বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম — বিতর আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে বিজোড়। রাতের বিজোড় নামাজকে বিতর নামাজ বলে কিংবা এ নামাজ তিন রাকাত বিধায় এটিকে বিতর বলা হয়। এ নামাজ এক রাকাত, তিন রাকাত, পাঁচ রাকাত, সাত রাকাত বা নয় রাকাত পড়া যায়। কেউ কেউ বিতরের নামাজ এক রাকাতও পড়ে থাকেন। ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়া ওয়াজিব।  

আর রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়ার পরে জামায়াত বদ্ধভাবে ইমামের সাথে বিতর নামাজ পড়া যায়। বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর নামাজ আদায় করবে না, আমাদের জামাতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই (আবু দাউদ)। বিতর নামাজ আদায়ের একাধিক নিয়ম রয়েছে। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নেই বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম কিংবা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

অন্যান্য ফরজ নামাজের মতো করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়া। তারপর তৃতীয় রাকআত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলানো। কিরাত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পরে তাকবির বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধতে হয়। তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পাঠ করা। দোয়া কুনুত পড়ে পূর্বের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ শেষ করতে হয়।

বিতর নামাজে সতর্কতাঃ তৃতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত না পড়ে সিজদায় চলে গেলে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করলেই চলবে। আবার ভুলে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললেও সাহু সিজদা দিতে হবে। সুতরাং বিতরের নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা উম্মাতে মুসলিমাকে নিয়মিত বিতরের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

এক রাকাত বিতর নামাজ পড়তে অন্যান্য নামাজের ন্যায় সূরা ফাতেহা ও অন্য একটি সূরা মিলানো পর্যন্ত পড়তে হবে। অন্য সূরাটি শেষ হওয়ার পর একই সাথে দোয়া কূনুত পড়ে রুকু-সিজদাহ করে অন্যান্য নামাজের মতো নামাজ শেষ করতে হবে। এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার আরেকটি নিয়ম রয়েছে। এ নিয়মে অন্য একটি সূরা পর্যন্ত পড়ে রুকু করতে হবে। রুকু করার পর সিজদায় না যেয়ে মুনাজাতের ন্যায় হাত উত্তোলন করে দোয়া কূনুত পাঠ করতে হবে। এরপর হাত ছেড়ে দিয়ে সিজদাহ করে অন্যান্য নামাজের মতো করে নামাজ শেষ করতে হবে।

তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায়ের তিনটি নিয়ম রয়েছে। প্রথম নিয়মে অন্যান্য নামাজের ন্যায় দূরুদ শরীফ, দোয়া মাছুড়াসহ দুই রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে। তারপর এক রাকাত বিতর নামাজ আদায়ের ন্যায় এক রাকাত আদায় করতে হবে। 

আরেকটি নিয়মে অন্যান্য নামাজের ন্যায় দুই রাকাত পড়ে দ্বিতীয় বৈঠকে না বসেই দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তৃতীয় রাকাতে অন্য একটি সূরা মিলানোর পর একইসাথে দোয়া কূনুত পড়ে রুকু, সিজদাহ করে নামাজ শেষ করতে হবে। শেষ নিয়মটি যেটি এদেশে প্রচলিত নিয়ম, এ নিয়মে দ্বিতীয় বৈঠকসহ দুই রাকাত নামাজ পড়ে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে অন্য একটি সূরা মিলানোর পর আবার তাকবির দিতে হবে। তারপর দোয়া কূনুত পড়ে রুকু, সিজদাহসহ নামাজ শেষ করতে হবে।

তিন রাকাত বিতর নামাজের নিয়ত

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা সালাসা রাকয়াতি ছালাতিল বিৎরিল, ওয়াজিবি। মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি-আল্লাহু আকবার! অর্থ। আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে বিতরের তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজের নিয়ত করিলাম।-আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুনঃ মাহে রমজান ২০২২ | রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২২

পাঁচ, সাত বা নয় রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

পাঁচ, সাত বা নয় রাকাত বিতর নামাজ অন্যান্য নামাজের ন্যায়ই পড়তে হবে কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠকে বসা যাবে না। এক্ষেত্রে একবারেও পড়া যায় অর্থাৎ শুধুমাত্র শেষ বৈঠকে বসে, কিংবা শেষের দুই রাকাতেও বৈঠকে বসা যায় অর্থাৎ পাঁচ রাকাত নামাজে চতুর্থ ও পঞ্চম রাকাতে, সাত রাকাত নামাজে ষষ্ঠ ও সপ্তম রাকাতে, নয় রাকাত নামাজে অষ্টম ও নবম রাকাতে বৈঠকে বসে।

উপরিউক্ত সব নিয়মই মহানবি (সা.) বিতর নামাজ পড়েছেন, তাহলে কেন এতো মতবিরোধ? এর কারণ ইসলামের চারটি মাযহাব রয়েছেঃ হানাফী, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী যার প্রতিটিতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মের কথা উল্লেখ আছে। আমরা বাংলাদেশি মুসলিমরা প্রায় সবাই হানাফী মাযহাবের মোতাবেক আমল করি। এ মাযহাবে বিতর নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে তিন রাকাতের নিয়মগুলোর মধ্যে তৃতীয়টা অনুসরণ করা হয় তাই আমরা সচরাচর এ নিয়মে বিতর নামাজ আদায় করি।

তাহলে কী অন্যান্য নিয়মগুলোতে পড়া যাবে না? কেন যাবে না, অবশ্যই যাবে, যে যেই মাযহাবের নিয়ম অনুসরণ করি তার সেই মাযহাবের নিয়ম মোতাবেক বিতর নামাজ আদায় করাই উত্তম। অতি প্রয়োজনে ভিন্নভাবে পড়া যাবে কিন্তু এছাড়া নিয়মে ভিন্নতা আনা অনুচিত। প্রশ্ন আসতে পারে অন্যান্য মাযহাবে কোন নিয়মের কথা উল্লেখ আছে? আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এ জিনিসটা আমার জানা নেই। তবে যারা ইসলামি বিষয়ে অধিক বিজ্ঞ বা পন্ডিত এবং এ বিষয়ে অধিক আত্মবিশ্বাসের অধিকারী তারা নির্দিষ্ট মাযহাব অনুসরণ না করলেও চলবে কিন্তু এ পর্যায়ে আমরা সাধারণ মানুষেরা এখনো পৌঁছাইনি।

বিতর নামাজের দোয়া

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈ’নুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আ’লাইকা ওয়া নুসনী আ’লাইকাল খাইরা, ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ’ ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া’ ওয়া নাহ ফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আ’যাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা তােমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং পাপ ক্ষমা চাহি এবং তােমারই উপর আমরা বিশ্বাস স্তাপন করি এবং তােমারই উপর ভরসা করি এবং আমরা তােমারই প্রশংসা করি এবং আমরা তােমারই কৃতজ্ঞা জ্ঞাপন করি এবং আমরা তােমার অবমাননা করি না, এবং যাহারা তােমায় অমান্য করে, আমরা তাহাদিগকে বর্জন করিয়া থাকি। হে খােদা! আমরা তােমারই এবাদত করি, তােমার সন্তুষ্টির জন্যই নামাজ পড়ি, তােমাকেই সেজদা করি, তােমার দিকেই দৌড়াই, তােমার দুয়ারেই ধন্না দেই, তােমার রহমতেরই আশা রাখি, তােমার আজাবকেই ভয় করি । তােমার আজাব কাফেরদের উপরই পড়িবে ।

কোন ওয়াকতের নামাজ, কোন ধরনের নামাজ-ফরজ, কি ওয়াজিব কি সুন্নত এবং কত রাকয়াত-তাহা মনে মনে স্থির করাই আসল নিয়ত। মনে মনে স্থির করার সাথে সাথে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা উত্তম। তাহাতে মন-মুখ এক হইয়া নামাজে মশগুল হয়। বাংলা ভাষায়ও নিয়ত করা চলে, তবে আরবীতে নিয়ত করা ‘আফজাল’ বা উত্তম। নিম্নে প্রত্যেক নামাজের নিয়ত আলাদাভাবে বর্ণনা করা হইতেছে। শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

আরও পড়ুনঃ জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস বাংলা | জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস ২০২১

পোষ্ট ক্যাটাগরি: