ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়

ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় — সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলো থেকে যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা শীর্ষে রয়েছে তা বলা বাহুল্য। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিহীন লোক পাওয়া দুষ্কর। 

অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের লোকেরা ফেসবুকে বেশি একটিভ। নিজেদের লাইফ মেমোরি, সুখ, দুঃখ, ভ্রমণ, রান্নাবান্না, অনুষ্ঠান, সবকিছুই ফেসবুকে শেয়ারের মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বিশ্ব বাসী।

ফেসবুক এখন শুধু আবেগ শেয়ারেই সীমাবদ্ধ নয়, আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটি। বিভিন্ন লোক বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে নিজে আয়ের উৎস বের করে নিচ্ছে এই অ্যাপ দিয়ে। 

শুরুটা স্বল্প দিয়ে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে অনেক বড় পরিসরে। তাই নিত্য নতুন বিজনেস প্ল্যান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তারা আয় করার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদল করতে। 

অনেকের জীবন ছবি বদলে গিয়েছে ফেসবুকে আয় করার সুযোগের কারণে। কেউ আর্টিস্ট হয়ে উঠেছে, কেউ হয়েছে ইনফ্লুয়েন্সার, কেউ ব্লগার, কেউ রাইটার, কেউবা টিচার। নিজের মেধা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এই অ্যাপটিকে সবাই যে যার মত প্রয়োজনে ব্যবহার করে আয় করে সফল হচ্ছে। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়, যা অন্যদেরও সুযোগ করে দিয়েছে আয় করার এবং হয়তোবা আপনারও আয় করার পন্থা হয়ে দাঁড়াবে।

১। ফেসবুক মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রোডাক্ট বিক্রি করে টাকা ইনকাম

ফেসবুক মার্কেটপ্লেস হচ্ছে এমন এক মাধ্যম যেখানে সব ধরনের পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যায়। নিজের তৈরিকৃত পণ্য লোকাল মার্কেটে পাওয়া যায় এমন পণ্য অথবা দেশের বাইরে থেকে এনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এই মার্কেটপ্লেসে ক্রয় বিক্রয় করা সম্ভব। এতে ঘরে বসে পণ্য কেনা যেমন সহজ হয় তেমনই বিক্রি করা ও সহজ। 

খেলনা, এক্সেসরিজ, জুয়েলারি, ফার্নিচার, ফুড আইটেম, কিচেন আইটেম, ড্রেস সহ আরো অনেক কিছু মার্কেটপ্লেসে কেনাবেচা করা হয়। ঘরে তৈরি হোম মেড ফুড, ফ্রজেন রুটি ইত্যাদিও ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করে আয় করা হয়ে থাকে। এখনকার সময়ে মার্কেটপ্লেস খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যা আয় করার সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে।

আরো পড়ুনঃ ফেসবুক আইডি সিকিউরিটি টিপস

২। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে টাকা ইনকাম

ফেসবুকে অহরহ অনেক ধরনের পেজ স্ক্রলিং করার সময় চোখে পড়ে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে লোকাল অনেক পণ্যের দেখা মেলে। শুধু পণ্য নয় এই পেজগুলো খোলা হয় বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিক্স দেয়ার জন্য, ধর্মীয় পোস্ট দেয়ার জন্য, মজার ভিডিও দেওয়ার জন্য, রেসিপি বা অনেক ধরনের কোর্স করানোর জন্য। এইসব পেজের ফলোয়ার ১০ হাজারের উপরে হলে ফেসবুক মনিটাইজেশনের মাধ্যমে ইউটিউবের মত আয় করা সম্ভব হয়। তাছাড়া বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব হয়ে থাকে।

৩। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে টাকা ইনকাম

বিভিন্ন কাজের জন্য সবাইকে একত্রিত করে গ্রুপ খোলার ব্যবস্থা রয়েছে ফেসবুক অ্যাপটিতে। এই গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন বাই এন্ড সেল গ্রুপ, এখানে বিভিন্ন ধরনের সেলাররা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য পোস্ট করে থাকে যার যা পছন্দ মত এখান থেকে কিনে নিতে পারে। অনেকে নিজের গ্রুপে অন্যের পণ্য প্রমোট করার জন্য সেলার কোড বিক্রি করে থাকে। এছাড়া গ্রুপে সর্বনিম্ন ১০ হাজার মেম্বার অ্যাক্টিভ থাকতে হবে, ফেসবুক মনিটাইজেশনের মাধ্যমে গ্রুপ থেকে আয় করতে যায়।

৪। প্রমোট করার মাধ্যমে

ফেসবুক জুড়ে অনেক ডিউটি ব্লগার বা ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে যারা অর্থের বিনিময়ে আরেক জনের পণ্য প্রমোট করে থাকে। যেহেতু তাদের পেজ বা গ্রুপে অনেক ফলোয়ার বা মেম্বাররা একটিভ থাকে তাই তারা অর্থের বিনিময়ে অন্য উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রমোট করে তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আয় করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ফেসবুক ডাউনলোড করব কিভাবে

৫। ভিডিও আপলোড এর মাধ্যমে

ফেসবুকের ভিডিও গুলো ও ইউটিউবের মত অধিকহারে দেখা হয়। সর্বনিম্ন ৫টি একটিভ ফেসবুক ভিডিও থাকতে হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে ৬০০,০০০ মিনিট ওয়াচ টাইম হতে হবে, তাহলেই ফেসবুকে আপলোডকৃত ভিডিও এর মাধ্যমে আয় করা যাবে।

৬। মডারেটর বা সেলার নিয়োগের মাধ্যমে

যাদের ফেসবুক গ্রুপ বা পেইজে ফলোয়ার অধিক সংখ্যক থাকে তারা একা পেজ বা গ্রুপটিকে সামলাতে পারেনা অনেক মেসেজ ও কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার জন্য তখন তারা বিভিন্ন ধরনের মডারেটর নিয়োগ দিয়ে থাকেন এবং এর বিপরীতে মডারেটরদের পারিশ্রমিক দেয়া হয়, নিজের পণ্য অন্য সেলারদের মাধ্যমে বিক্রি করানোর জন্য অনেকে সেলার নিয়োগ দিয়ে থাকেন, এতে পণ্য বিক্রি করিয়ে সেলারদেরও কিছু লভ্যাংশ দেয়া হয়। এভাবেই মডারেটর ও সেলাররা ফেসবুক দিয়ে আয় করে থাকেন।

৭। লেখালেখি করে

ফেসবুকে নানা ধরনের গল্প, উপন্যাস, সংবাদ অথবা আর্টিকেল রাইটিং এর উপর অনেক পেজ বা গ্রুপ রয়েছে। যারা নিজেরা গল্প বা উপন্যাস লিখেন তারা তাদের পেইজ বা গ্রুপে একটিভ সদস্যদের ভিত্তিতে আয় করে থাকেন। অনেকে আবার বিভিন্ন ধরনের পেইজের জন্য বিভিন্ন পোস্ট লিখে থাকেন এবং সেই হিসেবে পারিশ্রমিক পাওয়ার মাধ্যমে আয় করে থাকেন।

৮। কোর্স বা ক্লাস করানোর মাধ্যমে

বিভিন্ন ধরনের ফ্রিল্যান্সিং কোর্স, মেকআপ আর্টিস্ট এর ভিডিও ক্লাস, সেলাই প্রশিক্ষণ ক্লাস, কেক বা পিঠা তৈরির ক্লাস, ফ্রুট কার্ভিং ক্লাস, থাই চাইনীজ ও কন্টিনেন্টাল রান্নার ক্লাস ইত্যাদি এখন ফেসবুকের মাধ্যমে করানো হয়। ক্লাস বা কোর্স এর জন্য কিছু ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়, এই ফি নেয়ার মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে।

আজকে আমরা অনেক ধরনের ফেসবুকের মাধ্যমে আয় করার উপায় সম্পর্কে জানলাম। ব্যক্তিজীবনে এগুলো ব্যবহার করে আমরাও ফেসবুকের মাধ্যমে আয় করতে সফল হবো আশা করা যায়। তবে এর জন্য মেধা শ্রম ও যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্য শক্তির প্রয়োজন। সবকিছুই একবারে হয়না প্রতিটি জিনিসের জন্য সফল কাম হতে হলে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া বাঞ্ছনীয়। এতেই সফলতা ধরা দেয়।

আরো পড়ুনঃ

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)