গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে জেনে নিন - একজন নারীর জীবনে তার মহামূল্যবান সময় হচ্ছে গর্ভকালীন সময়টি। প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস নারীর গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা বা হালকা ঘরের কাজকর্ম করা উচিত। এই সময়টুকু দিনের বেলা অত্যন্ত ২ ঘণ্টা এবং রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। এতে মা ও গর্ভের সন্তান দুজনেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

গর্ভবতী নারীরা গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অনেক অসুস্থতার সম্মুখীন হয়েও, এই অসুস্থতা নিয়ে কোন চিন্তা না করে, সব সময় চিন্তা করেন পেটের বাচ্চা কেমন আছে? কোন পাশে আছে, ভালো আছে কিনা, আরো কত কী?

অনেকে আবার প্রশ্ন করেও বসেন গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে। কারণ বাচ্চার অবস্থান অনুযায়ী বাচ্চার সুস্থতা নির্ভর করা হয়। তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে?

(toc) #title=(সুচিপত্র)

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য গঠন করার জন্য অবশ্যই গর্ভাবস্থায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। গর্ভকালীন প্রথম চার মাসের পর থেকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার নড়াচড়া ঠিক আছে কিনা। অনেক সময় নড়াচড়ার দিকে লক্ষ্য করে বোঝা যায় গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে। পেটের মধ্যখানে গর্ভবতী নারীর ভ্রুণের থলির ভিতরেই আস্তে আস্তে বেড়ে উঠে গর্ভের শিশুটি।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সাধারণত যে পজিশনে থাকার কথা, তা হলো অ্যান্টেরিয়র পজিশন। অ্যান্টেরিয়র পজিশন এর বিবরণ হচ্ছে বাচ্চার মুখ তার পিঠের দিকে ঘোরানো থাকে এবং মাথা থাকে জরায়ুর (নিচের) দিকে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে সেটা সাধারণতো সিওর ভাবে বলা যায় না। তবে গর্ভকালীন ৮ থেকে ৯ মাস পরে জরায়ুর উপরেই থাকে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা কোন অবস্থানে থাকাটা স্বাভাবিক

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর পেটের বাচ্চা অ্যান্টেরিয়র পজিশনে থাকাটা স্বাভাবিক। অ্যান্টেরিয়র পজিশন হচ্ছে বাচ্চার মাথা নিচের দিকে থাকে এবং মায়ের পিঠের দিকে বাচ্চার পিঠ থাকে। বাচ্চার থুতনি তার বুকের সাথে সংযোগ অবস্থায় থাকে। তাই অ্যান্টেরিয়র পজিশন থাকলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার আশংকাজনক বেশি এবং প্রসবও তারাতাড়ি হয়ে যায়। তার সাথে মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকেন।

গর্ভাবস্থায় গর্ভের বাচ্চা উল্টো হলে কি করবেন

গর্ভকালীন সময়ে অনেকেরই শোনা যায় বাচ্চা উল্টো থাকে। কখনো কখনো এই উল্টো বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবে নরমাল ডেলিভারি করা যায় আবার কখনো পজিশন ঠিক না থাকায় নিতে হয় সিজারের সাহায্য। তবে আলট্রাসাউন্ড করে পরিষ্কার বুঝা যায় বাচ্চা কেমন আছে এবং এই আলট্রাসাউন্ড কবে করবেন এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গর্ভাবস্থায় ৩৭ সপ্তাহের পরে আলট্রাসাউন্ড করে যদি দেখা যায় বাচ্চা উল্টো তাহলে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তখন ডাক্তাররা সিজারের পরামর্শ দেন এবং যদি ৩৭ সপ্তাহের আগে আলট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় বাচ্চা উল্টো তবে বাচ্চাকে সঠিক পজিশনে আনা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে কিভাবে বুঝবেন

প্রত্যেক নারীর জীবনেই গর্ভকালীন এই সময়টুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময় ঘনিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সবারই খুব জানতে ইচ্ছা হয়, গর্ভকালীন বাচ্চাটি ছেলে নাকি মেয়ে? তখনি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা বা আমাদের গুরুজনরা নাভী অথবা পেটের আকার দেখে বা অন্যান্য কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে। গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, আসুন জেনে নেই সেরকমই কিছু লক্ষণঃ

  • গর্ভকালীন সন্তানের হৃদস্পন্দনের হার বেশি হলে মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় মায়েরা যদি বাম দিকে শুয়ে থাকতে পছন্দ করে তবে ছেলে, এবং মেয়ে হলে ডান দিকে শুতে পছন্দ করেন।
  • মুড সুইং বেশি হলে মেয়ে। মুড সুইং না হলে তার উল্টোটা ছেলে।
  • মর্নিং সিকনেস বেশি হলে মেয়ে। যেমন বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো এসব এবং ছেলে হলে এই সমস্যাগুলো খুব একটা হয় না।
  • শরীরের স্কিনের মধ্যে তেল তেলে ভাব, মুখের মধ্যে ব্রণ, এসব থাকলে মেয়ে এবং এ সমস্যাগুলো না থাকলে, গর্ভাবস্থায় আরো বেশি সুন্দরী হয়ে উঠলে ছেলে।
  • বেশি মিষ্টি খাবার খেতে ইচ্ছে হলে মেয়ে এবং খুব বেশি ঝাল অথবা সবসময় টক খেতে ইচ্ছে করে তাহলে ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পেটের মাঝামাঝি জায়গা বেশি উঁচু থাকলে মেয়ে এবং পেটের নিচের দিকে উঁচু থাকলে মানে গর্ভের সন্তান নিচের দিকে ঝুঁকে থাকলে ছেলে হবে।

এগুলো সবই হচ্ছে মা, দাদী, খালাদের প্রচলিত ধারণা। আসলে গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চা জন্মের আগেই লিঙ্গ নির্ধারণ করে জানানো উচিত নয়। জন্মের পরই দেখতে পারবেন বাচ্চা ছেলে নাকি মেয়ে।

শারীরিক এই কিছু পরিবর্তনের উপর নির্ভর করেই অনেকে নির্ধারণ করে নিন গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে, গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমোনের প্রভাবে মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রবাহিত করতে পারে এটার জন্য গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এটা নির্ধারণ করা উচিত নয়।

আরো পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়

গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হয়

গর্ভাবস্থায় পেট ছোট বা বড় হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় কত মাসে পেট বড় হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়, কারন প্রতিটা নারীর শারীরিক গঠন আলাদা, যার জন্য নির্দিষ্ট করে কোন সময় বলা যায় না। তবে সাধারণত গর্ভাবস্থায় নারীদের পাঁচ মাস থেকে পেট বড় হতে শুরু করে। বিপরীত দিকে দেখা যায়, পুরো গর্ভকালীন সময় পেট তেমন একটা বড় হয় না।

বাচ্চার পজিশন বুঝার উপায়

গর্ভকালীন এমন একটি সময় তখনকার সুস্বাস্থ্য একজন নারীর জীবনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়ে উঠে। গর্ভকালীন পুরো সময়টাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শেষের অষ্টম মাসে আলট্রাসাউন্ডে আপনার বাচ্চার পজিশন কেমন আছে তা বুঝতে পারবেন।

বাচ্চার পজিশন ঠিক করার উপায়

গর্ভকালীন সময় বাচ্চার পজিশন অনেক সময় দেখা যায় উল্টো হয়ে গেছে। সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন, গর্ভধারিণী মায়ের প্রথম যদি কোন বাচ্চা থেকে থাকে তা যদি নরমাল ডেলিভারির হয় তাহলে ডাক্তার দ্বিতীয়বারের সময় বাচ্চার পজিশন ঠিক করার জন্য কোন উপায় বের করবেন, অন্যথায়, ডেলিভারির জন্য সিজারের মাধ্যম বেছে নিবেন।

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারী কোন পাশে ঘুমাবেন

গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সময় খেয়াল রাখবেন পেট এবং পিঠের সমর্থন পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য পেটের নিচে এবং হাটুর মাঝে বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই গর্ভাবস্থায় বাম পাশ হয়ে ঘুমাবেন, এতে মা ও শিশু দুজনের জন্যই উপকারী। র*ক্তসঞ্চালন উন্নত করে হৃদপিণ্ড থেকে প্লাসেন্টায় (জরায়ুর সাথে যুক্ত) র*ক্তের সরবরাহ নিশ্চিত করে, যার পুষ্টি সমৃদ্ধ গর্ভকালীন শিশুর পুষ্টি যোগায়।

আরো পড়ুনঃ norix 1 এর কাজ কি

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর পায়ে পানি আসে কেন

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর শরীরে শিরাগুলোর মাধ্যমে র*ক্ত হৃদপিণ্ড প্রবাহিত হয়। তখন র*ক্তের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং নিম্নাঙ্গ থেকে হৃদপিন্ডে র*ক্তপ্রবাহের মাত্রা কমে যায় তখন প্রতিটি শিরা থেকে তরল বের হয়ে শরীরের টিস্যুতে জমা হয়। মূলত এর কারনেই পায়ে পানি আসে এবং পা অনেকাংশ ফুলে যায়।

গর্ভাবস্থায় ৭-৮ মাস থেকে শরীর বা পা ফুলে যায় কেন

গর্ভকালীন সময়ে শরীরের কোষে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়ার কারনে শরীর ফুলে যায় বা পা ফুলে যায়। এই সময়ে শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে। গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রায় ২৫ শতাংশ ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু তার থেকে যদি অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা বাড়তি র*ক্তচাপের সমস্যা হয়, তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

গর্ভাবস্থায় পেটের উপর একটি রেখা দেখা যায় কেন

গর্ভাবস্থায় চতুর্থ অথবা পঞ্চম মাস থেকে আপনার পেটের উপরে একটি রেখা দেখা যায়। এই রেখাটিকে বলা হয় লিনিয়া নাইগ্রো, অথবা নারীদের কাছে এটি গর্ভকালীন রেখা হিসেবেও পরিচিত। গর্ভাবস্থার পূর্বে এটি অদৃশ্য থাকে এবং গর্ভকালীন পঞ্চম মাস থেকে একটি দৃশ্যমান হয় পেটের উপর।

গর্ভকালীন অবস্থায় হরমোনের কারণে ক্রমশ গাড় হয়ে উঠে রেখাটি। ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত মেলানিন নিসৃত হয়, এবং মেলানিনের কারণেই ত্বকের বর্ণ অতিরিক্ত গাড় হয়ে উঠে। বাচ্চার জন্মের পরেই এটা আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। তবে ভয় পাবার কিছু নেই, এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু না।

গর্ভকালীন সময়ে বিশেষ সতর্কতা

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস কোনোরকম স্বামী সহ*বাস করা যাবে না। এতে করে গর্ভের বাচ্চার উপর চাপ প্রয়োগ হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে সেটা বুঝতে পেটের মধ্যে হাত দিয়ে চাপাচাপি করা থেকে বিরত থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন, তার বাইরে নিজে বুঝে অতিরিক্ত কোন ওষুধ সেবন করতে যাবেন না, হোক সেটা হালকা জ্বর, সর্দি বা কাশির জন্য।

তার বিপরীতে বড় ধরনের কোন ক্ষতির প্রভাব পড়বে শরীরে। পানিশূন্যতা রোধ করতে স্বাভাবিক সময়ের থেকে বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন, এতে করে পানি শূন্যতা রোধ হয়, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়

ভিডিওতে দেখে নিন গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

নিচের ভিডিওতে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে। তাই সেখান থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে নিয়ে শেষ কথা

বৈজ্ঞানিক ও আধুনিকতার যুগে খুব সহজেই আমরা আলট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে জানতে পারি যে গর্ভের বাচ্চা কেমন আছে, কোনদিকে কিভাবে আছে। গর্ভের শিশুর নড়াচড়া যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় (বাচ্চার স্বাভাবিক নড়াচড়া ১২ ঘন্টায় অন্তত ১০-১২ বার স্বাভাবিক নড়াচড়া) তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে, এটা কোনো বিষয় নয়। বাচ্চার পজিশন কেমন, সুস্থ -স্বাভাবিক আছে কি না এগুলোতে সতর্ক থাকাই জরুরি।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: