ন্যানো টেকনোলজি কি | ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে
ন্যানো টেকনোলজি কি? ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে? আজকে অমি আপনাদেরকে বলবো ন্যানো টেকনোলজি কি? ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কে বিস্তারিত। বর্তমান বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে। নিকটতম ভবিষ্যতে পৃথিবীর সবক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির উপরে নির্ভরশীল হবে। যা আধুনিক বিশ্বকে অন্যরকম এক পর্যায়ে নিয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলো এটি নিয়ে অনেক গবেষণা করছে। ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। একটিতথ্য সূত্রে জানা গেছে যে, জাপানের জাতীয় গবেষণা বাজেটের বেশিরভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে নিয়ে।
গ্ৰিক শব্দ 'Nanos' থেকে আসা Nano শব্দের আভিধানিক অর্থ বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী কিন্তু এটি মাপের একক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ হলো এক ন্যানোমিটার। যা আমাদের ধারণারও বাইরে। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলের সাথে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলা হয়।
বিখ্যাত আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) ১৯৫৯ সালে ২৯ জানুয়ারি তার “There’s Plenty of Room at the Bottom” আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেছিলেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লেষণের সম্ভাবনা বর্ণনা করেছিলেন। তাই রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
আমরা যদি ন্যানোমিটারের আকার সম্বন্ধে ধারণা পেতে চাই তাহলে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একটা কাগজ ৭৫,০০০ ন্যানোমিটার মোটা হয়, মানুষের চুল ৫০,০০০ ন্যানোমিটার মোটা হয়ে থাকে। আর এরপর তুলনা করার জন্য অন্য কিছু পাওয়া যাবেনা। ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখতে হবে। যদি এক ন্যানোমিটার সমান একটা মুরগী হয় তহলে একটা মুরগী আমাদের পৃথিবীর সমান হবে।
আরও পড়ুনঃ গুগলের প্রতিষ্ঠাতা কে | গুগলের মালিক কে
ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ পারে
আমরা যখন ন্যানোস্কেলে প্রবেশ করি তখন আমরা ফিজিক্সের সেই সমস্ত জায়গায় কাজ করতে পরি যেটা সাধারণত সম্ভব নয়। আপনার পাশেপাশে যে বস্তুগুলোর আছে সেগুলো যে অনু দিয়ে তৈরি হয়েছে। ওই অনুগুলো যেভাবে সাজানো আছে সেটাই ঠিক করে যে ওই বস্তু কি কাজ করবে। ন্যানো টেকনোলজিকে ব্যাবহার করে আমরা ওই অনু পরমাণুর অ্যারেন্জমেনটকে ম্যানুকুলেট করতে পারবো এবং আমাদের ইচ্ছেমত সেই জিনিসগুলোকে ব্যবহার করতে পারবো।
ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে কার্য সম্পাদনের স্থানটি ১০০ ন্যানোমিটারের থেকেও ছোট হতে পারে। ন্যানো টেকনোলজিতে ম্যাটারকে নিউক্লিয়ার, এটমিক ও সুক্ষ্ম মলিকিউলার লেভেলে কন্টোল করার স্টাডি করা হয়ে থাকে।
সাধারণত ন্যানো টেকনোলজি ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার স্কেলে পরিচালিত হয়ে থাকে। ন্যানো প্রযুক্তির ফলে কোনো জিনিস এতটাই ক্ষুদ্র করে তৈরি করা যায় যে, এর থেকে আর ক্ষুদ্র করা সম্ভব নয়। IMB- এর গবেষকরা ১৯৮০ সনে প্রথম আবিষ্কার করেন STM ( Scanning Tunneling Microscope ) এ যন্ত্রের সাহায্যে অণুর গঠন পর্যন্ত দেখা সম্ভব। এ যন্ত্রটির আবিষ্কার ন্যানো প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে।
ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। প্রথমটি হলো “bottom-up” বা নিচ থেকে উপরে এবং দ্বিতীয়টি হো “top-down” বা উপর থেকে নিচে। “bottom-up” পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো আণবিক উপাদানগুলো থেকে তৈরি করা হয় যা আণবিক নীতির দ্বারা রাসায়নিকভাবে নিজেদেরকে একত্রিত করে। অর্থাৎ ছোটো আকারের জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয়।
ন্যানো-অবজেক্টগুলি পারমাণবিক স্তরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বৃহত্তর বস্তু থেকে নির্মিত হয় “top-down” পদ্ধতিতে। top-down পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়। আমাদের বর্তমান ইলেকট্রনিক্স হচ্ছে টপ টু ডাউন টেকনোলজি। আর ন্যানো টেকনোলজি হচ্ছে বটম টু টপ টেকনোলজি।
আরও পড়ুনঃ 5G প্রযুক্তি: আপনার যা জানা দরকার
এবার আসা যাক ন্যানো টেকনোলজি বর্তমানে আমাদের কোন কোন ক্ষেত্রে সাহায্য করছেঃ
১। ন্যানো প্রযুক্তি থেকে জমির সার তৈরি করা যায়।
২। স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩। ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে তৈরি।
৪। হাতের স্মার্টফোন এখন স্ক্রাচ প্রুভ ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে।
৫। ফ্লেক্সিবাল মোবাইল ও ওয়ালপেপার টিভি ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে বানানো হয়েছে।
৬। আমরা মেডিসিনকে সেই জায়গায় পৌছে দিতে পারি শরীরের যে যায়গায় চিকিৎসার প্রয়োজন।
৭। ক্ষতিকারক ধোঁয়া যে বায়ু দূষণ করে তা রোধ করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
৮। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফসল উৎপাদন করার পদ্ধতিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।
৯। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি আকারে ছোট, ওজনে হালকা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহাররে ফলে।
১০। ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে সহজেই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা সম্ভব কোনো পাশ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
১১। অল্প ব্যায়ে জ্বালানি তৈরি এবং নানা প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
১২। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে বাতাসে গলফ বলের দিক ঠিক রাখার জন্য,টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, র্যাকেটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য।
১৩। খাদ্য প্যাকেজিং এ দীর্ঘকাল ধরে ন্যানোপার্টিকেলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের প্যাকেজিং করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৪। কম্পিউটারের মেমোরি চীপ ও প্রসেসর ধীরে ধীরে ছোটো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর্মক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেশি ফাস্ট। কম্পিউটারের ভিতর যে প্রসেসর আছে, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। ইন্টেল প্রসেসরের সিলিকনের উপর প্যাটার্ণ করে সার্কিট তৈরি করা হয় এই টেকনোলজির বর্তমান সাইজ হচ্ছে ৩০ ন্যানোমিটার। ভবিষ্যতে এটির আকার হবে আরও ছোটো।
আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব, ডিপ ওয়েব কি? কিভাবে ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েব ব্যবহার করবেন?
আরো অনেক ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। ন্যানো টেকনোলজি ভবিষ্যতে যে যে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেনঃ
১। কয়লাকে হিরায় পরিণত করা যাবে।
২। বায়ুমন্ডল থেকে গ্রীনহাউজ গ্যাস কমানো সম্ভব।
৩। বদলে ফেলা সম্ভব পদার্থর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক।
৪। বৈদ্যুতিক বাল্প অধিক আলো দেবে ও বিদ্যুত সাস্রয়ী হবে।
৫। সম্ভব হবে কোনো কার্বন উৎপন্ন না করেই আবর্জ্যনা ধ্বংস করা।
৬। বদলে ফেলা সম্ভব বিদ্যুত বা চৌম্বক পরিবাহিতা রাসায়নিক বিক্রিয়া।
৭। ন্যানো টেকনোলজির কারণে আর্টফিসিয়াল ইন্টেলেজেন্সি উন্নত হবে।
৮। লোনা পানিকে সুপেয় করে তোলা সম্ভব, পানি থেকে আর্সেনিক দূর করা সম্ভব।
৯। শুধুমাত্র আমাদের হাঁটা থেকে যে এনার্জি তৈরি হবে তা দিয়ে মোবাইল চার্জ করা যাবে।
১০। এই টেকনোলজিকে ব্যবজার করে এমন রং তৈরি করা সম্ভব যা বাড়ির বাইরে লাগালে সোলার প্যানেল হিসেবে কাজ করবে।
আশা করা যায় ন্যানো টেকনোলজির কারণে ভবিষ্যত পৃথিবীই পাল্টে যাবে। প্রযুক্তির যেমন ভাল দিক আছে তমনি খারাপ দিকও আছে। আমরা চেষ্টা করবো খারাপ দিকগুলো এড়িয়ে চলার।
আরও পড়ুনঃ Incognito mode কি? কিভাবে Incognito mode ব্যবহার করবেন