দেখতে পারবেন, অপশন দুটি হলোঃ 

১। Correct-সঠিক ২। Incorrect-সঠিক নয়। যদি এটা সঠিক হয়ে থাকে তাহলে সঠিক বাটনে চাপ দিন আর সঠিক না হলে সঠিক নয় বাটনে চাপ দিন। এরপর আপনি যদি রশিদ চান তাহলে হ্যাঁ এবং রশিদ না চাইলে না বাটনে চাপ দিন। রশিদ নেয়ার জন্য ৩ টাকা কেটে নেয়া হবে। উপরোক্ত কাজগুলো করার পর আপনাকে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড ওয়েট করতে হবে লেনদেন সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য। তারপর আপনার টাকা মেশিন থেকে টাকা বেরিয়ে আসবে। এইভাবে আপনারা সহজেই এটিএম বুথ থেকে সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

টাকা হাতে পাওয়ার পরে এখানে আপনারা আরো একটি লেখা দেখতে পারবেন সেটা হলো, আপনি কি কোন লেনদেন করতে চান। সেক্ষেত্রে যদি আপনি লেনদেন করতে চান তাহলে হ্যাঁ হলে হ্যাঁ বাটনে চাপ দিন আর লেনদেন না করতে চাইলে না বাটনে চাপ দিন। এখানে আপনি যেটা চাইবেন সেটাই দিতে পারেন। যদি লেনদেন না করতে চান তাহলে না বাটনে চাপ দিলেই আপনার এটিএম কার্ডটি অটোমেটিক বেরিয়ে আসবে। তখন আপনাকে আপনার এটিএম কার্ডটি নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এখানে অবশ্যই আপনি কখনো আপনার গোপন পিন নাম্বারটি কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না।

মনে রাখা ভালো, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করার সময় যদি আপনারা পিনকোড পরপর ৩ বারের বেশি ভুল করেন তাহলে আপনার কার্ডটি ব্যাংক কর্তৃক লক করে দেওয়া হবে। এটিএম কার্ডের সাহায্য শুধুমাত্র টাকা উত্তোলন করাই যায় এমনটা কিন্ত নয় এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়াও যায়। এটিএম বুথ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা উত্তোলন করা যায় আর সর্বোচ্চ আপনি যতবেশি উত্তোলন করতে চান।

আরও পড়ুনঃ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা

পোষ্ট ক্যাটাগরি: