রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা - প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। আমরা অনেকেই ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগে থাকি। যেহেতু রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীদের একটু সতর্ক হয়ে চলতে হয় তাই রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা রাখতে হবে।

রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

আপনি যদি রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এবং এবাদত সঠিকভাবে পালন করার জন্য রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

ভূমিকাঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

আমরা জানি যে পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি নর-নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অনেক অসুস্থ মানুষ রোজা রাখতে পারে না তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীরা অন্যতম। কারণ ডায়াবেটিস রোগের বিভিন্ন খাবারের বিষয়ে বিধি-নিষেধ দেওয়া থাকে। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়।

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে, রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার, রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ব্যবস্থাপনা, রমজানে ডায়াবেটিস রোগী কি খাবেন? রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার কেমন হবে? এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার

কোন ডায়াবেটিস রোগী যদি রোজা রাখতে চাই তাহলে অবশ্যই তার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে প্রথমে। কারণ কোন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। যদি এটি শরীরের ক্ষতি করে থাকে তাহলে অবশ্যই রোজা না রাখলে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগী যদি রোজা রাখতে চায় তাহলে তার তিন মাস আগে থেকে সুগার কন্ট্রোল করতে হবে।

যাদের সুগার কন্ট্রোল থাকে তারা নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারবে। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের দিনে ৬ বেলা খাবার গ্রহণ করতে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু রমজানের খাবার খাওয়ার সময় পাওয়া যায় তিন বেলা তাই এখানে একটি বেলা খাবার বেশি খাবেন আর একটি বেলা খাবার খাবেন না রমজানের তা ভুলেও করা যাবে না।

যদি এমনটা করা হয় তাহলে সুগার লেভেল ইন ব্যালেন্স হয়ে যাবে। যার ফলে প্রতিবেলার খাবার সময় মতো অল্প অল্প করে খেতে হবে। সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরে পানি শূন্যতা থাকে বেশি এজন্য একেবারে বেশি পরিমাণে পানি পান করা যাবে না বিশেষ করে শরবত জাতীয় ঘন পানি। এগুলো শরীরে শোষিত হতে বেশি সময় লাগে যার ফলে হজমের সমস্যা দেখা যায়।

যার ফলে আপনি পাতলা করে শরবত খেতে পারেন। ইফতারে পানি শূন্যতা এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন ডাবের পানি এসব গুলের ভুষি টক দইয়ের লাচ্ছি, কাঁচা আমের জুস ইত্যাদি। যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে সাধারণত তাদের টক জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। ইফতারের খাবার হতে হবে সকালের নাস্তার সমান।

সারাদিনের মোট খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ। ইফতারের স্বাস্থ্যকর খাবার গুলোর মধ্যে হল কাতা ছোলা, টমেটো, পুদিনা, মুড়ি, এছাড়া আরো খেতে পারেন নরম খিচুড়ি, লাল আটা রুটি, লাল চালের ভাত, ডিম সেদ্ধ এই খাবারগুলো ইফতারের মধ্যে খেতে পারেন। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে ডালের তৈরি খাবার একের অধিক খাওয়া উচিত নয়।

রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়

রমজানের মধ্যে যদি কোন ডায়াবেটিস রোগী রোজা করতে চাই তাহলে তাকে বেশ কিছু করণীয় করতে হবে। কারণ ডায়াবেটিস খুবই মারাত্মক একটি রোগ যার ফলে মৃ- ত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদেরকে সবসময় ডায়াবেটিস রোগ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে এবং সতর্কতার সাথে চলতে হবে।

১। রমজান মাসে যেহেতু আমরা ভাজাপোড়া খাই তাই অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

২। রমজান মাসে ভালো রান্না হয় আমাদের বাসায় সাধারণত তাই একদিন এই সকল খাবার না খেয়ে কম করে খাবার খেতে হবে।

৩। একই খাবার ফ্রিজে রেখে অনেক দিন ধরে খাওয়া যাবেনা।

৪। সারাদিন রোজা রাখলে এমনিতে পানি শূন্যতা থাকে বেশি। এজন্য বেশি বেশি চা কফি খাওয়া যাবেনা যার ফলে শরীরে আরো বেশি পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।

৫। রমজান মাসে ভুনা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে তরল এবং পানীয় যাতে খাবার খেতে হবে।

৬। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে সাধারণত কে এসিড বা বা জনিত সমস্যা আছে তাদের বেসন ও ডালের খাবার কম খেতে হবে।

৭। যাদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে পেশার রয়েছে তারা বাইরের কেনা সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।

৮। অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না যার ফলে এসিডিটি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়

রমজানে ডায়াবেটিস রোগী কি খাবেন

ডায়াবেটিস রোগী কোন ধরনের খাবার খাবেন আমরা ইতিমধ্যেই রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা আলোচনা করেছি। যদি ডায়াবেটিস রোগী রোজা করতে চায় তাহলে তাকে খুবই সতর্কতার সাথে খাবার গ্রহণ করতে হবে। ইফতারের পরেই রাতের সময়কাল খুব অল্প। অনেকে ইফতারে বেশি খাবার খেয়ে রাতের খাবার বাদ দেন। এটি একেবারে ঠিক নয়।

রাতের খাবারে হালকা কিছু খেতে পারেন। হালকা মসলায় রান্না করা ছোট মাছ, মুরগি, মাংস, সবজি, ডাল, শিমের বিচি, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। এ ছাড়া লাল আটার রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, যেকোনো একটি পরিমাণমতো খেতে পারেন। অবশ্যই ভুনা করা খাবার থেকে বিরত থাকবেন।

সেহেরির খাবার - আমরা জানি যে সেহরির খাবার খাওয়া হয় রাতের শেষ প্রহরের দিকে। এ জন্য অনেকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার সময় পান না। এ জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবারের মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম বেছে নিতে পারেন। গরুর মাংস, ডাল না খাওয়াই ভালো। কারণ, এগুলো পানির চাহিদা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া যাদের আগে থেকে হজমজনিত সমস্যা আছে তারা ডাল, মাংস এ সময় এড়িয়ে চলবেন।

রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার কেমন হবে

পবিত্র রমজানে খাবার খাওয়ার সময়সূচী পরিবর্তিত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচীও পরিবর্তিত হয়। এর মধ্যে কোনো অনিয়ম হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক কমে বা বেড়ে যেতে পারে। তাই কোনো ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে চাইলে তাকে খাদ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো, সেহরির শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

সেহরিতে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি বা চিড়া বা ওটস, দুধ, কলা, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল রাখার চেষ্টা করতে হবে। ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। ইফতার শুরু করতে পারেন নবীজী সাঃ এর সুন্নাহ্ ১টি খেজুর দিয়ে। এছাড়া কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ফল, ফলের জুস, টক দই, ডাবের পানি, চিড়া, একটা ছোট চাপা কলা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি খেতে পারেন।

ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর তরল খাবার খেতে হবে, যেন পানিশূন্যতায় না ভোগেন। রাতে হালকা খাবার যেমন- স্যুপ, লাল আটার রুটি, মাছ বা মাংস, ওটস, চিড়া খেতে পারেন। সেহরিতে অবশ্যই চেষ্টা করুন লাল আটার ভাত বা রুটি খেতে। সাথে রাখুন মাছ বা মাংস, সবজি, ডাল। এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন, যা সারাদিন আপনাকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি

আমাদের শেষ কথাঃ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার কেমন হবে? রমজানে ডায়াবেটিস রোগী কি খাবেন? রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার, রমজানের ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ব্যবস্থাপনা এবং রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যমূলক পোস্ট আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)