মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় - এই সম্পর্কে আপনারা বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে চান। বিশেষ করে মহিলারা নতুন মাসিক মিস হওয়ার কতদিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

সূচীপত্রঃ মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

সম্মানিত পাঠিকা, আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় তা নিয়ে বিস্তারিতব ভাবে আলোচনা করব। এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন জেনে নেই মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝার উপায়।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়

সাধারণত পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের লক্ষণ বলে মনে করা হতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগেই গর্ভধারণের কয়েকটি লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যা থেকে আপনি সহজেই বুঝে নিতে পারবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট। তাহলে চলুন দেখে নেই মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়।

কোনো মাসে মাসিক না হলে তাকে প্রেগনেন্সির লক্ষণ মনে করে বেশিরভাগ মহিলারা। কিন্তু মাসিক মিস হওয়াই গর্ভধারণের শুধু একমাত্র লক্ষণ নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে মাসিক মিস না হওয়া সত্ত্বেও অনেক মহিলারা গর্ভধারণ করেছেন।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মহিলারা জানেন না, যে মাসিক ছাড়াও নানান শরীরবৃত্তিয় ঘটনা রয়েছে যা গর্ভধারণের দিকে ইশারা দিয়ে থাকে। তাহলে দেখে নিন মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় বা গর্ভবস্থার লক্ষণগুলো কি কিঃ

১। মর্নিং সিকনেসকে প্রেগনেন্সিঃ দিনে কিংবা রাতের বেলায়, যে কোনও সময় এমন হতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের ৩০ দিন পর থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে মহিলারা অস্বস্তি অনুভব করেন।

২। বমি শুরু হওয়াঃ বমি শুরু হতে পারে। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বমি শুরু হতে পারে। শুধু যে বমি হতে পারে ব্যাপারটা এমন নয়। বমি তো হবে এছাড়াও গা গোলাতে পারে। বেশীরভাগ সময়ে সকালের দিকে বমি হতে পারে। দিনে এক বা একাধিকবার বমি ভাব হতে পারে।

৩। স্তনযুগলে পরিবর্তন আসতে পারেঃ প্রেগনেন্সির সময় মেয়েদের স্তনযুগলে পরিবর্তন আসতে পারে। স্তনে ব্যথা হতে পারে অথবা ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে। কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে স্তনে ব্যথা হয় বা ভারী হয়ে যায়।

৪। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবেঃ গর্ভধারণের বিভিন্ন কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। সংক্রমণ কিংবা সর্দি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এটি হতে পারে। তবে অনেক সময় গর্ভধারণের কারণেও শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

৫। ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হবেঃ বিভিন্ন সংক্রমণের কারণে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে নারীদের এমনটা হয়ে থাকে। হরমোন পরিবর্তনের কারণেই মূলত এমনটাই হয়ে থাকে। 

৬। ব্লিডিং হতে পারেঃ মাসিকের তারিখ ছাড়াও মাঝে মধ্য সময়ে ব্লিডিং হতে পারে। যদি আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে তবে আপনার দ্রুতই প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত হবে। ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, স্পটিং ও ক্র্যাম্পস প্রেগনেন্সির দিকে ইঙ্গিত করে থাকে।

৭। মাথা ব্যাথা অনুভূত হবেঃ আপনি যদি প্রেগনেন্সির হয়ে থাকেন তবে শুরু দিকে আপনার মাথা ব্যাথা অনুভূত হতে পারে কিংবা দুর্বল অনুভূত হবেন। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায় বিভিন্ন কারণে এমনটা হতে পারে। এ সময় তীব্র মাথা ব্যথার পাশাপাশি ক্লান্তি অনুভব হবে।

৮। প্রসাবের বেগ বাড়তে পারেঃ আপনি প্রেগন্যান্ট কি না বুঝতে পারবেন যখন আপনার ঘন ঘন প্রসাবের বেগ আসবে। দিনে স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক ভাবে প্রসাবের বেগ আসবে। গর্ভাবস্থার সময় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থার সময় কিডনিতে অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে, যারে ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।

৯। আচরণগত পরিবর্তন হবেঃ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে হরমনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। যার জন্য আপনার বেশ কিছু আচরণগত পরিবর্তন হতে পারে। আপনি আকস্মিকভাবে কান্না করতে পারেন কিংবা হঠাৎ রেগে যেতে পারেন।

আবার কোন কোন সময়ে আনন্দিত হয়ে এক্সাইটেড হয়ে যেতে পারেন। আবার কোন কারণে ভয়ও পেতে পারেন। গর্ভাবস্থার সময়ে এগুলো খুব সাধারণ ঘটনা। তাই আপনি কখনোই এই সময়ে ঘাবড়ে যাবেন না।

১০। খাওয়া দাওয়ার স্বাদ পরিবর্তন হবেঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের খাবার খাওয়ার ইচ্ছার পরিবর্তন আসতে পারে। গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ নারীদের খাবারের রুচি বদলে যায়। অনেক মহিলারা আছেন তারা গর্ভাবস্থায় শাক-সবজি খেতে খুব পছন্দ করে। আবার অনেক মহিলারা শাক-সবজি খেতেই পছন্দ করেন না। তারা অন্য স্বাদের খাবার খেতে চায়।

তবে সকল মহিলাদের উচিত হবে গর্ভাবস্থায় শাক-সবজি, ফলমূল, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। বিশেষ করে ফলমূল বেশী করে খেতে হবে। যেমনঃ কাঁচা পেয়ারা, পেঁপে, আপেল, আঙ্গুর ফল, কমলালেবু ইত্যাদি বেশী বেশী খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ বাংলা

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়

আপনি প্রেগন্যান্সি কি না তা যাচাই করা প্রয়োজন। মাসিকের সম্ভ্যব্য সময়ের মধ্য আপনার যদি মাসিক বা পিরিয়ড শুরু না হলে সম্প্রীতি সময়ের মধ্যে আপনি যদি সহবাস করে থাকেন। আর যদি আপনার প্রেগন্যান্সি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলেই আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারবেন। মূলত এই সময়ই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়।

কিভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য অনেকগুলো উপায় আছে। তবে আপনি যদি বাড়িতে থেকেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে চান তাহলে খুব সহজেই করতে পারবেন। সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের মাসিক বা পিরিয়ড না হলে প্রথমেই প্রেগন্যান্সি কিটের সাহায্যে টেস্ট করা হয়ে থাকে।

ফার্মেসিতে ৩০–১০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কিনতে পাওয়া যায়। আপনি প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। অথবা সরাসরি ডাক্তারের কাছে গিয়েও প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারবেন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় নিয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আপনার মাসিক মিস হওয়ার ১ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো। এটি করার ফলে গর্ভবস্থা গর্ভাবস্থা পরীক্ষার সঠিকতা বৃদ্ধি পাবে। আপনি যদি মাসিক মিস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না চান, তাহলে সহবাস করার পর অন্তত এক বা দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করার পরামর্শ সাধারণত ডাক্তাররা দিয়ে থাকে।

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো কি কি?

আপনি প্রেগন্যান্ট কি না তা বুঝতে পারবেন যখন আপনার মধ্য প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো দেখা দিবে। প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো হলো, রজঃস্রাব বা ঋতুচক্র না হওয়া, কোমল স্তন, বমির ভাব ও বমি হওয়া, ক্ষুধা, এবং ঘনঘন মুত্রত্যাগ ইত্যাদি।

রজ:চক্র বলতে বোঝায়ঃ রজ:চক্র বা ঋতুচক্র (ইংরেজি নামঃ Menstrual cycle) বলতে নারীদেহের ২৮ দিনের একটি পর্যায়ক্রমিক শরীর বৃত্তিয় প্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রথম শুরু হয় ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে। (তবে এর আগে নয় বছর বয়সেও হতে পারে। এটা সাধারণত ভৌগোলিক আবহাওয়া, শারীরিক শক্তির উপর নির্ভর করে হয়ে থাকে) তারপর থেকে প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে হয়।

আরো পড়ুনঃ অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ

শেষ কথা: মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় নিয়ে

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীর সুস্থ্য থাকা জরূরী। প্রেগন্যান্সির সময়ে মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হবে। সম্মানিত পাঠিকা, আজকে আমি আপনাদের সাথে মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

আপনার যদি এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকে তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আজকের এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)