বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

বরই পাতার উপকারিতা সমূহ অনেকের কাছেই অজানা। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বরই পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ পাতার অসাধারণ ঔষধি গুন সম্পর্কে জানলে যে কেউ চমকে উঠবে। তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ।

প্রাচীনকাল থেকেই বরই পাতার ব্যবহার চলে আসছে। ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি এই পাতার মধ্যে আছে ঔষধি সকল গুণাগুণ। বরই পাতার রস বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অতুলনীয় কাজ করে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে।

আজকে এই আর্টিকেলে আমরা বরই পাতার উপকারিতা কি এবং বরই পাতার অপকারিতা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো। বরই পাতা সম্পর্কে এ টু জেট জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করা হলো। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পরতে পারেন কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে।

বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

যদি আপনি বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য খোঁজাখুঁজি করেন। তাহলে নিম্নে উল্লেখ করা গোছানো ও সুন্দর তথ্যগুলো আপনার জন্য উপযোগী। যেখানে বরই পাতার উপকারিতা এবং বরই পাতার অপকারিতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি বরই পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং এর সাথে যে সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানতে পারবেন।

পাতা হওয়া শর্তেও বড়ই পাতার হাজার হাজার উপকারিতা আছে এর মধ্য থেকে আজকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো শারীরিকভাবে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্বন্ধে। বরই পাতা হলো বহু ভেষজ গুণাগুণসম্পন্ন এবং উপকারী একটি উদ্ভিদ। বড়ই পাতার মাঝে এমন কিছু উপাদান আছে যা এর উপকারিতা বৃদ্ধি করে দেয়। যেমন: ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, সোডিয়াম এবং অ্যান্টিসেপটিক সহ আরো অনেক উপাদান।

বরই পাতার উপকারিতা পেতে হলে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কিভাবে ব্যবহার করলে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। সকল বিষয়গুলো এই অংশে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন বরই পাতা খাওয়ার নিয়ম এর অপকারিতা কি এই সকল বিষয়। এখন আমরা জানবো উপকারিতা সম্পর্কেঃ

বরই পাতার উপকারিতা

  • চর্মরোগ নিরাময় করে।
  • বরই পাতার রস ওজন কমায়।
  • রক্ত পরিষ্কার ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে।
  • জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।
  • চুল পড়া এবং খুশকি সমাধান।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিরাময়।
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর কাজে।
  • রূপচর্চায় বরই পাতা।
  • সর্দি কাশি জ্বর ভালো হয়।
  • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
  • অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
  • বরই বা বরই পাতা খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • পেটের সমস্যা দূর করতে এবং মাংসপেশি শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • বরই পাতার রস গলা ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, শরীর জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে উপকারী বলে মনে করা হয়।
  • বরইতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বার্ধক্যের প্রভাব কমায়।

১. চর্মরোগ নিরাময় করে: যারা চর্মরোগ জনিত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন- চুলকানি, দাদ, হাজা ইত্যাদিতে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তাদের জন্য বরই পাতা অনেক কার্যকর। নিয়ম অনুয়ায়ী নিয়মিত বরই পাতা সেবনে আপনার চর্ম রোগ নিরাময় করা সম্ভব।

প্রথমে ৮ থেকে ১০ টি বরইয়ের পাতা বেঁটে ভালোভাবে ছেঁকে রস করে নিন। এরপর সেই রসের সাথে এক চামচ কালোজিরা গুড়া মিশিয়ে নিন। এই রস নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করবে তাহলে চর্মরোগ নিরাময়ে তা কাজ করবে।

মূলত বরই পাতায় এন্টিহিস্টামিন হিসেবে এলার্জির উপর কাজ করে। এছাড়া পরিষ্কার করা বরই পাতা গরম পানিতে ফুটানোর পর পানি ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর সেই পানি দিয়ে এলার্জি বা চুলকানির জায়গা পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করলে আক্রান্ত স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ অনেক কমে যাবে। যা চুলকানি নিরাময়ের ভূমিকা রাখবে।

২. জ্বালাপোড়া নিরাময়: কোন পোকা আপনাকে কামড়ানোর পর যদি কামড়ানোর স্থানটি এ জ্বালা করে বা প্রদাহের সৃষ্টি হয়। তাহলে আপনি বরই পাতা বেটে তার রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন। কেননা বরই পাতার রস সে জায়গায় অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করবে।

৩. চুল পড়া এবং খুশকি সমাধান: যাদের চুল অনেক পড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের ফুসকুড়ি বা খুকশি জাতীয় জাতীয় সমস্যা দেখা দিচ্ছে তারা বরই পাতা বেটে মাথায় লাগাতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করবেন। এভাবে এক মাস ব্যবহার করলে অনেক ভালো একটা ফলাফল দেখতে পাবেন। বরই ও কারিপাতা পিষে চুলের গোড়ায় লাগালে চুল পড়ার সমস্যা দূর হয়।

৪. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিরাময়: যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা কচি বরই পাতা বেটে খেতে পারেন। কেননা এটা গ্যাস্ট্রিক নিরাময় ভূমিকা রাখে।

৫. মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর কাজে: আমরা সকলেই জানি মানুষ মারা গেলে যখন তাকে গোসল দেওয়া হয় তখন পানির সাথে বরই পাতা দিয়ে পানি ফুটানো হয়। বরই পাতা এখানে জীবাণু নাশক হিসেবে কাজ করে।

৬. রূপচর্চায় বরই পাতা: ত্বকের বলি রেখা দূর করতে এবং মুখের মসৃণতা বৃদ্ধি করতে বরই পাতা অনেক কার্যকর। কয়েকটি পরিষ্কার বরই পাতা নিয়ে ভালো করে পেস্ট করে তার রসের সাথে কিছুটা মধু মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন।

তবে মধুতে অনেকের এলার্জি থাকে। তাই মধুতে যাদর এলার্জি রয়েছে তারা মধুব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র বরই পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। শহরে যেহেতু বরইয়ের গাছ নেই তাই শহরের মানুষে রূপচর্চায় বরই পাতা ব্যবহার করার জন্য বাজার থেকে বরই পাতার পাউডার কিনে ব্যবহার করে।

বরই পাতার অপকারিতা

বরই পাতার তেমন কোন অপকারিতা সম্পর্কে জানা যায় না। ইতিমধ্যে আমরা বরই পাতার বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। এখন আমরা জানব বরই পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।

বরই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এতে অনেক জটিল কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বরই পাতা অথবা বরই ফল অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের এটি খাওয়ার আগে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

বরই এর উপকারিতা

  • ওজন কমায়
  • হাড় মজবুত করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • রক্তচাপনিয়ন্ত্রণ
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা
  • মাড়ি ভালো রাখে
  • অনিদ্রা দূর করে
  • বরই ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, বেশকিছু ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ

১. ওজন কমায়: যারা বিভিন্নভাবে ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু ওজন কমে না তাদের জন্য বড়ই অনেক উপকারী হবে। কেননা বরই এ ক্যালরি রয়েছে কিন্তু ফ্যাট নেই বললেই চলে। যার ফলে এটি আপনার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হবে। বরই ক্ষুদা কমায় এবং ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।

২. হাড় মজবুত করে: বরই ফলে রয়েছে ভিটামিন কে এবং সি এবং পটাসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়ের ক্ষয় কমায়। ফলে আমাদের হাড় ভালো থাকে।

৩. রোগ প্রতিরোধ: বরই এ রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন সি-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: বরই এ পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামবেশি পরিমাণে থাকে এবং কোলেস্টেরল কম।তাই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার সম্ভাবনা কমে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোকের এর ঝুঁকি কমে যায়।

৫. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা: বরইয়ে বিদ্যমান ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো পুষ্টিউপাদান গুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং স্টকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, মস্তিষ্ককে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং এইভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। 

৬. মাড়ি ভালো রাখে: আমরা জানি বরইয়ে থাকে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। তাই মাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনের জন্য বরই খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা

৭. অনিদ্রা দূর করে: বরইয়ের বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদান অনিদ্রা দূর করতে সহায়তা করে। তাই যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে তারা বরই খেলে ভালো উপকার পেতে পারেন।

এলার্জির ওষুধ বরই পাতা

মূলত অ্যালার্জি দূরীকরণে এক মহা ঔষধ হলো এই বরই পাতা। গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে এলার্জি দূর করতে বরইয়ের পাতার অনেক ভূমিকা রয়েছে। এই বরই পাতার খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে দশ থেকে বিশটি পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর এটাকে বেটে ছাকনির সাহায্যে ভালোভাবে ছেঁকে আধা কাপ রস বের করে নেবেন। রসের সাথে অল্প পরিমাণ লবণ দিয়ে খেয়ে নেবেন। বরই পাতার রস খাওয়া প্রায় এক ঘন্টা পর আপনি অন্যান্য খাবার খেতে পারেন।

বড়ই পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রথমে বরই পাতা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে পাতাগুলো যেন সজীব সতেজ হয় এবং পোকামাকড়ে খাওয়া না হয়। আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে পাতাগুলো যেন বেশি বুড়ো না হয়। বাড়িতে আনার পর পাতাগুলোকে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পাতা বেটে ছাকনির সাহায্যে ছেকে রস বের করে নিতে হবে। তারপর সেই বরই পাতার রস খেতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বরই পাতার রস খাওয়া ভালো।

বরই পাতার রস খেলে কি হয়

বরই পাতার রস খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান হয়। যেমন- হার্ট ভালো থাকে, লিভার সুরক্ষিত থাকে, রক্ত পরিশুদ্ধ হয়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, হাড় মজবুত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধানে বরই পাতার রস কার্যকারী। বরই পাতা সম্পর্কে জানার পর আরো পরতে পারেন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

বরই খাওয়ার অপকারিতা

  • যেহেতু অত্যধিক বরই খেলে ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো।
  • কিছু কিছু বরই মিষ্টি জাতীয় হাওয়ায় ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের পরিমাণে বরই খাওয়া উচিত।
  • যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বরই না খাওয়াই উত্তম। কেননা এর ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

সতর্কতা

বাদুড় পাখি বরইয়ের গাছে বরই খাবার জন্য যায়। আর আমরা জানি বাদুড়ের মাধ্যমে নিপা ভাইরাস ছড়ায়। সুতরাং যে বরইগুলো পাখিতে খেয়েছে সেগুলো খাওয়া যাবেনা।

অন্যদিকে যে কোন গাছের বরই খেলে সেটা থাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে অর্থাৎ ধুয়ে খেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমরা গাছের তলায় পড়ে থাকা বরই কুড়িয়ে খায় কিন্ত ধুই না। এক্ষেত্রে কিন্তু পেট ব্যথা থেকে শুরু করে প্রাণনাশের ও আশঙ্কা থাকে যা আমরা ইদানিং দেখতে পারছি। সুতরাং পরিষ্কার করার পরেই বরই খেতে হবে।

পরিশেষে

আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পরতে পারেন আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা ও ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

পোষ্ট ক্যাটাগরি: