রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় - প্রিয় বন্ধুরা রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকে ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে রমজানের সময় তারা রোজা করতে চায়। রমজানে রোজা করার জন্য রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় জানা অত্যন্ত জরুরী।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

তাই তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই আর্টিকেলে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় জানতে পারবেন। তো চলুন দেরি না করে বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকাঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

আমরা জানি যে ডায়াবেটিস খুবই মারাত্মক একটি রোগ। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস অনেক মারাত্মক। ডায়াবেটিস থাকা অবস্থায় অনেকেই রমজানের রোজা করতে চায়। যেহেতু রমজানের রোজা সকলের উপর ফরজ তাই যারা ধর্মপ্রাণ মুসল্লি রয়েছে সাধারণত তারাই হাজারো অসুস্থ হওয়ার শর্তেও রোজা করে থাকে।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগী যদি রোজা করতে চায় তাহলে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত এছাড়া রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার, রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর সর্তকতা, রোজায় ডায়াবেটিস রোগী কি করবে? এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার

রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার কেমন হবে এ বিষয় সম্পর্কে আমাদেরকে প্রথমে ধারণা নিতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীর অনেক সর্তকতার সাথে চলতে হয়। রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার কেমন হওয়া উচিত এই সম্পর্কে একজন ডায়াবেটিস রোগীকে জানতে হবে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে রোজায় ডায়াবেটিস রোগের খাবার নিচে উল্লেখ করা হলো।

পবিত্র রমজানে খাবার খাওয়ার সময়সূচী পরিবর্তিত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচীও পরিবর্তিত হয়। এর মধ্যে কোনো অনিয়ম হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক কমে বা বেড়ে যেতে পারে। তাই কোনো ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে চাইলে তাকে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

সেহরির শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাবার গ্রহণ করতে হবে। সেহরিতে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা চিড়া বা ওটস, দুধ, কলা, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল রাখার চেষ্টা করতে হবে। ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

ইফতার শুরু করতে পারেন নবীজী সাঃ এর সুন্নাহ্ ১টি খেজুর দিয়ে। এছাড়া কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল, ফলের জুস, টক দই, ডাবের পানি, চিড়া, একটা ছোট চাপা কলা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি খেতে পারেন। ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর তরল খাবার খেতে হবে, যেন পানিশূন্যতায় না ভোগেন।

রাতে হালকা খাবার যেমন- স্যুপ, লাল আটার রুটি, মাছ বা মাংস, ওটস, চিড়া খেতে পারেন। সেহরিতে অবশ্যই চেষ্টা করুন লাল আটার ভাত বা রুটি খেতে। সাথে রাখুন মাছ বা মাংস, সবজি, ডাল। এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন, যা সারাদিন আপনাকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর উক্ত খাবার গুলো খেতে হবে।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর সর্তকতা

পবিত্র মাহে রমজান মাস আমাদের সামনে উপস্থিত। মাহে রমজান উপলক্ষে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে আমরা রোজা পালন করে থাকি ভোররাত থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীর খুব সতর্কতার সাথে চলতে হয় তাই রোজা অবস্থায় তাকে অনেক সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। রোজায় ডায়বেটিস রোগীর সর্তকতা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর যে সকল ঝুঁকি দেখা যায়ঃ

রোজা অবস্থায় অন্যদের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীর বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। রোজা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রক্তগুলোকেজের মাত্রা কমে যাওয়া, অথবা গ্লুকোজের মাত্রা রক্তে বেড়ে যাওয়া, পানি শূন্যতা দেখা যাওয়া এবং রক্ত জমাট বাধা।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর সর্তকতাঃ

১। রমজানের তিন মাস আগে থেকেই ডায়াবেটিসের রোগীর রোজার জন্য প্রস্তুত নিতে হবে। রমজানে ঘন ঘন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

২। রমজানে প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিগুণ অন্য সময়ের মতোই রাখার চেষ্টা করতে হবে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৩। ইফতারের সময় সহজ প্রাচ্য খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পদার্থ খেতে হবে। সাহারি শেষ সময়ে খেতে হবে পানি।

৪। রোজা অবস্থায় শারীরিক ব্যায়াম এবং স্বাভাবিকভাবে শারীরিক কর্মকাণ্ডগুলো চালাতে হবে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে শরীর চর্চা করা যাবে না।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলকেই রমজানের রোজা করতে হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের সকলের রমজানের রোজা করা ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শারীরিক অসুবিধা হলে রোজা না করার বিধান রয়েছে। যদি শারীরিক সমস্যার কারণেও রোজা করতে পারা যায় তাহলে খুব সতর্কতা অবলম্বন করে রোজা করতে হবে।

রোজা অবস্থায় ডাইবেটিস রোগীদের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। তাই একজন ডায়াবেটিস রোগীর প্রথম কাজ হবে রোজা শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া। রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় হলোঃ

১। রমজানের সময় সেহেরী যথা সম্ভব দেরিতে খেতে হবে। সেহরি না খেয়ে রোজা রাখলে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। তাই সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।

২। ইফতার করার পরে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সারাদিন রোজা রাখা অবস্থায় পানি শূন্যতা দেখা যেতে পারে তাই ভাজাপোড়া না খেয়ে যতটা পারা যায় পানি পান করতে হবে।

৩। রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীর মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়া সব থেকে উত্তম। রমজানে বিশেষ করে ইফতারের পরে মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪। শরীরের পানি শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ডাবের পানি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খেলে শরীরে পানি শূন্যতা অনেকটাই কেটে যাবে।

৫। রাতে অবশ্যই খাবার খেতে হবে। ইফতারের সময় একসঙ্গে অতিরিক্ত না খেয়ে কিছুক্ষণ পরে রাতের খাবার খেতে হবে।

৬। যেহেতু রোজা রাখা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগী ব্যায়াম করতে পারেনা তাই ইফতার করার পরে হালকা করে হাঁটা যেতে পারে।

৭। ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত রমজানের আগেই তাদের ডাইবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়ে এ বিষয় সম্পর্কে ঠিকভাবে জেনে নেওয়া।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগী কি করবে

যারা ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে সাধারণত তারা রোজায় ডায়বেটিস রোগী কি করবে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চায়। আমরা ইতিমধ্যেই এই করণীয় বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। তবে আবার আপনাদের সুবিধার্থে রোজায় ডায়াবেটিস রোগী কি করবে বিষয়টি উল্লেখ করা হলো।

১। রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীরা সেহেরি খাবেন শেষ সময়ের অল্প আগে।

২। ইফতারের সময় অধিক মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

৩। খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ ও ধরন ঠিক করুন। ইফতারের সময় অতিভোজন এবং সেহরির সময় স্বল্পভোজন দুটিই পরিহার করুন। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিন।

৪। সেহেরি ও ইফতারিতে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টকদই তালিকাভুক্ত করুন। খেজুর খুব বেশি নয়, বড় জোর একটা খান। ভাজাপোড়া খাবার একদম বাদ দিন।

৫। পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা না হয়। ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর সাধারণ পানি, রাইস স্যালাইন বা ডাবের পানি পান করুন।

৬। গ্যাস্ট্রিক বা অন্য কোনো অসুখে সমস্যা না হলে ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে কালোজাম, লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙা, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকী, কচি ডাবের পানি ইত্যাদি।

৭। শাকসবজির মধ্যে পালংশাক, লালশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক, ফুলকপি, কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেঁপে, শসা, করলা, ঝিঙা, চিচিংগা, ধুন্দল, পটল, চালকুমড়া, লাউ, সজিনা খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

আমাদের শেষ কথাঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন ডায়াবেটিস রোগী হন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন এবং রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন ধন্যবাদ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: