পানি দূষণের ১০টি কারণ

পানি দূষণের ১০টি কারণ

বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করি। ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয়, তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি। বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়।

বর্তমানে পৃথিবীর অনেক সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ। নিচের আলোচনায় আমরা আজকে “পানি দূষণের ১০টি কারণ” সম্পরকে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। তাই পানি দূষণের কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

পরিবেশ দূষণের উৎস ও কারণ

পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি দূষণের আরও একটি বড় কারণ। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশ ধ্বংস করছে। পরিবেশের বেশির ভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের ফলেই হয়ে থাকে ৷

আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোন ব্যবহার এর সুফল ও কুফল, ভালো /মন্দ

পরিবেশ দূষণের প্রভাব

দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে।

খাদ্য শৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণ

বায়ু, পানি, মাটি ও শব্দ দূষণের মাধ্যমেই সাধারণত পরিবেশ দূষিত হয়।

(১) বায়ু দূষণ

বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, ধোয়া অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করে। যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোয়ার মাধ্যমেও বায়ু দূষিত হয়।

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্য ছড়ায়। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

(২) পানি দূষণ

পানি দূষণ

পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হয় (পয়ঃনিষ্কাশন ও গৃহস্থালির বর্জ্য অথবা কারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়) এছাড়াও ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পানি দূষিত হয়।

পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটছে। পানি দূষণের কারণে মানুষ কলেরা বা ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে এবং বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

(৩) মাটি দূষণ

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কটূ মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, গৃহস্থালি। ও হাসপাতালের বর্জ্য, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়।

মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায় ও তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

আরো পড়ুনঃ নামাজ না পড়ার ১৫ টি শাস্তি - নামাজ না পড়ার শাস্তি

(৪) শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দ দূষণ করছে। কলকারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহারও শব্দ দূষণের কারণ।

শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা শব্দ দূষণের ফলে হয়ে থাকে। আমরা যখন তখন হর্ন না বাজিয়ে এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টি না করে শব্দ দূষণ রোধ করতে পারি।

পানি দূষণের ৫টি কারণ

পানি দূষণের ৫টি কারণ নিচে লেখা হলো:

  1. পানিত ক্ষতিকর বর্জ্য ফেললে।
  2. পানিতে গরু-ছাগল গোসল করালে।
  3. পানিতে তেল,ময়লা-আবর্জনা ফেললে।
  4. পানিতে কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেললে।
  5. পানিতে কাপড়,থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করলে।

পানি দূষণের ১০টি কারণ

স্কুলের পরীক্ষা গুলোতে অনেক সময় পানি দূষণের দশটি কারণ সম্পর্কে লিখতে বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাগুলোতে এই প্রশ্নটি অন্তত কয়েকবার এসেছে। তাই আপনি নিম্নে উল্লেখ করা পানি দূষণের ১০টি কারণ গুলি ভালোভাবে পড়াশোনা করে আপনার পরীক্ষার প্রস্তুতি আরো বেশী গোছালো ও ভালো করতে পারেন।

  1. পানিতে মলমুত্র ফেললে করলে পানি দূষিত হয়।
  2. আর্সেনিক ভূগর্ভ পানি দূষণের একটি কারণ।
  3. বাড়ির আর্বজনা পানিতে ফেললে পানি দূষিত হয়।
  4. অতিরিক্ত ভূমিক্ষয় পানি দূষণের আরেকটি কারণ।
  5. কলকারখানার বর্জ্য পানিতে মিশে নদী নালার পানি দূষিত হওয়ার অন্যতম কারণ। অর্থাৎ পানিতে যেকোনো ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলার কারণে পানি দূষিত হয়।
  6. বন্যায় অথবা জলোচ্ছ্বাসে মানুষ এবং পশুপাখির মলমূত্র পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে ফেলে।
  7. পারমাণবিক চুল্লি অথবা পরীক্ষাগারের বর্জ্য পানিতে ফেললে তা পানিকে দূষিত করে।
  8. কৃষি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুকুর, খাল এবং নদীর পানিকে দূষিত করার আরেকটি কারণ।
  9. পুকুর অথবা নদীতে রোগীর ময়লা কাপড়চোপড় কাচা, পায়খানা প্রসাব করা, পাট পচানো, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা ইত্যাদি কারণে পানি দূষিত হয়।
  10. পঁচা বাশি খাবার মাছকে খেতে দিলে এর কারণে পুকুরের পানি দূষিত হবে। বিয়ে কিংবা অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানের উচ্ছিষ্ট খাবার পুকুর বা খালবিলে ফেলে দিলে পানি দূষিত হয়।
  11. পানিতে গবাদি পশুপাখি যেমন: ছাগল, ভেড়া, গরু, মহিষ ইত্যাদি গোসল করানোর কারণে পানি দূষিত হয়।
  12. পানিতে থালাবাসন মাঝা অথবা কাপড় চোপড় ধোয়ার কারণে পানি দূষিত হয়।
  13. নদীর পানিতে কিংবা পুকুরে আগাছা জন্মালে অথবা গাছের পাতা পড়ে তা পঁচে পানি দূষিত হতে পারে।

পানি দূষণ রোধের ৫টি উপায় - পানি দূষণের প্রতিকার

কিভাবে পানি দূষণ রোধ করতে পারি এই বিষয়ে আমাদের ভালো ধারণা রাখা প্রয়োজন, এতে করে সহজেই আমরা পানি দূষণ রোধ করতে পারবো। নিচে পানি দূষণ রোধের ৫টি উপায় এবং পানি দূষণের প্রতিকার উল্লেখ করা হয়েছে।

  1. পানি দূষণ রোধে পানিতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে অথবা একটি একটা গর্ত করে সেখানে ফেলতে হবে।
  2. পানিতে কলকারখানার দূষিত বর্জ্য না ফেলে সেগুলোকে পরিশোধন করতে হবে অর্থাৎ বর্জ্য গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
  3. যেখানে সেখানে মলত্যাগ না করে সেনেটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে। পুকুর বা নদীর পাড়ে খোলা পায়খানা নির্মাণ না করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে এতে করে পানি দূষিত হবে না।
  4. লঞ্চের ময়লা এবং প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকলে পানির দূষিত রোধ করা যাবে।
  5. পুকুরে বা নদীর পানিতে গরু, ছাগল, ভেড়া গোসল না করিয়ে উপরে করানো হলে পানির দূষণ রোধ করা যাবে।
  6. রোগীর ময়লা কাপড় পুকুরের পানিতে সরাসরি ধৌত করলে পানি দূষিত হয়, তাই সরাসরি পুকুরের পানিতে অসুস্থ রোগীর কাপড় না ধুয়ে পানি তুলে এমন জায়গায় ধুতে হবে যাতে করে কাপড়ের পানি পুকুরে না আসে। এতে করে পানি দূষণ রোধ করা যাবে।
  7. জমিতে রাসায়নিক সারের পরির্বতে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে কিংবা সারের ব্যবহার কমিয়ে আনলে পানি দূষণ রোধ করা যাবে।

উপসংহার

পানি দূষণের ১০টি কারণ সম্পর্কে আমরা এতক্ষণ জানলাম। আমি আশাকরি এই লেখাটি আপনাদের শিক্ষা জীবনে এবং ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কাজে আসবে। সেইসাথে আমরা আমাদের ব্যক্তি জীবনে পানি দূষণ সম্পর্কে সচেতন থাকবো এবং পরিবেশকে নিরাপদ রাখবো।

পানি দূষণের ১০টি কারণ” এ বিষয়ে যদি আপনার আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আপনি এই আর্টিকেলের নিচে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

পোষ্ট ক্যাটাগরি: