অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল | অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল - অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম — বাৎসরিক আয়ের বিবরণী সংক্ষিপ্তভাবে আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করাই হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। এখন আর আয়কর রিটার্ন দাখিল দেয়ার জন্য ঝামেলা পোহাতে হয়না, ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

রিটার্ন দাখিল করা হলেই যে আয়কর বাধ্যতামূলক তা কিন্ত নয়। কর যোগ্য আয় না হলে আয়কর দিতে হবেনা কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। রিটার্ন দাখিল সময় অনুযায়ী না করলে জরিমানার বিধান আছে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ীক কাজ থেকে আয়, কৃষিকাজ করে যে আয় হয়, জমিজমা বাড়ি বা বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি হলে যে অর্থ আয় হয়, চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরির বেতন, দোকান বা বাড়ি ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয় রেমিটেন্স থেকে যে আয় হয় ইত্যাদি এর উপর আয়কর দিতে হয়।

আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে

যিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল জমার আবেদন করবেন তাকে অবশ্যই তার সম্পত্তির সকল হিসাব তুলে ধরতে হবে নয়তোবা আইনি জটিলতায় জড়িয়ে ভুক্তভোগী হতে হবে ১। ব্যক্তিগত আয় ২। অর্থ সম্পত্তির হিসাব ৩। ব্যাংকের টাকার পরিমান ৪। শেয়ার যদি থাকে ৫। সঞ্চয় পত্র ৬। স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সুস্পষ্টভাবে জমা দিতে হবে।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা ভুলবশত কোনো কিছু বাদ পড়ে যায় এবং তা ধরা পড়ে তাহলে জেল-জরিমানা হবে। তদন্তের মাধ্যমে লুকায়িত অর্থ-সম্পদ ধরা পড়লে তার সদোত্তর না দেয়া ছাড়া নিস্তার পাওয়া মুশকিল।

আয়ের পাশাপাশি অর্থ কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা উল্লেখ করা জরুরি, আয় ও ব্যয়ের হিসাবে যদি সামঞ্জস্য না থাকে তাহলে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সাবধানে সতর্কতার সহিত রিটার্ন ফরম পূরণ করতে হবে।

অবশ্যই বুঝসম্মত আয়কর আইনজীবীর সাহায্য নিতে হবে, আপনি যার মাধ্যমে ফরম পূরণ করছেন তিনি সঠিক ভাবে সব তথ্য তুলে ধরেছে কিনা তা নির্ভুলভাবে আপনাকে তদারকি করতে হবে। কোন কারণে কিছু বাদ পড়লে বা বেশি হলে সে ভুলের মাশুল আপনাকেই গুনতে হবে, ফরম পূরণের ক্ষেত্রে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। আপনার দেয়া সকল তথ্যের উপরই ভিত্তি করে সকল কার্যক্রম হবে।

আরো পড়ুনঃ জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি ডাউনলোড

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে করণীয়

১। আয়কর রিটার্ন এর জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য জমা দিতে হবে তার কপি হাতের সামনে রাখতে হবে, যেন সময় সুযোগ মত সব ব্যবহার করা যায় যদিও বা কপি জমা দিতে হবে না ২। ভালো ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ এর সাহায্যে ফরম পূরণ করার চেষ্টা করবেন কারণ মোবাইল ফোনে সব ফিচার দেখা যায় না সেক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ৩। বর্তমানে IME রেজিস্ট্রেশন সম্মিলিত ফোন ও বায়োলজিক্যাল ভেরিফাইড সিম কার্ড ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়, তাই সেই নিয়ম অনুযায়ী ফোন থাকতে হবে। OTP কোডের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

অনলাইন ই-রিটার্ন এর ফরম পূরণ প্রক্রিয়া

TIN (TAXPAYERS IDENTIFICATION NUMBER) ধারী ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন দাখিল জমা দিতে হবে।

প্রথম পর্যায়: প্রথমেই আপনাকে etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য এখানে আপনার TIN নাম্বারটি দিতে হবে, এর নিচে বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড মোবাইল নাম্বারটিও দিতে হবে। তারপর নিচের বক্সে captcha লিখা বক্সের সাথে কিছু অক্ষর বা নাম্বার দেয়া থাকবে তা পাশের খালি বক্সে হুবহু লিখতে হবে। তারপর নিচের verify অপশনে গিয়ে ক্লিক করতে হবে। 

রেজিস্ট্রেশন করার সময় আপনি যে নাম্বারটি দিয়েছেন সেই নাম্বারে ৬ সংখ্যার একটি OTP কোড আসবে। পরবর্তী পেইজে সেই OTP কোড লিখার খালি জায়গায় ৬ ডিজিটের সেই কোডটি দিতে হবে। এর পরের ঘরে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে পাসওয়ার্ড সেট করার সময় খেয়াল রাখবেন ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর সাথে ছোট হাতের অক্ষর এবং সেই সাথে কিছু সংখ্যা ও চিহ্ন দিয়ে পাসওয়ার্ডটি সেট করতে হবে। নমুনা স্বরূপ এভাবেও সাজাতে পারেন (Hanif3112@)। এরপরের বক্সে হুবহু সেই পাসওয়ার্ডটি টাইপ করতে হবে এবং এরপর সাবমিট করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে এরপর আপনি রিটার্ন দাখিল জমা দিতে পারবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

এখন etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইট দিতে গিয়ে eReturn ক্লিক করবেন। যে পেজটি আসবে সেখানে আপনার TIN পাসওয়ার্ড ও captcha বক্স পূরণ করে sign in করে নিন। Sign in করার পর স্ক্রিনে লক্ষ্য করুন return submission লিখা আছে স্ক্রিনের বাম দিকে, সেখানে ক্লিক করুন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

আরো পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড সংশোধন করার নিয়ম | স্মার্ট কার্ডের ভুল সংশোধন

দ্বিতীয় পর্যায়: এখন ফরম পূরণে প্রথমে আপনার আয়কর নির্ধারণের জন্য আয় এর বছর ও উৎস সম্পর্কে সকল তথ্য দিতে হবে। এখানে আয়ের বছর, কত তারিখ থেকে কত তারিখ তা দিয়ে দিবেন। আপনার করযোগ্য আয় থাকলে yes এ ক্লিক করবেন। পুরুষের বছরে তিন লক্ষ টাকা ও মহিলাদের তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হয় না, আপনি যদি সফটওয়্যার ও আইটি কাজের সাথে বা ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করে থাকেন তাহলে আয়কর দিতে হবে না। এমন কিছু আয় এর উৎস থাকলে এরপরে জায়গায় yes দিবেন। এরপরের বক্সে আপনি বাংলাদেশে বসবাসরত অবস্থায় থাকলে সেখানে resident দিবেন।

এরপরের বক্সে আপনার আয়ের এর উৎস কি তা চার্ট লিস্ট দেখে সিলেক্ট করবেন। আপনার যদি রেমিটেন্স থেকে আয় আসে তাহলে তা এর পরের অপশনে গিয়ে সিলেক্ট করবেন এবং রেমিটেন্স এর মাধ্যমে আপনি কিভাবে আয় করেন তা অপশনের লিস্ট থেকে সিলেক্ট করবেন। সবগুলো অপশন ক্লিক করা শেষ হলে save করে continue তে ক্লিক করে পরের পর্যায় আসবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

তৃতীয় পর্যায়: এখানে আপনি আপনার আয়ের সম্পর্কিত তথ্য দিবেন যেমন: আপনি সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নাকি ইউনিয়ন এলাকার। এরপরের ধাপে আপনি যে বক্সগুলোতে টিক দিবেন তা হলঃ ১। আপনি যদি যুদ্ধকালীন হতাহতের শিকার হন ২। বিকলাঙ্ক বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন ৩। কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বা সন্তানের অভিভাবক বা বাবা-মা হলে, সেখানে টিক দিবেন ৪। বিশেষ বিশেষ কিছু বিনিয়োগের উপর কর ছাড় রয়েছে তা হচ্ছে Tax rebate, আপনি যদি সেইসব বিনিয়োগ'- এর সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে Tax rebate এ টিক দিবেন।

IT10B Requirements মধ্যে যে তথ্য দিবেন তা হচ্ছে যে আপনার সম্পদের পরিমাণ 40 লক্ষ টাকার সমান বা তার বেশি কিনা, আপনার নিজের মোটর গাড়ি আছে কিনা, সিটি কর্পোরেশন এর আওতায় আপনার বাড়ি আছে কিনা, সম্পদের পরিমাণ যদি 40 লক্ষ টাকার কম হয় তাহলে এটা পূরণ না করলেও হবে তবে এই বিবরণী দাখিল করলে ফরম স্পষ্ট থাকবে। এরপর Yes দিয়ে save করে continue এর মাধ্যমে পরবর্তী পেজে অগ্রসর করবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

আরো পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

চতুর্থ পর্যায়: আপনার আয়ের উৎস দিতে হবে এখানে আপনি যে ধরনের কাজের মাধ্যমে আয় করেন তা বাছাই করতে হবে। আপনার আয়ের আরো অন্যান্য উৎস থাকলে income from other sources অপশন এ ক্লিক করে select one গিয়ে আপনার অন্য আয়ের উৎস বাছাই করুন।

এছাড়া কর বহির্ভূত আয় থাকলে Tax exempted income এ গিয়ে ফরম পূরণ করবেন। যেমন আপনি software and it বিজনেস করেন যা কর বহির্ভূত। ব্যবসার ধরন, প্রতিষ্ঠান এর নাম ঠিকানা ইত্যাদি।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

এরপর আপনার আয়ের পরিমাণ ও ব্যয়ের খরচ দিতে হবে income summary তে। এটি পূরণ করে save করবেন এবং continue তে ক্লিক করবেন।

পঞ্চম পর্যায়: এরপর এই পর্যায়ে আপনাকে আপনার ব্যায়ের তথ্য দিতে হবে, আপনার সম্পদ 40 লক্ষ টাকার কম হলে এটি পূরণ না করলেও হবে। বাৎসরিক ব্যক্তিগত ও পারিবারিক খরচ দিতে হবে। যদি সম্পদ 40 লক্ষ টাকা বা তার বেশি হয় তাহলে সম্পূর্ণ টার বিবরণী দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে IT10B ফরম পূরণ করা বাঞ্ছনীয়। তথ্যগুলো দিয়ে save করে continue করবেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম ২০২১ | অনলাইনে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

ষষ্ঠ পর্যায়: আপনি যদি অগ্রিম কর দিয়ে থাকেন তাহলে মোট পরিশোধ যোগ্য কর থেকে তা বাদ দেয়া হবে। আর আপনার যদি আয় কর না দিতে হয় তাহলে payable amount শূন্য আসবে একে Zero Return বা শূন্য রিটার্ন বলে।

সপ্তম পর্যায়: আপনার রিটার্ন পূরণ করা শেষ। আপনি অনলাইন রিটার্ন বা অফলাইন রিটার্ন এর দিকে অগ্রসর হবেন। আপনি যদি অফলাইন রিটার্ন করতে চান তাহলে হলুদ বাটন যেখানে proceed to offline return লিখা সেখানে ক্লিক করে ফরম টির প্রিন্ট কপি করে আয় কর সার্কেল অফিসে জমা দিতে পারেন। এতে কোনো ফি লাগবে না। আপনি যদি অনলাইন রিটার্ন করেন তাহলে নীল বাটনে ক্লিক করে সাবমিট করবেন যেখানে proceed to online return লিখা। 

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

আপনাকে রিটার্ন ফরম এর প্রিভিউ দেয়া হবে।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল

এবার আপনার সম্মতির জন্য ফরম এর নিচে yes দিতে হবে ভেরিফিকেশন আর স্বাক্ষরের জন্য। এবার লাল বক্সে না এবং সবুজ বক্সে হ্যাঁ চিন্হিত দুটি বক্স পাবেন। আপনার যদি সংশয় থাকে তাহলে লাল no বাটনে ক্লিক করে ফরমটি আবার চেক করে দেখে নিতে পারেন। নয়তোবা একবার সবুজ yes বাটন চাপলে আপনার রিটার্ন জমা হয়ে যাবে ভুল হলেও আর ঠিক করা যাবে না।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

আপনার আয়কর রিটার্ন সফলভাবে জমা দেওয়ার পর আপনি reference ID সম্বলিত একটি বার্তা পাবেন। এখান থেকে acknowledgement receipt download করতে পারবেন। এভাবে আপনি অনলাইনে ই রিটার্ন দাখিল জমা করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম | ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২১

পোষ্ট ক্যাটাগরি: