দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - দাঁতের ব্যথা আজকাল একটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দাঁত ব্যথা এতটাই যন্ত্রণাদ্বায়ক যে, এটি একেবারেই সহ্য করা যায় না। তবে যদি আপনি দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কিছু জেনে রাখেন, তাহলে দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে খুব দ্রুতই দাঁতের ব্যথা দূর করতে পারবেন।

তাই আজকের আর্টিকেলে আমি তুলে ধরব দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়, পোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায়, দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়, দাঁত ব্যথা হলে করণীয় ও দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় ও দাঁত নিয়ে যাবতীয় সব তথ্য। তাহলে চলুন শুরু করি।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

দাঁত ব্যথার কারণ কি?

দাঁতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো কাজে লাগাতে হলে আগে খু্ঁজে বের করতে হবে দাঁত ব্যথা কেন হচ্ছে। অনেকেই দাঁতের ব্যথায় ভোগেন, কিন্তু বুঝতে পারেন না যে ঠিক কি কারনে এমন দাঁতের ব্যথা হচ্ছে।

দাঁত ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন অনেকেই আছে যারা খুব মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন। তারা এতটাই মিষ্টি যুক্ত খাবার খান, যার ফলে তাদের মুখের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় একধরনের ব্যকটেরিয়া। আর ব্যকটেরিয়ার ফলেই তাদের দাঁতের মধ্যে কিছুদিন পর শুরু হয়ে যায় মারাত্মক যন্ত্রণা বা ব্যথা।

আবার অনেকেই আছেন অলসতা কিংবা সময়ের কারণে দৈনিক দাঁত ব্রাশ করেন না। এর ফলে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করার কারণে তাদে দাঁতের ব্যথা হয়।

অনেকের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম না থাকার কারণে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় এবং দাঁত প্রচুর ব্যথা করে। মোট কথা দাঁতের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলেও দাঁত ব্যথা কিংবা দাঁতের মাড়ি ব্যথা হতে পারে।

তাছাড়া অনেকেই আছেন খাবার শেষ করার পর হালকা কুলি কিংবা ব্রাশ করেন না। ফলে খাবারের পর দাঁতের ফাঁকে বেশ কিছু ময়লা বা খাবারের কণা জমে থাকে। এর ফলেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে।

এছাড়া অনেকের দাঁতের মাড়িতে কিছু রোগ বা সংক্রমণ আক্রমণ করলে সেই সংক্রামক দাঁতকে অনেকটা সংবেদনশীল করে তুলতে পারে এবং এর ফলে দাঁতে ব্যথা হতে পারে। তাছাড়া অনেকেই আছেন যাদের অভ্যাস তারা ঘুমের মধ্যে দাঁত পিষে থাকে। অনেকের এই অভ্যাসের কারণেও দাঁত ব্যথা হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়

তবে দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় ও আছে তাও আবার ঘরোয়া পদ্ধতিতে। অনেকেই আছেন যাদের দাঁত ব্যথার সাথে সাথে দাঁতের মাড়িও অনেক ব্যথা করে। মাড়ি ফুলে যায়। তখন অনেক অসহ্য লাগে। কথা বলতেও বিরক্তি লাগে। কোন কাজ করতেই ভালো লাগে না। তাই যখনই দাঁতের মাড়ি ব্যথা করবে তখনই দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করুন। যেমন:

১) অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন: অ্যালোভেরা জেল এ আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। যার ফলে এটি মাড়িতে ব্যবহার করলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। দাঁতের মাড়ি ব্যথা, ফোলা কিংবা মাড়িতে যত রোগ আছে সব সারাতে এটি অতন্ত্য কার্যকরী।

কিভাবে এই জেল ব্যবহার করবেন? প্রথমেই একটি গ্লাসে ২-৩ চামচ জেল যোগ করুন। এরপর চামচের সাহায্যে জেলকে একেবারে ভালো করে ফাটিয়ে নিন এবং কিছুটা পানি মিশান। এরপর জেলটাতে চটচটে ভাব চলে আসলে আলতো করে আপনার মাড়িতে লাগান এবং ১০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবে কয়বার করলে ব্যথা কিছুটা কমবে।

২) লেমনগ্রাস জাতীয় তেল ব্যবহার করুন: লেমনগ্রাস তেলে আছে অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট। এই তেল দাঁতের গহ্বর থেকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে এবং এটি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং পাশাপাশি মাড়ির যাবতীয় রোগের ঝুঁকিও কমায়। এটি মাড়িকে শক্তিশালী করে তুলে।

কীভাবে করবেন ব্যবহার? প্রথমে এক কাপ পানিতে ২-৩ ফোঁটার মতো লেমনগ্রাস তেলটাকে যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবার এই পানি দিয়ে ১ মিনিটের মত কুলকুচি করুন এবং থুথু ফেলেতে থাকুন। এভাবে চাইলে দিনে ২-৩ বার করুন।

৩) হলুদ এবং মধুর জেল ব্যবহার করুন: হলুদ ও মধুর সংমিশ্রণে তৈরীকৃত জেলটি এতটাই শক্তিশালী যে এতে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লে মেটরি ও অ্যান্টিমাই ক্রোবিয়াল। এই ভেষজ মিশ্রণটি মাড়ির রক্তপাত ও ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

প্রথমে একটি বাটিতে সামান্য হলুদের গুঁড়োর সাথে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটাকে আপনার দাঁতে লাগিয়ে রাখুন ১৫-১৬ মিনিটের মত। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে ধুয়ে নিন।

৪) নারকেল তেল ব্যবহার করুন: নারকেল তেল তো অনেকটা উপকারী। নারকেল তেলের গুনাগুন কমবেশ আমরা সবাই জানি। তবে এই নারকেল তেল দাঁতের মাড়ির ফোলা এবং ব্যথা উপশমেও বেশ কার্যকরি। দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমাতে প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ১ চা চামচ নারকেল তেল দাঁতের ব্যথা জায়গায় লাগিয়ে রাখতে। এতে দাঁতের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। এই ঘরয়ো উপায় গুলো মেনে চললে অনেকটা দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমে আসবে।

আরো পড়ুনঃ norix 1 এর কাজ কি

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

অনেকেই দাঁতের ব্যথা একেবারে সহ্য করতে পারেন না। ব্যথার যন্ত্রণায় মনে হয় একেবারে পাগল হয়ে যাবেন। যাদের দাঁতের ব্যথা তারা চাইলে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে খুব দ্রুতই এই ব্যথা সারিয়ে তুলতে পারবেন। দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলো:

১) প্রথমে এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে বেশি করে লবন মিশিয়ে নিন। এরপর একনাগারে অনেকক্ষণ কুলকুচি করতে থাকুন। যদি কোনও ধরনের জীবাণুর কারণে দাঁত ব্যথা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এই লবণ পানি দাঁতের ব্যথা কমিয়ে অনেকটা তারাতাড়ি কমিয়ে দেবে। আবার দাঁতের গোড়ায় যদি কোন খাবার আটকে থাকে তাহলে সেই ময়লাও বের করে হয়ে যাবে। এছাড়াও লবণ জল দিয়ে কুলকুচি করলে ব্যথাও কমে যাবে।

২) যখন আপনার প্রচন্ড দাঁত ব্যথা হবে তখন কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে সেটার পেস্ট তৈরি করে নিবেন। তারপর ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে দিন। রসুনের মধ্যে থাকে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান, যা কিনা দ্রুতই দাঁত ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে। ভালো ফলাফল পেতে একটি রসুনের কোয়া পাটায় থেঁতলে নিন। এবার সেই রসুনে সামান্য লবণ মেশান। এরপর ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রেখে দিন। ব্যথা খুব দ্রুতই কমে যাবে।

৩) দাঁতের ব্যথা যদি অধিক তীব্র হয় ও তার সাথে সাথে মাড়িও ফুলে যায় তাহলে কয়েক টুকরো বরফ নিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগান। এতে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।

৪) দাঁতের ব্যথা দূর করতে পেয়ারা পাতা অনেকটা কার্যকরী। ব্যথা দূর করতে একটি বা দুটি পেয়ারা পাতা চিবোতে পারেন। আরও ভালো ফলাফলের জন্য পেয়ারা পাতা গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। তারপর সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিন। এভাবে ব্যথা কিছুটা কমে যাবে।

৫) দাঁতের ব্যথা দূর করতে বাড়িতে লবঙ্গের তেল তৈরী করে রাখতে পারেন। ব্যথা উঠলে দু থেকে তিন ফোঁটা তেল ব্যথা দাঁতের গোড়ার মাঝে লাগিয়ে নিবেন। অথবা চাইলে পরিষ্কার কাপড় বা তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে তা দাঁতের ওপর দিয়ে রাখবেন। এতেও কিছুটা আরাম অনুভব করবেন।

আরো পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

পোঁকা দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষুধ

অনেকেই দাঁত ব্যথা শুরু হলে দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষুধের নাম জানতে চান। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালো। দাঁত ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তাই দাঁত ব্যথার ঔষুধ ও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। দাঁতের ব্যথার কারণ বুঝে চিকিৎসকরা ঔষুধ দিয়ে থাকেন।

যাদের দাঁতে পোঁকা আছে এবং অনেক ব্যথা করে তারা চাইলে Etoricoxib 60mg কিংবা Etoricoxib 90mg ট্যাবলেটটি খেয়ে দেখতে পারেন। যদি পোঁকা দাঁতে অতিরিক্ত ব্যথা হয় তবেই এই ঔষধটি খেতে পারবেন। নয়ত খাওয়া ঠিক হবে না। 

ওষুধগুলো খাওয়ার পরও যদি দাঁত ব্যথা না কমে তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দাঁতের জন্য ডক্টর যে চিকিৎসা দিয়ে থাকবেন তা আপনাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় আপনি ওষুধগুলো খেয়ে দেখতে পারেন।

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে শেষ কথা

দাঁতের ব্যথা অত্যন্ত অসহ্য একটি যন্ত্রণা। এই দাঁতের ব্যথা এমন একটি যন্ত্রণা যার ফলে কথা বলতে একদম ইচ্ছে করে না। অনেকে তো দাঁতের ব্যথার জন্য স্বাভাবিকভাবে কোন কাজ করতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণায়ও ভুগতে থাকেন।

অনেকে দাঁতের ব্যথা হলে ডক্টরের কাছে খুব সহসায় যেতে চান না। আপনি যতই ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেন না কেন, ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করার পরও যদি আপনার দাঁতের ব্যথা না কমে তাহলে বুঝতে হবে আপনার দাঁতে বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়েছে।

সেক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে চলে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে যাদের দাঁতের ব্যথা মাঝে মধ্যে উঠে, তারা চাইলে এই আর্টিকেলে দেওয়া ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। তবে আপনি যদি আগে থেকেই আপনার দাঁতের যত্ন ভালো করে নেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে দাঁতের যন্ত্রণায় খুবই কম ভুগবেন।

FAQ

১) দাঁত ব্যথার ঔষুধ কী?

উত্তর: ফ্লুব্লাস্ট ট্যাবলেট। এটি মাথা ব্যথা, শরীরের যেকোনো জায়গায় ব্যথার পাশাপাশি দাঁত ব্যথা হলেও প্রদান করা হয়। 

২) দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায় কি?

উত্তর: দাঁতের পোকা দূর করার জন্য ঘরোয়া তেমন উপায়ে কাজ হবে না। তবে দাঁতে পোকা যাতে না হয় সেজন্য কিছু পদক্ষেপ আগে নেওয়া যেতে পারে যেমন: নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, খাবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা বা কুলকুচি করা, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।

৩) বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি?

উত্তর: বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে চেষ্টা করবেন বাচ্চাদেরকে মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেতে না দিতে এবং যথাসম্ভব দ্রুত ডেন্টাল ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াবেন।

৪) বাচ্চাদের দাঁতের মাড়ি ফোলা লাগলে কি করব?

উত্তর: গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে বাচ্চাকে কুলকুচি করাবেন। পাশাপাশি চেষ্টা করবেন দু-টুকরো রসুন পেস্ট করে বাচ্চার দাঁতে লাগিয়ে দিতে। এতে ফোলা ভাব কিছুটা কমতে পারে।

৫) কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়?

উত্তর: ভিটামিন ডি ও সি ডেফিসিয়েন্সির অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়।

৬) দাঁতের মাড়িতে ক্যান্সারের লক্ষন গুলো কি?

উত্তর: মুখের মধ্যে, ঠোঁটের আশেপাশে লাল ও সাদাটে ভাব দেখা যায়। মাড়ির চারদিকে অনেকটা ফুলে যায় এবং প্রচুর ব্যথা করে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: