নগদ একাউন্টের সুবিধা ২০২২

নগদ একাউন্ট এর সুবিধা ২০২২ — বর্তমান সময়ে মানুষ আধুনিকায়নের সাথে নিজেকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে সম্পৃক্ততায় সবাই অভ্যস্ত। মোবাইল ব্যাংকিং সবকিছু সহজ ও হাতের মুঠোয় করে দিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে খরচ করার ফলে টাকার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পাওয়া যায়, কত টাকা আছে তা দেখার জন্য গুণে হিসাব রাখার কোনো প্রয়োজন হয় না। 

ব্যালেন্স অপশনে ক্লিক করলেই জানা হয়ে যায়। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা হারানোর কোনো ভয় নেই যদি পিন নাম্বার সিক্রেট রাখা হয় তাহলে। এখন বিভিন্ন দোকান, শপিংমল, রাইডার শেয়ারিং অ্যাপগুলো ও মোবাইল ব্যাংকিং এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ফলে ঝামেলাও কম হয় এবং সময়ও বাঁচে। তেমনই এক মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম হলো নগদ। নগদ হচ্ছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল সেবা।

পেজ সূচীপত্রঃ

নগদ কি

নগদ থ্রার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। নগদ বাংলাদেশ ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবা যা অর্থ আদান-প্রদানের একটি পরিষেবা হিসেবে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক ১১ অক্টোবর ২০১৮ সালে এই ডিজিটাল আর্থিক সেবা চালু করা হয় এবং ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে এটি তার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। 

নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পূর্বে চালুকৃত পোস্টাল ক্যাশ কার্ড এবং ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম (ইএমটিএস)- এর নতুন সংস্করণ। নগদ এর সদর দফতর ঢাকার বনানী এলাকার কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে অবস্থিত। নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে নিজের মোবাইলে টাকা জমা, উত্তোলন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা স্থানান্তর সহ বিভিন্ন বিল ও কর পরিশোধ করা যায়।

আরো পড়ুনঃ ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম

নগদ একাউন্টের সুবিধা

১। হিসাব খোলা ২। হিসাব এ টাকা জমা করা বা ক্যাশ ইন ৩। একটি নগদ হিসাব থেকে অন্য নগদ হিসাবে টাকা পাঠানো বা সেন্ড মানি করা যাবে ৪। হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বা ক্যাশ আউট ৫। মোবাইলে এয়ারটাইম ক্রয়/রিচার্জের সুবিধা ৬। পণ্য কেনাকাটা বা সেবার বিনিময়ে মূল্য পরিশোধ করা। যাকে বিল পেমেন্ট সিস্টেম বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের বিল যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের সুবিধা।

নগদ একাউন্টের সুবিধা

দেশের সর্বনিম্ন ক্যাশ আউট চার্জ দিচ্ছে নগদ। হাজারে ৯.৯৯ টাকা ও ভ্যাট সহ ১১.৪৯ টাকা অ্যাপের মাধ্যমে এবং ১২.৯৯ টাকা ও ভ্যাট সহ ১৪.৯৪ টাকা ইউএসএসডি এর মাধ্যমে। এছাড়া ক্যাশ ইন চার্জ ফ্রি অ্যাপ ও ইউএসএসডি এর মাধ্যমে। সেন্ড মানি চার্জ ফ্রি অ্যাপ এ ও ৪.৩৫ +৬৫ ভ্যাট = ৫ টাকা ইউ এসএসডি এর মাধ্যমে। মোবাইল রিচার্জ ফ্রি অ্যাপ ও এসএসডি এর মাধ্যমে।

নগদে দৈনিক ৩০,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ বার ৫ ক্যাশ ইন করার সুযোগ রয়েছে, দৈনিক ২৫,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ বার সেন্ড মানি করা যাবে। নগদে দৈনিক ১,০০,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ বার মোবাইল রিচার্জ করা যাবে, এছাড়া দৈনিক ২৫,০০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫ বার ক্যাশ আউট করা যাবে।

সর্বনিম্ন ক্যাশ ইন ৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা। সর্বনিম্ন সেন্ড মানি ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা। সর্বনিম্ন মোবাইল রিচার্জ ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা। সর্বনিম্ন ক্যাশ আউট ৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা। এছাড়া সর্বোচ্চ ব্যালেন্স রাখা যাবে ৩,০০,০০০ টাকা।

আরো পড়ুনঃ পেপাল একাউন্ট খোলার নিয়ম

নগদ একাউন্টের সুবিধা

নগদ এ মোবাইল রিচার্জ, অ্যাড মানি, বিল পে এই ধরনের আরো অনেক সুবিধা রয়েছে এ সম্পর্কে নিম্নে দেয়া হলো -

মোবাইল রিচার্জ: নগদ এর মাধ্যমে মোবাইল রিচার্জের সুবিধা রয়েছে। নিজের এবং অন্য যেকারো মোবাইলে রিচার্জ করা যাবে। কোন ধরনের চার্জ ছাড়াই এটি সম্ভব।

অ্যাড মানি: ইন্টারনেট ব্যাংকিং থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা রয়েছে নগদে। ব্যাংক টু নগদ ও কার্ড টু নগদ। যা খুবই সহজ ও ঝামেলা বিহীন। 

ব্যাংক টু নগদ: হঠাৎ কোনো প্রয়োজনের জন্য ব্যাংকে না গিয়ে টাকা উঠানোর জন্য নগদ এর ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা নেওয়া সম্ভব। বর্তমানে কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের সুযোগ রয়েছে, সামনে আরো ব্যাংকের সাথে অ্যাড মানি যুক্ত করা হবে তা আশা করা যায়। ব্যাংক থেকে অ্যাড মানি সম্পূর্ণ ফ্রি।

কার্ড টু নগদ: যারা কার্ড ব্যবহার করেন তারাও কার্ড থেকে নগদ এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে, যা সময় সাপেক্ষ অসুবিধাজনক।

বিল পে: বিভিন্ন ধরনের বিল পে সার্ভিস রয়েছে নগদ আ্যপে। নিত্য জীবনের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিল দেওয়া যাবে এখন নগদ এর মাধ্যমে যেমন

বিদ্যুৎ বিল: DPDC, DECO সহ আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিল দেয়া যায় নগদ এর মাধ্যমে। বিল দেয়া হয়ে গেলে বিল-পে কপি ডাউনলোড করে রাখা যায় প্রমাণস্বরূপ হিসেবে।

গ্যাস বিল: জালালাবাদ গ্যাস, তিতাস গ্যাস, বাখরাবাদ গ্যাস সহ আরো বিভিন্ন গ্যাস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এর গ্যাস বিল পরিশোধ করা সহজ নগদ এর মাধ্যমে। তাছাড়া বিল রিসিট ডাউনলোড করে রেখে দেয়া যায়।

পানির বিল: ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা সহ পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এর বিল দেয়া যায় নগদ এর মাধ্যমে। এই বিলের রিসিটও ডাউনলোড করে নেয়া যায়।

ইন্টারনেট বিল: কিছু স্বনামধন্য ইন্টারনেট কোম্পানির বিল পরিশোধের সুযোগ রয়েছে নগদে।

টিভি ও টেলিফোন: বিটিসিএল ডোমেইন, আকাশ ডিটিএইচ, বাম্বেলবি লিমিটেডসহ আরো কিছু টেলিযোগাযোগ ও ডিস কোম্পানির বিল নগদ এর মাধ্যমে দেয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর বেতন ও ফি ইত্যাদি নগদ অ্যাপ এর মাধ্যমে দেওয়া যায়। মহামারীর এই সময়ে স্কুল বিদ্যালয় গুলোতে গিয়ে ভিড় না করে নগদ অ্যাপের মাধ্যমে বেতন-ফি দেওয়া যেমন সুবিধাজনক তেমন স্বাস্থ্যকর ও বটে।

ব্যাংক ও এফ আই: বাংলাদেশ ফিনান্স ব্যাংক সহ আরো বিভিন্ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠান এর এফ ডি, ফিক্স ডিপোজিট, লোন, ডিপিএস ইত্যাদি নগদ এর মাধ্যমে দেয়া সম্ভব।

ইন্সুরেন্স: সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেটলাইফ এছাড়া আরও বিভিন্ন ইন্সুরেন্সের পলিসি নগদ অ্যাপ এর মাধ্যমে দেয়া যাবে।

কোগিত নমুনা সংগ্রহের ফি: কোরোনা কালীন সময়ে হাতে দিয়ে টাকা লেনদেন করার চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিং বেশি সুরক্ষিত। কোভিড নমুনা সংগ্রহের জন্য নমুনা সংগ্রহ ফি নগদ দ্বারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ক্রেডিট কার্ড: নগদ একাউন্ট ব্যবহারকারীরা তাদের ক্রেডিট কার্ডের বিল এখন থেকে নগদ এর মাধ্যমে দিতে পারবে। নগদ এর মাধ্যমে ব্যাংকিং ঝামেলা হবে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য পূর্ণ।

ভূমি মন্ত্রণালয়: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর ও খাজনা জমা দেওয়ার জন্য এখন অধিদপ্তরে না গিয়ে বাসায় বসে নগদ অ্যাপ এর মাধ্যমে দেয়া সম্ভব। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে অযথা লাইনে দাড়াতে হচ্ছে না এবং সামাজিক দূরত্ব তাও নিশ্চিত হচ্ছে।

ডোনেশন: বিভিন্ন আর্থ সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে আর্থিক সহায়তা করার জন্য নগদ অ্যাপ এ ডোনেশন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিজের সাধ্যমত এই সব প্রতিষ্ঠানে ডোনেশন করার মাধ্যমে মানবতার সেবা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এতে যেমন অন্যের কল্যাণ হয় তেমন নিজের আত্মতৃপ্তির সন্তুষ্টি ও হয়।

অন্যান্য: এছাড়া আরো অন্যান্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক এর জন্য নগদ একাউন্ট এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন এর সুযোগ রয়েছে।

মুনাফা: নগদ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম যার মাধ্যমে একাউন্টে টাকা রেখে মুনাফা পাওয়া সম্ভব।

এখন পর্যন্ত অন্য কোন মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে এই ধরনের সার্ভিস পাওয়া যায়নি। সর্বনিম্ন ১,০০০ টাকা নগদ একাউন্টে রাখলে তা থেকে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেয়া হয়। ১,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নগদ অ্যাপটিতে টাকা রাখলে বাৎসরিক ৪.০% হারে মুনাফা দেয়ার সুযোগ দিয়েছে নগদ। এছাড়া ৫,০০০ টাকা থেকে এর উর্দ্ধে যে কোন পরিমাণ টাকা সর্বনিম্ন একমাস পর্যন্ত নগদ একাউন্টে রাখলে বাৎসরিক ৬.০% হারে ইন্টারেস্ট দেওয়া হয়।

জীবনের চলার পথ সুগম করতে মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে একটি জাদুর পরশের মত নিমিষেই লেনদেন করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে। তবে এই নগদ একাউন্টে ভালোভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথমে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পিন নাম্বারটির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। পিন নাম্বার কারো জানা থাকলে অনায়াসে এটার দুর্ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং নগদ এর মাধ্যমে টাকা চুরি হওয়া বা হারানোর ভয় থাকে না। কখনো কোনো কারনে ডিভাইস নষ্ট বা চুরি হয়ে গেলেও অন্য কোন ডিভাইস এর সাহায্যে নিজের একাউন্টে ফিরে পাওয়া সম্ভব। এতে টাকা হারানোর কোন ভয় থাকে না। আর নিজে বহন করা টাকা চুরি বা ছিনতাই হওয়ার ভয় থাকে। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু যেমন বদল হচ্ছে তেমন অর্থ হাত দ্বারা লেনদেন হওয়ার থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা বেশি শ্রেয়।

আরো পড়ুনঃ ইন্টারনেটের বিল বেশি নিলে যেভাবে অভিযোগ করবেন