অপারেটিং সিস্টেম কি | অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি

অপারেটিং সিস্টেম কি — কম্পিউটারের কথা বলতে গেলে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের নাম তো বলতেই হবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ কম্পিউটার চালু করার জন্য অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম এই নামটি কমবেশি আমরা প্রায় সকলেই শুনেছি। বর্তমান সময়ে অবশ্য শুধুই কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম বলাটা ভুল হবে কারণ বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের জন্য অপেরাটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় এবং আপনি অবাক হবেন যে টিভির জন্যে আলাদা আলাদা অপারেটিং সিস্টেম আছে। তাই আপনার যদি এইরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অপেরাটিং সিস্টেম সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা না থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য।

অপারেটিং সিস্টেম কি | অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি

আজকে এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো অপারেটিং সিস্টেম কি? মোবাইল অপেরাটিং সিস্টেম কি? উইন্ডোজ অপেরাটিং সিস্টেম কি? অপেরাটিং সিস্টেম এর উহদারণ, অপেরাটিং সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য, মুক্ত অপেরাটিং সিস্টেম কি? অপেরাটিং সিস্টেম এর নাম, অপেরাটিং সিস্টেমের প্রধান কাজ কি, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম কি, অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমি আপনাদেরকে চেষ্টা করবো গতানুগতিকভাবে বইয়ের ভাষা থেকে বাহির হয়ে একদম নিজের ভাষায় সহজভাবে উদাহরণসহ বিষয়গুলো বোঝানোর।

অপারেটিং সিস্টেম কি?

কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন এক ধরনের সফটওয়্যার সিস্টেম যা কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অপারেটিং সিস্টেম হার্ডওয়ার মানে আপনার কম্পিউটারের সঙ্গে যেসকল যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে।

ধরুন, আপনি এখন একটি গান শুনতে চাচ্ছেন। সেইক্ষেত্রে আপনি মিউজিক মিডিয়া প্লেয়ারে অথবা কাঙ্ক্ষিত গানে ক্লিক করে ওপেন করবেন। আর এই কাজটি করার পরে আপনার গানটি চালু হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই কাজগুলি কিভাবে হলো? এই কাজগুলো হয়েছে মূলত অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্য। অপারেটিং সিস্টেম এর মাঝে একটি কার্নেল নামে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাজ করে থাকে। কার্নেল এখানে কাজ করে থাকে বিয়ের ঘটকের মতো করে, পাত্র-পাত্রীর মধ্যে যোগসূত্র করে দেয়ার মতো।

আপনি মিউজিক প্লেয়ারে যে mp3 গানটি ওপেন করলেন এই গানটি কিন্ত ওপেন করার বিষয়টা আপনার কম্পিউটার বুঝতে পারেনি। কেননা কম্পিউটারের ভাষা হচ্ছে বাইনারি সংখ্যা। কম্পিউটারকে বোঝানোর দায়িত্বটা হচ্ছে কার্নেলের। কার্নেল অপারেটিং সিস্টেম থেকে নির্দেশ গ্রহণ করার পরে তা হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, প্রসেসর, স্পিকার সবখানে ছড়িয়ে দেয় আর বলে দেয় যে গানটি ওপেন করার জন্য।

আরও পড়ুনঃ ফ্রি SMS এসএমএস পাঠানোর অ্যাপ ডাউনলোড করুন

কম্পিউটার হার্ডওয়্যারগুলো তার কাজগুলো সঠিকভাবে করে কার্নেলকে জানিয়ে দেয় যে আমি আমার কাজ সম্পূর্ণ করেছি। কার্নেল আবার বলে দেয় যে অপারেটিং সিস্টেমকে তারা কাজটি সম্পূর্ণ করেছে যার ফলে অপারেটিং সিস্টেম সেই ফলাফল আমাদেরকে মনিটরে দেখিয়ে দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে থাকে মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ডের ও কম সময়ের মধ্যে। তবে হ্যাঁ যাদের কম্পিউটারে প্রসেসর, র‍্যাম, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভের ক্ষমতা কম তাদেরকে কিছুটা দেরি করে দেখায়। 

তাছাড়াও আমরা যখন কম্পিউটার ওপেন করি তখন সরাসরি কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, প্রসেসর, র‍্যাম, হার্ডডিস্ক চালু হয় তখন তারা কার্নেলকে সংকেত প্রদান করে। এরপর কার্নেল আবার অপারেটিং সিস্টেমকে মনিটরে প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশ দেয়। এই রকম করেই কম্পিউটার ওপেন হয়ে থাকে।

অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া কি কম্পিউটার চালানো সম্ভব

উপরোক্ত আলোচনার পরে আশা করি আপনি অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে কিছু হলেও ধারণা পেয়েছেন। এখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন যে ভাই অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও কি কম্পিউটার চালানো যাবে? উত্তরে বলবো হ্যাঁ অপেরাটিং সিস্টেম ছাড়াও কম্পিউটার চালানো যাবে।

সেই প্রাচীনকালের সময় গুলোর কম্পিউটারগুলো কোন প্রকার অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াই চালানো যেত। তবে হ্যাঁ সেই সকল কম্পিউটার চালানোর জন্য কিন্ত সমস্যা হতো। সময়ের পরিবর্তনে আমরা বর্তমানে যেমন মনিটর এর সামনে কীবোর্ড, মাউসে ক্লিক করার মাধ্যমে সকল কাজ নিমিষেই করার সুযোগ পাচ্ছি মাত্র কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই করে ফেলি। কিন্ত প্রাচীনকালের কম্পিউটার গুলোতে এই রকম নিমিষেই কাজ করার সুবিধা ছিল না। এই রকম একটি ক্লিক করার মাধ্যমে সকল তথ্য পাওয়া সম্ভব হতো না। সেই সময়কার সব কাজ মানুষকে ম্যানুয়ালি করার প্রয়োজন হতো। তাই বর্তমানের অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে GUI বা Graphical user interface বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে টাকা আয় করুন 2021 | Android Apps দিয়ে টাকা আয় করুন

অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি?

অপারেটিং সিস্টেম এর প্রকারভেদের কথা বলতে গেলেই মূলত আমাদের মাথায় 4 প্রকার অপেরাটিং সিস্টেমের কথা চলে আসে।

4 প্রকার অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে-

  • উইন্ডোজ/Windows
  • ম্যাক ওএস/Mac OS
  • লিনাক্স/Linux
  • অ্যান্ড্রয়েড/Android
  • আইওএস/IOS

আসলে এইগুলা অপারেটিং সিস্টেম এর প্রকারভেদ না। তবে এইগুলো অপেরাটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ এর অংশ যা আপনি আরও বাকি লেখার অংশটুকু পড়ার পর বুঝতে পারবেন। বলে রাখি লিনাক্স কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম না বরং লিনাক্স হচ্ছে একটি কার্নেল। আর হ্যাঁ এই কার্নেলের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে অপারেটিং সিস্টেম। Linux এর উপরে ভিত্তি করে তৈরি করা কিছু জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে Ubuntu, Debian, Kali Linux ইত্যাদি।

অপারেটিং সিস্টেম মূলত ৬ প্রকার। যথাঃ

  • Real-time operating system / রিয়েল টাইম ওএস
  • Time sharing operating system/টাইম শেয়ারিং ওএস
  • Mobile operating system/মোবাইল ওএস
  • Batch operating system/ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম
  • Distributed operating system/ডিস্ট্রিবিউটেড ওএস
  • Network operating system/নেটওয়ার্ক ওএস

1. Real-time operating system

রিয়েল টাইম অপেরাটিং সিস্টেম (Real-Time Operating System) হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট টাইমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করার নিশ্চয়তা প্রদান করে। রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম Real-time Operating System মূলত রোবট, নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্ট, ট্রাফিক কন্ট্রোল করা ইত্যাদি পরিচালনা করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে কোন রকম ত্রুটি থাকে না যার ফলে কাজ অনেক দ্রুততার সাথে সমাধান করতে পারে। যেমন, Windows CE, DSP/BIOS, RTX, VxWorks ইত্যাদি।

2. Time-Sharing Operating System

টাইম শেয়ারিং অপেরাটিং সিস্টেম (Time-Sharing Operating System) এ একাধিক ব্যবহারকারী একাধিক প্রোগ্রাম চালাতে পারবে। একটা প্রসেসর বা CPU দিয়ে একাধিক প্রোগ্রাম চালানোর ফলে CPU এর সঠিক ব্যবহার হয়ে থাকে। টাইম শেয়ারিং অপেরাটিং সিস্টেমের উদাহরণ হচ্ছে Windows 7, Windows 8, Windows 10, Unix, MAC Operating System ইত্যাদি।

3. Mobile Operating System

মোবাইল অপেরাটিং সিস্টেম মূলত স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মতো ডিভাইস গুলোর জন্য তৈরি করা হয়। যদিও কম্পিউটারের প্রসেসর এবং মোবাইলের প্রসেসরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রথমের দিকে মটোরলা লিনাক্স এর উপর ভিত্তি করে স্মার্টফোনের জন্য অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন করে। পরবর্তীতে Nokia যখন সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেম বাজারে নিয়ে আসে তখন থেকে মোবাইল অপেরাটিং সিস্টেমের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। আর বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রয়েড Android ও আইওএস IOS এই জনপ্রিয়তাকে করেছে আকাশচুম্বী। মোবাইল অপেরাটিং সিস্টেম হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড Android, আইওএস ISO, সিম্বিয়ান Symbian Operating System ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ WiFi পাসওয়ার্ড বের করার উপায় জেনে নিন 

4. Batch Operating System

কিছু কিছু কম্পিউটার রয়েছে যেগুলার কাজের স্পীড খুবই স্লো এবং সময়সাপেক্ষ। আর এই ধরনের কম্পিউটার কে ধীর গতি থেকে ফাস্ট করার জন্য আছে Batch Operating System ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম। Batch Operating System ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম সরাসরি কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে না। এখানে অপারেটর একই ধরনের কাজগুলিকে একটি ব্যাচে গ্রুপ আকারে কাজ পরিচালনা করে থাকে। অপারেটরের দায়িত্ব হলো একই ধরনের কাজগুলিকে বাছাই করা।

অপারেটিং সিস্টেম কি | অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকার ও কি কি

ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা:

  • কোন একটি কাজ শেষ হতে কতটুকু সময় লাগবে এটা অনুমান করাটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্ত ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম Batch Operating System এর মাধ্যমে কম্পিউটার প্রসেসর CPU সহজে বুঝতে পারে যে কাজটি সম্পন্ন হতে কতটুকু সময় লাগতে পারে।
  • একাধিক কম্পিউটার ইউজারকারী Batch System এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবে।
  • Batch System এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে কোন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
  • Batch Operating System এর মাধ্যমে অনেক বড় বড় কাজ খুব কম সময়ে করা যায়।

Batch Operating System এর উদাহরণ হচ্ছে প্রাচীনকালের MS-DOS, কর্মচারীদের বেতনের হিসাব রাখা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

5. Distributed Operating System

Distributed নামের মধ্যেই সংজ্ঞা লুকায়িত। এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেমগুলো সাধারণত একই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অনেক গুলো কম্পিউটারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে কাজ সম্পন্ন করে। ডিস্ট্রিবিউটেড অপেরাটিং সিস্টেম এর উদাহরণ হচ্ছে LOCUS।

আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়

6. Network Operating System

নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম গুলোর তৈরির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যে সফটওয়্যার, ফাইল সহ অন্যান্য জিনিস এর শেয়ার এবং অ্যাক্সেস ভাগ করে কাজ করা। ধরুন আপনি কিছু ছবি গুগল ড্রাইভে আপলোড করেছেন। এখন আপনি চাইলে এই ছবি পৃথিবীর যেকোনো যায়গা থেকে ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেক্ট হয়ে দেখতে পারছেন। তো এখন এই ছবিটি যেখানে রাখা হয়েছে এটাই হচ্ছে মূলত একটা সার্ভার কম্পিউটার। আর এই সার্ভার কম্পিউটারগুলো পরিচালনার কাজ করে থাকে Network Operating System নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম। নেটওয়ার্ক অপেরাটিং সিস্টেমের উদাহরণ হচ্ছে Microsoft Windows Server 2008, UNIX, BSD

শেষ কথা

তো বন্ধুগণ আজকের আর্টিকেলে এই ছিল অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি, অপারেটিং সিস্টেম এবং অপেরাটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় দূর করতে পেরেছি আমি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে প্রসেসর। তাই প্রসেসর কি? প্রসেসর কিভাবে কাজ করে জেনে নিন

আরও পড়ুনঃ প্রসেসর কি | প্রসেসর কি কোনটা দরকার

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)