বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়

বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় - আপনি কি বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আমাদের দেশে অনেক বাচ্চা আছে তারা নিজে থেকে পড়াশোনা করতে চায় না। অনেকে অভিভাবক আছেন বাচ্চাদের পড়াশোনার মনোযোগের জন্য বাচ্চাদের অনেক শাসন করেন। 

বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়

তবুও বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করতে পারে না। তবে এই বাচ্চাদের পড়াশোনা মনোযোগী করানোর জন্য অতিরিক্ত শাসন না করাই উত্তম। বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার কিছু কৌশল আছে যে কৌশল গুলো করলে আপনার বাচ্চা নিজ থেকেই পড়াশোনা করবে। তাহলে চলুন জেনে আসি বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়গুলো।

আরো পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায়

সূচীপত্রঃ বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়

বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়

আপনার শিশুর বয়স যখন ৬ বছর হয় তখনই উচিত আপনার শিশুকে স্কুলে ভর্তি করা। এবং প্রতিদিন সে নিয়মিত স্কুল যায় এবং স্কুল থেকে ফিরে আসে এই অভ্যাস করতে হবে। অনেক অভিবাবক আছেন তাদের একটা অভিযোগ থাকে “আমার বাচ্চার পড়াশোনায় মনোযোগ একদমই নেই”। 

তবে অভিভাবকদের জেনে রাখা উচিত শিশু এই সময় খেলাধুলা, দুষ্টুমি ইত্যাদি করতে ভালোবাসে। তাই এসবের পাশাপাশি শিশুদের পড়াশোনা করাতে হবে। বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় আছে যেগুলো আপনাকে জেনে নিতে হবে তাহলেই আপনি আপনার বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করতে পারবেন। 

এক নজরে দেখে নিন বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় গুলোঃ ১। বাচ্চাদের পড়াশোনা করার রুটিন তৈরি করুন ২। বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করুন সহজ বিষয় দিয়ে ৩। বাচ্চাদের শুধু বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ না রাখা ৪। বাচ্চাদের পড়ানোর সঠিক স্থান বাছুন ৪। বাচ্চাদের পড়াশোনার করার উৎসাহ দিন।

৫। বাচ্চাদের পড়ার সময় নির্ধারণ করুন ৬। বাচ্চাদের খেলার সময় দিন ৭। বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করুন ৮। বাচ্চাদের নিয়মিত স্কুলে যেতে দিন ৯। বাচ্চাদের নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যান ১০। বাচ্চাদের কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিন ১১। বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না ১২। বাচ্চাদের বন্ধুদের সাথে কথা বলতে দিন। 

বাচ্চাদের পড়াশোনা করার রুটিন তৈরি করুন

বাচ্চাদের পড়াশোনা মনোযোগী করার জন্য প্রতিদিনের রুটিন খুবই জরূরী। আপনার সন্তানকে প্রতিদিন দুইবার পড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। সকাল এবং রাতে। বাচ্চাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করে দিন এবং নিয়মিত প্রার্থনা এবং শরীর চর্চার অভ্যাস করতে দিন। 

নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস করে দিন এবং বন্ধুদের সাথে খেলা করার সময় দিন। তাকে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, “বাবু তোমার কোন সময় বেশী বই পড়তে ভালো লাগে” সে যদি তার নিজস্ব সময় বলে তাহলে তার সেই সময় পড়াতে বসান। 

এই অভ্যাসটা যদি আপনি ১ সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ করেন তাহলে আপনার বাচ্চার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ আসবে। আশা করা যায় এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করা যাবে ইনশাআল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা

বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করুন সহজ বিষয় দিয়ে

আপনি বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করতে পারেন সহজ কোনো বিষয় দিয়ে। আপনি বাচ্চাদের কোন গল্পের মাধ্যমে পড়ানো শুরু করতে পারেন। আপনি এমন কোন কঠিন বিষয় নিয়ে পড়ানো শুরু করবেন না যাতে করে আপনার বাচ্চা পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 

সহজ কোন বিষয় দিয়ে পড়ানো শুরু করলে আপনার শিশু মনে করবে আমি সকল কিছু পড়তে পারব, এরপর আপনি আস্তে আস্তে একটু কঠিন বিষয় পড়ানো শুরু করতে পারেন। 

বাচ্চাদের শুধু বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ না রাখা

বাচ্চাদের বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বইয়ের বাইরেও কিছু শেখান। যেমন আপনি আমাদের দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের চেনাতে পারেন যেমনঃ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ), আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং গুনি জনদের চেনাতে পারেন।

এছাড়াও আমাদের দেশের দেশের জাতীয় পাখি, জাতীয় ফুল, জাতীয় মাছ, জাতীয় গাছ, আমাদের জাতীয় কবি ইত্যাদি বিষয়গুলো শিখাতে পারেন।

বাচ্চাদের পড়ানোর সঠিক স্থান বাছুন

বাচ্চাদের পড়ার মনোযোগী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে বাচ্চাদের পড়ানোর সঠিক স্থান বেছে নেওয়া। আপনি যখন আপনার বাচ্চাকে পড়াবেন তখন ঠান্ডা এবং কোলহালমুক্ত জায়গায় পড়াবেন। আপনি এমন জায়গায় বাচ্চাকে পড়াবেন না যাতে করে আপনার বাচ্চা পড়ার মনযোগ হারিয়ে ফেলে। 

বাচ্চাদের পড়াশোনার করার উৎসাহ দিন

আপনি বাচ্চার পড়ার প্রতি আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দিন। আপনি তার প্রশংসা করুন। উৎসাহ ও প্রশংসা পেলে শিশুর পড়াশোনায় আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে ওঠে। আপনি কিছু কিছু সহজ অংক বা ইংরেজী লিখতে দিন। সে যদি এসব সমাধান করতে পারে তাহলে আপনি আরও উৎসাহ দিন।

বাচ্চাদের পড়ার সময় নির্ধারণ করুন

আপনার বাচ্চা যখন পড়াশোনা শুরু করতে চাইবে তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে নিবেন তার কোন সময়ে বেশী বই পড়তে ভালো লাগে। সে যদি একটি নির্দিষ্ট সময় বলে তখন তাকে সেই সময় পড়ানো উচিত। তবে প্রত্যেক বাচ্চাকে সকালে এবং সন্ধ্যায় পড়তে বসার অভ্যাস সকল বাবা-মায়ের দায়িত্ব।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের জন্য কোন সাবান ভালো

বাচ্চাদের খেলার সময় দিন

বাচ্চাদের খেলার সময় দিন। পড়াশোনা পাশাপাশি বাচ্চাকে খেলার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া সব বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য। খোলা আকাশের নিচে বাচ্চাদের খেলাধুলা করলে বাচ্চাদের মনসংযোগ বাড়ে। যদিও প্রত্যেক স্কুলে খেলাধুলার সময় নির্ধারণ করা থাকে তা ও অতিরিক্ত আপনার সন্তানকে খেলাধুলা করতে দিন। 

আপনি পড়ার সময় যেমন আপনার সন্তানকে মনে করিয়ে দেন তেমনি আপনার সন্তানকে খেলাধুলার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। খেলাধুলা করলে শিশুর বিকাশ ঘটে এবং মনসংযোগ বাড়ে। 

বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করুন

বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করুন তাহলে সে অনেকদিন ধরে আজকের পড়া মনে রাখতে পারবে। মনে করুন আপনার সন্তানকে বাংলা বিষয়ের একটি অধ্যায় পাঠ করাবেন। বইয়ে সাধারণত সাধারণ ভাষায় লেখা থাকে এই বিষয়টি পড়ে আপনার সন্তান নাও বুঝতে পারে। এই পাঠটি যদি আপনি গল্পের মাধ্যমে পড়ান তাহলে সে অনেক দিন ধরে মনে রাখতে পারবে।

বাচ্চাদের নিয়মিত স্কুলে যেতে দিন

বাচ্চাদের নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস করে দিন। প্রতিদিন স্কুলে গেলে বাচ্চা নতুন নতুন কিছু শিখতে জানতে পারবে। কোন সমস্যা হলে সে তার স্যার/ম্যাডামদের সাথে আলোচনা করতে পারবে। 

এছাড়াও প্রতিদিন স্কুলে গেলে তার বন্ধুদের সাথে একসাথে পড়াশোনা করতে পারবে এবং খেলাধুলা করতে পারবে।বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় হচ্ছে বাচ্চাদের নিয়মিত স্কুলে যেতে দেওয়া।

বাচ্চাদের নিয়ে মাঝে মাঝে ঘুরতে যান

বাচ্চাদের শুধু বইয়ের মধ্যো আবদ্ধ না রেখে মাঝে মাঝে বাইরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। যেখানে সাথে নতুন কিছু শিখতে ও জানতে পারে। অথবা স্কুলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে যাওয়ার সময় আপনার বাচ্চাকেও যাওয়ার সুযোগ করে দিন। এতে করে আপনার বাচ্চা ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তার পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর হবে। 

বাচ্চাদের কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিন

পড়াশোনার জন্য যখন আপনার বাচ্চা অনেক ব্যস্ত তখন আপনার উচিত অন্য কাজ না করতে দেওয়া। এসব বিষয়গুলোতে আপনার বাচ্চাকে ছাড় দিন। এছাড়াও আপনার বাচ্চা যদি দুষ্টুমি করে সেক্ষেত্রেও আপনাকে ছাড় দিতে হবে। 

কারণ এ সময় তাদের দুষ্টুমি আনন্দ ফুর্তি করার বয়স। হ্যাঁ যদি সে অতিমাত্রায় দুষ্টুমি করে তখন তাকে শাসন করতে পারেন। তবে বাচ্চাদের পড়ার সময় সে নিজের মত করে পড়ে সেদিকে আপনার ছাড় দিতে হবে। 

বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না

আপনি বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিবেন না। এমন না যে মোবাইল ফোনের সব কিছু খারাপ। কিন্তু বাচ্চারা তো আর বোঝে না যে কোন জিনিস ভালো আর কোন জিনিস খারাপ। 

আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে ছোট থেকেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেন তাহলে সেই বাচ্চাকাল থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, আপনি আপনার বাচ্চাকে মোবাইল ফোন দিতে পারেন তবে সেটি হবে নতুন কিছু শেখার জন্য। 

বাচ্চাদের বন্ধুদের সাথে কথা বলতে দিন

আপনার বাচ্চাকে আপনার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলুন এতে করা তার কথা বলার দক্ষতা বাড়বে। কথা বলার জন্য সে সঠিক উচ্চারণ শিখবে এবং শুদ্ধ ভাষায় সকলের সাথে কথা বলতে পারবে। এছাড়াও আপনি আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন। 

বাচ্চাদের পড়াশোনা মনোযোগ করানো জন্য আপনার বাচ্চাকে এই জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়াটি শিখিয়ে দিতে পারেন। 

বাংলা উচ্চারণ- রাব্বি জিদনি ইলমা।

বাংলা অর্থ- হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।

শেষ কথাঃ বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায়

পরিশেষে আমি কিছু কথা বলতে চাই, আজকের পোস্টে আমি চেষ্টা করেছি আপনার বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করার উপায় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার। আপনার বাচ্চাকে পড়াশোনা নিয়ে টেনশন করবেন না। তাকে বোঝাবেন, পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং আজকের আলোচনার কৌশল গুলো আপনার বাচ্চার জীবনে সুন্দর একটা ভূমিকা রাখবে। ধন্যবাদ!

পোষ্ট ক্যাটাগরি: