কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন - বিস্তারিত জেনে নিন

মুসলমান হিসেবে আমরা সবসময়ই চাই আমাদের দোয়াগুলো যেন কবুল হয়। আর এজন্য আমরা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে অনেক দোয়া করি যাতে আমাদের কাঙ্খিত ইচ্ছা গুলো খুব দ্রুতই পূরণ হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল অনেক দোয়া করার পরও আমাদের ইচ্ছেগুলো পূরণ হয় না, আমাদের দোয়া কবুল হয় না।

অনেকেই জানতে চাই যে কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। দোয়া মূলত হলো প্রার্থনা করা। কোন কাঙ্ক্ষিত জিনিস আল্লাহ তালার কাছে বারবার চাওয়া। কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন তা সবাই জানতে চায়, এর পাশাপাশি জানতে চায় কোন আমল করলে দ্রুত দোয়া কবুল হয়। আজকের আর্টিকেলে আমি বলব কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন

দোয়া কবুলের ইস্তেগফার

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন ? এমন প্রশ্ন অনেক মুসলমানের মনে ঘুরপাক খায় তখনই যখন তাদের দোয়া কবুল হয় না। দোয়া কবুলের জন্য ইস্তেগফার হল অন্যতম হাতিয়ার। ইস্তেগফার হলো মূলত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যে ব্যক্তি উঠতে বসতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে বা ইস্তেগফার করবে সে "মুঝতাজাবুদ দাওয়াহ" তে পরিণত হবে।

মুঝতাজাবুদ দাওয়াহ হলো ওই ব্যক্তি যেই ব্যক্তির দোয়া করার সাথে সাথেই তা কবুল হয়। আমরা মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল হবে। কিন্তু সেই হলো উত্তম মানুষ যে ভুল করার পর, পাপ করার পর আল্লাহ সুবহান তায়ালার কাছে সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

আর দোয়া কবুল হওয়ার মূল অস্ত্র বা হাতিয়ারই হল ইস্তেগফার করা। দোয়া কবুলের সবচেয়ে পরিক্ষিত ইস্তেগফারটি হলো- "আস্তাগফিরুল্লাহ" যার অর্থ, "হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি"!

সুতরাং যে ব্যক্তি তার দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো করার সাথে সাথে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর যেকোনো দোয়া করা মাত্রই সাথে সাথে কবুল করে দিবেন ইংশাআল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ সহ

দ্রুত দোয়া কবুলের আমল

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন প্রশ্নটির উত্তর জানার আগ্রহ আমাদের অধিকাংশ মুসলমানের মনেই রয়েছে। কারণ প্রতিনিয়তই আমরা কেউ না কেউ কোনো না কোনো দোয়া করেই যাচ্ছি কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তা কবুল করছেন না। তাই আমরা বারবার জানতে চাই কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন, দ্রুত দোয়া কবুলের আমলই বাকি কি।

হাদিস এবং কুরআনে আল্লাহ এবং আমাদের বিশ্বনবী এমন কিছু আমল এর কথা সরাসরি বলেছেন যেই আমলগুলো করার মাধ্যমে আমাদের দেয়া দ্রুতই কবুল হবে।

দোয়া কবুলের একটি অন্যতম আমল হচ্ছে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে দোয়া করা। অবশ্য এর আগে বেশ কয়েকটি শর্ত আপনাকে পালন করতে হবে। আপনি যদি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে দোয়া করেন এবং যদি চান সেই দোয়া দ্রুত কবুল হোক তাহলে অবশ্যই আপনি কোন যিনা ব্যভিচার লিপ্ত হতে পারবেন না।

অর্থাৎ আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার স্বামী এবং মাহারম ছাড়া কোন নরমাহরামের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে পারবেন না। এবং এমন কোন কাজ করবেন না যা জিনা বা ব্যভিচার হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর আপনার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে হালাল খাদ্য ভক্ষণ করতে হবে।

আপনার দোয়া কবুলের জন্য আপনি প্রত্যেক দিন রাতে শেষভাগে দু'রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। এবং অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পূর্বে পাক পবিত্র হওয়ার জন্য ভালো করে ওযু করে নিবেন। এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সিজদায় গিয়ে আপনি আপনার দোয়া বা কাঙ্ক্ষিত চাওয়া গুলো আল্লাহর কাছে বলবেন কেঁদে কেঁদে বলবেন।

এবং আপনাকে এই বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে যে আল্লাহ তাআলা আপনাকে দেখছেন আপনার দোয়া নিশ্চয়ই তিনি কবুল করবেন। ইনশাল্লাহ এভাবে যদি আপনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজের সেজদায় গিয়ে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তবে অবশ্যই তিনি আপনার দোয়া কবুল করবেন।

আরো পড়ুনঃ তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন বা কিভাবে দোয়া করতে হয়

দোয়া কবুলের আমল তো জেনে গেলেন। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। দোয়া কবুল হওয়ার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যেগুলো আগে আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে। শর্তগুলো হল:

  • আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক না করা।
  • হালাল ভাবে উপার্জন করে এবং হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা।
  • আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, যথাসম্ভব সামর্থ্য থাকলে হজ করা, গরিবের হক নষ্ট না করা, মিথ্যা কথা না বলা এবং কারো গীবত না করা এবং ইসলামের যাবতীয় ফরজ বিধানগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা।
  • দোয়ার সময় আপনি যে দোয়া করছেন সে দোয়ার প্রতি মনোযোগী হওয়া।
  • এমন বিশ্বাস এবং আস্থা নিয়ে দোয়া করতে হবে যাতে মনে হয় আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন।

এই শর্তগুলো যদি মেনে আপনি দোয়া করতে পারেন তবে অবশ্যই আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন।

এবার বলি কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। আপনি যেকোনো সময় দোয়া করতে পারেন। চাইলে নামাজের সময় ও দোয়া করতে পারেন নামাজ ছাড়াও দোয়া করতে পারেন।

কিন্তু আপনার যদি কোন দোয়া দ্রুত কবুল হওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে সেই দোয়া বা ইচ্ছার নিয়তে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। এরপর নামাজ শেষ করার পর মুনাজাত ধরবেন। চাইলে আপনি নামাযের সিজদায় গিয়েও দোয়া করতে পারবেন। এবার দোয়া করার পূর্বে আপনি কয়েকবার "আস্তাগফিরুল্লাহ" পড়ে নিবেন।

তারপর বেশ কয়েকবার দুরুদ শরীফ পড়ে নিবেন। আপনি চাইলে যেকোন দুরুদ পড়তে পারেন। এবার আপনার যে দোয়াটি আছে সেটি আল্লাহর কাছে পেশ করবেন। কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাওয়া গুলো তুলে ধরবেন, এরপর দোয়া শেষ করার পর আবারো কয়েকবার আস্তাগফিরুল্লাহ এবং দুরুদ শরীফ পড়ে নিবেন।

এবং মনে মনে এই আস্থা রাখবেন যে আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার দোয়া দ্রুত কবুল করবেন। আর এভাবেই দোয়া করি আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল

দোয়া কবুল হওয়ার সূরা

কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন সেটা তো এতক্ষণে জেনে গেছেন। এবার আমি এমন কিছু দোয়া কবুল হওয়ার সূরা বলবো দোয়া করলেও আল্লাহতালা দোয়া কবুল করে থাকেন। আসলে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য যদিও নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। কুরআন এবং হাদিসে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো পাঠ করে দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। 

হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলে, “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্’দাহ লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। সুবহা’-নাল্লাহি, ওয়ালহা’মদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার। ওয়া লা- হা’ওলা ওয়ালা- ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল আ’লিয়্যিল আ’যীম। রাব্বিগফির লী”। 

তার সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং এই দোয়াটি পড়ার পর যদি সে কোন দোয়া করে, তবে তার দোয়াও কবুল করা হবে। (বুখারী : ফাতহুল বারী : ১১৫৪। সহিহ ইবন মাজাহ্ : ২/৩৩৫)।

তাছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলিম যদি দোয়া ইউনুস পড়ে দোয়া করে তবে আল্লাহ তার দোয়াও কবুল করবেন, ফিরিয়ে দেবেন না। (তিরমিযীশরীফ)। 

তাছাড়া আপনি যদি কুরআন মাজীদের যেকোন একটি সূরা পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তবে অবশ্যই আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন।

দোয়া কবুলের অস্ত্র

দোয়া কবুলের আশ্রয় হলো দুরুদ শরীফ পাঠ করে দোয়া করা এবং ইস্তেগফার করা। আপনার যখনই কিছু প্রয়োজন হবে,ঠিক তখনই আপনি আল্লাহর কাছে চাইবেন। এবং আপনার দোয়া গুলো ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি দোয়া কবুলের পূর্বে কয়েকবার দুরুদ শরীফ পাঠ না করবেন।

কারণ দুরুদ শরীফ পাঠ করা ছাড়া যদি কেউ দোয়া করে তাহলে সেই দোয়া আসমান এবং জমিনের মাঝখানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

তাই দোয়া কবুলের পূর্বে সবসময় দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন। আর আপনি যদি চান যে যখনই আপনি দোয়া করেন তখনই সাথে সাথে কবুল হয়ে যাক তাহলে অবশ্যই সর্বদা ইস্তেগফারের উপরে থাকবেন অর্থাৎ সর্বদাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলবেন যে "আস্তাগফিরুল্লাহ"। কারণ যে সর্বদা ইস্তেগফারের মধ্যে থাকে তার দোয়া আল্লাহ কখনোই ফিরান না।

আরো পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ

উপসংহার

আমরা মুসলমান। আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করি। যখনই আমাদের কিছু প্রয়োজন হবে, যখনই আমরা বিপদে পড়ব তখন শুধুমাত্র আমরা আল্লাহর কাছে চাইবো এবং আল্লাহর কাছে মাথা নত করব। এবং কাঙ্খিত দোয়ার মাধ্যমে আমাদের ইচ্ছা গুলো পূরণ করে নেব।

সুতরাং কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন, দোয়া কবুলের অস্ত্র, দোয়া কবুলের আমল সবই তো এখন জেনে গেলেন। তাই দেরি না করে আপনার সকল নেক চাওয়া গুলো পূরণ করতে আজিজ আল্লাহর সেজদায় লুটিয়ে পড়ুন। এবং বেশি বেশি দোয়া করুন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: