শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব | শীতে ত্বকের যত্ন

শীতে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন তার ১০টি উপায়

শীতে ত্বকের যত্ন

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর এক বৈচিত্র্যময় দেশ। এদেশের প্রকৃতি বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। ষড়ঋতুর মধ্যে একটি অন্যতম ঋতু হচ্ছে শীতকাল।

শীতকাল এমন একটি ঋতু যেই ঋতুতে শুধুমাত্র এদেশের প্রকৃতি পাল্টায় না বরং আমাদের সুস্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। সুস্বাস্থ্য বলতে শুধুমাত্র আমাদের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য ভালো থাকাকে বোঝায় না বরং অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুটিকে বুঝায়।

অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য ভালো কিন্তু বাহ্যিক স্বাস্থ্য যদি অসুস্থ থাকে বা ভালো না থাকে সেক্ষেত্রে কখনোই একজন মানুষ পরিপূর্ণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারেনা।

শীতকালে আমাদের মানব দেহের বাহ্যিক অংশ ত্বকের বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আর তাই প্রিয় পাঠক আপনাদের উদ্দেশ্যে আজকেরে আর্টিকেলে আমরা শীতকালে কিভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয় বা শীতে ত্বকের যত্ন তা নিয়ে আলোচনা করব।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

ত্বক কি?

আমাদের মানবদেহের সবচেয়ে বাইরের আবরণের নাম হলো ত্বক। ত্বক আমাদের মানবদেহের আকৃতি প্রদান করে। 

ত্বকের যত্ন

আমাদের মানবদেহের ত্বক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিহীনতায় ভোগে যার ফলে ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হয়ে উঠে। কিন্তু আমরা মানবদেহের অন্যান্য সব অংশ কিংবা অঙ্গের প্রতি যে পরিমাণ খেয়াল করি ত্বকের ক্ষেত্রে তা করিনা। আর সেজন্যই আমাদের উচিত ত্বকের বিষয়ে সচেতন বৃদ্ধি করতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ শীতে মুখের যত্নে ১০টি উপায় ঘরোয়া উপায় | শীতে মুখের ত্বকের যত্ন

শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় কেন? 

সাধারণত শীতকালে আমাদের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের চাপ কমে যায়। এর ফলে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি শুষে নেয়। আমাদের ত্বকে বিদ্যমান পানের কিছু অংশ বায়ুমণ্ডল তখন শোষণ করে নেয়। এর ফলে শীতে আমাদের ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। 

শীতে ত্বকের যত্ন

শীতে আপনি কি আপনার শুষ্ক ত্বক নিয়ে চিন্তিত? মনে রাখবেন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার ত্বক ক্রমশ আর্দ্রতা হারাবে, তাই ত্বক যদি বিশেষ ভাবে যত্ন না পায় তাহলে দেখা দিবে বলিরেখা। বয়সের আগেই ত্বকে ভাঁজ পড়বে, ত্বক কুঁচকে যেতেও পারে।

আশার কথা হলো, সামান্য একটু সচেতন হলেই আপনারা কিন্তু এই সমস্যার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই শীতে ত্বকে যত্নে কি কি করনীয়ঃ

১। ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার করুন

শীতকালের ত্বকে এমন ধরনের ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার করা দরকার, যেগুলোতে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। সেই সাথে রাতে যে নাইট ক্রিম ব্যবহার করেন, সেই ক্রিমেও যেন তেলের পরিমাণ বেশি হয়। কেননা, এসকল ক্রিম ত্বক আর্দ্র রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে।

২। শীতে হাতের যত্ন নিন

মানুষ তার মুখের ত্বকের যত্নের বিষয়ে যতবেশি সচেতন, বেশিরভাগ সময় তারা তাদের হাতের যত্নের বিষয়ে ততবেশী সচেতন দেখা যায়না। যদিওবা শীতের সময় হাতের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়।

বিশেষ করে যাঁদের হাত বারবার ধোয়ার প্রয়োজন হয়, তাঁরাই মূলত এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। এই সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য হাতে ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। বারবার যাদের হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজ করার প্রয়োজন হয়, তাঁদের দৈনন্দিন কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।

আরো পড়ুনঃ মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার | স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

৩। সুন্দর পায়ের জন্য

শীতকালে পায়ে মোজা পরে থাকার কোনো বিকল্প নাই। শীতে পায়ে মোজা পরে থাকার কারণে ত্বক হয় ঝকঝকে এবং মসৃণ। এছাড়াও ত্বক সুন্দর ও ঝকঝকে রাখার জন্য শীতকালে পায়ে ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা গ্লিসারিন দিয়ে ম্যাসাজ করুন।

প্রতি সপ্তাহে ১ বার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের ত্বকে এর মৃত কোষগুলোকে উঠিয়ে নিন। প্রতিরাতে শোবার পূর্বে সামান্য যত্নই শীতের সময় আপনার পায়ের ত্বক সুন্দর রাখবে।

৪। বেশি বেশি পানি পান

শীতকালে অনেকেই আছেন যারা তুলনামূলক ভাবে কম পরিমাণে পানি পান করেন। পানি কম পরিমাণে পানি করা ত্বকের জন্যে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিকারক। কম পরিমাণে পানি পান ত্বকের জন্য তো ক্ষতিকর বটেই, শুষ্ক মৌসুমে সুস্থ্য থাকার জন্যে বেশি বেশি পানি পান করা প্রয়োজন সকলের। শরীরের পানিশূন্যতা দেখা দিলে সেটা একদিকে যেমন ত্বকে নানান ধরনের রোগব্যাধির সৃষ্টি করে, পাশাপাশি ত্বক খসখসে এবং রুক্ষ হয়ে যায়। 

অপরদিকে কম পরিমাণে পানি পান করার কারণে শরীরে পানির অভাব দেখা যায় যা পরবর্তীতে শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শীতে শরীর ভিতর থেকে আর্দ্র না হলে সেটার ছাপ পড়বে ত্বকের উপরে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি করা প্রয়োজন। শুষ্ক ত্বকের যত্নে ডাবের পানি, ফলের রস পান করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

৫। সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত

অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে, শীতের সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করার কোনো দরকার নেই। কিন্তু মনে রাখা ভালো শীতকাল হোক অথবা গ্রীষ্মকাল, সরাসরি রোদ সবসময় ত্বকের জন্যে ক্ষতিকর। তাই শীতকালেও বাইরে বাহির হওয়ার অন্তত ত্রিশ মিনিট পূর্বে মুখে, হাত এবং পায়ে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

৬। নিয়ম মাফিক গোসল করুন

শীতকাল আসলেই অনেকেই আছেন যারা হটবাথ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এই সময়ে অনেকেই শরীরে বেশি গরম পানি ঢালেন গায়ে। যার কারণে ত্বক আরো শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যায়। যদি আপনার ডায়াবেটিস থেকে থাকে, তবে অজান্তেই ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কেননা, তাঁদের অনুভূতি শক্তি তুলনামূলক ভাবে কম হয়ে থাকে। তাই শীতকালে নিয়ম মাফিক গোসল করার চেষ্টা করুন। গোসল করার সময় অতিরিক্ত গরম পানি শরীরে ঢালা থেকে বিরত থাকুন। 

গোসল করার সময় শরীরে কুসুম গরম পানি ঢালার চেষ্টা করুন। এছাড়াও শীতের সময় অতিরিক্ত শুষ্ক এবং রুক্ষতার ফলে অনেকের ত্বক থেকে রক্তপাতের সৃষ্টি হয়।

অনেকের শীতের সময়ে খুজলি, দাদ, ঘা-পাঁচড়াসহ নানান ধরনের চর্মরোগে ভোগেন। যদি আপনার এই ধরনের সমস্যা দেখা যায় তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

৭। নারকেল তেলের ব্যবহার

শীতের সময় মুখ এবং শরীরের ত্বকের পাশাপাশি হাত-পা, হাটু, গোড়ালি, কনুইয়ের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল দেয়া প্রয়োজন। আর যদি আপনারা এই বিষয়গুলোর উপর ভালোভাবে গুরুত্ব না দেন তাহলে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো রুক্ষ এবং কালো হয়ে যাবে।

আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনারা নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। শীতে ত্বকের যত্নে প্রথমে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোকে ভিজিয়ে রাখুন পানিতে। 

যখন ত্বক কুঁচকে যাবে, তখন বুঝবেন যে আপনার ত্বক যথেষ্ট আর্দ্রতা পেয়েছে। সাধারণত নারকেল তেল শীতের সময় জমে যায়। জমা নারকেল তেলের মোটা পরত আপনার আর্দ্র ত্বকে লাগিয়ে নিন।

তারপরে মোজা অথবা লম্বা হাতা টপ কিংবা পাজামা পরে ঘুমোতে যান। টানা বেশ কয়েকদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে নিজে নিজের ফারাকটা বুঝতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কি | টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়

৮। শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন

শীতকালে সাধারণত আমাদের ত্বকের পানি শোষিত হয়। কাজেই এই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রথমে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। বেশি পরিমাণে পানি পান করার ফলে যে শুধু ত্বকের ভারসাম্য রক্ষা হবে তাই নয় বরং এ পানি পানের মাধ্যমে সারা দেহের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের সাহায্য হয়।

এছাড়া ত্বকের স্বাভাবিক শুষ্ক ভাব দূর করার জন্য ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। ময়েশ্চারাইজিং লোশনের মধ্যে রয়েছে যেমনঃ পন্ডস লোশন, নিভিয়া লোশন, ভ্যাসলিন বডি লোশন প্রভূতি। 

তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, আমরা বড়রা সচারাচর যে সকল লোশন ব্যবহার করি তাই আামাদের শিশুদের বা ছোটদের জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু এটি মোটেও উচিত নয়। কারণ শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় অনেক বেশি কোমল ও নরম থাকে।

এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবহ্রত সেই লোশনের পিএইচ মাত্রা তাদের জন্য সহনীয় নয়। যার কারণে শিশুদের ত্বকের উপকারীতার বদলে তা অপকার বয়ে আনবে। শুধু যে আমাদের শুষ্ক ত্বকের যত্নে কেবল লোশন ব্যবহার করতে হবে তা নয় বরং আমাদের প্রচলিত যে সরিশা তেল আছে তাও ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ত্বকের রুক্ষ ও শুষ্কভাব দূর হয়।

শীতে ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহার করুন

শীতে ত্বকের যত্নে মধু ব্যবহার করতে পারেন। কেননা মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান। ১ চামচ মধুর সাথে ২ চামচ মিল্ক পাউডার এবং এক চিমটে হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর এই পেস্টটি আপনার মুখে মেখে নিন এবং ১৫ মিনিট সময় রেখে দিয়ে পরে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে আপনার শীতে ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

শীতে ত্বকের যত্নে ঘি ব্যবহার করুন

শীতে ত্বকের যত্নে আপনারা ঘি ব্যবহার করতে পারেন। ঘি-তে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং সকল উপাদান। প্রতি রাতে হাতে-পায়ে এবং মুখে মাখলে ত্বক নরম থাকবে। শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন লেবু বেশ উপকারি। মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সেটা মুখে লাগিয়ে রেখে দিন ফেইস প্যাকের মতো করে। কয়েক মিনিট রেখে দেয়ার পর শুকিয়ে এলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

শীতে ত্বকের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন

শীতে ত্বকের যত্নে আপনারা অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। আধা চামচ অ্যাপল সিডার, আধা চামচ মধু, আধ চামচ পানি, দুই চামচ গোলাপ জল এবং কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে সেগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। কনুই, হাতে-পায়ে এবং হাঁটুতে ভালো ভাবে মাখিয়ে ১০ মিনিট সময় ধরে রেখে দিন। তারপরে পানি দিয়ে পরিস্কার করে ফেলুন। এই পদ্ধতি শীতে শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী।

আরো পড়ুনঃ কি খেলে টিউমার ভালো হয়

শীতে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

সাধারত গ্রীষ্মকালে ত্বকে তৈলাক্তভাব দেখা দিলেও শীতকালে তা অনেকের ত্বকে দেখা যায়। আর তাই যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত তারা সাধারণত ত্বকের যত্নে ত্বকে নারিকেল তেল (নারকেল তেল নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।

শরীরের যে অংশ বেশি রুক্ষ, তার জন্য ব্যবহার করতে পারেন গরম তেল), ট্রি ট্রি অয়েল (টি ট্রি অয়েল হচ্ছে একটি এসেনশিয়াল অয়েল। এটি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানে ভরপুর) এবং শীতে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভিটামিন-ই প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

এছাড়াও শীতে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ও ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যালোভেরা যে শুধুমাত্র শরবত হিসেবে খাওয়া যায় তাই নয় বরং তা বিভিন্ন ধরনের কাজেও ব্যবহৃত হয়। আমাদের চেহারায় সারাদিনের ধুলাবালি, রোদে পোড়াভাব প্রভূতি ত্বকে ময়লা জমে থাকে।

এক্ষেত্রে বাইরে থেকে ঘরে আসার পর অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করা যায়। এর ফলে মুখের সব কালো ভাব ও দাগ দূর হয়। শুধু তাই নয় পাশাপাশি ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। 

পোষ্ট ক্যাটাগরি: