অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং যেসব ভুলে হারাতে পারে আপনার জমানো টাকা

জনসমাগমের জায়গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে এর মধ্যে ব্যাংক অন্যতম। এমতাবস্থায় ব্যাংকে না গিয়ে বাসায় বসে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যাংকিং করতে গ্রাহকদের উৎসাহিত করছে ব্যাংকগুলো। অনলাইন ব্যাংকিং যখন বাড়ছে তখন অনলাইনে নানা ধরনের প্রতারণার ফাঁদ ও তৈরি করছে প্রতারকরা। ইন্টারনেটে কিংবা অনলাইনে আপনি কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন। আপনার টাকা অন্য কেউ যেন হাতিয়ে নিতে না পারে সেজন্য আপনি কি করবেন সেটি জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

পেজ সূচিপত্রঃ
অ্যাকাউন্ট নিরাপত্তায় কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার

একাউন্টে নিরাপত্তার জন্য আপনাকে কঠিন একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। অনলাইনে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা রাখার জন্য কঠিন পাসওয়ার্ড এর কোন বিকল্প নেই। যাতে কেউ ধারণা করতে না পারে যে আপনার পাসওয়ার্ডটি কি হতে পারে। পাসওয়ার্ড হতে হবে ন্যূনতম ৮ অঙ্কের। একটি পাসওয়ার্ড একটির বেশি একাউন্টে ব্যবহার করবেন না। পুরনো পাসওয়ার্ড আর কখনো অন্য কোথাও ব্যবহার করবেন। 

আরও পড়ুনঃ মোবাইল ব্যাংকিং সুরক্ষায় করণীয়

মোবাইল এসএমএস ও ইমেইল নোটিফিকেশন

মোবাইল এসএমএস ও ইমেইল নোটিফিকেশন আজকাল যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন সম্পন্ন করলেই আপনার মোবাইলে কিংবা ইমেইলে আসে। সেজন্য আপনি ইমেইল এবং মোবাইল নোটিফিকেশন সব সময় অন রাখবেন। 

যাতে করে আপনার একাউন্টে কোন টাকা জমা হলে কিংবা অ্যাকাউন্ট থেকে কোন টাকা বেরিয়ে গেলে কিংবা এটিএম থেকে কোন টাকা উত্তোলন করা হলে। সেটি যদি আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস অথবা ই-মেইল আছে। তাতে করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার একাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়েছে নাকি অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবেন তাৎক্ষণিকভাবে। 

নিবন্ধিত সিমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট

নিবন্ধিত সিম এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলবেন। মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা সাধারণ ব্যাংকিং এর জন্য আপনার যে নিবন্ধিত টেলিফোন নম্বর টি অর্থাৎ মোবাইল নম্বরটি আছে সেটি অবশ্যই আপনি সঠিকভাবে নিবন্ধন করবেন এবং সেটি ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন।

এই রকম হলে আপনার অ্যাকাউন্ট যে কোন সময় অফ হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ অন্য কোন লোক সেই তুলেও নিতে পারে। আর এই ক্ষেত্রে আপনার যদি সিম এর সঠিক কাগজ পত্র থাকে তাহলে সহজেই সেই সিম কার্ডটি তুলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পুনরায় আপনি গ্রহণ করতে পারবেন এবং আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপদ থাকবে।

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম 

ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখুন

অনলাইনে ব্যাংক স্টেটমেন্ট আপনি মনোযোগ দিয়ে দেখবেন ভালো করে দেখবেন এবং প্রতিনিয়ত দেখবেন। আপনার অজান্তে যদি কোন লেনদেন হয়ে থাকে তাহলে আপনি সেটি বুঝতে পারবেন আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করার মাধ্যমে। যদি কোন লেনদেন আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় অর্থাৎ যে লেনদেনটি আপনি করেননি তাহলে সেটা দ্রুত আপনি ব্যাংকের কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।

আপনার কাগজপত্র আপনার সঠিক স্থানে রাখবেন। নিজের নখদর্পণে ব্যাংকের হিসাব রাখা টা বেশ জরুরী। টাকা পয়সার কোন হেরফের দেখা গেলে সাথে সাথে যদি আপনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন সেক্ষেত্রে একটি প্রতিকার হয়তো পাওয়া যেতে পারে।

প্রতিবার লগআউট করবেন

আপনি যে সময় মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর জন্য লগইন করবেন এরপর সেই কাজটি শেষ হওয়ার পর প্রতেকবার আপনি সেই ডিভাইস থেকে লগ আউট করে নিবেন। এই বিষয় আপনি সব সময় লক্ষ্যে রাখবেন। আপনার ব্যাংকিং এর কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ার পর অথবা আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলে ডিভাইস থেকে লগ আউট করা খুব অত্যন্ত জরুরী।

আরও পড়ুনঃ এনআইডি কার্ড NID Card ডাউনলোড করার নিয়ম

টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন

আপনি যদি টাকা পাঠান তাহলে টাকা পাঠানোর আগে ফোন করে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন যে কোন নম্বর আপনি টাকা পাঠাচ্ছেন। তারপরও যদি আপনি টাকা পাঠান তাহলে ভুল নম্বরে আপনার টাকা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। অনেক সময় নম্বর ক্লোনিং এর মাধ্যমে ফোন নম্বর হুবহু নকল করে প্রতারকরা আপনার আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা চাইতে পারে। তাই টাকা পাঠানোর আগে আপনি যাকে টাকা পাঠাবেন তার সাথে কথা বলেন অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

যা কখনও করবেন না মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে
ফোনে বা মেইলে কাউকে তথ্য দিবেন না

হ্যাকাররা প্রায়ই দেখা যায় ব্যাংকের নামে ইমেইল এড্রেস খুলে প্রতারণামূলক মেইল করে থাকে। ব্যাংকের নামে বা এমন কোনো সন্দেহজনক ইমেইল থাকলে অবশ্যই সেটিকে আপনি এগনোর করুন অর্থাৎ সেটিকে আপনি গুরুত্ব দেবেন না। এছাড়াও হ্যাকাররা সম্প্রতি ফোন করে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে আমি কথা বলছি বলে প্রতারণা করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ মেদ কমানোর সহজ উপায় জেনে নিন

এমন কোন ফোন পেলেও সেটি আপনার এগনোর করা ভালো। ব্যাংকের কথা বলে কেউ অ্যাকাউন্ট নম্বর পাসওয়ার্ড কিংবা ট্রান্সজেকশন এর বিষয়ে কিছু বলতে চাইলে আপনি নিজেই সেই ব্রাঞ্চ এর সঙ্গে কথা বলবেন এবং টেলিফোনে কোন তথ্য দেবেন না। এরকম কিছু ঘটলেই অবশ্যই সেটা ধরে নেবেন সন্দেহজনক এবং বিপজ্জনক ভুলেও আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন করার তথ্য দিবেন না কোন লিংকে ক্লিক করবেন না।

অনিরাপদ নেটওয়ার্ক কানেকশন ব্যবহার

আপনি যে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন। তার গেটওয়ে কোথা থেকে আসছেন কিংবা আপনি কি ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিবেন। এর উপরই নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সিকিউরিটি। অপরিচিত ওয়াইফাই কানেকশন যেকোনো গোপনীয়তার জন্য বিপদজনক। 

একাউন্টে সবসময় লগইন করবেন এমন কোন কম্পিউটার থেকে বা নেটওয়ার্ক থেকে যেটি আপনি সবসময় ব্যবহার করছেন এবং যেখানে অন্য কেউ আপনার জন্য বিপদ তৈরি না করে। আপনার যখনএকাউন্টে ঢুকছে তখন খেয়াল করবেন ব্রাউজারের এড্রেস লেখা থাকে সেখানে এইচটিটিপিএস HTTPS আছে কি না। যদি থাকে এটি তাহলে বুঝতে পারবেন এ কানেকশন নিরাপদ আর যদি না থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে কানেকশন ব্যাবহার করছেন সেটি নিরাপদ নয়।

অনিরাপদ ডিভাইস ব্যবহার করবেন না

অন্যের কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে আপনি নিজের ব্যাংকের একাউন্টে কোন লগইন করবেন না সেটি চেক করতে যাবেন না।

প্রতারক থেকে সাবধান

অনেক প্রতারক বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। দেখা যায় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলবে আপনি লটারি জিতেছেন কিংবা অমুক নাম্বারে এত টাকা পাঠিয়ে দিন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাহলে আপনি পুরস্কার পাবেন। ভুলেও এসব ফাঁদে পা দেবেন না। কারণ এগুলো সব কিছুই প্রতারণা। 

আরও পড়ুনঃ রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

আপনাদের একটা ঘটনা বলি দিন চারেক আগে আমার কাছে একটি টেলিফোন আছলো আমার মোবাইলে। অপরপ্রান্ত থেকে একজন নিজেকে কোন একটি মোবাইল ব্যাংকিং অফিস থেকে ফোন করছে বলে তার পরিচয় জানালো। পরিচয় দিয়ে আমাকে বলল যে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট আছে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

কারণ আপনি জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর ভুল দিয়েছেন। এতে আমি বেশ বিস্ময় প্রকাশ করলাম। যে আমার তো আমার এটি ভুল দেয়ার কথা না। তখন সে বললো যে আপনার পাসওয়ার্ডটি বলুন তাহলে আমি আপনার তথ্যটি সাথে সাথে ঠিক করে দিতে পারব। 

তখনই আমার মনে সন্দেহ হল যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং অফিস থেকে আমার কাছে আমার পাসওয়ার্ড জানতে চাওয়ার কথা নয়। অর্থাৎ সে একজন প্রতারক আমার মনে আর কোনো সন্দেহ রইল না। এ ধরনের প্রতারণায় আপনি ভুলেও পা বাড়াবেন না। যদি এ ধরনের প্রতারণার সায় দিয়েছেন তো আপনি বিপদে পড়ছেন। আপনার যে গচ্ছিত টাকা মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা সাধারণ ব্যাংকিং এ সেটি প্রতারকরা হাঁতিয়ে নিতে পারে।

আরও পড়ুনঃ সরকারি চাকরির খবর ২০২১

পোষ্ট ক্যাটাগরি: