ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার | ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ১০টি খাবার

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার | ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ১০টি খাবার — ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরের নানা প্রকার রোগ বালাইয়ের আক্রমণ ঘটে থাকে। আমাদের শরীরে এই ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে আমাদের প্রতিদিনের খাবারে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দশটি খাবার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার

ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে এই ক্যালসিয়াম। যা আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনের এক বিশেষ কার্যকরী উপাদান হয়ে থাকে। এই হাড়ক্ষয় রোগটি যদি আমাদের খুব বেশি হয়ে থাকে তাহলে অস্টিওপোরোসিস এর মতন বড় বড় রোগ হতে পারে।

এছাড়াও ‍আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে খিঁচুনি রোগ সহ, জয়েন্টের অসহনীয় ব্যাথা, হাত পায়ের মারাত্নক ব্যাথা পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে আপনার স্মৃতিশক্তির কমে যাওয়ার উপর এক বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে। এই ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত সমস্যাগুলো যে শুধু বৃদ্ধদের হয়ে থাকে, তা কিন্তু নয় এটি অল্প বয়সেও আপনার হতে পারে। আবার যাদের বয়স ৪০-৬০ বছর হয়ে থাকে তারাও এই ক্যলসিয়ামের নানা রোগে খুব সহজেই আক্রান্ত হযে যায়।

তবে আপনি যদি ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে নানা প্রকার ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত প্রকারের ক্যালসিয়াম গ্রহণ ও আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকে। আর এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহনের ফলে আপনার শরীরের কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুনঃ কালো জিরার উপকারিতা | পুরুষের জন্য কালোজিরার উপকারিতা

সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাব জনিত রোগ থেকে বাঁচতে হলে, যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণের মাধ্যমে আপনি এর অভাব জনিত রোগ থেকে বাঁচতে পারেন। আর তাই এসব খাবার আপনাকে অল্প বয়স থেকে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠানো আপনার জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের দেহে প্রতিদিন ৬০০-১২০০ মিলিগ্রামের ক্যালসিয়ামের দরকার হয়ে থাকে। যেকোনো বয়সের মানুষের ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা দরকার হয়ে থাকে।

তবে আপনার ক্যালসিয়ামের অভাব হলে আপনি কোন খাবার গুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে থাকবেন সেই সব ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ১০ টি খাবার আমার আলোচনা করবো। বিশেষ করে আপনার শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের অভাব না থাকে, তাহলে আপনি এই খাবার গুলো গ্রহণের মাধ্যমে অতীতে যাতে এর অভাব জনিত রোগ গুলো না হয়ে থাকে সেই সব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। নিচে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ১০ টি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

বীজ

সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে বীজ জাতীয় খাবার গুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থেকে থাকে। বীজ জাতীয় যে খাবার গুলো বেশি পাওয়া যায় তা হলোঃ পোস্ত, সেলারি, চিয়া। এই সব বীজ জাতীয় খাবার আপনি ক্যালসিয়ামের প্রোয়জনের জন্য গ্রহণ করতে পারেন। ১ টেবিল চামচ পোস্ত বীজে ১২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থেকে থাকে। যা আপনার প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম খুব সহজেই মিটিয়ে দিতে পারবে।

বাদাম

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি বিশেষ খাবার হয়ে থাকে বাদাম। যেখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আপনি যদি নিয়মিত বাদাম খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পারে তেমনি ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করবে। তাছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত বাদাম খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার হার্ট অনেক ভালো রাখবে এবং আপনার ব্রেনকে দ্রুত সুস্থ রাখতে সক্ষম হবে। আর বাদামে থাকা বিপুল পরিমাণ অ্যাক্সিডেটিভ আমাদের ত্বকের বয়স ধরে রাখতে এক বিশেষ সাহায্য করে থাকে।

মসুর ডাল

আমরা অনেকেই আছি যারা ডাল খেতে অনেক ভালবেসে থাকি। ডালের মধ্যে মসুর ডাল প্রায় কমবেশি সবাইকে খেতে দেখা যায়। এই মসুর ডালে পুষ্টিগুণ বিবেচনা করলে, যেটা সবার উপরে উঠে আসবে সেটি হলো এখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম ছাড়াও মসুর ডালে আরো কিছু উপাদান রয়েছে সেগুলো হলোঃ আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফলেট, জিংক ইত্যাদি।

আপনার প্রতিদিনের খাবারে মসুর ডাল রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ দ্রুত ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করবে। নিয়মিত মসুর ডাল খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চারণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত ডাল খাওয়ার ফলে হৃদরোগ স্ট্রোক এর মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমে তাছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আরও পড়ুনঃ পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা | মেথির উপকারিতা

দই

এই খাবারটি হয়তো আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাবার হয়ে থাকে। অনেকেই আছি যারা প্রতিদিন খাবারের তালিকায় দই রেখে থাকি। সাধারণত দই কে বলা হয় একটি খাদ্যপ্রাণ। এটি ক্যালসিয়ামের অনেক ভালো একটি উৎস হয়ে থাকে। দই তে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। তাছাড়া দই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার থাকে যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন দই খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পাবে, এবং ভিটামিন ডি সহ আপনার শরীরের হাড়কে মজবুত রাখে। এছাড়াও নিয়মিত দই খেলে আপনার হজমের সমস্যা দূর হবে, ওজন কমাতে সাহায্য করবে। শরীরকে বিশেষভাবে সুস্থ-সবল রাখবে।

পনির

পনির সাধারণত আমরা অনেকেই অনেক ভাবে খেয়ে থাকি। তবে যদি আপনি দুগ্ধজাত খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম বিশ্লেষণ করতে যান তাহলে, পনিরের নামটি সবার প্রথমে আসবে আপনার কাছে। তাছাড়া, পনিরের এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন রয়েছে যা খেলে আপনার শরীর ভালো রাখবে। যদি আপনি নিয়মিত পনির খান তাহলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করবে। আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যথেষ্ট পরিমাণে দূর করবে।

বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি

আমরা অনেকেই আছি যারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রেখে থাকি। এই শাকসবজি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য এক বিশেষ উপকার বয়ে আনে। তবে আপনি যদি অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে চান তাহলে, পাতাযুক্ত শাকসবজি খেতে পারেন। নিয়মিত শাকসবজি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যাবে না। ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করা ছাড়াও শাকসবজির রয়েছে আরো নানা বিশেষ গুণ। যা আপনার শরীরকে যথেষ্ট ভালো রাখবে। এবং আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বাড়িয়ে তুলবে।

বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ

আমরা অনেকেই আছি যারা প্রতিদিন নিয়মিত মাছ খেতে অনেক ভালোবেসে থাকি। আপনি যদি নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার দ্রুত ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ গুলোতে রয়েছে উচ্চমাত্রার এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ নামক এক ধরনের ফ্যাটি এসিড। যা আপনার হার্ট, মস্তিষ্ক, এবং ত্বকের জন্য এক বিশেষ উপকারী হয়ে থাকবে। সাধারণত সামুদ্রিক মাছ এবং বিভিন্ন প্রকার তৈলাক্ত মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে খুব দ্রুত কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

বিভিন্ন প্রকার ফল

আপনি যদি আপনার শরীরে দ্রুত ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করতে চান তাহলে আপনি বিভিন্ন প্রকার শুকনো ফল খেতে পারেন। কেননা শুকনো ফলগুলোতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আপনি যদি নিয়মিত শুকনো ফল খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার দেহের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যথেষ্ট পূরণ হয়ে যাবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আপনি বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল রাখার চেষ্টা করুন। শুকনো ফল ছাড়া যেকোনো ফলে কম বেশি ক্যালসিয়াম অবশ্যই থাকে। বিভিন্ন প্রকার ফলের মধ্যে কমলালেবুতে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তাছাড়া ফল খেলে আপনার শরীরে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।

গরুর দুধ

গরুর দুধ আমরা সবাই কমবেশি খেয়ে থাকি। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়াও আরো নানা প্রকার উপাদান রয়েছে যার কারণে এটি একটি সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার হয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার দেহের গঠন নিয়ে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন তাহলে গরুর দুধকে পিছিয়ে রাখা একদম ঠিক হবেনা। সাধারণত গরুর দুধের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা আপনার দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে আপনার পেশীকে যথেষ্ট শক্তিশালী ও মজবুত করে তোলে। এছাড়াও গরুর দুধের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

তিল

সাধারণত তিলে রয়েছে এক ধরনের বিশেষ ক্যালসিয়াম। আপনি যদি ক্যালসিয়ামের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে চান তাহলে এক চামচ তিল খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হয়ে থাকবে। এক চামচ তেলে সাধারণত অষ্টআশি মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও দিলে থাকা আরও নানা উপাদান আপনার শরীরে রক্তচাপ কমাতে এবং জ্বালাপোড়া দূর করে থাকবে।

পরিশেষে

উপরে আলোচিত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার আপনার শরীরে দ্রুত ও যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করতে এক বিশেষ সহায়তা করবে। আপনি যদি বিশেষভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে চান তাহলে উপরে আলোচিত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের উপরে আপনি নজর দিন এবং আপনার দিনের নিয়মিত খাবারের তালিকা আপনি এসব খাবার যুক্ত করুন। অবশ্যই আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুনঃ ত্বক রূপচর্চায় খেজুরের উপকারিতা

পোষ্ট ক্যাটাগরি: