ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ | ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার — ডেঙ্গু জ্বর এখন একটা পীড়াদায়ক রোগ। প্রতিদিন এখন এই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হসপিটাল গুলাতে এখন প্রতিদিন এই হাজার হাজার মানুষের ডেঙ্গু জ্বর লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এটা ভাইরাস জনিত রোগ। এটা এইডস মশাবাহিত রোগ মশা নিধন করা ঠিকমতো না হলে এই জ্বর হয়। এই ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ করলে ঠিকমতো ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বর কি

ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ এবং এটা এইডস ইজিপ্তাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। এই ডেঙ্গু জ্বরের কোনো মশা কারো শরীরে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪-৬ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে। এইভাবে একজন থেকে অন্যজনের মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু জ্বর দুই ধরনের হয়ে থাকে এক হল ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর আরেকটি হচ্ছে হেমোরেজিক ফিভার।

ডেঙ্গু জ্বর কখন বেশি হয়ে থাকে

দেখা যায় গরম কাল, বর্ষাকালের সময়টাতে ডেঙ্গু প্রকোপ বেশি দেখা যাই। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস সময়কাল মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর হয় থাকে। শীতকালে এই জ্বর হয়না কারণ শীতকালে মশাগুলা লার্ভা অবস্থাই থাকে এবং বেশিদিন বাঁচতে পারে। কিন্তু বর্ষাকালে শুরুতেই ভাইরাস বাহিত মশা বিস্তার লাভ করে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শহরাঞ্চলে বেশি হয়ে থাকে। কারণ এখানে বড় বড় দালানকোঠা মশার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। গ্রামের দিকে এই জ্বর হয়না বললেই চলে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ডেঙ্গু জ্বর বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

হঠাৎ করে অনেক জ্বর গায়ে, কপালে প্রচণ্ড ব্যথা, চোখ এদিক ওইদিক তাকালে ব্যথা। শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ -১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীর বিশেষ করে কোমর, মাংসপেশি এবং পিঠে তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা পরিমাণ এতো হয় যে, মনে হয় বুঝি এখনি হাড় ভেঙ্গে যাবে এর সাথে বমি বমি ভাব, রুগী বেশি ক্লান্ত অনুভব করে সাথে মুখে অরুচি হয়। আর জ্বর হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে শরীরে লালচে দানা দানা দেখা যাই একে বলা হয়ে থাকে স্কিন রেশ অনেকটা এলারজি মতো। সাধারণত জ্বর ৪ বা ৫ দিন পর এমনিতেই চলে যায়। কিন্তু কিছু জনের আবার ২ থেকে ৩ দিন পর আবার জ্বর হয় এটাকে বলা হয় ‘বাই ফেজিক ফিভার'।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে খুবই জটিল প্রকারের রোগ। এই জ্বর হলে যে উপশম দেখা যায় শরীরে তা হচ্ছে– শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পরা শুরু হয়, নাক মুখ দিয়ে, দাতের মাড়ি থেকে, রক্তবমি হয়, কফের সঙ্গে রক্ত আসে, চোখ থেকে রক্ত পরে, পায়খানা সাথে রক্ত আসে এবং কালো পায়খানা হয়। মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব বা রক্তক্ষরণ হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পরতে থাকা।

কখন ডাক্তার দেখাবেন | ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার

জ্বর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যদি এই লক্ষণ দেখা যায় – শরীরের যেকোনো অংশ থেকে রক্ত পরছে, অনেক পেট ব্যথা ও বমি হলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, পেট ফুলে পানি আসলে শ্বাসকষ্ট হলে, প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।

আরও পড়ুনঃ পরোটা খাওয়ার উপকারিতা | গমের রুটি খাওয়ার উপকারিতা

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা | ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নিদিষ্ট চিকিৎসা নাই। এটার উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। দেখা যায় বেশিরভাগ জ্বর সাতদিনের বেশি থাকেনা। এই সময়ে ডাবের পানি, তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে একদম ভালো না হওয়া পর্যন্ত। এই সময় পেরাসিটামল ওষুধ যথেষ্ট। অন্য ব্যাথা ওষুধ এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক ওষুধ দেয়া যাবেনা এতে করে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। জ্বর কমানোর জন্যে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে।

জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখা মাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। হেমোরেজিক জ্বর দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি। এই রোগীকে শিরাপথে সেলাইন প্রয়োজন হলে রক্তের প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করাতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রুগীকে মশারীর ভিতরে রাখা শ্রেয়।যদি কোনো স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলেও সেটা ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক হয়ে যায় এবং তখন যদি ওই মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয় তিনিও কিন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

ডেঙ্গু জ্বর কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় | ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান প্রতিরোধ মূল কারণ হচ্ছে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা এবং মশা যেন কোনোভাবেই কামড়াতে না পারে সেটার ব্যবস্থা করা। বড় দালান কোঠাই এই মশা গুলো অবস্থান করে। এই মশাগুলো পরিষ্কার পানিতে ডিম পারে নোংরা ড্রেনের পানি তাদের একদম পছন্দ না। তাই যেসব জায়গায় মশা ডিম পারে থাকে সেসব যায়গাগুলো পরিষ্কার পরিছন্ন করে রাখতে হবে। মশক নিধনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমাদের বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল ইত্যাদি যা আছে সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা ডিম পারে এমন বস্তু যেখানে পানি জমে থাকে, ব্যবহার না করা কৌটা, ফুলের টব, ডাভের খোসা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনোকিছু মুখ খোলা রাখা যাবেনা যাতে পানি জমে না থাকে। এডিস মশা সাধারণত সকাল এবং সন্ধাই কামড়ায়। তাই ঠিকমতো কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে।

বাড়ির চারদিকে জানালায় নেট লাগাতে হবে। এছাড়া মশক নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল ব্যবহার করতে হবে এবং দিনে রাতে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য। ডেঙ্গু জ্বরের তেমন কোনো ঔষুধ এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। এটা আমাদের নিজেদেরকে সচেতনতা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমেই ডেঙ্গু রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ ইসলামের ইতিহাস | ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

পোষ্ট ক্যাটাগরি: