ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব কি? কিভাবে ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব ব্যবহার করবেন?

Dark Web কি ও Deep Web কি? কিভাবে ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব ব্যবহার করবেন — হলিউডি মুভির সেই দৃশ্যের কথাটি কি আপনার মনে আছে যেখানে একজন গডফাদার তার পোষা খু-নীর সঙ্গে কখনো মুখোমুখি দেখা না করেই এক অতি গোপণ নেটওয়ার্কের মধ্যে তাকে দিয়ে তার কাজ করার জন্য হুকুম দিয়ে যেত, বা আপনার কি মনে আছে অ্যাঞ্জেলিনা জুলি অভিনীত 'হ্যাকার' মুভিটির কথা। যেখানে একটি নাম না জানা নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতো—যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো নাক গলাতে পারতো না?

ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব কি? কিভাবে ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব ব্যবহার করবেন?

আপাতদৃষ্টিতে আমাদের এই সব রূপালী পর্দার সাইফাই মুভিগুলোকে শুধুমাত্র কেচ্ছা কাহিনী মনে হলেও এসকল মুভির অজানা নেটওয়ার্কের মতোই আমাদের অতিচেনা ইন্টারনেটের রয়েছে এক বিশাল অন্ধকারজগত। 

তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত হয়েছে ইন্টারনেট, আর ইন্টারনেট বর্তমানে মহাসমুদ্রের ন্যায় বিশাল এক ক্ষেত্রে পরিগণিত হয়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে সার্চ ইঞ্জিনগুলির। সার্চ ইঞ্জিনের নাম বলতে গেলে বিশেষ করে গুগলের নাম ১০০% বলতেই হবে, গুগল বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে পরিগণিত হয়েছে। একটা নেট সেশনের কথা আমরা চিন্তা করতেই পারিনা গুগলকে ব্যতীত? অসম্ভব! কিন্তু এখন কথা হচ্ছে এই গুগলেরর সক্ষমতাই বা কতটুকু?

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আপনি যখন কোনো একটি বিষয়ে গুগলে সার্চ করেন আর গুগল তার লাখ লাখ ফলাফল আপনার সামনে হাজির করে দেয় যা ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র ১০% থেকে প্রাপ্ত! অর্থাৎ গুগল অনলাইনে থাকা মোট তথ্যের ৯০% সম্পর্কে গুগল বা অনন্যা সার্চ ইঞ্জিনগুলো জানে না! অনলাইনে থাকা মাত্র ১০ শতাংশ তথ্যের মধ্যেই সার্চ করেই সে তার সার্চ রেজাল্ট গ্রাহকদের সামনে হাজির করে। বাকি ৯০% তথ্য চিরকালই আপনার কাছে অজানাই থেকে যাবে।

একটি জরিপে দেখা গেছে সারফেস ওয়েবের মাঝে যে পরিমাণে ডেটা সংরক্ষিত রয়েছে তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি পরিমাণে ডেটা সংরক্ষিত রয়েছে অদৃশ্য ওয়েবের মাঝে। প্রকৃতপক্ষে এই সারফেস নেট হচ্ছে মহাসাগরে মাঝে ভেসে থাকা একটি খন্ড হিমবাহো এবং ডিপ ওয়েব হচ্ছে মহাসাগর মূলত খোদ নিজেই! আজকের এই আর্টিকেলটি মূলত এই অজানা ব্ল্যাক ওয়েব বিষয়কে নিয়েই।

ব্ল্যাক ওয়েবকে মূলত ২টি ভাগে ভাগ করা যায় সেটি হচ্ছেঃ

  • Deep Web
  • Dark Web

ডিপ ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের সেই সমস্ত অংশ যেগুলোকে সার্চ ইঞ্জিন গুলো সার্চ করে খুঁজে পায়না। কিন্তু যদি আপনি এই গুলোর সঠিক অ্যাড্রেস জানেন তবে আপনি সেই সমস্ত অংশগুলোতে যেতে পারবেন।

আর ডার্ক ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের সেই অংশ যেখানে কনভেনশনাল পদ্ধতিতে আপনি ঢুকতে পারবেন না, প্রচলিত ব্রাউজারগুলো যেমন-ক্রোম, ফায়ারফক্স ইত্যাদি সেখানে প্রবেশ করতে পারেনা। সেই সকল অংশে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে বিশেষ কিছু সফটওয়্যারের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন হবে। 

আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব কি | ডার্ক ওয়েব এর কাজ কি

ইন্টারনেটের এই অজানা অংশের উৎপত্তি কিভাবে হলো? 

একদম ১০০% সঠিকভাবে বলা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে আমি বা আপনি আমরা কেউই ইন্টারনেটে একা না! আপনার প্রতিটি পদক্ষেপকে, প্রত্যেকটি ডাউনলোড নজরে রাখছে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি)। তাদের কাছে আপনার পুরো লগ থাকে আর যেকোনো প্রয়োজনে তারা সেতা সরবরাহ করে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। তার মানে হচ্ছে আপনার ইচ্ছামতো চলাচল করার কোনো স্বাধীনতা নেই।

বিভিন্ন সময়ে বিশ্বে ইন্টারনেটের বিভিন্ন গ্রুপ এমন একটি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে যেখানে তারা খুবই গোপনে তাদের সকল কর্মকান্ডগুলোকে পরিচালনা করতে পারে। সামরিকবাহিনী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, হ্যাকার, বিপ্লবী, এমনকি খোদ প্রশাসন এমন একটি ব্যবস্থা চেয়েছে যেখানে গোয়েন্দারা খুবই গোপনে নিজেদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে অথবা চুরি হয়ে যাওয়া যেকোনো তথ্য ফিরে পাওয়ার জন্য দর কষাকষি করতে পারবেন অপরাধীদের সঙ্গে। 

এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রয়েছে, যেখানকার অনলাইন সেন্সরশিপ অনেক বেশি কড়া, ফলস্বরুপ ভিন্নমতালম্বিদের এমন একটি ব্যবস্থার কথা চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে যেখানে সরকার তাদেরকে তদারকি করতে পারবেনা। আর মূলত এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারনেটের এই অজানা অংশের। সঙ্গে সঙ্গে এটা প্রলুব্ধ করেছে সেই সমস্ত অপরাধীদের যারা ধরা পড়ার ভয়ে অরজিনাল নেটওয়ার্কে আলোচনা করার সাহসটুকু পায়না।

প্রশ্ন হচ্ছে ডিপ ওয়েবগুলোতে কি কারণে সার্চ ইঞ্জিনগুলো সার্চ করতে পারেনা?

এটির কারণ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন গুলো তাদের সার্চ তদারকি সম্পূর্ণ করে থাকে এমন এক ধরনের ভার্চুয়াল রোবট অর্থাৎ Crawler দিয়ে। এই Crawler গুলো ওয়েবসাইটের HTML Tag দেখে ওয়েবসাইট গুলোকে লিপিবদ্ধ করে থাকে। তাছাড়াও কিছু কিছু ওয়েবসাইট থেকে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে লিপিবদ্ধ করার জন্য রিকুয়েস্ট যায়। এখন যে সকল সাইট অ্যাডমিন চায় না যে তাদের ওয়েব সাইটটি সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে পাবে না, তারা রোবট এক্সকুলেশন প্রটোকলকে ব্যবহার করে থাকে যা Crawler গুলোকে সাইটগুলো খুজে পাওয়া বা লিপিবদ্ধ করা থেকে দূরে রাখে। 

কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো ডাইনামিক অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে এই ধরণের সাইটের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব, আর Crawler এর পক্ষে এই সকল কাজ করা সম্ভবপর হয়না। কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে কোনো লিংক নেই। এগুলো হচ্ছে বিচ্ছিন্ন সাইট, এগুলোও সার্চ ইঞ্জিনে সার্চে আসেনা। তাছাড়াও বলতে গেলে সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি বর্তমান সময়ে তার আঁতুড় ঘরকে বাদ দিতে পারেনি। সার্চ ইঞ্জিনগুলি লেখা বাদে অনন্যা ফরম্যাটে থাকা যেমন- ফ্ল্যাশ ফরম্যাটে ওয়েবপেজ খুঁজে পেতে সক্ষম না।

এই ডিপ ওয়েবের মাঝে থাকা তথ্যগুলো সারফেস ওয়েবের তথ্য থেকে মানেগুণে এগিয়ে। এগুলো হচ্ছে খুবই সুসজ্জিত ও প্রাসঙ্গিক। তবে বুঝে নিন সার্চ ইঞ্জিনগুলো কি করছে।

আরও পড়ুনঃ ইথিক্যাল হ্যাকিং কি | ইথিক্যাল হ্যাকিং এর প্রয়োজনীয়তা

এবার চলুন জেনে নেই সবচেয়ে মজার অংশ তথা ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে

প্রচলিত ওয়েব ব্রাউজার গুলো ব্যবহার করে আপনি এই সমস্ত সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই সকল সাইট ইন্টারনেটের সকল নিয়ম কানুন এর বাইরে অবস্থান করে, গ্রাহ্য করেনা কোনো ধরনের ইন্টারনেট প্রথার। আর এই সকল সাইটের অ্যাড্রেস থাকে এতটাই উদ্ভট যা সাধারণ মানুষের পক্ষ্যে মনে রাখাটা হয়ে দাড়ায় বেশ কঠিন ব্যাপার। সেই সমস্ত সাইটের অ্যাড্রেস গুলো হয়ে থাকে যেমন- sdjsdhsjhsuyumnsdxkxcoioiydsu53562hsjdhjd.onion। এই অংশটি হচ্ছে ইন্টারনেট এর প্রকৃত অদৃশ্য অংশ। 

আপনার কিছু বিশেষ জ্ঞান যেমন ধরুন- নেটওয়ার্কিং, প্রোগ্রামিং, প্রক্সি জানা না থাকলে আপনি এই সকল নেটওর্য়াক গুলোতে প্রবেশ করবার পাবেন না। এই অংশের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে এরা ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েব সাইটগুলোর মতো করে টপ লেভেল ডোমেইন যেমন- ডটকম ব্যবহার না করে এরা Pseudo Top Level Domain ব্যবহার করে থাকে। যা কি-না মূল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাঝে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনস্তে থাকে। এই ধরণের ডোমেইনের মধ্যে রয়েছে Onion, Bitnet, Freenet ইত্যাদি।

বিশ্বে সবথেকে আলাদা! আপনি জীবনে যা কখনো ভাবেন নি তাই পেয়ে যাবেন এই সাইটগুলোতে। হয়তোবা আপনি কখনো কল্পনা করেননি যে ওয়েবসাইটে পাসওর্য়াড ব্যাতীত প্রবেশ করাটা সম্ভব, আপনি দেখবেন এখানে তাই অহরহ হচ্ছে। এমন কিছু বিষয় আপনি পাবেন যেগুলো আপনার মাথাটাকে গুলিয়ে দিতে পারবে। 

উইকিলিকস ঘোষণা করেছে যে এই বছরে তারা আরও নতুন ডেটা প্রকাশিত করবে, কিন্তু আপনি হয়তো বিস্ময়ভরে তাকিয়ে থাকবেন উইকিলিকসের এই সকল ডেটা এই ডার্ক ওয়েবে রয়েছে বেশ কিছু বছর পূর্বে থেকেই। যেকোনো বইয়ের একদম লেটেস্ট অ্যাডিশন যা কি-না সারফেস ওয়েবে কপিরাইট আইনের কারণে নেই সেগুলেঅ্যা দেখবেন এখানে অনায়েছে আদান প্রদান করা হচ্ছে।

আরও রয়েছে বিকৃত রুচির সব বিনোদন! শিশু পর্ণ--গ্রাফি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের Genital Mutilation এর সকল ভিডিও যা কি-না সারফেস ওয়েবের মাঝে নেই, সেগুলো এখানকার হট টপিকস। এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে মার্জু-য়ানা, হিরো-ইন থেকে শুরু করে সকল ধরণের মা-দ-ক হোম ডেলিভারী পর্যন্ত করা হয়। ডার্কনেটের মূল ইউজার হচ্ছে মূলত মাদকা-সক্ত যারা তারাই।

আবার এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোতে কট্টরপন্থী গ্রুপগুলো শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে কিভাবে গো-লা, বা-রু-দ ইত্যাদি তৈরি করতে হয়, আবার কিছু কিছু সাইটে তো রেডিমেড অ-স্ত্রই বিক্রি করা হয়ে থাকে। একে ৪৭ থেকে শুরু করে আপনি রকেট লা-ঞ্চা-র, মর্টা-রের মতো আরো বিভিন্ন ধরনের অ-স্ত্র ক্রয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ হ্যাকাররা যে ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে

আরব বসন্তের সময়ে বিপ্লবকারীরা এই ডার্ক ওয়েবগুলোতে যোগাযোগ করতো। ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরণের মেইল সার্ভিস, চ্যাট সার্ভিস রয়েছে যেগুলোতে পরিচয় গোপন করে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজ অথবা অন্যান্য আরো কিছুই করতে পারবেন।

অবাক করার বিষয় আরও রয়েছে! এমন কিছু আন্ডার গ্রাউন্ড সাইটে রয়েছে যেখানে টাকার বিনিময়ে কি-লা-র ভাড়া পাওয়া সম্ভব! ব্যাপারটা কি ভয়ংকর তাইনা, বিশ্বাস হচ্ছে নাতো? আমারও আগে বিশ্বাস হয়নি। এমনই কিছু সাইটে প্রতিবেদনে দেখা যায় এই সকল সাইট সম্পর্কে যে কি-লা-র তার নিজের সর্ম্পকে এই ভাবে বর্ণনা দিয়ে থাকে।

তুমি আমাকে স্ল্যাট নামে ডাকতে পারো। আমি তোমার শত্রুকে প্রফেশোনাল ভাবে শেষ করতে পারবো। আমি তার সঙ্গে তোমার সমস্যার কারণ জানতে আগ্রহী না। তুমি শুধু আমাকে টাকা পেমেন্ট করবা আর আমি তাকে শে-ষ করে দিবো। তার জন্য টার্গেটের বয়স মিনিমাম হতে হবে ১৮ বছর,

১) টার্গেট পুরুষ নাকি মেয়ে তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না

২) আমি গর্ভবতী মহিলাকে টার্গেট হিসাবে কাজ করি না

৩) আমি টার্গেটের সঙ্গে কোনো ধরনের অত্যাচার করিনা

৪) টার্গেট যদি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মেম্বার হয়ে থাকে তবে তার জন্য এক্সট্রা চার্জ লাগবে

৫) আর এক্সট্রা চার্জের বিনিময়ে আমি সম্পূর্ণ ঘটনাকে দুর্ঘটনার মতো করে সাজাতে পারবো

৬) ডাউনপেমেন্টের ৪ সপ্তাহের মাঝে কাজ সম্পূর্ণ হবে

৭) আমেরিকার বাইরের টার্গেটের জন্যে বাড়তি ৫০০০ ডলার ট্রাভেল খরচ লাগবে

৮) কাজ হয়ে যাওয়ার পর আমি তোমাকে টার্গেটের ফটো তুলে পাঠাবো

মোটকথা আপনি এমনই একটি ব্ল্যাক ফরেস্টে জয়েন করবেন যেখানে আপনাকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার পূর্বে দুবার করে ভেবে নিতে হবে। সারফেস ওয়েবে যেসকল হ্যাকিং পদ্ধতি দেখতে পান তা হচ্ছে এই ডার্ক ওয়েব থেকে লীক হয়ে যাওয়ার ১% তথ্যের কিছু অংশ বিশেষ। এখানকার হ্যাকাররা অনেক বেশি ভয়ংকর এবং প্রোগামিংয়ে তাদের কোনো জুড়ি নেই, সাবধান আপনার মেইলটি হ্যাক হয়ে যেতে পারে। এছাড়া সরকারের এজেন্ট গুলতো এখানে আছেই।

আরও পড়ুনঃ ওয়াইফাই সিগন্যাল বাড়ানোর উপায় | ওয়াইফাইয়ের গতি বাড়ানাের উপায়

প্রশ্ন হচ্ছে এই সকল নেটওর্য়াক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নাকে ডকা দিয়ে কিভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে?

এই বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের এই ধরনের একটি নেটওর্য়াককে নিয়ে একটুখানি চিন্তাভাবনা করতে হবে। ডার্ক ওয়েবে ব্যবহার করা নেটওর্য়াকের মাঝে সারফেস ওয়েবে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে পড়েছে এমন একটি নেটওর্য়াক হচ্ছে অনিয়ন নেটওর্য়াক। অনিয়নের Pseudo top level domain হচ্ছে ডট ওনিয়ন। আর এটার সাইটগুলোর ঠিকানা হচ্ছে ভূতুড়ে! মূলত মার্কিন নেভির জন্যে ডিজাইন করা হলেও এই নেটওর্য়াক আজ সারা বিশ্বে ছদ্মবেশী নেট ইউজারদের জন্য প্রথম পছন্দ। অনিয়নে আপনি আপনার ব্রাউজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে পারবেন না, তার জন্য আপনাকে আপনার কম্পিউটার/ল্যাপটপে ডাউনলোড করে নিতে হবে Tor ওয়েব ব্রাউজার।

টর ওয়েব ব্রাউজার আপনার পরিচয়কে সম্পূর্ণ গোপন রাখবে আর যার কারণে কারো পক্ষে আপনার অবস্থান শনাক্ত করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। আপনি যখন টর ব্যবহার করে কোনো সাইটে প্রবেশ করতে যাবেন তখন টর আপনার সেই রিকুয়েস্ট কঠিন এনক্রিপশনের মাঝে দিয়ে অনিয়ন প্রক্সিতে সেন্ড করবে। অনিয়ন প্রক্সিতে আপনার সেন্ড করা ডেটা আর ডেটা থাকেনা, সেটা দুর্বোধ্য একটা স্ক্রিপ্টে পরিগণিত হয়।

মূলত এ ধরণের দুর্বোধ্য সিস্টেমের ফলে এই সকল নেটওর্য়াক সব সময়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতের নাগালের বাইরে থেকেই যায়। অনিয়ন নেটওর্য়াকের মাঝে থাকা ব্ল্যাক মার্কেট গুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হছে Silkroad, ফোর্বসের হিসানে এখানে গত বছরে ২২ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়-বিক্রয় হয়েছিল। আর মূলত এখানে প্রচলিত মুদ্রাতে ক্রয়-বিক্রয় হয়না, ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে Bitcoin নামক এক ধরণের ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে। অ্যাপেলের প্রোডাক্ট, মাইক্রোসফট প্রোডাক্ট এখানে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ডিস্কাউন্টে কিনতে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট স্পীড বাড়ানোর উপায় | কিভাবে মোবাইলের ইন্টারনেট স্পীড বাড়াবো

এত সকল অনিয়মের মাঝে কেন এই ধরণের ব্যবস্থাকে সমর্থন করি? 

একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম থাকা আমার মতে থাকা প্রয়োজন। যে শিশু পর্ণ--গ্রাফি তৈরি করে সে এই নেটওর্য়াকটি বন্ধ করে দিলে অন্য আরেকভাবে তার কাজ করতে থাকবে। আর তাছাড়া সারাজীবন সাইবার সন্ত্রাসীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর থেকে ১ ধাপ এগিয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি IP^6 বের হলেও সারফেস ওয়েবে এখন পর্যন্ত পড়ে আছে সেই পুরান আমলের IP^4 এ। অথচ আন্ডার-গ্রাউন্ডের মোটামুটি সকল সাইট প্রায় IP^6 ব্যবহার করছে।

যেহেতু ইন্টারনেটের ও মানুষের বাকি সকল সৃষ্টির মতো খারাপদিক রয়েছে তাই এটার সঙ্গে তাল মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আর আমি অবশ্যই বলবো যে আপনি জীবনে একবার হলেও ডার্ক ওয়েব সাইটে গুলোতে গিয়ে ঘুরে আসুন, আর তা নাহলে আপনি বরফখন্ডে আশ্রিত শীলের মতো মহাসাগরের স্বাদ আপনি মিস করবেন।

আর হ্যা, আপনি বেশী দূরে যাবেন না। আপনাকে মনে রাখতে হবে, সরকারের অঢেল টাকা রয়েছে, তাই তারা চাইলেই ডার্ক ওয়েবে থাকা মেধাবী হাজারো হ্যাকারদেরকে ভাড়া করতে পারবে আপনার মতো লোকদের ডার্ক ওয়েবে চোখের নজরে রাখার জন্য।

আরও পড়ুনঃ ইন্টারনেট কি | ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)