দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল - দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল - তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল — বিয়ে করা হচ্ছে একটি সুন্নতি আমল। সামর্থ্য এবং সময় হলে দ্রুত বিয়ে করা ইবাদত। তবে হ্যাঁ সকলের ক্ষেত্রে বিয়ের হুকুম একরকম নয়। বিয়ে করা প্রত্যেক যুবক-যুবতীদের জন্য ক্ষেত্র ভেদে ফরজ আবার কখনো তা সুন্নত। আমাদের নবিজী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামর্থ্য এবং সময় হওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত বিয়ে করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

আরো পড়ুনঃ face reality বাস্তবতা নিয়ে কিছু উক্তি

সূচীপত্রঃ দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

তবে হ্যাঁ কার কখন বিয়ে হবে সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়না। কল্যাণময় বিয়ের জন্য দ্বীনদার মেয়ের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের নবিজী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনদার মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। 

অনেক যুবক-যুবতীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের বিয়ের বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালো বিয়ের প্রস্তাব পায় এবং তাদের দ্রুত বিয়ে হয়ে যায়। আবার অনেকেই আছেন যারা বিয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব পান কিন্তু বিয়ে হয়না। এছাড়াও আরো অনেকেই আছেন যারা বিয়ের প্রস্তাব না পেয়ে দিন দিন হতাশাই ভুগেন।

যাদের বিয়ে করার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল এবং দ্রুত বিয়ে ও উত্তম জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল ও দোয়া রয়েছে। যে আমল গুলো সঠিকভাবে করলে দ্রুত বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনারা যারা বিয়ে করার চেষ্টা করছেন কিন্তু উত্তম এবং কল্যাণময় বিয়ে করতে পারছেন না, তারা দ্রুত বিয়ে করার জন্য নিয়মিত কয়েকটি আমল করতে পারেন। 

প্রিয় পাঠক উপযুক্ত ছেলে মেয়েদের দ্রুত কল্যাণময় বিয়ের জন্য নিম্নোক্ত দ্রুত বিয়ে করার আমল গুলো করতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নিই দ্রুত বিয়ে করার আমল গুলো কি কি? আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নারীর ৪টি দিক দেখে বিয়ে করা হয়। যেমনঃ বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য্য, অর্থ-সম্পদ এবং দ্বীনদারি। অত;এব তুমি দ্বীনদার নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল কেন করবেন

দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। যদি মহান আল্লাহ পাঁক ইচ্ছা না করেন, তাহলে সেটা কখনোই সম্ভব বা ঘটবে না। আবার আল্লাহ তায়ালা যদি ইচ্ছা করেন তবে কেউই সেটা ঠেকাতে পারবে না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেনঃ ৩ ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। যেমনঃ (১) আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদ কারী ব্যক্তি (২) চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় (৩) ঐ ব্যক্তি যে বিবাহ করার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র রাখতে চায় এবং পবিত্র থাকতে চায়। 

তাই আমাদের সামর্থ এবং সময় হলে দ্রুত বিবাহ করা উচিত। যাতে আমরা মহান আল্লাহ পাকের সাহায্য দ্রুত পাই। আপনি যদি দ্রুত বিয়ে করতে চান তাহলে নিম্নে আলোচনা করা দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল গুলো নিয়মিত করুন। মহান আল্লাহ পাঁক আপনার জন্য ১জন উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিবেন। ইনশাআল্লাহ❤

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল ইস্তেগফার করা

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল হচ্ছে সবসময়ের জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। অর্থাৎ যতবেশি সম্ভব আস্তাগফিরুল্লাহপড়া। অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর এ ইস্তেগফারটি ৩ বার প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন।

আমাদের যথাসম্ভব সবসময় বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। উঠতে বসতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা। যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, সেই ব্যক্তির দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালা কখনো ফেরত দেননা। 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার সকল সংকট থেকে উত্তরণের পথ বাহির করে দিবেন, সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই আমরা সবসময়ের জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার করবো। এছাড়াও আমরা নিম্নোক্ত ইস্তেগফার গুলো করতে পারিঃ 

১। ইস্তেগফার করার জন্য পুরো দোয়াটি হলোঃ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থঃ 'আমি ঐ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।' পড়ার নিয়মঃ দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।' (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

২। ইস্তেগফারঃ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণঃ ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি‘। অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি। পড়ার নিয়মঃ এ ইস্তেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন।' (বুখারি)

৩। সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'

অর্থঃ 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।'

পড়ার নিয়মঃ সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইসতেগফার করা। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইসতেগফার পড়তে ভুল না করা। কেননা হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি এ ইসতেগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে যাবে।' (বুখারি)

৪। ইস্তেগফারঃ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

উচ্চারণঃ 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।' অর্থঃ 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।' পড়ার নিয়মঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন।' (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল ফরজ নামাজের পর দোয়া পড়া

প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর কোরআন মাজিদের একটি আয়াত পড়া। এটি কিন্ত একটি দোয়া। সম্ভব হলে দোয়াটি গভীর আবেগ নিয়ে সবসময়ের জন্য পড়তে থাকা। বিবাহ করার জন্য দ্বীনদার, সৎ এবং যোগ্য পাত্র-পাত্রীর জন্যে দোয়া করতে হবে। যাদের সময় মতো বিয়ে হচ্ছেনা তারা প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দোয়া মাছূরা পড়ার পরে সূরা আল-ফুরকানের এই আয়াতটি পাঠ করে সালাম ফিরাবেন। দোয়াটি হচ্ছেঃ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا

উচ্চারণঃ ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইউনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাকিনা ইমামা।’ বাংলা অর্থঃ ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭৪)

বিয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ভাবে এই আমলটি করলে আল্লাহভক্ত, দ্বীনদার, পরহেজগার এবং আদর্শ পাত্র-পাত্রী পাওয়া যাবে ইংশাআল্লাহ। এছাড়াও বিবাহিত দম্পতিরাও এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। দোয়াটি পাঠ করার কারণে আপনার দাম্পত্যজীবন হবে আরো বেশি সুখের হবে।

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল সূরা ইয়াসিন পাঠ করা

সূরা ইয়াসিন কুরআনের অন্তর হিসেবেও পরিচিত। কেননা, তার রয়েছে সীমাহীন মর্যাদা ও বৈশিষ্ট। যাদের অনেক বেশি বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্ত সমস্যা হচ্ছে বিয়ে হয়না তারা এই সূরা ইয়াসিন পাঠ করতে পারেন তাহলে দ্রুত ফলাফল পাবেন। বিয়ে হওয়ার আমল সূরা ইয়াসিন শীঘ্রই বিবাহ বিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত সব সমস্যার সমাধান করে দেয়। 

সূরা ইয়াসিনে ৭টি মুবিন আছে। আমল করার নিয়ম হলো প্রতিদিন সকালে সূর্য যখন পূর্ব আকাশে লাল হয়ে উঠে তখন পশ্চিমমুখী হয়ে সূরা ইয়াসিন পাঠ করা। আর যখনই ‘মুবিন’ শব্দ তেলাওয়াত করা হবে তখনই শাহাদাত আঙুল দিয়ে পেছনের দিকে অর্থাৎ সূর্যের দিকে ইশারা করা।

যথা সময় ও স্থানে দোয়া করা

দোয়া কবুলের সময় এবং স্থানগুলোতে বেশি বেশি দোয়া পাঠ করুন। যেসব সময়ে দোয়া কবুল হয় এবং যেসকল স্থানগুলোতে দোয়া কবুল হয়, এর একটি সময় এবং স্থানও যেন দোয়া থেকে বাদ না যায়। আর সেসকল আপনার যা যা প্রয়োজন সবকিছু মহান আল্লাহ পাঁকের কাছে চান।

সূরা তাওবার ১২৯ নাম্বার আয়াত পাঠ করুন

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল হিসেবে সূরা তাওবার ১২৯ নাম্বার আয়াতটি তেলওয়াত করলে অনেক কাজে দেয়। আপনাদের যাদের বিয়ে হতে সময় লাগছে এবং অনেক দেরি হচ্ছে তারা নিয়মিত সালাত আদায় করার পরপর নিয়মিত এই আমলটি করতে পারেন। সূরা তাওবার ১২৯ নাম্বার আয়াতটি পাঠ করার সঠিক নিয়ম হলো প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার পরে ১৯ বার বিসমিল্লাহ, ১১০০ বার সুরা তাওবার ১২৯ নম্বর আয়াত, ১০০ বার দুরূদ শরীফ এবং শেষে আবার ১৯ বার বিসমিল্লাহ পড়া। 

যদি ছেলে মেয়ে না পড়তে পারে তবে তাদের পিতা-মাতা এই আমলটি করতে পারেন। সূরা তাওবার ১২৯ নাম্বার আয়াত হচ্ছেঃ ’ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম

বিয়ে হওয়ার আমল সূরা আদ-দোহা ও সুরা কাসাসের আয়াত পড়ুন

নিয়মিত সুরা কাসাসের ২৪ নং আয়াত এবং সুরা দোহা পড়ুন। কেননা মুসা (আ.) যখন একাকিত্ববোধ করেছেন তখন এই দোয়া পড়েছেন। এবং মহান আল্লাহ তায়ালা তার একাকিত্ব দূর করে দিয়েছেন। অনেক আলেমগণ বিয়ে হওয়ার আমল বা দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল হিসেবে সূরা আদ-দোহা এবং সুরা কাসাসের কয়েকটি আয়াত পাঠ করতে বলেন। 

অনেক ইসলামিক স্কলার বলেছেন, যদি কোনো ছেলে প্রতিদিন ১০০ বার সুরা কাসাসের ২৪ নং আয়াত পাঠ করেন তাহলে খুব শীঘ্রই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য ভালো পাত্রীর ব্যবস্থা করে দেবেন। অথবা সে তার পছন্দের পাত্রী পেয়ে যাবে। আর যদি কোনো মেয়ে ফজরের পরে সূরা আদ-দোহা ১১ বার পড়ে তাহলে তারজন্য আল্লাহ তায়ালা অল্প দিনের মধ্যে পছন্দের এবং সৎ পাত্রের ব্যবস্থা করে দিবেন। আয়াতটি হলোঃ ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির’।

আরো পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

আল্লাহ তায়ালা বেশি বেশি স্মরণ করুন

১১ বার দুরূদ শরীফ এরপরে ৩১৩ বার আল্লাহ তায়ালার নাম এরপরে আবার ১১ বার দুরূদ শরীফ পাঠ করুন। এভাবে ৪১ দিন প্রত্যেক নামাজের পরে যদি কেউ পাঠ করে তাহলে অবশ্যই সে তার বিবাহের জন্য একটি সুন্দর প্রস্তাব পাবে।

বিয়ে হওয়ার আমল সূরা মরিয়ম পড়া

দ্রুত বিয়ে হওয়ার আরেকটি দোয়া হচ্ছে প্রতিদিন যেকোনো ওয়াক্তের সালাত আদায় করার পরে সূরা মরিয়ম পড়া। যারা বিবাহ করবেন অর্থাৎ যেসকল মেয়ের বা ছেলের বিয়ে করবেন তারা এই আমলটি করতে পারেন। যদি ছেলে-মেয়েরা এই দোয়া না পড়েন কিংবা সূরা মরিয়ম পড়তে না পারেন তবে তাদের বাবা-মা কিংবা অভিভাবকরাও পড়তে পারবে।

সূরা মুজাম্মিল পাঠ করা

যদি কোনো মেয়ে বড় হয়ে যায় অর্থাৎ কোনো মেয়ের যদি দিন দিন বয়স বাড়তে থাকে এবং কোনো বিয়ের প্রস্তাব না পায় কিংবা বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজে না পায় তাহলে একজন মা-বাবা শুক্রবার দিনে জুম্মার নামাজের পর ২ রাকাত নামাজ আদায়ের পরে সূরা মুজাম্মিল ২১ বার পড়তে হবে। অথবা মা-বাবার মধ্যে যেকোনো ১ জন জুম্মার নামাজের পর ২ রাকাত নামাজ আদায় করবেন এবং ২১ বার এই দোয়াটি পাঠ করবেন। আশা করা যায় বিবাহ সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ইনশা- আল্লাহ

বিয়ে হওয়ার দোয়া ইয়া ফাত্তাহু পাঠ করুন

বিবাহযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যেসকল যুবক এবং যুবতীদের বিবাহ হচ্ছে না কিংবা বিয়ের জন্য কোনো প্রস্তাব পাচ্ছেন না, তাদের মাঝে ছেলেরা ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরে এবং বিবাহযোগ্য মেয়েরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার পূর্বে ৪০ বার করে ৪০ দিন পর্যন্ত ’ইয়া ফাত্তাহু’ পাঠ করবেন।

ইয়া ফাত্তাহু মহান আল্লাহ তায়ালার একটি পবিত্র নাম। এই ইয়া ফাত্তাহু পবিত্র নামটি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরে ২ হাত বুকের উপর রেখে ৭১ বার পাঠ করলে অভাব দূর হয়, মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর তায়ালার রহমতে সকল কাজ সহজ হয়ে যায়। এছাড়াও অনেক আলেমগণ বলেছেন, ৪০ দিন সূরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করলে দ্রত বিয়ে হয়।

নিয়মিত তাসবিহে ফাতেমি পড়ুন

দিনের যেকোনো সময় ২ রাকাত নামাজ পড়ুন এরপরে ১১ বার দুরূদ শরীফ পড়ুন এরপরে তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করুন। তাসবিহে ফাতেমিঃ ৩৪ বার আল্লাহ আকবার, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ পড়ুন। আশা করা যায় বিবাহ সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

বিশেষ কিছু বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া

আপনার পছন্দের মানুষটির সঙ্গে আপনার বিয়ে হওয়ার জন্য বেশি বেশি করে সালাতুল হাজত পড়ে মহান আল্লাহ পাঁকের কাছে দোয়া করুন। সালাতুল হাজত দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। মনে রাখবেন যদি আপনি অন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের জন্য দোয়া করেন তাহলে আপনার জন্য স্বয়ং ফেরেশতারা‌ও দোয়া করবেন। এজন্য যাদের বিয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে হচ্ছেনা এমন মুসলমান ভাই ও বোনদের জন্য দোয়া করুন। তাদের জন্য দোয়া করলে মহান আল্লাহ পাঁক আপনাকে সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন পবিত্র এবং দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রী পেতে হলে নিজেকেও পবিত্র রাখাটা অনেক বেশি জরুরী।

ধৈর্য সহকারে নিয়মিত সূরা নূর, সূরা মুমিনুন, সুরা ওয়াকিয়াহ্, সূরা লোকমান, সূরা মুলক, সুরা শুআরা, এবং সুরা আল বাকারাহ্ সাধ্যনুযায়ী পড়তে থাকুন। তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য ৫ ওয়াক্ত সালাত পড়ুন, সকল ধরনের মিথ্যা বলা এবং হারাম খাদ্য খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন, বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ুন, বেশি বেশি ইবাদর করুন এবং গোপনে দান-সাদকাহ করুন। কেন সাদকাহ দ্বারা বিপদা আপদ দূর হয়।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে বুঝব দোয়া কবুল হয়েছে

হালাল পন্থায় পাত্র/পাত্রী খোঁজা

বিয়ে করার আমল ও দোয়ার পাশাপাশি হালাল পন্থায় কাঙ্ক্ষিত পাত্র/পাত্রী খোঁজ করাটাও জরুরি। বিয়ে সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধানের ভালো উপায় হচ্ছে, বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতদের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর অনুসন্ধান করতে হবে। পাশাপাশি অনলাইন ঘটক বা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

কিভাবে বিয়ে হওয়ার আমল করবেন

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ’হে মুমিনগন! তোমরা নামাজ ও ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সুরা বাকারাঃ ১৫৩)। তাই আমাদের সকলের উচিত নেককার স্ত্রী/নেককার স্বামী পাওয়ার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। তবে পছন্দের মানুষটিকে স্বামী কিংবা স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে কোনো প্রকার বাধা নেই। বিয়ে হওয়ার আমল করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল করার অত্যন্ত জরুরী। 

বিয়ে হওয়ার দোয়া করার সময় একান্ত বিনয়, নম্রতা এবং কান্নাকাটি সহকারে দোয়া করবেন। যেকোনো বিষয়ে দোয়া করার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ১। ভোররাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পরে ২। আযান এবং একামতের মধ্যবর্তী সময় ৩। জুম্মার দিন আসর থেকে মাগরিব নামাজের মধ্যবর্তী সময় ৪। শবে কদরের রাতে ৫। সেজদা অবস্থায় ৬। রোযা রাখা অবস্থায় এবং সফররত অবস্থায়।

বিয়ে হওয়ার জন্য অবশ্যই নিজেকে ধৈর্য ধরে বিয়ে হওয়ার আমল গুলো করতে হবে। তাছাড়া বিয়ে হওয়ার দোয়া করার সময়ে বিবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়েও দোয়া করতে হবে। আপনার ভালোবাসার মানুষটি যেন আপনাকে ভালোবাসে, আপনাকে ছাড়া অন্য কারো দিকে যেন না তাকায়, বিয়ের পরে আপনাদের দাম্পত্য জীবনে যাতে মহান আল্লাহ পাঁক রহমত এবং বরকত দান করেন এজন্য দোয়া করবেন।

শেষ কথা - দ্রুত বিয়ে হওয়ার আমল

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর উপযুক্ত ছেলে-মেয়েদের দ্রুত বিয়ের জন্য উল্লেখিত আমল গুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহ তায়ালার প্রতি দৃঢ় আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন। শীঘ্রই বিয়ের ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল সমস্যা দূর করে দিন আর যাদের বিয়েতে দেরি হচ্ছে, তিনি সবাইকে দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী মিলিয় দিন। (আমীন)

পোষ্ট ক্যাটাগরি: