তালাক দিতে কি কি লাগে: ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে

ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে, একজন মেয়ে ডিভোর্স দিলে কি হয় এবং ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে! যারা বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা মূলত এই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান।

ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে ডিভোর্সের কতদিন পর বিয়ে করা যায়, ডিভোর্স এর পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম এবং কিস্তিতে দেনমোহর পরিষদের নিয়ম সম্পর্কিত পোস্ট প্রকাশ করেছি। তবে আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় জানাবো ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে সে সম্পর্কে খুঁটিনাটি। তাহলে আসুন জেনে নেই বিয়ের কত দিনের মধ্যে ডিভোর্স দেওয়া যায় এবং ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে? ডিভোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনুগ্রহ করে লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

ডিভোর্স এর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট | ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে?

কমবেশি আমরা সবাই জানি যে, ডিভোর্সের আইনি প্রক্রিয়া হচ্ছে একজন স্বামী এবং স্ত্রী বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ, চেয়ারম্যান অথবা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মেয়র এর কাছে একটি লিখিত নোটিশ প্রেরণ করবেন। এরপর মোটামুটি ৩০ দিনের মধ্যে “চেয়ারম্যান অথবা মেয়র” সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মধ্যে সমঝোতার উদ্দেশ্যে একটি বৈঠক গঠন করবেন।

সালিশি বৈঠকের পরবর্তীতে যদি এটা বোঝা যায় যে উক্ত স্বামী স্ত্রী বিচ্ছেদের জন্য একমত, তাহলে মোটামুটি নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে শুরু করে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

ডিভোর্স মূলত পারস্পরিক সম্মতিতে হয়ে থাকে, আবার আদালতে গিয়েও ডিভোর্স কার্যকর করা হয়। কিন্তু ডিভোর্সের ক্ষেত্রে সাধারণত যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো হচ্ছে:

  • স্বামী স্ত্রীর বিবাহ নিবন্ধন সনদ
  • ডিভোর্স পেটিশন
  • স্বামী এবং স্ত্রীর ন্যাশনাল আইডি কার্ড
  • উভয়ের এই বৈঠক কাগজপত্র এবং সাক্ষীর তথ্য

বিবাহ নিবন্ধন সনদ: মূলত এই নিবন্ধন এর দ্বারা ডিভোর্স প্রক্রিয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তিদের বিবাহ নিবন্ধন সনদ প্রমাণিত করার প্রয়োজন পড়ে।

ডিভোর্স পেটিশন: ডিভোর্সের সকল কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য অবশ্যই ডিভোর্স প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্দেশ্যে আপনার ডিভোর্স পেটিশন জমা দিতে হবে। যেখানে আপনি এবং আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীর তথ্য এবং অন্যান্য যাবতীয় ইনফরমেশন উল্লেখ থাকবে।

স্মার্ট বা ভোটার আইডি কার্ড: আজকাল সাধারণত যে কোন প্রয়োজনেই আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজন পড়ে। আর ডিভোর্স এর ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড এরও প্রয়োজন পড়ে।

বৈধ কাগজপত্র: মূলত আইনি প্রক্রিয়াতে ডিভোর্স হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান আরো কিছু প্রমাণ সংযুক্ত করার হুকুম দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট অবশ্যই বৈধ হওয়া জরুরী। অতএব এটা বলা যায় যে ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে তার মধ্যে একটি হচ্ছে বৈধ অন্যান্য কিছু কাগজপত্র।

সাক্ষীর তথ্য: বিয়ের সম্পাদনের সময় যেমন সাক্ষী রাখার প্রয়োজন পরে ঠিক একই ভাবে বিচ্ছেদের সময় অর্থাৎ ডিভোর্স প্রক্রিয়ার সম্পাদনের সময়ও সাক্ষীর তথ্য উপস্থিত করতে হয়। আর তাই ডিভোর্সের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে অবস্থান করছে সাক্ষী হিসেবে অবস্থানরত ব্যক্তির যাবতীয় ইনফরমেশন।

আরো দেখুন: ডিভোর্স পেপার তালাকনামা ফরম ডাউনলোড

তো পাঠক বন্ধুরা, ইতোমধ্যে আমরা এটা সংযুক্ত করেছি যে ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে! এখন আসুন জেনে নেই ডিভোর্স সম্পর্কিত বহু জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর সমূহ। তবে আপনি চাইলে আমাদের সাজেস্টকৃত লিংকে ভিজিট করার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু পোস্ট পড়তে পারেন এবং জেনে নিতে পারেন দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি কি সে সম্পর্কে এ টু জেড।

বিয়ের কত দিনের মধ্যে ডিভোর্স দেওয়া যায়?

বিয়ের পরবর্তীতে যেকোনো দিনে ডিভোর্স দেওয়া যায়। আর যদি বলেন কত দিনের মধ্যে ডিভোর্স দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে বলা যাবে ৯০ দিনের পরবর্তী সময়ে। কেননা মুসলিম পুরুষের ক্ষেত্রে এবং মুসলিম নারীর ক্ষেত্রে ডিভোর্সের সঠিক নিয়ম হিসেবে এটাই কার্যকর।

মূলত একজন স্বামী এবং স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরবর্তীতে যখন এই বিষয়টা অন্যদেরকে জানাবে অথবা এটা চেয়ারম্যান বা পৌরসভার দায়িত্বরত প্রার্থীর নিকট পৌঁছাবে তখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে এই ডিভোর্সটি কার্যকর করা যাবে কিনা। এর জন্য উভয়ের মধ্যে বোঝা পড়ার জন্য মোট ৩০ দিন সময় দেওয়া হবে।

আরো কিছু নিয়ম পালনের জন্য মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বা ৯০ দিনের পরবর্তী সময়ে একজন স্বামী ও স্ত্রী বিচ্ছেদের অনুমতি পাবেন। আর এই নিয়মটি ইসলাম ধর্মেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ্য রয়েছে।

মেয়ে ডিভোর্স দিলে কি হয় | মেয়েরা ডিভোর্স দিলে কি টাকা দিতে হয়?

আমরা জানি বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার সময় স্বামীদের দেনমোহর পরিষদের বিষয়ে জানানো হয়। দেনমোহর সাধারণত স্বামীদের কাছ থেকে স্ত্রীরা পেয়ে থাকেন। আর এটা স্বামীদের থেকে স্ত্রীদের প্রাপ্য একটি অধিকার বলা যায়। আর এই দেনমোহর বিবাহ বিচ্ছেদ হোক অথবা না হোক অবশ্যই ওই স্বামীর পরিশোধ করে দেওয়া উচিত।

অনেকেই জানতে চান মেয়েরা ডিভোর্স দিলে কি হয় এবং মেয়েরা ডিভোর্স দিলে কোন টাকা প্রদান করতে হয় কিনা! এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে “না”। কারণ দেনমোহর পরিষদের দায়িত্ব স্বামীদের। আর যদি বলেন ছেলেরা ডিভোর্স দিলে টাকা কি অবশ্যই দিতে হয়! সে ক্ষেত্রে বলবো যদি দেনমোহনের টাকা স্ত্রীরা মাফ করে দেন তাহলে সেক্ষেত্রে এটা মাফ হিসেবে ধরা হয় তাই পরিশোধ না করলেও সমস্যা নেই। এছাড়া দেনমোহর পরিষদের বিকল্প কিছু নেই।

ডিভোর্স কোথায় গিয়ে দিতে হয়?

ডিভোর্স আদালতে অথবা সালিশি বৈঠকে গিয়ে দিতে হয়। ইতিমধ্যে আমরা আলোচনায় এটা উল্লেখ করেছি যে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম কি। আশা করি এর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে ডিভোর্স কোথায় গিয়ে দিতে হয়। আর হ্যাঁ, আপনি যদি চান তাহলে এই পোস্টটি পড়ার পরবর্তীতে আরো পড়তে পারেন তালাকের নিয়ম অর্থাৎ কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত আরো একটি পোস্ট। 

ডিভোর্স দিতে কি করতে হয়?

ডিভোর্স দিতে একজন স্বামী এবং স্ত্রীকে সাধারণত সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। তবে ডিভোর্সের বিষয়টি কোন স্বামী বা স্ত্রীর জীবনে না আসাটাই সর্বোত্তম। কেননা বিবাহ বিচ্ছেদ ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল কাজ। তবে যাই হোক আপনি যদি জানতে চান ডিভোর্স দিতে কি করতে হয়, স্বামীর পক্ষ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম এবং পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের খুঁটিনাটি, তাহলে এখনই ভিজিট করুন (এখানে)।

সাজেস্টকৃত লিংকে ভিজিট করলে আপনি জানতে পারবেন– বাংলাদেশে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম এবং স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কারণ সমূহ, তালাকনামা লেখার নিয়মাবলী এবং তালাকের সময়সীমা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন। এখন আসুন আলোচনার শেষ মুহূর্তে মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম এবং এ বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক আরো কিছু।

মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম কি?

মিউচুয়াল শব্দের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এখানে মিউচুয়াল ডিভোর্স অর্থাৎ এমিক্যুয়াল ডিভোর্স মানে হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি ডিভোর্স পদ্ধতি, যেখানে স্ত্রী এবং স্বামীর মধ্যে একমত এর বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডিভোর্স সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে কোনো আদালতের মধ্যস্থতার প্রয়োজন পরে না। এই ধরনের ডিভোর্সের নিয়ম স্থানীয় আইন এবং ইসলামিক শরীয়তে উল্লেখ থাকে।

মূলত মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম নিম্নলিখিত হয়ে থাকে। যথা:

  • স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে ই একসাথে মৌলিক মামলার জন্য একমত পোষণ করবেন।
  • ডিভোর্স ইচ্ছুক পক্ষ তার ইচ্ছাপত্র স্বাক্ষর করবেন এবং সেটি অন্যদের জানাবেন।
  • ডিভোর্স ইচ্ছুক পক্ষ ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার পর সকল নিষেধাজ্ঞা পূরণ করবেন।
  • তারিখের পরে এবং কোন আপেলের সুযোগ না থাকার সহিত ডিভোর্স চূড়ান্ত হবে।

সাধারণত মিউচুয়াল ডিভোর্স এর নিয়ম অনেক বেশি গবেষিত ও বিতর্কিত। এই প্রক্রিয়াতে স্ত্রী এবং স্বামীর অধিকার ও দায়িত্ব পরিস্থিতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয় এবং এই ধরনের ডিভোর্সের মাধ্যমে মানুষের সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় মর্যাদা ও শ্রদ্ধা বজায় থাকে। পাশাপাশি এই ডিভোর্সের নিয়মে স্থানীয় আইন গুলো জড়িত থাকে।

লেখকের শেষকথা

তালাক দিতে কি কি লাগে বা ডিভোর্স দিতে কি কি কাগজ লাগে এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করি তালাক দিতে গিয়ে অবশ্যই স্বামী স্ত্রীর এনআইডি কার্ড, কাবিননামা অর্থাৎ বিয়ের নিবন্ধন পত্র এবং সাক্ষীর প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করে অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদের বৈঠক বা আদালতে উপস্থিত হবেন। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: