কালো জিরার উপকারিতা | পুরুষের জন্য কালোজিরার উপকারিতা

কালো জিরার উপকারিতা | পুরুষের জন্য কালোজিরার উপকারিতা — বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন তোমরা কালোজিরার ব্যবহার করবে, কারণ কালোজিরাতে আছে একমাত্র মৃ- ত্যু ব্যতীত সকল রোগের মুক্তি। প্রত্যেকদিন ২১টি করে কালোজিরার একটি পুটলি তৈরি করে পানিতে ভিজাবে ও পুটলির পানির ফোঁটা এই নিয়মে নাশারন্ধ্রে অর্থাৎ নাশিকা, নাকে ব্যবহার করবে। প্রথম বার ডান নাকের ছিদ্রে ১ ফোঁটা। ২য় বাম নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা এবং ডান নাকের ছিদ্রে এক ফোঁটা। ৩য় বারে ডান নাকের ছিদ্রের মাঝে দুই ফোঁটা করে এবং বাম নাকের ছিদ্রের মাঝে এক ফোঁটা। 

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যখন রোগ এবং যন্ত্রণা খুবই বেশি কষ্টদায়ক হয়ে যায় তখন ১ চিমটি পরিমাণে কালোজিরা নিয়ে খাবে তারপের পানি এবং মধু সেবন করবে। হ্যাঁ গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে আমাদের দোষ কি? আমাদের জন্যে কি কি ঔষধী উপকার রয়েছে এই কালোজিরার মাঝে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপরে আর কোনো কথাই থাকেনা। তারপরে কালোজিরার ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিলে খুবই ভালো হয়। আর হা ভালো কালোজিরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবহার করুন। আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে কালো জিরার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিনঃ 

কালো জিরার উপকারিতা

কালোজিরার গুণাগুণ 

১৫ থেকে ১৬ টি কালোজিরা ছোটো একটি পিয়াজ এবং দুই চা চামচ মধু সহকারে বিকেলে কিংবা রাতে খাওয়া গেলে চির যৌবন রক্ষা হয়ে থাকে। সকাল বেলা খালি পেটে ১২ থেকে ১৩ ফোটা কালোজিরার তেল এবং ১৫ থেকে ১৬ ফোঁটা মধু খাওয়া গেলে ডায়াবেটিসের উপকার হয়ে থাকে। ১০ থেকে ১২ ফোঁটা কালোজিরার তেল হাল্কা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে বাত রোগের উপশম হয়। তো চলুন জেনে নেই কালো জিরার উপকারিতা এবং পুরুষের জন্য কালো জিরার উপকারিতা এবং কালো জিরার ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে। 

হজম সমস্যায় কালো জিরার উপকার

হজমের সমস্যায় ১ থেকে ২ চা-চামচ করে কালোজিরা বেটে নিয়ে পানির সাথে খান। এই ভাবে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার কালো জিরা খাওয়া গেলে ১ মাসের মধ্যে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কালো জিরা খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপা ভাবও দূর হয়ে যাবে। 

আরও পড়ুনঃ মাংস খেয়ে পেট ফাঁপা, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়

জ্বর-সর্দি-কাশি এবং ব্যাথায় কালো জিরার উপকারিতা

জ্বর, সর্দি-কাশি এবং ব্যথাতে ১ চা-চামচ করে কালোজিরার সাথে ৩ চা-চামচ মধু এবং ২ চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে প্রত্যেকদিন একবার করে সেবন করুন। কালোজিরা বেটে নিয়ে কপালে প্রলেপ দিন যদি আপনার সর্দি বসে যায়। একই সাথে পাতলা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে কালোজিরা বেধে শুকাতে থাকুন এতে করে শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়ে যাবে। দ্রুততার সাথে ভালো ফল পাওয়ার জন্যে বুকে এবং পিঠে কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করুন। 

কপালের ২ পাশে এবং কানের পাশে প্রত্যেকদিন ৩ থেকে ৪ বার কালোজিরার তেল দিয়ে মালিশ করুন এতে করে মাথা ব্যথা কমে যাবে অর্থাৎ মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। কালোজিরা খাওয়ার কারণে রিউমেটিক ও পিঠে ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। শরীরে যেকোনো ধরনের ব্যাথা কমাতে কালোজিরার কোনো জুড়ি নেই। কালোজিরার তেল হাল্কা গরম করে নিয়ে ব্যথার জায়গাতে মালিশ করুন দেখবেন নিমিষেই ব্যথা চলে যাবে। বিশেষ করে কালোজিরার তেল বাতের ব্যথার জন্য বেশ ভালো উপকারি। তাই শরীরে যেকোনো ধরনের ব্যাথা নিরসনে কালো জিরার তেল ব্যবহার করুন। 

ঠান্ডাজনিত মাথাব্যথা দূর করতে কালোজিরা সহায়তা করে। ১টি সুতী কাপড়ের টুকরায় খানিকটা কালো জিরা নিয়ে পুটলি বানিয়ে নিন। এই পুটলিকে নাকের সংস্পর্শে নিয়ে শ্বাস নিয়ে থাকুন। কিছু সময়ের মধ্যেই দেখবেন মাথা ব্যাথা ঠিক হয়ে যাবে।

ফোঁড়া সারাতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ব্যাথাযুক্ত ফোঁড়া সারাতে কালোজিরা সহায়তা করে। তিলের তেলের সঙ্গে কালোজিরা বাটা অথবা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়ার জায়গাতে লাগালে ব্যাথা উপশম হয়ে যায় এবং ভালো হয়ে যায়। 

দাঁত ব্যাথা হলে, মাড়ি ফুলে গেলে এবং রক্ত পড়লে কালোজিরা সহজেই উপশম করতে পারে। পানিতে কালোজিরা দিয়ে হাল্কা গরম করে নিন। এই পানির তাপমাত্রা কমে গিয়ে উষ্ণ অবস্থায় আসলে সেই পানি দিয়ে কুলি করুন। এতে করে দাঁতের ব্যথা কমবে, মাড়ি ফোলা এবং রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও জিহ্বা, তালু এবং মুখের মাঝে জীবাণু ধ্বংস করে থাকে কালোজিরা। ভাত, তরকারী ইত্যাদির সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে খান আর রোগ শোক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। 

বুকে দুধ বৃদ্ধি করতে কালো জিরার গুরুত্ব

মায়েদের বুকে দুধের পরিমাণ বাড়াতে প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে ৫ থেকে ১০ গ্রাম করে কালোজিরা মিহি করে দুধের সাথে পান করুন। ইনশাআল্লাহ মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই সমস্যা সমাধানের জন্যে আপনি কালো জিরার ভর্তা দিয়ে প্রত্যেকদিন ভাতের সাথে খেতে পারেন।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে কালো জিরার ভূমিকা

প্রত্যেকদিন কালোজিরা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ কালো জিরা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। যার ফলে স্মরণশক্তি বাড়তে থাকে। সাথে সাথে কালো জিরা প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে। যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কালো জিরার তেল ব্যবহার করুন। শ্বাসকষ্ট কিংবা হাঁপানি দূর করতে কালো জিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কালো জিরা হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

প্রত্যেকদিন কালোজিরা খাওয়া গেলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে তোলে এবং সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। কালো জিরা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতেকদিন নিয়মিতভাবে আধা চা চামচ কাঁচা কালোজিরা কিংবা ১ চা-চামচ করে কালোজিরার তেল খান। এতে করে আপনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে ইনশা আল্লাহ।

আরও পড়ুনঃ স্তন ক্যান্সারের কারণ ও করণীয়

লিভার ক্যান্সার ভালো করতে কালো জিরা

লিভার ক্যান্সারের জন্যে দায়ী আফলাটক্সিন নামের এই বিষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে কালো জিরা। তাই যারা লিভার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত তারা আজ থেকেই কালো জিরা খাওয়া শুরু করে দিন। এছাড়াও যাদের প্যারালাইসীস এবং কম্পন রোগ আছে তাদেরকে কালোজিরার তেল মালিশ করা হলে আশ্চর্যজনক ফল দেখতে পারবেন। 

আমেরিকার গবেষকগণ প্রথমে কালোজিরার টিউমার বিরোধী প্রভাব সম্বন্ধে মতামত দিয়ে থাকেন। শরীরের মাঝে ক্যান্সার উৎপাদন ফ্রি-রেডিকেল অপসারিত বা রিমুভ করতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মোটকথা, কালোজিরা সকল ধরনের রোগের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কার্যকর।

চুল পড়া রোধে কালো জিরার ভূমিকা

চুল পড়া কমাতে কালোজিরা প্রতিদিন খান এতে করে আপনার চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাবে। যার কারণে চুল পড়া কমে যাবে। আর ভালো ফল পাওয়ার জন্য চুলের গোড়াতে তেল মালিশ করুন। কালোজিরা চুলের গোড়ায় গোড়ায় পুষ্টি পৌছাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া কমিয়ে দেয় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দুই টেবিল চামচ অলিভ ওয়েল এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল এক সঙ্গে মিশিয়ে হাল্কা গরম করে নিন। চুলের গোড়াতে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় ধরে ম্যাসেজ করুন। ১ ঘন্টা পরে চুলে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার করে ফেলুন। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালো জিরা

ডায়াবেটিস রোগিরা ১ চিমটি পরিমাণে কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে প্রতেকদিন সকাল বেলা খালি পেটে খেয়েই দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে সাথে সাথে ডায়াবেটিস কমে যাবে। 

আরও পড়ুনঃ কিভাবে সুন্দর করে কথা বলব | সুন্দরভাবে কথা বলার কৌশল

যৌ- -ন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা

কালোজিরা যৌ- -ন ব্যাধি এবং স্নায়ুবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্যেও অতি উৎকৃষ্ট ঔষধ। শুলবেদনা এবং প্রসুতি রোগে কালো জিরা অনেক বেশি উপকারী। ব্রুনের জন্যেও কালোজিরা উত্তম ঔষধ। মূত্রথলিতে পাথর এবং জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভ করতে চাইলে কালোজিরা সেবন করুন নিয়মিত যতবার ইচ্ছা পারেন। মাত্রাতিরিক্ত পেশাব এবং অধিক ঋতুস্রাব প্রতিরোধ করতে কালোজিরার উপকারিতা অনেক বেশি গুরুত্বপুরন। কালোজিরা কৃমি নাশক। 

মেদ কমাতে কালোজিরার ভুমিকা

মেদ কমাতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। চায়ের সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে সেবন করলে তা পেটের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে। একটি পাত্রে করে পানি দিয়ে চুলার উপরে দিন। পানি ফুটে যাওয়ার পর চাপাতা এবং সমপরিমাণে কালোজিরা উক্ত গরম পানিতে দিন। চায়ের রঙ হয়ে আসলে নামিয়ে পানি গুলোকে ছেঁকে নিয়ে সাধারণ চায়ের মতো করে পান করুন। দেখবেন কয়েকদিনের মাঝে আপনার পেটের বাড়তি মেদ কমে যাবে।

কালোজিরাকে সকল রোগের ঔষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অন্যান্য সকল ভেষজের মতো কালোজিরাকে নিয়েও গবেষণা করা কম হয়নি। ১৯৬০ সালের মিশরের গবেষকগণ নিশ্চিত হন যে, কালোজিরাতে বিদ্যমান নাইজেলনের কারনে হাঁপানিও উপশম হয়ে থাকে। জার্মানি গবেষকগণ বলেন, কালোজিরার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইকেটিক প্রভাব আছে। এটি বোনম্যারো এবং প্রতিরক্ষা কোষগুলিকে উত্তেজিত করে ও ইন্টারফেরন তৈরি বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুনঃ মন ভালো রাখার উপায় | মন ভালো করার উপায়

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)