স্তন ক্যান্সারের কারণ ও করণীয়

স্তন ক্যান্সারের কারণ ও করণীয় — বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। যার মধ্যে ৯৮% নারী ও ২% পুরুষ। প্রত্যেক বছরে শুধুমাত্র স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেশে ৭,৫০০ হাজারের বেশি মহিলা মানুষ মারা যাচ্ছে।

স্তন ক্যান্সারের কারণ ও করণীয়

পুরুষ মানুষের যেমন ফুসফুসের ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি ভাবে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ পুরুষ মানুষেরও কিন্ত স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, আবার মহিলা মানুষেরও কিন্ত ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা হতে পারে।

যুক্তরাজ্যে প্রতি বছরে ১০ লক্ষ বা এর চেয়েও বেশি মানুষ নয়া করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে যার মধ্যে ১৮% ই-হচ্ছে মহিলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ৩২%। প্রথমে রোগ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা করা গেলে অধিকাংশ রোগীর অকাল মৃ- ত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে জানা যায়না।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি

১। মা, বোন, খালা রক্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পরিবারের মধ্যে একজনের ক্যান্সার ধরা পড়লে অন্যজনের মধ্যে ক্যান্সার হবার প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়।
২। নিয়মিত যারা স্ক্রিনিং করান না।
৩। বয়স ৪০ বছরের বেশি হয়ে থাকলে কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই ডাক্তারের পরামর্শে ৬ থেকে ১ বছর অন্তর সকল মহিলাকে ম্যামোগ্রাম করাতে হবে। রুটিন পরীক্ষা তো অবশ্যই করাতে হবে।
৪। ১২ বছরের পূর্বে যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়।
৫। কারো ঋতুস্রাব যদি ৫৫ বছরের পরে চলতে থাকে।
৬। প্রথম সন্তান যদি ৩৫ বছরের পরে জন্মগ্রহণ করে। স্তনে অন্যান্য কোনো রোগ হয়।
৭। যাদের সন্তান হয়না অর্থাৎ যাকে আমরা বন্ধ্যা বলে থাকি।
৮। যাদের উচ্চতা ৫'৮ বা তারও বেশি।

উপরোক্ত যেকোনো সমস্যা যদি কারো শরীরে দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা

স্তন ক্যান্সারের বিপত্তি থেকে পরিত্রাণের উপায়

১। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
২। কায়িক এবং শারীরিক পরিশ্রম করুন। নিয়মিত শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে।
৩। প্রতিদিন ৪ প্রকারের ফল এবং সবজি খেতে হবে।
৪। ধূমপান, মদপান থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৫। জন্ম বিরতিকরণ ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের বয়স বিশেষ করে ৩৫ বছরের বেশি।
৬। অনেকেই আছেন যারা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে হরমোন থেরাপি নিয়ে থাকেন। যদি আপনি এটি করে থাকেন তাহলে তা থেকে বিরত থাকুন।
৭। দুগ্ধবতী মায়েরা অবশ্যই শিশুকে ৬ মাস সময় পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াবেন। মিনিমাম ২ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াবেন।
৮। ওষুধে রোগ ভালো করে আবার ওষুধেই কিন্ত স্তন ক্যান্সারের কারণ হয়। কেউ যদি টেমক্সিফেন বা রেলক্সিফেন ওষুধ দীর্ঘদিন গ্রহণ করে তাহলে তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা

যে সকল মহিলাদের বয়স ১৫-৩৫, তাদের বুকের স্তনে অথবা দুই দিকেই মার্বেলের মতো করে গোল গোল এক বে একাধিক চাকা অর্থাৎ মাংসের দলা থাকতে পারে। যা মূলত শরীরের জন্যে ক্ষতিকর না। এদের বৈশিষ্ট্য হলো মার্জিন সহজে বোঝা যায়, নড়াচড়া করে থাকে, মসৃণ, রাবারের মত ব্যথা থাকেনা।

১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের ১-২ সেন্টিমিটার আকৃতির হতে পারে অথবা অর্ধ সেন্টিমিটারও হতে পারে। এটা কেন হয়ে থাকে কারন জানা যায়নি। এটাকে বলা হয়ে থাকে বেনাইন অর্থাৎ শরীরের জন্য ক্ষতিকর না।

আরও পড়ুনঃ প্রেমিকার রাগ ভাঙ্গানোর উপায় | প্রিয়জনের রাগ ভাঙ্গানোর উপায়

স্তন ক্যান্সার থেকে সতর্ক সংকেত - যখন চিকিৎসকের শরণ্যাপন্ন হবে

১। বুকের মাঝে ঘন পুরো অথবা অমসৃণ, শক্ত চাকা একই স্থানে থাকে।
২। স্তন ফুলে যাওয়ার ফলে গরম অনুভব সেখানে গরম অনুভব হলে, স্তন লাল হয়ে যাওয়া বা ত্বক ব্ল্যাক কালার হয়ে গেলে।
৩। স্তনের আকার-আকৃতি যদি দ্রুত চেঞ্জ হতে থাকে।
৪। স্তনের ত্বকে যদি গর্ত হয়ে থাকে বা কুঁচকে যায়।
৫। যদি নিপল বেশি বেশি চুলকায়, র‌্যাশ হয়, ঘা সৃষ্টি হয়।
৬। হঠাৎ করে যদি নিপল ফুলে যায় অথবা অংশ বিশেষ ফুলে যায়।
৭। নিপল দিয়ে হঠাৎ করেই সাদা অথবা রক্ত, যেকোনো তরল জাতীয় আঠালো পদার্থ নিঃসরণ হতে শুরু করলে।
৮। হঠাৎ করেই স্তনের মাঝে ব্যথা শুরু হয়েছে যা তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হচ্ছে।

যদি এই ধরনের সমস্যা হয় তাহলে তখন আর দেরি না করে, দ্রুততার সাথে চিকিৎসকের শরণ্যাপন্ন হতে হবে। ক্যান্সারের একটি মূল্যবান স্লোগান হলো- প্রথমেই পড়লে ধরা ক্যান্সার রোগ যাবে যে সারা।

আরও পড়ুনঃ ওজন কমানোর উপায়

পোষ্ট ক্যাটাগরি: