মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় | নতুন মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় — আমাদের নিত্য ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বড় আকারের মেশিনগুলোতে যেমন ফ্রিজ, টিভি বা কম্পিউটার প্রভৃতিতে বাসাবাড়ির লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে চালিত হলেও অপেক্ষাকৃত ছোটো এবং বহনযোগ্য ডিভাইস গুলোতে সাধারণত রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে লিথিয়াম আয়ন সেলই সবথকে বেশিই জনপ্রিয়।

বর্তমানে আধুনিক স্মার্ট মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে সাধারণ ফিচার ফোনগুলোর মধ্যে সাধারণত লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তির ব্যাটারি বেশি দেয়া হয়ে থাকে। এগুলোর বিশেষ সুবিধা হচ্ছে একবার চার্জ করে কয়েক দিন পর্যন্ত স্ট্যান্ডবাই টাইম পাওয়া যায়। তবে ব্যাটারির বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পারফরম্যান্স ও কমতে থাকে। তাই অনেকেই ব্যাটারি সঠিকভাবে রিচার্জ করাও সেটা ব্যবহার করার ব্যাপারে অনভিজ্ঞ বা অসচেতন। যার ফলশ্রুতিতে অনেক অল্প সময়েই আমরা আমাদের মূল্যবান যন্ত্রটির প্রাণ ব্যাটারি অকেজো করে ফেলি।

অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন তাদের মোবাইলের ব্যাটারি ফুল চার্জ করে থাকেন এবং তারপর সেই ব্যাটারি আবার সম্পূর্ণভাবে চার্জ শেষ করে ফেলে। এতে করে ব্যাটারি ধীরে ধীরে ব্যাটারির পারফর্মেন্স হ্রাস পায়। তাই আপনার মূল্যবান ডিভাইসটির ব্যাটারি ব্যাক-আপ ও সঠিক রিচার্জ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা বিশেষ কিছু উপায় তুলে ধরলাম। তো চলুন তাহলে জেনে মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় গুলো সম্পর্কে।
মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

কত পার্সেন্ট চাজ দিতে হবে | নতুন ফোন কেনার পর করণীয়

ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, স্মার্টফোনের ব্যাটারি ১০০% পর্যন্ত চার্জ দেওয়া কখনোই সঠিক পন্থা নয়। চার্জ সব সময় ৫০% থেকে ৮০% এর মধ্যে ব্যাটারি চার্জে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ফোনের ব্যাটারির চার্জ সবসময় ৫০% থেকে ৮০% এর ভিতর রাখলেই সেটার পারফর্মেন্স সর্বোত্তম হবে। এমনকি এক্ষেত্রে ওয়্যারলেস চার্জিং এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া আছে এতে।

প্রচলিত ভূল ধারণা | ব্যাটারি সমস্যা

আমাদের সকলের মাঝে আরো একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, নতুন মোবাইল ফোন ক্রয় করলেই তারপর সেটা মোবাইল ফোনটি ৮ ঘন্টা সময় ধরে চার্জ দিতে হবে বা ৮ ঘন্টা সময় ধরে চার্জ দিতে হয়। তবে মনে রাখবেন এটি একটি ভুল ধারণা অর্থাৎ কুসংস্কার বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে! কেননা, বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোনগুলোতে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির জন্যে এই পদ্ধতি মোটেও কার্যকর না।

আদর্শ তাপমাত্রা

মোবাইলের ব্যাটারির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে সবচেয়ে বেশি হলে সেটি কার্যক্ষমতা হারাবে। এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, যদি ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কোন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি রাখা হয় তাহলে প্রতি বছর সেটি ২০% এভিলিটি হারাবে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ব্যাটারিগুলো তাৎক্ষণিক ক্ষতি (যেমন বিস্ফোরণ) থেকে নিরাপ থাকবে। 

ব্যাক-আপ বেশিক্ষণ ধরে রাখা

প্রতিদিন স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় একটু চেষ্টা করলেই এর ব্যাকআপ বেশি পাওয়া সম্ভব। তাই অপ্রয়োজনে ব্লুথুথ, ওয়াফাই, জিপিএস, টাচস্ক্রিন ভাইব্রেশন, ইত্যাদি ফিচার চালু না রাখলে ব্যাটারির চার্জ অনেক কম খরচ হবে। তবে এজন্য অল্প সময়ের জন্য নেটওয়ার্ক নেই এমন এলাকায় গেলে ফোনটি বন্ধ না করে ফ্লাইট,এয়ারপ্লেন মুডে রেখে রাখলেই ভাল ফল আসতে পারে।

ব্যাটারি স্ক্রিন ব্যাকলাইট/নাইটমুড অন রাখা

স্ক্রিনের ব্যাকলাইট বা ব্যাকআপ-লাইট যতক্ষণ সময় জ্বলবে সেটা আপনার দরকার অনুযায়ী সেট করে নিবেন। অযথা বেশি ব্রাইটনেস দিয়ে রাখলে তাতে অনেক চার্জ খরচ হয়। এক্ষেত্রে হ্যান্ডসেটের পাওয়ার সেভিং অপশন চালু করেও ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হয় ফোনের নাইট মুড অন রাখা। 

ব্যবহার শেষে সেট লক/পাওয়ার অফ রাখা

ফোন ব্যবহারের পর সেট লক বা পাওয়ার অফ করে রাখুন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোন অপশন চালু হবে না। সেট নিয়মিত ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এর সফটওয়্যার সবসময় আপডেটেড রাখুন এবং প্রত্যেকমাসে অন্তত ১ বার করে ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ এবং প্রতিমাসে ১ বার করে মোবাইলের ব্যাটারি সম্পূর্ণ ডিসচার্জ করে নিন।

চার্জার ব্যবহারে সতর্কতা | মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

যে ফোনের জন্য যে চার্জার নির্ধারিত, সেটাই ব্যবহার করা শ্রেয়। চার্জার সঙ্গে না থাকলে অন্য চার্জার ওই ফোনের জন্য প্রযোজ্য কি-না দেখে নিন। নকল চার্জার অবশ্যই ব্যবহার করবেন না। ফোন কখনো চার্জশূন্য না করা ব্যাটারির চার্জ একেবারে নিঃশেষ করে আবার চার্জ দেওয়া যাবে না। কারণ এতে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত ব্যাটারি রিচার্জ করাকে মূলত চার্জ সাইকেল বলা হয়ে থাকে। প্রতিমাসে আপনারা ১ বার করে ব্যাটারি চার্জ সাইকেল সম্পূর্ণ করতে পারেন। এতে করে আপনার ফোনের ব্যাটারির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

সস্তা চার্জার ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকা

ফোনের জন্য নির্দিষ্ট চার্জার ছাড়া অন্য কোনো চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না কিংবা চার্জার হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে অনেকেই বাজার থেকে সস্তা ও অন্য ব্রান্ডের চার্জার কিনে ব্যাবহার করেন যা ঠিক নয়। এসব চার্জারে ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। অথবা চার্জ হতেও সময় বেশি নিতে পারে। এতে অ্যাডাপ্টারে সমস্যা দেখা দিলে ফোনও ব্যাটারি দুটোই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফোন ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা রাখা

ফোন যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা রাখুন। লি-আয়ন ব্যাটারি বেশি চার্জ হলেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে ফোনটি যেখানে চার্জ করছে কিংবা যেখানে ফোনটি আপনি রাখছেন, সেই জায়গায়টি যেন অতিরিক্ত গরম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে ফোন অতিরিক্ত গরম হতে পারে। ফোন আবার অতিরিক্ত ঠাণ্ডা জায়গায় রাখাও ঠিক নয়। খুব বেশি ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম ব্যাটারির কার্যক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। 

ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, লোকেশন, ডাটা অফ রাখা

মোবাইল চালানো হলে তারপর অবশ্যই কখনো মোবাইল ফোনের ব্লুটুথ, ওয়াইফাই, ডাটা কানেকশন অন করে রাখবেন না। মোবাইল ফোনে এই সকল সিস্টেম অযথা অন করে রাখলে ব্যাকগ্রাউন্ডে কিংবা প্রসেসরে অনেক বেশি করে পরিমাণে শক্তি খরচ হয়। যার কারণে দ্রুততার সাথে ফোনের ব্যাটারির চার্জ খরচ বেশি হয়।

ব্যবহারের পর অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিজেবল

প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহারের পর তা বার বার প্রয়োজন না হলে তা আনস্টল করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

ভাইব্রেশন মোড / অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড / নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন

খুবই বেশি দরকার ব্যতীত মোবাইলের ভাইব্রেশন মোড অন রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আর হ্যাঁ বিভিন্ন অ্যাপ এবং সেটিংস থেকে অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড বন্ধ করে রাখুন। এতে করে আপনার ফোনের ব্যাটারির চার্জ কম পরিমাণে খরচ হবে। ফোনের প্রত্যেকটা অ্যাপের নোটিফিকেশন অন রাখলে অযথা নোটিফিকেশন আসে। যা আমাদের রিরক্তির অন্যতম কারণ। এতে ব্যাটারিও অনেক বেশি ড্রেইন হয়। 

সারারাত চার্জ না দেওয়া

অনেকেই আছেন যারা রাতের বেলা মোবাইল ফোনটিকে চার্জে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এতে করে মোবাইল ফোনটি সারারাত ধরে চার্জ হতে থাকলে সেটা ওভার চার্জিং হয়ে যায়। যা একটি মোবাইল ফোনের জন্যে এটা খুবই ক্ষতিকর দিক। এছাড়াও সারারাত মোবাইল ফোন চার্জে লাগিয়ে রাখার কারণে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে গিয়ে বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

ফোনের এনিমেশন বন্ধ রাখা

আপনি কি জানেন যে, আপনার স্মার্টফোনের কিছু ফ্ল্যাশি অ্যানিমেশন আপনার মোবাইল ফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেক গুণে কমিয়ে দিতে পারে। পূর্বে এই সিস্টেমগুলো বন্ধ করা না গেলেও বর্তমানে এই ধরনের সিস্টেম বা অ্যানিমেশন আপনি সহজেই বন্ধ করতে পারবেন। 

ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা

ফোনে সবসময়ই বেশি ব্রাইটনেসের প্রয়োজন হয় না। তাই যখন ব্যবহার করবেন না তখন ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখলেই চলে। খুব বেশি ফোন ব্যবহারের সময় ব্রাইটনেস ৫০ শতাংশের এর নিচে রাখা ভালো। এতে চার্জ থাকবে বেশিক্ষণ। 

ফোন রিফ্রেশ/ক্যাশ ক্লিয়ার/র‍্যাম ক্লিয়ার করা

এই ক্ষেত্রেই আমরা বেশি ভূল করে থাকি। বিভিন্ন অ্যাপ বা ব্রাউজিং করার পর হোমে এগুলো রেখে দিলে একদিকে যেমন বেশি র‍্যাম দখল করে অন্যদিকে এই সাইটগুলো কাজ করতেই থাকে। ফলে ব্যাটারি অনেক দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এছাড়াও মাঝে মাঝে ফোনের র‍্যাম চেকআপ করে তা ক্লিয়ার রাখতে হয়। এজন্য মাঝে মাঝেই ফোন রিফ্রেশ করার পাশাপাশি ফোন রিবোট বা রিস্টার্ট করা উচিত।

সবশেষ ফোন একটানা বেশিক্ষণ ব্যবহার না করে মাঝে কিছু বিরতি দেওয়ায় উচিত। এতে ব্যাটারি ব্যাক-আপ বাড়ার সাথে সাথে ব্যাটারি স্টেইন এভেলিটি বাড়বে। আপনি যত দীর্ঘক্ষণ পারেন ব্যাটারি বেশিক্ষণ নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।
পোষ্ট ক্যাটাগরি: