পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম | payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম 2021

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম | Payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম — বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং পেশা অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেই সুবিধার্থে আমাদের দেশে বহু তরুণ-তরুণী আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে তাদের প্রফেশনাল পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য দেশ কিংবা বিদেশের বিভিন্ন বায়ার কিংবা ক্লায়েন্টদের সাথে যুক্ত হতে হয়। যার কারণে সে সকল ক্লায়েন্টদের সাথে টাকা লেনদেন করার জন্যে প্রয়োজন একটি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ের। 

তাই যদি আপনি এই ধরনের ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে যুক্ত হয়ে থাকেন কিংবা বিদেশি ক্লায়েন্টদের থেকে টাকা গ্রহণ করা বা টাকা রিসিভ করতে চান, তবে আপনার একটি ইন্টারন্যাশনাল মানের পেমেন্ট গেটওয়ের প্রয়োজন হবে। বিদেশি ক্লায়েন্টদের থেকে টাকা নেয়ার জন্য আপনি পেওনিয়ার একাউন্ট ব্যাবহার করতে পারেন। তাই যদি আপনার কোনো পেওনিয়ার একাউন্ট না থেকে থাকে তাহলে আপনি খুবই সহজেই একটি payoneer একাউন্ট খুলতে পারবেন। আর সেই একাউন্টের মাধ্যমে আপনি পেমেন্ট নিতে পারবেন। আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম

আপনি হয়তোবা ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে পেপাল কিংবা পেওনিয়ার একাউন্টের নাম শুনেছেন কোথাও। এই দুটি পেমেন্ট গেটওয়ে হচ্ছে সারাবিশ্বের সবচেয়ে বহুল বাবহৃত পেমেন্ট মেথড। আমাদের দেশে যেমন বিকাশ, রকেট, নগদ কিংবা শিউরক্যাশ, উপায় দেশীয় ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। ঠিক একইভাবে পেওনিয়ার একাউন্টের মাধ্যমে আপনি ডলার অথবা ইউরো বাংলাদেশি নিজের ব্যাংক একাউন্টে নিতে পারবেন।

ইন্টারন্যাশনাল ভাবে টাকা লেনদেন করার জন্যে আমরা অনেক কয়েকটি পেমেন্ট গেটওয়ে দেখতে পাই। তারমধ্যে হচ্ছে পেপাল, পেওনিয়ার, স্ক্রিল এই সকল হচ্ছে সারা বিশ্বে অনেক বেশি পরিচিতি। বাংলাদেশ সহ ভারতে এই দুই দেশেই payoneer পেমেন্ট গেটওয়ের সার্ভিস মজুদ আছে। আমরা পূর্বে পোস্টে স্ক্রিল একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই আজকের এই আর্টিকেলে Payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সহজ পদ্ধতিতে আলোচনা করবো।

Payoneer এর মধ্যে কেনো একাউন্ট খুলবেন

কিছু কিছু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এবং কোম্পানি রয়েছে যারা তাদের ক্লায়েন্ট এবং Employee দেরকে শুধুমাত্র পেওনিয়ার একাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট করে। তাই আপনার পেওনিয়ারে প্লাটফর্মে একটি একাউন্ট থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। কেননা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গেলে এই payoneer একাউন্টের প্রয়োজন হবে। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা দেখাবো কিভাবে আপনি খুবই সহজে একটি payoneer একাউন্ট ওপেন করবেন।

payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

বলে রাখা ভালো যে, payoneer একাউন্ট খোলার জন্য আপনার কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। পেওনিয়ার একাউন্ট আপনি দুই ভাবে খুলতে পারবেন ১টি হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্ট এবং আরেকটি হচ্ছে কোম্পানি অ্যাকাউন্ট। পেওনিয়ার ইন্ডিভিজুয়াল একাউন্ট খোলার জন্য আপনার একটি এনআইডি কার্ড অর্থাৎ স্মার্ট আইডি কার্ড এবং একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকা অত্যাবশ্যক। আর আপনি যদি পেওনিয়ার কোম্পানি একাউন্ট ওপেন করতে চান তাহলে আপনার ট্যাক্সের ইনফরমেশন কিংবা ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদির তথ্যের প্রয়োজন পড়বে। অবশ্যই এখানে আপনাকে আইডেন্টিফাই করার জন্যে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ডেরও প্রয়োজন হতে পারে।

তাই payoneer একাউন্ট খোকার পূর্বে এই সকল ডকুমেন্টগুলো রেডি করে নিন তাহলে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার প্রসেসটা অনেকখানি এগিয়ে যাবে। যাহোক, আমি মনে করলাম আপনার এই সকল ডকুমেন্টগুলো রেডি, তাই এবার payoneer একাউন্ট খোলার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। গুগলের মধ্যে payoneer লিখে সার্চ করলেই সর্বপ্রথম তাদের ওয়েবসাইটটি চলে আসবে সেখানে ক্লিক করে ওপেন করুন কিংবা এখানে ক্লিক করুন। 

যদি আপনি স্মার্ট ফোন থেকে Payoneer একাউন্ট ওপেন করতে চান তাহলে আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো আপনি গুগল ক্রোম ব্রাউজারটিকে ব্যবহার করুন। পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য ক্রোম ব্রাউজারে যাওয়ার পরে সেখান থেকে থ্রি-ডট আইকোনে ক্লিক করে ডেস্কটপ মোড করে নিন। তারপর সেখান থেকে পেওনিয়ারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি ফুল ভার্সনে ওপেন করুন। তারপরে নিম্নে উল্লেখ করা ধাপগুলোকে অনুসরণ করুন পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য। 

আরও পড়ুনঃ নগদ একাউন্টে লেনদেন হচ্ছে না

ধাপ ১

payoneer একাউন্ট খোলার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ওপেন হওয়ার পরে, ডানদিকে উপরে নিউ ইউজার রেজিস্টার অপশন দেখতে পারবেন। সেখানে আপনি নিউ ইউজার রেজিস্টার করার জন্যে ক্লিক করুন। রেজিস্টার অপশনে ক্লিক করার পরে payoneer আপনার কাছ থেকে বেসিক কিছু ডিটেইেলস জেনে নেবে। যেমন -আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার নাকি অনলাইন সেলার। এছাড়াও আপনি টাকা লেনদেন আপনার দেশে নাকি দেশের বাইরে লেনদেন করতে চান এবং আনুমানিক প্রতিমাসে কত ডলার করে লেনদেন করবেন। এই সকল তথ্য সাবমিট করার পর next অপশনে ক্লিক করুন। নেক্সট অপশনে ক্লিক করার পর আপনি রেজিস্টার করার বাটন দেখতে পারবেন সেখানে ক্লিক করুন। সেখান থেকে আপনাকে একাউন্ট রেজিস্টার পেজের মধ্যে ট্রান্সফার করে দিবে। 

ধাপ ২– Getting Started

payoneer একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে ৪টি ধাপ পার করার প্রয়োজন হবে। আমি আজকের এই আর্টিকেলে প্রতেকটি ধাপগুলো ছবি সহকারে এক এক করে সেই ধাপগুলোকে বুঝিয়ে দিয়েছি। প্রথম ধাপে Select Your Type of Business এখানে এই একাউন্টটি নিজের নাকি কোম্পানির জন্যে তৈরী করছেন সেটা নির্বাচন করুন। ধরে নিলাম আপনি নিজের জন্যে পেওনিয়ার একাউন্টটি খুলতে চান, তাহলে আপনি individual অপশনটি সিলেক্ট করুন। Next -নিচের বক্সটি পূরণ করে নিন।

১। প্রথমে বক্সের মধ্যে নিজের প্রথম নেম দিন (উদহারণসরূপ – Hasibur Rahman এর ফাস্ট নাম Hasbur)। 

২। তারপর দ্বিতীয় বক্সে লাস্ট নেম দিন (উদহারণসরূপ – Hasibur Rahman এর লাস্ট নেম হচ্ছে Rahman)। 

৩। তৃতীয় বক্সে নিজের পার্মানেট একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। 

৪। চতুর্থ বক্সের মধ্যে আগে দেয়া ই-মেইল অ্যাড্রেসটি পুনরায় টাইপ করুন। লাস্ট বক্সে নিজের জন্মতারিখ দিন। 

সকল তথ্য ঠিকঠাক দেয়ার পরে next অপশনে ক্লিক করুন। মনে রাখবেন, এখানে যদি আপনি কিছু ভুলভাল তথ্য দিয়ে থাকনে তাহলে আপনার পেওনিয়ার একাউন্টটি ভেরিফাই হবে না। তাই নিজের সকল তথ্য অর্থাৎ পার্সোনাল নেম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা সঠিকভাবে লিখুন।

আরও পড়ুনঃ রকেট একাউন্টের পিন ভুলে গেলে করণীয়

ধাপ ৩ - Contact Details

Next অপশনে ক্লিক করার পরে দ্বিতীয় ধাপে নিজের কন্ট্যাক্ট ডিটেইলস যথা আপনার ঠিকনাটি পূরণ করে নিন। 

১। প্রথমে বক্সের মধ্যে আপনি কোন দেশের নাগরিক সেটা নির্বাচন করুন। আমি যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি বাংলাদেশ সিলেক্ট করবেন আবার আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ইন্ডিয়া সিলেক্ট করবেন। এখানে আপনি আপনার নিজের দেশ সিলেক্ট করুন।

২। দ্বিতীয় বক্সে এবং তৃতীয় বক্সে নিজের ঠিকানা দিন (যে ঠিকানা আপনার ভোটার আইডি কার্ডে উল্লেখ আছে)। 

৩। চতুর্থ বক্সে নিজের শহর/গ্রামে ঠিকানা দিন। 

৪। পঞ্চম বক্সের মধ্যে পোস্ট অফিসের পিন নাম্বার দিন। 

৫। অন্তিম বক্সের মধ্যে নিজের পার্মানেন্ট মোবাইল নাম্বার টাইপ করুন। মোবাইল নাম্বার টাইপ করার পরে, সেই নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড চলে যাবে সেটি নিচের বক্সে টাইপ করে মোবাইল নাম্বরা ভেরিফাই করুন।

ধাপ ৪ - Security Details

তৃতীয় ধাপে তারপর একাউন্ট লগিন তথ্যের বক্সটি পূরণ করতে হবে। এখানে একাউন্টের ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, সিকিউরটি প্রশ্ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পূরণ করে নিন। আমি সাজেস্ট করবো, মনে করে এই তথ্যগুলো কোথাও লিখে রাখুন)। 

১। প্রথম বক্সে ইউজার নেম অথবা ইমেইল অ্যাড্রেস দিন। 

২। দ্বিতীয় বক্সে payoneer একাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড তৈরী করুন। 

৩। তৃতীয় বক্সে আপনি যে পাসওয়ার্ডটি তৈরী করেছেন সেই পাসওয়ার্ডটি আবার পুনরাই এখানে টাইপ করুন। 

৪। চতুর্থ বক্সে যেকোনো একটি সিকিউরটি প্রশ্ন বেঁছে নিন। (উদাহরণসরূপঃ আমি বেঁছে নিলাম What Twon Was Your Father Born In)। 

৫। তারপর এবার উপরের সিকিউরটি প্রশ্নের উত্তরটি টাইপ করুন। যেটি শুধুমাত্র আপনি জানেন। যেমন এই প্রশ্নের আমার উত্তর হবে Dhaka। 

৬। এরপর নিজের দেশ নির্বাচন করুন। (আমি এখানে বাংলাদেশ সিলেক্ট করবো)।

৭। এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে PAN কার্ডের তথ্য/নম্বর দেয়ার প্রয়োজন হবে। তাই, যদি আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে নিজের প্যান কার্ডের নাম্বারটি এখানে সাবমিট করুন। আর অন্য কোন দেশের নাগরিক হলে আপনাকে নিজের দেশের VAT/TAX এর যে আইডি রয়েছে সেটাকে সাবমিট করতে হবে।

৮। সবশেষে সকল তথ্য পূরণ করা হলে ক্যাপচা পূরণ করে পরবর্তী অপশনে চলে যান। 

আরও পড়ুনঃ নগদ একাউন্টের পিন ভুলে গেলে করণীয়

ধাপ ৫ - Account Details

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আমরা এখন শেষের ধাপে চলে আসছি, যেখানে একাউন্টের ডিটেইলসটি পূরণ করলেই আপনার পেওনিয়ারের মধ্যে একাউন্ট ওপেন হয়ে যাবে।

১। প্রথমত আপনার ব্যাংক একাউন্ট পার্সোনাল নাকি কোম্পনি সেটাকে সিলেক্ট করে নিন। 

২। পরবর্তী বক্সে দেখবেন নিজের দেশ এবং Curancy সিলেক্ট হয়ে রয়েছে। 

৩। তারপর পরবর্তী বক্সে যেখানে ব্যাংক নেম লেখা রয়েছে। সেখানে আপনার যে ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে সেটাকে সিলেক্ট করে নিন। 

৪। তারপর সেই ব্যাংক একাউন্টটি কার নাম খোলা হয়েছে সেটা টাইপ করুন। 

৫। যেখানে একাউন্ট নাম্বার লেখা রয়েছে সেখানে নিজের ব্যাংক একাউন্টের একাউন্ট নাম্বার দিন। 

৬। তারপর ব্যাংকের code নাম্বার লিখুন। ( ব্যাংকের কোড নাম্বার তাদের ওয়েবসাইটে অথবা চেক বুক থেকে পেয়ে যাবেন) 

৭। পরবর্তীতে আরো একবার নিজের VAT/TAX নম্বর দিন। 

৮। শেষে নিজের একাউন্ট টাইপটি নির্বাচন করুন সেভিংস নাকি কারেন্ট একাউন্ট। 

এবার আপনি পেওনিয়ারের Terms and Conditions গুলো ভালো করে পড়ে নিন এবং সেখানে টিক মার্ক করে সাবমিট করে দিন। তাহলে আপনার কাজ শেষ। সাবমিট করার পরে আপনি Congratulations ম্যাসেজ দেখতে পারবেন এবং আপনার একাউন্টটি সাবমিট সফল হয়েছে।

তারপর, আপনার একাউন্টটি payoneer কাছে রিভিউয়ের জন্যে চলে যাবে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই, দুই-একদিনের মাঝেই payoneer টিম আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট রিভিউ করার পরে একটি মেইল পাঠাবে। পেওনিয়ার একাউন্ট approved হওয়ার পরে আপনি সেখানে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।

শেষ কথা

আশা করি উপরোক্ত পোস্ট পড়ে payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারছেন। পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে উপরোক্ত দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করলে আশা করি আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য কোনো অসুবিধে হবে না। তাই, আপনার কোনো প্রশ্ন কিংবা সমস্যা থাকলে সেটা কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিন। ধন্যবাদ।

আরও পড়ুনঃ বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম