মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা

মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা - মোবাইল ফোন হলো আধুনিক সভ্যতার সোপান। ১৯৭৩ সালের মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পর থেকে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক রদবদল ঘটেছে। এই ডিজিটাল আধুনিক যন্ত্রটি অনেক মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে আবার অনেক মানুষের সর্বনাশ ও করেছে।

তাই প্রত্যেকের জানা প্রয়োজন যে, কোন কোন ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা রয়েছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের অপকারিতা রয়েছে। আজকের আর্টিকেলটিতে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার প্রয়োজনীয়তা

আমরা যদি মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জানি, তাহলে মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার করতে পারব না। যার ফলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব হবে না। প্রত্যেক জিনিসের উপকারিতা এবং অপকারিতা থাকে, মোবাইল ফোনও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই মোবাইল ফোন ব্যবহারের আগে আমাদের উপকারী ও অপকারি দিকগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। যাতে আমরা সঠিকভাবে এটিকে ব্যবহার করতে সক্ষম হই।

মোবাইল ফোনের উপকারিতা

নিম্নে মোবাইল ফোনের উপকারিতা উল্লেখ করা হল:

  • অডিও এবং ভিডিও কল ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন
  • ক্যালেন্ডার এবং ঘড়ি ব্যবহারের সুবিধা
  • মোবাইল ফোনের উপকারিতা এলার্ম
  • ইন্টারনেট ব্যবহার ও নিউজ পড়া যায় সহজে
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার
  • জিপিএস সুবিধা
  • ক্যালকুলেটর
  • ইমেইল এর মাধ্যমে দ্রুত তথ্য শেয়ার করা যায়

১। অডিও কল এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশে থাকা হাজার হাজার মাইল দূরত্বের আত্মীয়ের সাথে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব। শুধুমাত্র যে কথা বলে তা বলতে পারা যায় তা নয়, বরং ওপারে থাকা ব্যক্তিকে দেখতে ও পারা যায়। আমাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবীদের সাথে চেহারা দেখে কথা বলতে পারি মোবাইল ফোনের ভিডিও কলের মাধ্যমে।

২। মোবাইলের মাধ্যমে ক্যালেন্ডার এবং ঘড়ি ব্যবহারের সুবিধা: দিন তারিখ মনে না থাকলে আর ট্র্যাডিশনাল ক্যালেন্ডার দেখার প্রয়োজন হয় না। হাতে থাকা মোবাইল ফোনের সাহায্য খুবই সহজে ক্যালেন্ডার দেখা যায়। এছাড়াও সময় জানার দরকার থাকলে হাতের কাছে ঘড়ি নয়, বরং একটা ফোন থাকাই যথেষ্ট।

৩। মোবাইল ফোনের উপকারিতা এলার্ম: সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার জন্য ঘড়িতে এলার্ম সেট করার দরকার নেই। হাতে থাকা ফোনেই সহজেই এলার্ম সেট করা যায়।

৪। ক্যামেরা: বর্তমানে প্রায় সকল মোবাইল ফোনে ছবি তোলার জন্য কোম্পানি গুলো ভালো কোয়ালিটির ক্যামেরা দিয়ে থাকে। এই ক্যামেরা ব্যবহার করে যে শুধুমাত্র ছবি তোলা যায় তা নয় সাথে কোয়ালিটিফুল ভিডিও ধারণ করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন রোজকার প্রয়োজনে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকি। বর্তমানে মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব সহ আরো বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড অনেক টাকা ইনকাম করা যাচ্ছে।

৫। ইন্টারনেট ব্যবহার ও নিউজ পড়া যায় সহজে: ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ইউজ করা যায় এবং ইন্টারনেটের এর তথ্য ভান্ডার থেকে সহজেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশ বিদেশের খবর জানার জন্য খবরের কাগজ কেনার দরকার নাই। ফোনের মাধ্যমে খবর পাওয়া যায় নিমিষেই। প্রতি মিনিটে দেশে কি নতুন ঘটনা ঘটছে তা ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে বসে জানা সম্ভব।

৬। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগ দেওয়া সম্ভব। মোবাইল ফোনে বহুল ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যমগুলো যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

৭। জিপিএস: মোবাইল ফোনে বিল্ট ইন জিপিএস সিস্টেম থাকায় এবং ম্যাপ থাকায়, কোনো জায়গায় আর অচেনা নয়। নিজের নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছাতে হলে ফোনের ম্যাপে লোকেশন ঠিক করে দিলে রাস্তা চেনা যায়। একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অপরের একটি নির্দিষ্ট জায়গা দূরত্ব ঠিক কত কিলোমিটার এবং যেতে কোন যানবাহনে কতটুকু সময় লাগবে তা সহজে জিপিএস এর মাধ্যমে জানা যায়।

৮। অ্যাপ: মোবাইলে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে ছোট বাচ্চারা খেলার ছলে অনেক লেখাপড়া শিখতে পারে। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ থাকে। কোনগুলো শিক্ষামূলক, কোনগুলো আবার স্বাস্থ্য বিষয়ক, গেম খেলার অ্যাপ অথবা সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ।

৯। ক্যালকুলেটর: মোবাইল ক্যালকুলেটর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, এমনকি গৃহিণীরাও তাদের নিত্যদিনের কাজে মোবাইল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে থাকেন। মোবাইল ক্যালকুলেটর আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

১০। ইমেইল: ইমেইল (ইলেকট্রনিক মেইল) আজকের দিনে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যক্তিগত, পেশাগত, সামাজিক, এবং শিক্ষাগত ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা ইমেইল পাঠাতে পারি। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বা পারিবারিক যেকোনো ধরনের পাঠাতে পারি। মোবাইল ফোনের উপকারিতা ইমেইল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি দ্রুত, সহজে এবং কম খরচে যোগাযোগ করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: মোবাইল ফোনের উপকারিতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা

শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্ন ইন্টারনেটের তথ্য ভান্ডারে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় যেকোনো প্রশ্ন করে সহজে সুন্দর উত্তর পেতে পারে।

শিক্ষামূলক বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এবং পড়াশোনা বা লেকচার গুলো ক্লাস আকারে ফোনে দেখতে পাওয়া যায়। যার ফলে স্কুলের বাইরেও অনেক পড়া শেখা যায়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কনটেন্ট থেকে জ্ঞান আরোহন করা আরো সহজ হয়।

ক্লাসের কোন পড়া বা লেকচার ক্লাসে বুঝতে না পারলে অথবা সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকলে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন ক্লাস করে যেকোন বিষয়ের পড়া শেখা যায়।

অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স, বিভিন্ন লেকচার এবং ক্লাস পাওয়া যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।অনলাইনে সহজে যেকোন বিষয়ে কোর্স করা যায় এবং অনলাইন ভিত্তিক কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয়। যেমন- টেন মিনিট স্কুল, খান একাডেমি, shikko ইত্যাদি।

কিছু কিছু ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি যাচাই এর জন্য বিভিন্ন মডেল টেস্ট এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেওয়া এবং নিজের যোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ পায়।

আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতির জন্য অনেকে কোচিং করে থাকে। সেজন্য বাইরে কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কোচিং ব্যবস্থা থাকায় ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে বসে কোচিং করা সম্ভব এবং কোচিং এর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়।

বর্তমানে ফোনের মাধ্যমে প্রাইভেট পড়াও সম্ভব। বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক টিউশনি ওয়েবসাইট গুলো অনলাইনে টিউশন করিয়ে থাকে। যেমন- tutoriaa, Teacheron, Care tutor, Tutor Seba, Desh tutor ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইট গুলোতে মোবাইলের মাধ্যমে যেমন পড়াশোনা শেখা যায় ঠিক তেমনি পড়ানো যায়।

মোবাইল ফোনের গুগল প্লে স্টোরে বিভিন্ন app ডাউনলোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন এবং লেখা পড়া শিখতে এবং অনুশীলন করতে সক্ষম হয়।

মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে সাহায্যে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মেধার তথা সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।

চাকরির সন্ধানে প্রার্থীদের প্রতিদিনের খবরের কাগজ কিনতে হয় না। মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির সার্কুলার দেখতে পাওয়া যায় এবং আবেদন করা যায়।

মোবাইল ফোনে বিভিন্ন বই, ই-বুক আকারে পিডিএফ ফরমেটে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা এ সকল পিডিএফ ডাউনলোড করে সহজ ফোনের মধ্যে বই পড়তে পারে। প্রয়োজনে বইয়ের মধ্যে ছোট ছোট নোট করতে পারে কিংবা আন্ডারলাইনও করতে পারে এই সকল ই-বুক গুলোতে।

মোবাইলের মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। মোবাইল দিয়ে আমরা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোতে কাজ করতে পারা যায়। অর্থাৎ ঘরে বসে কাজ করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করে যাচ্ছে বিভিন্ন স্বনামধন্য মার্কেটপ্লেসগুলোতে। যেমন- আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি ওয়েবসাইটে।

আরো পড়ুন: মোবাইল ফোন ব্যবহার এর সুফল ও কুফল, ভালো /মন্দ

শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারিতা

  • বিভিন্ন ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়।
  • ই-বুক রিডার পড়তে ফোনের ব্যবহার রয়েছে।
  • ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে এসাইনমেন্ট করা সহজ হয়।
  • ফোনের মাধ্যমে যেকোনো ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করা যায়।
  • অনলাইন ক্লাস করা যা যায়।

মোবাইল ফোন যেমন বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকার করছে। একইভাবে স্বাস্থ্যগতভাবে আমাদের নানা দিক দিয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি করেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারে যেমন অসংখ্য সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধা ও রয়েছে।

মোবাইল ফোনের অপকারিতা - মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো

মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তথ্য যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা, ব্যবসা, সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন জেনে নেই মোবাইল ফোনের কিছু অপকারিতা:

শারীরিক ক্ষতি:

  • মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যেমন রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বলা।
  • চোখের ক্ষতি: দীর্ঘক্ষণ মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে। এর ফলে চোখের পেশীতে ক্লান্তি, চোখ জ্বালা, ঝাপসা দেখা, শুষ্ক চোখ, চোখ লাল হওয়া, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও মোবাইল ফোন দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে চোখের ছানি, রেটিনা ডিটাচমেন্ট এবং গ্লুকোমা এর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
  • হাতের সমস্যা: দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে হাতের আঙুলে ব্যথা, ঝিনঝিন এবং অবশ ভাব দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কারপাল টানেল সিনড্রোম (এক প্রকারের কব্জির প্রদাহজনিত রোগ) এর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
  • ঘাড় ও মেরুদণ্ডের সমস্যা: মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় মাথা নিচু করে রাখার ফলে ঘাড় ও মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ঘাড়ের পেশী টান, মেরুদণ্ডের বক্রতা, এবং স্পন্ডাইলাইটিস এর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
  • ঘুমের ব্যাঘাত: মোবাইল ফোন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ব্যাহত করে, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়। এর ফলে ঘুমাতে দেরি হতে পারে, ঘুমের গুণগত মান কমতে পারে এবং ক্লান্তি, বিরক্তি, মনোযোগের অভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • শারীরিক ব্যায়াম করার প্রতি আগ্রহ কমে যায়: মোবাইলে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করার ফলে শারীরিক ব্যায়াম এর প্রতি সময় অনেকের খেয়াল থাকে না। যার ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • শ্রবণশক্তি কমতে পারে: দীর্ঘক্ষণ হেডফোন ব্যবহার করে জোরে গান শোনার ফলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।

মানসিক ক্ষতি:

  • মনোযোগের অভাব: মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মনোযোগের অভাব, অস্থিরতা, একাগ্রতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি দুর্বল এবং চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধা হতে পারে।
  • মানসিক চাপ: সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করার ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে।
  • ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি: মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তির ফলে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
  • আসক্তি: মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি হতে পারে, যা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • বাস্তব জীবনের প্রতি অনাগ্রহ: মোবাইলের ভার্চুয়াল জগতের প্রতি আসক্তির ফলে বাস্তব জীবনের প্রতি অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোযোগের অভাব, পড়াশোনায় অনীহা এবং পরীক্ষার ফলাফলে অবনতি দেখা দিতে পারে।

সামাজিক ক্ষতি:

  • সামাজিক যোগাযোগে ঘাটতি: মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বাস্তব জীবনে মানুষের মুখোমুখি যোগাযোগ কমে যায় এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হতে পারে।
  • ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন: মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • অপরাধের ঝুঁকি বৃদ্ধি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহজেই ভুল তথ্য ও গুজব ছড়ানো সম্ভব, যার ফলে সমাজে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই ভুয়া খবর ও গুজব যাচাই না করেই শেয়ার করে থাকেন, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
  • সামাজিক দক্ষতা হ্রাস: মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকার ফলে মানুষ অন্যের সাথে মিশে কথা বলতে, আড্ডা দিতে, নতুন বন্ধু তৈরি করতে অসুবিধা বোধ করে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি তাদের সামাজিক দক্ষতা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
  • ব্যক্তিগত যোগাযোগে ঘাটতি: মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষ মুখোমুখি আলোচনার চেয়ে ভার্চুয়াল যোগাযোগকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের সাথে সরাসরি কথা বলার পরিবর্তে মেসেজ, চ্যাট, ভিডিও কলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহানুভূতি, এবং ঘনিষ্ঠতা কমে যায়।
  • অনলাইন হয়রানি:  মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইন হয়রানি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য, হুমকি, এবং হয়রানির শিকার হতে পারে অনেকে, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা।
  • কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে।
  • অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যেমন সাইবার অপরাধ, প্রতারণা, এবং অনলাইন হয়রানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়

১. মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় সীমা নির্ধারণ করা।

২. ভুয়া খবর ও অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন থাকা।

৩. অনলাইনে নিজের ও অন্যদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।

৪. মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখা এবং প্রয়োজনে সাহায্য নেওয়া।

৫. শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।

৬. কখনোই মোবাইল ফোন একটানা বেশিক্ষণ কথা বলা বা অন্য কাজ করা যাবে না। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। আপনি যখন কথা বলেন তখন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বের হয়। সেই রেডিয়েশন শরীরে তাপ তৈরি করে। এতে শরীরের ভেতর যে ডিএনএ থাকে তা ভেঙে যায়।

৭. মোবাইল ফোনে যদি গান শুনতে চান তাহলে ভলিউম অবশ্যই ৬০ ডেসিভেলের কম হতে হবে। আর সেটা সারাদিনে ১ ঘন্টার বেশি নয়।

৮. খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মোবাইল ব্যবহার করবেন না বা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকবেন না। মোবাইল ফোন আমাদের কাজের প্রতি একাগ্রতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে যেকোনো কাজ করতে আমাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।

৯. চার্জে রেখে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না। এটা বিপদজনক বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

১০. অনেকেই চার্জ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও মোবাইল ফোনকে চার্জে দিয়ে রাখেন। এটা মোটেই উচিত নয়।ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এতে।

১১. কথা বলার সময় বাঁ কানে হেড ফোন লাগিয়ে কথা বলা উচিত।

১২. যারা চোখের খুব কাছাকাছি দূরত্ব রেখে ফোন ব্যবহার করেন, তারা ধীরে ধীরে মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা এরকম নানা ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন। এজন্য ফোনের বিভিন্ন লেখা ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে দেওয়া বা চোখ থেকে নূন্যতম ১৬ ইঞ্চির দূরত্বে ফোন ব্যবহার করবেন। আর যদি বেশ দীর্ঘ কোন লেখা ফোনে পড়তে হয় তবে কিছুক্ষণ পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে।

১৩. মোবাইল ফোন থেকে নির্গত তেজসক্রিয় রশ্মি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আমাদের ডিএনএকে। কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা স্নায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক কাজের ক্ষতি সাধন করে।

১৪. গবেষণায় জানা গিয়েছে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা মানুষের হার্টের স্বাভাবিক কর্মকান্ড কে ব্যার্থ করে। এর ফলে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা তে থাকা হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যেতে থাকে। এছাড়া হিমোগ্লোবিন রক্তে লোহিত কণিকার মাঝে তৈরি না হয়ে দেহের অন্যত্র তৈরি হতে থাকে যেটি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। যে কারনে বুক পকেটে ফোন রাখা একদমই অনুচিত।

১৫. যেসব নারীরা তাদের গর্ভ অবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, পরবর্তীতে তাদের শিশুদের মাঝে আচরণগত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই গর্ভ অবস্থায় মায়েদের উচিত মোবাইল ফোন যতদূর সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া।

১৬. মোবাইল ফোন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।

১৭. রাতে ঘুমানো কমপক্ষে ১ঘন্টা আগে থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। এতে অনিদ্রা হবার সম্ভাবনা অনেক অংশে কমে যাবে। এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষন্নতা, একাকীত্বতা সহ বিভিন্ন মনুষ্যত্বিক ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুন: মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়

আরো কিছু মোবাইল ফোনের অপকারিতা

  • মোবাইলে অনেক ধরনের জুয়া গেম প্রচলিত আছে। যা সাধারণ মানুষকে লোভ দেখিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নেই এবং সর্বশ্রান্ত করে ছাড়ে।
  • মোবাইলের মাধ্যমে প্রতারণা করে মানুষের বিকাশ বা নগদ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
  • মোবাইল ব্যবহার করার ফলে, মাথার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- মাথা ব্যাথা, তারপর ঘুমের অভাব, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস ইত্যাদি আরও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়।

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা

  • শিক্ষার্থীরা মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে।
  • মোবাইলে শিক্ষামূলক কনটেন্ট পড়তে গিয়ে, অনেক সময় অপচয় হয় পরবর্তীতে তারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে অন্য ধরনের কনটেন্ট দেখতে শুরু করে। যা পড়ালেখার জন্য ক্ষতিকর।
  • কিছু কিছু গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ফোনের শিক্ষামূলক কন্টেন্ট গুলোকে হুবুহু কপি করায় তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা কমে যাচ্ছে।

লেখকের শেষকথা

বর্তমান সময় মোবাইল ফোনকে একেবারে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে একটু সচেতন হলেই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া নেতিবাচক দিকগুলো থেকে রেহাই পেতে পারি। আশা করি, আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: