জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ - জরায়ু ইনফেকশনের কারণ - স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নারীদের প্রায় সময়ই জরায়ু বিভিন্ন রকম ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। মূলত ভেজা এবং সিন্থেটিক পোশাক বেশি সময় ধরে পরে থাকার জন্য শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে এসকল সংক্রমণ ঘটে থাকে। আবার অনেকেই মনে করেন, জরায়ু শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের জন্য লাগে।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

যদি আপনিও অনেকের মতো এমনটি ভাবেন তবে আপনার ধারণা সঠিক নয়। জীবনের কয়েকটি পর্যায়ে জরায়ুর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য মাসিকের সময়, সহবাসের সময় ও গর্ভকালীন সময় এবং মেনোপজের আগে এবং পরে। জরায়ু পরিচর্যার পূর্বে এই সমস্যা গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তা নাহলে ভুল পদক্ষেপে জটিলতা বাড়তে পারে।

সূচীপত্রঃ জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ত্রী যৌ= না- ঙ্গের সঠিক পরিচর্যা না করলে, যোনি থেকে রক্তপাত এবং সেখানে প্রদাহজনিত ব্যথা ইত্যাদি রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসকল ভাইরাস জরায়ুতে দীর্ঘসময় ধরে স্থায়ী হলে, সংক্রমিত কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। তাই, প্রত্যেক মহিলাদের জন্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। 

এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে, সাধারণত জরায়ুতে সমস্যা হলে এর উপসর্গগুলো কেমন হয়? অর্থাৎ জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি। প্রিয় পাঠক আপনি আমাদের আজকের এই জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ লেখাটি পড়ে খুব সহজেই এগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই। তার আগে চলুন জেনে নিই জরায়ু ইনফেকশন কি?

জরায়ু ইনফেকশন কি

জরায়ু ইনফেকশন কিংবা পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) বলতে বোঝায় ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণকে। মাঝে মধ্যে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। যৌ- -নবাহিত রোগের এর মধ্যে (gonorrhoea এবং chlamydia অন্যতম) এই দুটি কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসকল সংক্রমণ হয়ে থাকে। 

আবার ডিঅ্যান্ডসি, হিস্টারোসাল-ফিঙ্গোগ্রাফি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, কপারটি ইত্যাদি পরীক্ষার কারণেও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর ফলে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা, প্রজনন অঙ্গগুলোর জটিলতা এবং অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রিয় পাঠক জরায়ু ইনফেকশন কি তা আমরা জানলাম এবার চলুন জেনে নিই জরায়ুর রোগ সমূহ কি কিঃ

আরো পড়ুনঃ পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

জরায়ু রোগ সমূহ

নারীদের জরায়ুর মুখ যেখানে যোনির সঙ্গে সম্মিমিলিত হয় তখন তাকে বলা হয় সার্ভিক্স। আর যখনি সার্ভিক্স উদ্দীপ্ত হয় তখন তাকে বলা হয় সার্ভিসাইটিস। সার্ভিসাইটিস সংক্রামক কিংবা অসংক্রামক হতে পারে। সাধারণত যৌ- -ন বাহিত সংক্রমণের কারণেই সারভিক্স উদ্দীপ্ত হয়ে থাকে। এই যৌ- -ন বাহিত রোগগুলো হচ্ছেঃ ১। ক্লামিডিয়া ৩। হার্পিস ২। গনোরিয়া

লেটেক্স অ্যালার্জি এবং ডিউসিং এর ফলে জ্বালাভাব সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেসকল মহিলারা ক্যান্সারের সমস্যা সমাধানের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিচ্ছেন তাদেরও সার্ভিক্সের মধ্যে জ্বালাভাব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে যদি মূত্রনালী সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে আক্রান্ত নারী মূত্রত্যাগের সময়ে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এছাড়াও যোনিতে চুলকানি কিংবা যোনি থেকে রক্তপাতের মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষত যৌ-- ন সংসর্গের পরে কিংবা মাসিক চক্রের মধ্যখানে অনেক সময় পেটের যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।

এইচপিভি-ও জরায়ু রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটির ফলে দেহে গুটি, আঁচিল সমস্যা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। আর এগুলো যৌ-না- ঙ্গ থেকে শুরু করে হাতে পায়ে, মুখে, এমনকি মুখের মধ্যেও হতে পারে। জেনে রাখা ভালো এই ভাইরাসগুলো কিন্ত খুবই ছোঁয়াচে। সাধারণত নারী এবং পুরুষ যখন প্রথম যৌ- -ন-সক্রিয় হয়ে ওঠে তখনই এই সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকে।

জরায়ু জ্বালাপোড়াঃ গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্লাডারে অনেক চাপ পড়ে। ব্লাডআরে অনেক চাপ পড়ার কারণে প্রস্রাব ঠিকমতো বাহির হতে পারেনা। আর যদি কেউ এক্ষেত্রে সাবধান না হোন তবে কিডনির উপর এটার মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি সময়ের পূর্বেই গর্ভযন্ত্রণার মতো সমস্যা শুরু হতে পারে। 

এটির কারণে অস্বাভাবিক কম ওজনের সন্তান জন্মানোরও ঝুঁকি থাকে। প্রেগন্যান্সির সময় পার হয়ে গেলেও ইউরিনারি ট্রাক্ট কিংবা ব্লাডার ইনফেকশনের ঝুঁকি কিন্ত থেকেই যায়। এগুলো ছাড়াও প্রস্রাবের সময়ে জ্বালাপোড়া করা, তলপেটে চাপ সৃষ্টি হওয়া এবং বারবার প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।

প্রিয় পাঠক এবার চলুন জেনে নিই আর কি কি কারণে জরায়ু মুখে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হতে পারেঃ ১। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করার কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। আমরা অবশ্যই জানি যে, পানি মূলত আমাদের শরীরের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। সেজন্য আমাদের প্রতিদিন আমাদের পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। এতে করে আরো বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

এখন যে উপর্সগ নিয়ে কথা বলবো তা নারীদের ক্ষেত্রে বেশ কষ্টদায়ক। নারীদের পায়ুপথের বেশ কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার কারণে পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস সহজেই মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং সেখানে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।

এছাড়াও মাসিক এবং পিরিয়ডের কারনে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই আবার সে সময়ে অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন অথবা অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করেন। এসকল অস্বাস্থ্যকর ন্যাপকিন এবং কাপড়ের সঙ্গে জীবাণু কিংবা ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালিতে প্রবেশ করে যার ফলে সেখানে সংক্রমণের সৃষ্টি করার সম্ভাবনা তৈরি করে।

জরায়ু ব্যথার কারণ - জরায়ুতে ব্যথা হয় কেন

নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই নিতম্বের ব্যথা এবং তলপেটের ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে মাসিক হওয়ার পূর্বে তলপেটে প্রচণ্ড আকারে ব্যথা শুরু হতে থাকে। মাসিক হওয়ার সময়ে এই ব্যাথা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। পিরিয়ড জনিত দীর্ঘমেয়াদি এই ব্যথা মূলত জরায়ু প্রাচীরের ৪ দিকে জ্বালাপোড়ার কারণে হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায়ও যোনিতে ব্যাথার তৈরি হয়। জরায়ু ব্যথার কারণ নিম্নে দেওয়া হলোঃ

হরমোনের পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থা মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তন ঘটায়। এটি যোনিকে অযাচিত ভাবে শুষ্ক করে তোলে। যার কারণে যোনিতে ব্যাথার সৃষ্টি হয়ে থাকে, বিশেষত- মিলনের সময়।

জরায়ুর বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যাথার এটি সাধারণ কারণ। জরায়ু ভ্রূণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে আকারে বৃদ্ধি পায়। যার ফলস্বরূপ এটি যোনি এবং আশেপাশের পেশীগুলোর উপরে চাপ সৃষ্টি করে।

সংক্রমণঃ সংক্রমণের ফলে বাহ্যিক যৌ- না-ঙ্গে ও যোনিতে ব্যাথার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসকল লক্ষণ প্রকাশ পেলে অতি দ্রুত একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। গর্ভাধারণ কালে নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম পরিমাণে থাকে বিধায়, এসময়ে শরীর মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি থাকে।

ভ্রূণের বৃদ্ধিঃ জরায়ুতে ভ্রূণের আকার বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে নিতম্বের লিগামেন্টগুলো প্রসারিত হতে থাকে। যোনিকে ঘিরে থাকা লিগামেন্ট ও পেশীর অত্যধিক প্রসারণের কারণে সেখানে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা দেখা দেয়। শিশুর ওজন পেলভিক মেঝেতে চাপ সৃষ্টি করার কারণে যোনিতে ব্যথার সৃষ্টি হয়ে থাকে।

জরায়ুর বিভাজনঃ জরায়ুর প্রসারণের কারণে যোনিতে তীক্ষ্ণ ও শ্যুটিংয়ের মতো ব্যাথা হতে পারে। তবে হ্যাঁ, যদি ব্যথা তলপেটে হয়ে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা অতীব জরুরি।

পেলভিক অরগান প্রোল্যাপসঃ পিওপি (পেলভিক অরগান প্রোল্যাপস) হচ্ছে গর্ভাবস্থাকালীন এমন একটি অবস্থা যেখানে শ্রোণী কিংবা তার আশেপাশের অঙ্গগুলি কখনো কখনো যোনি অথবা মলদ্বারে প্রবেশ করে। 

যদি আপনি তীব্র চাপ অনুভব করেন এবং অন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হয়, তাহলে অতিদ্রুত আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। পিওপি চিকিৎসাযোগ্য, তবে হ্যাঁ এটি কিন্ত মারাত্মক ব্যাথা এবং জটিলতার তৈরি করতে পারে। তাই পূর্বে থেকে এমন সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণ্যাপন্ন হওয়া উচিত।

জরায়ু ব্যথার সমাধান

যখন ঘুমাবেন তখন ডানপাশে কাত হয়ে ঘুমাবেন। এতে করে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে যার ফলে যোনি চাপমুক্ত থাকবে। এবং আপনার জরায়ু ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে। একইভাবে, যখন আপনি কোথাও বসবেন তখন আপনার পা উঁচু জায়গাতে রেখে বসে পড়ুন। এই পদ্ধতি গর্ভাবস্থায় যোনিপথের চাপ অনেকাংশে কমাতে ভালো ভুমিকা রাখে। যার ফলে যোনিতে ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।

নিয়মিত কেগেল এক্সারসাইজ করার ফলে যোনির চাপ এবং ব্যথার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাঁতার কাটা এবং যোগ ব্যায়ামের মতো সাধারণ ব্যায়াম গুলো শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করতে এবং পেশীকে শক্তিশালী করতে অনেক বেশি কার্যকর। এই কাজগুলো করে যোনির ব্যাথা খানিকটা উপশম করা সম্ভবপর হয়।

আপনার পেট যদি বড় হয়ে থাকে, তাহলে বুঝে নিবেন এটি শিশুর মাথা যোনিতে চাপ দেওয়ার কারণে ব্যথা হচ্ছে। আর গর্ভাবস্থায় যদি সাপোর্ট বেল্ট পরতে পারেন তাহলে সেই চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যাথা আপনার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে যদিও এটি নারীদের মধ্যে একটি কমন সমস্যা। 

আপনার জীবনযাত্রার কয়েকটি চেঞ্জ যোনির ব্যাথা উপশম বা ভালো করতে সাহায্য করতে পারে। তবে হ্যাঁ যদি আপনি মনে করেন যে, ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন এবং পরামর্শ গ্রহণ করুন।

জরায়ু রোগ সংক্রমণ পদ্ধতিঃ সাধারণত গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া, ই-কলাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, ব্যাকটেরয়েডস, ইত্যাদি জীবাণু দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। যৌ- -ন সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু ও ট্রাইকোমোনাড (যা পুরুষের যৌ- না- ঙ্গে থাকে) বাহিত হয়ে জীবাণুগুলো যৌ- না- ঙ্গে প্রবেশ করে। পরে জীবাণুগুলো জরায়ু, নালী হয়ে ডিম্বাশয়ও আক্রমণ করে।

জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক অন্যান্য কারণ গুলোর পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের ফলেও কিন্ত জরায়ু ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে তলপেটে ও কোমরের নিচের দিকে ব্যথা হয় এবং সে ব্যাথা দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে। জরায়ু রোগের কিছু পরিচিত লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ অস্বাভাবিক স্রাব, জ্বর এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব, অনিয়মিত মাসিক এবং জ্বর জ্বর লাগা, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সময় ও পরে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বেদনা, নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও মাসিক না হওয়া, সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব।

হাত, পা, শরীর আগুনে পোড়ার মত জ্বালা করে, পুঁজযুক্ত ঋতুস্রাব, মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা, সহবাসের পর রক্ত বের হওয়া, মল-মূত্র ত্যাগ কালে যৌ- -না- ঙ্গ দিয়ে রক্ত বের হয় ও ব্যথা হয়, মাসিক ছাড়া রক্তস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অত্যন্ত ক্লান্তিকর অনুভূতি, জরায়ুর গ্রীক ফোলা ও শক্ত থাকা ইত্যাদি। 

উপরোক্ত জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোর তীব্রতা বেশি কিংবা কম হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ ব্যতীত অনেকে এই জরায়ু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কেননা এই রোগের জীবাণুগুলি সাধারণত জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোর সাথে জ্বর থাকলে কিংবা পেটেরব্যথা, পেটের যেকোনো সমস্যা অথবা অতিরিক্ত গ্যাস, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দিলেও স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা এই ধরনের সমস্যায় জরায়ু কিংবা ডিম্বাশয়ের রোগ হতে পারে।

প্রিয় পাঠক সাবধান হওয়ার জন্য কিংবা কিছু কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে নিন্মাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, হালকা খাবার খেলেও মনে হয় পেট ভর্তি হয়ে গেছে।

পেটে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা, পেট ফুলে থাকা, পেটে অতিরিক্ত ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ক্ষুধা কম, মিলনে ব্যথা লাগা, ওজন কম বা বেশি হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং মেনোপজের পরেও এ ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকরে শরণাপন্ন হতে হবে।

আরো পড়ুনঃ নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

বিশ্বজুড়ে নিঃশব্দে মৃ- ত্যুর ভয়ংকর থাবা বসাচ্ছে জরায়ু ক্যান্সার। জরায়ু ক্যান্সার নারীদের একটি জটিল রোগ। লাখ লাখ নারী এই প্রাণঘাতী জরায়ু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। আর প্রতিবছর হাজার হাজার নারী এই রোগে মারা যাচ্ছেন। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকেও সুস্থ থাকা যায়। 

আবার দেখা যায় সচেতনার অভাবে রোগ নির্ণয় করতে করতে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যান রোগী। এই জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলারা অসুখ হওয়ার প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা না করানোর কারণে তাদের বেঁচে থাকার হার ৫০% কমে যায়। 

অনেকেই আবার ধারণা করেন যে, জরায়ু ক্যান্সার অসুখটি হয়তো শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর হয়ে থাকে। কিন্ত তাদের এই ধারণাটি ভুল। যেকোনো বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। তবে বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০ বছর বা এর চেয়েও বেশি সেসকল নারীরা জরায়ু ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই জরায়ু ক্যান্সারকে 'সাইলেন্ট কিলার' বলা হয়ে থাকে। যারা শুরুতেই এই রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করান, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে ৯৫% ।

জরায়ু ক্যান্সারকে বলা হয়ে থাকে নীরব ধাতক। কেননা এই অসুখ দেখা দিলে বেশিরভাগ নারী এর কিছু কিছু লক্ষণ বুঝতে পারেন না। কিংবা আরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও সেগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। তাই সুস্থ থাকতে জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

অনেকেই জরায়ু কান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন না। এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) গ্রন্থিগুলোর কোষ থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের সৃষ্টি হয়। ম্যালিগন্যান্ট মিক্সড মুলেরিয়ান টিউমারও হয়। এছাড়াও, ইউটেরিন সারকোমাও, সার্ভিকাল ক্যান্সার এই জরায়ু ক্যান্সারের প্রকারভেদ। ক্যান্সার কোষগুলি আশেপাশের টিস্যুকে আক্রমণ করতে পারে এবং টিউমার থেকে ভেঙে শরীরের যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে জরায়ুর ক্যান্সারের মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ বা জরায়ু ক্যান্সারের পূর্ববর্তী কিছু লক্ষণ গুলো হলোঃ ১। অনিয়মিত মাসিক চক্র ২। পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা বা পেটে অস্বস্তি লাগা ৩। ক্ষুধা কমে যাওয়া, ৪। হালকা খাবারের পর পেটভর্তি লাগা ৫। গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ৬। পা ফুলে যাওয়া ৭। অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা ৮। ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা 

৯। নিম্নাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা ১০। মিলনের সময় ব্যথা পাওয়া ১১। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ওজন হ্রাস ১২। মলদ্বারে ব্যথা বা রক্তপাত ১৩। বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া ইত্যাদি। পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

জরায়ু টিউমারের লক্ষণ

ফাইব্রয়েড এর লক্ষণ মূলত নির্ভর করে টিউমারের সংখ্যা এবং আকারের উপর, যেমন সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড এর ফলে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে দেখা যায় এবং যার থেকে এবং গর্ভধারনে সমস্যা দেখা যায়।

যদি টিউমারের আকার ছোটো থাকে বা কেউ মেনপজে পৌঁছে গিয়ে থাকেন তাহলে সাধারণত ফাইব্রয়েড এর লক্ষণ অনুভব করা যায়না। ফাইব্রয়েড অনেক ক্ষেত্রে মেনপজে এসে বা তার পরে ধীরে ধীরে নিজে থেকেই কমে যায়। কারণ হিসেবে বলা যায়, মেনপজে প্রধান দুটি স্ত্রীজনিত হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন এর মাত্রা কমে আসে ফলে তা ফাইব্রয়েড এর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারেনা।

সংক্ষেপে জরায়ু টিউমারের লক্ষণ গুলো উল্লেখিত করা হলঃ ১। তলপেট বা কোমরে ব্যাথা ২ ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত এবং অনেকসময় তাতে জমাট বাধা রক্ত থাকে ৩। মিলনের সময় ব্যাথা বা অস্বস্তি ৪। ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের সময় পেট ব্যাথা বা খিঁচুনি ৫। পেটের নিচের দিকে ব্যাথা বা চাপ সৃষ্টি হয় ৬। অনেকক্ষেত্রে পিরিয়ড স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশিদিন ধরে চলতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ গেজ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

জরায়ু সমস্যা কেন হয়

বিভিন্ন কারণে নারীদের জরায়ু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আর এসকল কারণগুলো প্রত্যেক নারীকে জেনে রাখা দরকার। তাতে করে জরায়ু সংক্রান্ত অনেক অনাকাংখিত জটিল সমস্যা থেকে সহজে নিরাপদ থাকা সম্ভবপর হবে। নিম্নে জরায়ু সমস্যা কেন হয় তার প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করা হলোঃ

সাধারণত কম বয়সে বিয়ে, অল্প বয়সে সন্তান জন্মদান অর্থাৎ কম বয়সে সন্তান হওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ঘন ঘন সন্তান ধারণ, জরায়ুতে নানা প্রকার জীবানু দূষণ যেমনঃ মনিলিয়াল ইনফেকশন, ট্রাইকোমনা জাতীয় ইনফেকশনের ফলে জরায়ু সমস্যা হতে পারে।

তামাক গ্রহণ বা ধুমপান, পূর্বে জরায়ুর কোনো সমস্যা, ইনফেকশন, বহুগামিতা অর্থাৎ যেসব মেয়েরা কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌ- -ন সম্পর্ক স্থাপন করে এমন ক্ষেত্রেও নারীদের জরায়ু সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বংশগত ইত্যাদি কারণেও জরায়ু সমস্যা হয় অর্থাৎ জরায়ুতে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।প্রস্রাবের পরে ঠিকমত যত্ন না নেয়ার জন্যে জরায়ুর গাত্রে ফুল পড়ে যাওয়ার পর ঘা থাকে এবং ঐ ঘায়ের মধ্যে জীবানু প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। জরায়ুতে ক্ষত, টিউমার ইত্যাদির জন্য সমস্যা হতে পারে।

এছাড়াও ঠান্ডা লাগা, ঋতু বন্ধ হওয়া, অতিরিক্ত স্বামী সহবাস করা, ভিজা সেঁত সেঁতে স্থানে বাস থাকা, কষ্টকর জরায়ুর উত্তেজনা ইত্যাদি কারণে জরায়ু সমস্যা হতে পারে। ঋতুস্রাবের সময় নোংরা নেকড়া কিংবা নোংরা কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করার ফলে এই জরায়ু রোগ হতে পারে। বর্তমানে যেভাবে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়ে থাকে যার ফলেও এই রোগটি অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জরায়ুর সমস্যা কাদের ঝুঁকি বেশি

আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৯ হাজারের বেশি মহিলা জরায়ু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করে সেসকল মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। গ্রামের মহিলারা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তেমন বেশি সচেতন নয়। 

প্রথমে জরায়ু ইনফেকশন তারপরে এটি মারাত্মক রুপ ধারণ করে পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নেয়। অনেকেই আছেন যারা লজ্জার ফলে কোথাও চিকিৎসাও করেন না। তারা লজ্জার কারণে নিজেরদের শরীরে রোগকে পুষে রাখে। যার ফলে অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনের কারণে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা

প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক ও পেইন কিলার দিয়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। এই ক্ষেত্রে ঔষধগুলো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সেবন করতে হবে। 1. Zybact 250 Mg 2. Zomycin 250 3. Cef 250 4. Cefadur CA 250 Mg 5. Zycin 250 mg 6. Pulmocef 1500 7. ALTAXIME 500MG ইত্যাদি।

যদি এসকল অ্যান্টিবায়োটিকস সেবন করার পরেও কোনো প্রকার উন্নতি না দেখতে পারেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি আরো যেসকল জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা গুলো করা উচিত সেগুলো করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এছাড়াও দেশের প্রত্যেক জেলা ও সদর হাসপাতাল গুলোতে জরায়ু এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে করানো হয়ে থাকে। সেখানে জরায়ু সংক্রান্ত চিকিৎসাও রয়েছে। এজন্য আপনার কোনো সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

জরায়ু সমস্যায় সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

সঠিক সময়ে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা না করাতে পারলে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা না করালে দীর্ঘসময় ধরে তলপেট ব্যথা করা, কোমরে ব্যথা করা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং জরায়ু এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারণে অক্ষমতা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হওয়ার মতো ঝুঁকি থাকে। 

এছাড়াও ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সিও অর্থাৎ জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হওয়ারও আশঙ্কা আছে। প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না করালে সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব, গর্ভপাত এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানেরও ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই শুধু একটুখানি সচেতনতা আপনাকে মারাত্মক জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের সকলের উচিত নিজেদের শরীরের বিশেষ যত্ন নেওয়া।

জরায়ু ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রিয় পাঠক চিকিৎসা বিজ্ঞান বর্তমানে খুব উন্নত। তবে হ্যাঁ ডাক্তারি পরামর্শের পাশাপাশি আপনি এই রোগের জন্য ঘরোয়া কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। চলুন, ভিডিওতে দেখে নিই জরায়ু ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো কি কিঃ

জরায়ু ইনফেকশন হোমিও চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথিতে জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা এন্টিবায়োটিক এর চেয়েও অনেক বেশি কার্যকর। এন্টিবায়োটিক সেবন করলে কিছুদিন পরে পুনরায় জরায়ু ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি নির্দিষ্ট কোর্স সম্পূর্ণ করলে পরবর্তীতে জরায়ু ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আপনি এখনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। 

আপনার জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসার জন্য ভালো হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন। বা হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। আপনি যদি জরায়ু ইনফেকশন হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তবে তা আমাদেরকে কমেন্টে জানিয়ে দিন। আমরা পরবর্তীতে এই বিষয়ের উপর আরেকটি লেখা আপনাদের জন্য দিয়ে পাবলিশ করবো।

জরায়ু ভালো রাখার উপায়

সাধারণত নারীরা তাদের নিজেদের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল হয়ে থাকে। চুল, ত্বক ভালো রাখার জন্য রূপচর্চা করেন স্লিম থাকেন এবং প্রয়জনে ব্যায়ামও করে থাকেন। তবে বেশীরভাগ নারী পিরিয়ডের সময়ে এবং এমনি সময়গুলোতে তাদের জরায়ু ভালো রাখার জন্য তেমন কোনো যত্ন নেয় না। প্রিয় পাঠক আপনি অবশ্যই মনে রাখবেন এটি নারীর দেহের বিশেষ একটি অঙ্গ। একজন নারীর এই অঙ্গটি সংক্রমণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চলুন জেনে নেই জরায়ু ভালো রাখার উপায় এবং কীভাবে আপনি যোনির যত্ন নিবেন।

পরিষ্কার রাখুনঃ প্রতিদিন গোসল করার সময় ভালোভাবে আপনার বিশেষ অঙ্গটিকে ধুয়ে নিন। অবশ্যই এখানে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করবেন। ভালোভাবে পরিস্কার করার জন্য চাইলে আপনারা ভি-ওয়াশ জাতীয় লোশন গুলি ব্যবহার করতে পারেন। এরপরে নরম তোয়ালে অথবা টিস্যু দিয়ে মুছে নিবেন। কখনো খসখসে জাতীয় কাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়।

বডি স্প্রে ব্যবহার করবেন নাঃ জরায়ুর স্বাভাবিক একটা গন্ধ রয়েছে। অনেকেই এই গন্ধ ঢাকার জন্য ডিও কিংবা বডি স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্ত এই কাজটি মোটেও করা উচিত না। এই কাজ করার ফলে যোনির ত্বক লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে।

সুতির অন্তর্বাসঃ গরমকালে যোনি অনেক বেশি পরিমাণে ঘামে। আর ঘাম জমে গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় এবং জরায়ুতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবা থাকে। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য আপনি সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করুন।

খাবারঃ আপেল, দই, অ্যামন্ড, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খেলে জরায়ু সমস্যা কম হয়। এই সকল খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। শরীর সুস্থ রাখতে বাইরের মশলাদার খাবার, ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড থেকে বিরত থাকুন।

শারীরিক সম্পর্কঃ শরীরিক সম্পর্কের সময়ে প্রটেকশন ব্যবহার করা উত্তম। প্রটেকশন (মানে আপনি বুজতে পারছেন তো😊) বিভিন্ন যৌ- -ন-রোগকে প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও শরীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরবর্তী সময়ে আপনার বিশেষ অঙ্গ পরিষ্কার করে নিন।

ডিসচার্জ হলে ডাক্তার দেখানঃ সাধারণত যোনি থেকে সাদা পানির মতোন কিংবা হালকা হলুদ বর্ণের ডিসচার্জ হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। যোনির মধ্যে আটকে থাকা জীবাণু এই পদ্ধতিতে শরীর বাইরে বাহির করে দেয়। কিন্ত হ্যাঁ, যদি অন্য কোনো বর্ণের ডিসচার্জ হয়ে থাকে, আর যদি তা ঘন আঠার মতো চটচটে হয়ে থাকে, সাথে তার তীব্র দুর্গন্ধ বাহির হয় কিংবা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, তবে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

প্যাড পরিবর্তন করুনঃ পিরিয়ডের সময়ে দিনে অন্তত ৩-৪ বার প্যাড পরিবর্তন করুন। কেননা পিরিয়ডের সময়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। সারাটা দিন যদি একটা প্যাড পরে থাকা যায় তাহলে ভিজে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। তাই জরায়ু ভালো রাখার উপায় হিসেবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

ট্রিম বা শেভ করুনঃ যোনির চুল বড় হয়ে গেলে শেভ করে ফেলুন বা ট্রিম করুন। এটি করার ফলে যোনি পরিষ্কার রাখতে সুবিধে হবে এবং সংক্রমণের আশঙ্কাও হ্রাস পাবে। কিন্ত হ্যাঁ, এখানে কোনো হেয়ার রিমুভিং ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রিয় পাঠক দীর্ঘদিন ধরে যদি যোনিতে চুলকানি কিংবা ব্যথা হয় এবং ঘন আঠার মতোন চটচটে ডিসচার্জ বাহির অথবা কোনো স্ফীতি দেখা দিলেই আপনি আর দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

জরায়ু অপারেশনের পর করণীয়

ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ এবং চেকআপের নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। জরায়ু অপারেশনের পর করণীয় হবে পুষ্টিকর জাতীয় খাবার খাওয়া। এই অপারেশনের নেক্সট দিন থেকেই রোগী সকল ধরনের খাবার খেতে পারবেন। তবে হ্যাঁ অনভ্যস্ত কোনো খাবার না খাওয়াই উত্তম। 

ডিম, দুধ, টক জাতীয় ফল ক্ষত শুকাতে সহায়তা করে। অনেকেই আছেন যারা এগুলোর উল্টোটা ভাবেন আর রোগীর খাওয়া-দাওয়াই অনেক বিধিনিষেধ দিয়ে দেন। যার ফলস্বরূপ ভালোর থেকে মন্দই বেশি হয়ে থাকে। তাই জরায়ু অপেরাশনের পর রোগীর পছন্দ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন।

জরায়ু অপারেশন করার নেক্সট দিন থেকেই রোগীকে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। দেড় মাস পরে থেকে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করবেন। অপারেশন করার পর ১ম দেড় মাস রোগী মোটামুটি বিশ্রামেই থাকবেন। এরপর থেকে সাধারণ কাজকর্ম গুলো শুরু করতে পারবেন।

জরায়ু অপারেশনের রোগীকে ৩ মাস কোনো প্রকার ভারি কাজ করা উচিত নয়। ৩ মাসের মধ্যে কাশি কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করুন। আর যদি এমন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৭ দিন পরে আপনার ব্যান্ডেজটি খুলে এবং যদি সেলাই করা থাকে সে সেলাই খোলার পরে সাবান এবং পানি দিয়ে আপনার ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়মিত গোসল করবেন। লক্ষ্য রাখবেন যেন ক্ষতস্থানে কোনো প্রকার ময়লা জমতে না পারে।

পেটে বেল্ট কিংবা বাইন্ডার ইউজ করবেন না। এতে করে প্রাথমিক অবস্থায় ঘেমে ও বাতাস চলাচলে বিঘ্নিত হওয়ার ফলে সেখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকদিন ইউজ করলে আপনার পেট ঢিলাঢালা হয়ে যাবে এবং হার্নিয়াও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জরায়ু ইনফেকশন কি, জরায়ু রোগ সমূহ, জরায়ু ব্যথার কারণ, জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ, জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, জরায়ু টিউমারের লক্ষণ, জরায়ু সমস্যা কেন হয়, মেয়েদের জরায়ু ক্যান্সার কেন হয়, জরায়ু সমস্যা কাদের ঝুঁকি বেশি, জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা তথ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্য সেবা সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের জন্য। 

অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবনে আপনার শারিরীক এবং মানসিক সমস্যা হতে পারে। জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোহ সহকারে পড়ার জন্য এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

শেষ কথাঃ জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের এই আয়োজন জরায়ু ইনফেকশন কি, জরায়ু রোগ সমূহ, জরায়ু ব্যথার কারণ, জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ, জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ, জরায়ু টিউমারের লক্ষণ, জরায়ু সমস্যা কেন হয়, জরায়ু সমস্যা কাদের ঝুঁকি বেশি, জরায়ু ইনফেকশনের চিকিৎসা, জরায়ু সমস্যায় সময়মতো চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা, জরায়ু ইনফেকশনের ঘরোয়া চিকিৎসা।

জরায়ু ইনফেকশন হোমিও চিকিৎসা, জরায়ু ভালো রাখার উপায়, জরায়ু অপারেশনের পর করণীয় সম্পর্কিত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর এখানে পেয়ে গিয়েছেন। এগুলো ব্যতীত যদি আপনি আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে তবে অবশ্যই তা কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিন এতাক্ষণ ধরে সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: