ইসলামের ইতিহাস | ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

ইসলামের ইতিহাস | ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি — ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলাম হলো মানুষের পূ্র্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। মানুষের শুরু থেকে মুত্যুর আগ পর্যন্ত যা কিছু আছে সব কিছুর বিধি নিষেধ ইসলামের মধ্যে রয়েছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের জন্য। মানুষের হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তালাহ অসংখ্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেন তাদের প্রত্যেকেরই একটাই কাজ ছিল মানুষকে কল্যানের পথে ডাকা ইসলামের পথে আনা।

এভাবেই ধীরে ধীরে মানুষ সত্য ধর্ম ইসলামকে জানতে থাকে ও গ্রহন করতে থাকে। ইসলামের প্রথম নবী ও আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাদের মধ্যবর্তী সময়ে আরো অনেক নবী ও রাসুল দুনিয়ায় আগমন করেন। আমরা এবার ইসলামের ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে সংক্ষেপে আরো কিছু জানবো। 

ইসলামের ইতিহাস

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময় ইসলাম ধর্মের প্রচার 

আরব যখন চরম জাহিলিয়াতে নিমজ্জিত তখন আরবের কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তার পিতা ইন্তেকাল করেন। শিশু বয়সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ধাত্রী মা হালিমার ঘরে লালিত-পালিত হন। হালিমা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে পাঁচ বছর লালন পালন করে তার মা আমিনার নিকট রেখে যান।

তার বয়স যখন ৬ বছর তখন তার মা ইন্তেকাল করেন। প্রিয় নবী (সাঃ)অসহায় হয়ে পড়লে তার লালন পালনের দায়িত্ব নেন দাদা আব্দুল মুত্তালিব। আর আট বছর বয়সে তার দাদাও মারা যান। এরপর লালন পালনের দায়িত্ব নেন চাচা আবু তালিব। এভাবেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বড় হতে থাকেন। চল্লিশ বছর বয়সে নবীজি (সাঃ)নবুয়ত প্রাপ্ত হন। নবুয়ত প্রাপ্তির পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিপদগামী মক্কাবাসীর নিকট ইসলাম প্রচার আরম্ভ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহর রাসূল।

তিনি আরও ঘোষণা করেন, “ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম, আল-কোরআন এই ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। এভাবেই রাসূল (সাঃ) প্রথম তিন বছর তিনি গোপনে তার আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। পরে আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ্যে ইসলামের পথে দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন। এতে মূর্তি পূজারীরা তার বিরোধিতা করতে শুরু করলো। নবিকে তারা ধর্মদ্রোহী, পাগল বলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে লাগল। তারা তার উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালাল, পাথর ছুড়ে আঘাত করল, আবর্জনা নিক্ষেপ করল, অপমানিত ও লাঞ্চিত করল।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নেতৃত্ব, ধন-সম্পদ ও সুন্দরী নারীর লোভ দেখাল। তিনি বললেন, “আমার এক হাতে চন্দ্র আর অন্য হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি এই সত্য প্রচার করা থেকে বিরত হবো না”। সত্য প্রচারে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আত্নত্যাগ, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণু। আর এভাবেই তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। 

খোলাফায়ে রাশিদিনের থেকে ইসলামের প্রচার ও প্রসার

খোলাফায়ে রাশেদীন বলতে ইসলামের প্রথম চার খলিফাকে বোঝায়। তারা হলেন হযরত আবু বক্কর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ), হযরত ওসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)। তারা সকলেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে সরাসরি ইসলামের শিক্ষা লাভ করেছেন। বাস্তব জীবনেও তা যথাযথভাবে অনুসরন ও অনুকরণ করেছেন। 

হযরত আবুবকর (রাঃ)

হযরত আবু বকর (রাঃ) ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন প্রধান সাহাবি, ইসলামের প্রথম খলিফা ও প্রথম মুসলিমদের মাঝে অন্যতম। প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সম্মান হযরত আবুবকর (রাঃ) কে দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি আমাদের প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদের শ্বশুর ছিলেন। 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মৃ- ত্যুর পর তিনি খলিফা হোন এবং মুসলিমদেরকে নেতৃত্ব দেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রতি অতুলনীয় বিশ্বাসের জন্য তাকে “সিদ্দিক” অর্থাৎ বিশ্বস্ত উপাধি প্রদান করা হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে কোনো হাদিস পাওয়া যায়নি। হাদিসে অন্যান্য তিনজনকে সিদ্দিক উপাধীকরণ করা হয়েছে। মিরাজের ঘটনা এক ব্যাক্তির নিকট শুনে বিশ্বাস করেছিলেন। তাই তাকে আবু বকর সিদ্দিক নামেও সম্বোধন করা হয়।

তরুণ বয়সেই আবু বকর (রাঃ) একজন বণিক হিসাবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। তিনি প্রতিবেশী সিরিয়া, ইয়েমেন এছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে ব্যবসার কারণে ভ্রমণ করেছেন। তার মাধ্যমে তিনি সম্পদশালী হয়ে উঠেন ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি তার গোত্রের একজন নেতা হয়ে উঠছিলেন।

ইয়েমেন থেকে বাণিজ্য শেষ করে ফেরার পর তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ইসলাম ধর্ম প্রচারের সংবাদ পান। তারপর তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণ করা দেখে অন্য অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণের উৎসাহ যুগিয়েছে। আবু বকরের (রাঃ) মেয়ে আয়িশার সঙ্গে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বিয়ের ফলে তাদের দুজনের সম্পর্ক আরও বেশী ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে।

সুখে-দুঃখে, বিপদ-আপদে সর্বদা তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে থাকতেন। তাবুক যুদ্ধের সময় তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর খলিফা নির্বাচন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ওফাতের পর দাফন ও রাসূলের উত্তরাধিকারীর বিষয়ে তার থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা সমাধা হয়। 

ফলে মুসলমানগন এক অবিশ্যম্ভাবী বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পান। আবু বকর একজন একনিষ্ঠ সহচর হিসেবে মুহাম্মাদের সহযোগিতা করেছেন। তার জীবদ্দশায় আবু বকর বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাবুকের যুদ্ধে তিনি তার সমস্ত সম্পদ দান করে দেন। হুদায়বিয়ার সন্ধিতে আবু বকর অংশ নিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন এই চুক্তির অন্যতম সাক্ষী।

আবু বকরের খিলাফত ২ বছরের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল। তার খিলাফত কাল দীর্ঘ না হলেও তিনি একজন সফল শাসক ছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর মুসলিম রাষ্ট্রের কতিপয় সমস্যা দেখা দেয়। কেউ কেউ মিথ্যা নবুয়তের দাবি করে, কতিপয় লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করে, আবার কতিপয় লোক ইসলাম ত্যাগ করে। 

হযরত আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এসব মোকাবিলা করেন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মৃ- ত্যুর পরে নবী দাবি করা ব্যক্তিদের তিনি রিদ্দার যুদ্ধে সফলভাবে দমন করেছেন এবং তৎকালীন দুটি পরাশক্তি পারস্য ও বাইজেন্টাইনদের উপর সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানের ধারাবাহিকতায় কয়েক দশকে মুসলিম খিলাফত ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের একটিতে পরিণত হয়।

হযরত ওমর (রাঃ)

মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশের আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম দিকে হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামের চরম শত্রু থাকলেও পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকেন। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ইসলামমের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য স্বীয় ধন-সম্পদ অকাতরে ব্যয় করেন। তাবুক অভিযানে হযরত ওমর ফারুক তার সম্পদের অর্ধেক আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ছিলেন ন্যায় সাহসী ও সত্যবাদী। তার সততার জন্য বিশ্বনবী তাকে “ফারুক” উপাধি দেওয়া হয়। 

হযরত ওসমান (রাঃ)

মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা ছিলেন হযরত ওসমান (রাঃ)। তিনি ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ওসমান (রাঃ) তিনি ৩৪ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত ওসমান ছিলেন আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী যার কারণে তাকে গনি বলা হতো। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ইসলাম ও মানবতার সেবায় অকাতরে তার সম্পদ ব্যয় করেন।

মদিনার অধিবাসীদের পানির অভাব দূর করার জন্য তিনি ১৮,০০০ দিনার ব্যয় করে একটি ক্রয় করেন। দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ব্যয় করে একটি কূপ ক্রয় করে তা ওয়াকফ্ করে দেন। মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি মদিনাবাসীদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে খাবার বিতরন করেন। মসজিদে নববিতে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। এভাবেই তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে ভূমিকা পালন করেন। 

হযরত আলী (রাঃ) 

হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলীফা। তিনি ৬০০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে থাকতেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি তার অগাধ আস্তা ও বিশ্বাস ছিল। আর তাই মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন শৌর্য বীর্য ও অসাধারণ শক্তির অধিকারী। তার নাম শুনলে কাফিরদের মনে ত্রাস সৃষ্টি হতো।

বদর যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য রাসূল (সাঃ)তাকে ‘যুলফিকর’ তরবারি উপহার দেন। হুদায়বিয়ার সন্ধিপত্র তিনি নিজ হাতে লিখেছেন। তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় ধন-সম্পদ দিয়ে ইসলামের উল্লেখযোগ্য সেবা না করতে পারলেও তার সাহসিকতা,লেখনী,বীরত্ব প্রভূতি দ্বারা ইসলামের খেদমত করে গেছেন। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎপত্তি

চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মনে রয়েছে মুসলমানদের অবদান যাদের অবদানের কারণে চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আবু বকর আল রাজি, আল-বিরুনী, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ প্রমুখ। আবু বকর আল রাজি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও শল্য চিকিৎসাবিদ। 

তার অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ছিল গ্রিকদের থেকেও উন্নত। তিনি বসন্ত ও হাম রোগের উপর “আল জুদাইরি ওয়াল হাসবা” নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মৌলিকত্ব দেখে চিকিৎসা বিজ্ঞানের লোকেরা খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। আল বিরুনি ছিলেন অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তাধারার বড় দর্শনিক।এছাড়াও তিনি প্রসিদ্ধ ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক পঞ্জিকাবীদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, ভাষাতত্ত্ব বিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। 

রসায়নশাস্ত্রের উৎপত্তি

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ন্যায় রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অনেক। আলকেমি (রসায়ন) শাস্ত্রে মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান, আল-কিন্দি,জুননুন মিসরি, ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি বিশেষ অবদান রাখেন। তাদের নিরলস পরিশ্রম ও অকৃত্রিম অবদানের জন্য রসায়নশাস্ত্র আজ উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে।

জাবির ইবনে হাইয়ামই রসায়নকে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। রসায়ন ও বিজ্ঞানের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যথা পরিস্রবণ, দ্রবণ, ভস্মীকরণ, বাষ্পীকরণ, ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়া, লোহার মরিচারোধক বার্নিশ ও চুলের কলপ লেখার কালি ও কাচ ইত্যাদি দ্রব্য প্রস্তুত প্রণালী ও বিধি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

ভূগোল শাস্ত্রের উৎপত্তি

অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা ও বিস্তৃত এলাকার লোকদের কেবলা নির্ধারণসহ নানা প্রয়োজনে মানচিত্রের খুব প্রয়োজন দেখা দেয়। ইসলাম প্রচারক ও বণিকগণ এর জন্য দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণ করার তাগিদে ভূগোলের জ্ঞান অর্জনের খুব প্রয়োজন হয়। এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য আল-মোকাদ্দাসি, আল-মাসুদি, ইয়াকুত ইবনে আব্দুল্লাহ ও ইবনে খালদুন সহ অনেক মুসলিম মনীষী ভূগোল শাস্ত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। 

গণিত শাস্ত্রের উৎপত্তি

গণিতকে বিজ্ঞানের মূল বলা হয়ে থাকে। এই গণিতশাস্ত্র আবিষ্কারের অগ্রগতি ও উন্নতির উৎকর্ষ সাধনে মুসলমানদের অবদান অবিস্মরণীয়। আল-খাওয়ারেযমি, ইবনে-হাইসাম, উমর খৈয়াম ও সহ অনেক মুসলিম মনীষী এ শাস্ত্রে প্রসিদ্ধটি লাভ করেন। মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারেযমিকে বলা হয় গণিত শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তার রচিত “হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ” গ্রন্থের নামানুসারে এ শাস্ত্রকে পরবর্তী কালে ইউরোপীয়রা একে আলজেবরা নামকরণ করেন। বর্তমানে একে আমরা বীজ গণিত নামে জানতে পারছি। শুধু যে কেবল বিজ্ঞানে ইসলাম ধর্মের প্রয়োগ আছে তা নয় বরং সমাজ থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে দেশ পরিচালনারও ইসলামিক ইতিহাস থেকে নজির পাওয়া যায়।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

ইসলামের মৌলিক বাণীই হচ্ছে সম্প্রীতি। বিশ্বে ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যেখানে মানবতার কল্যাণ ও সেবা করাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির কল্যাণের জন্যে তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন। 

ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কিংবা জীবন ব্যাবস্থা মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ব্যাপারে আল-কোরআনের ঘোষণাঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম’। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সামাজিক সম্পর্ক নিশ্চিত করাই হচ্ছে ইসলামের মূল লক্ষ্য। ইসলাম সত্যের ধর্ম, ইসলাম আবার সহিষ্ণুতার ও ধর্ম। ইসলাম চায় মানুষ সেই ধর্ম গ্রহণ করুক, ইসলামকে অনুসরণ করুক। কিন্তু তার জন্যে ইসলাম যুক্তি-বুদ্ধির আশ্রয় নেয়।

ইসলাম গ্রহণে জোর জবরদস্তি করা নিষিদ্ধ

ইসলাম ধর্ম গ্রহণে কোনো ধরনের জোর-জবরদস্তি ইসলাম প্রশ্রয় দেয়না। কারণ মানুষের কাছে সত্যি, মিথ্যা, ন্যায় এবং অন্যায়ের হেদায়াত ও গোমরাহির বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা ছিলো যুগে যুগে আশা নবী-রাসূলদের দায়িত্ব। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুমিন হয়ে যাওয়ার জন্যে কি তুমি লোকদের বাধ্য করবে?’ ইসলামে এই সুযোগ নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট। 

এখন যার ইচ্ছা সত্য ধর্ম গ্রহণ করবে, যার ইচ্ছা মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকবে। এখানে চাপাচাপির কোনো কিছু নেই। পবিত্র আল কোরআনের ভাষায় দীনের ব্যাপারে কোনো ধরনের জবরদস্তি কিংবা বাধ্যবাধকতা নেই। ইসলাম নীতিগত ভাবেই ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রবক্তা। ধর্মীয় সহনশীলতা ইসলামের হচ্ছে অন্যতম শিক্ষা। আর ধর্মীয় সহনশীলতা বাদ দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে ধর্ম পরিবর্তন করা একটি বড় ধরনের ফিতনা। ‘ফিতনা হলো হত্যার চেয়েও মারাত্মক'।

গালা-গালি কিংবা গাল-মন্দ করা যাবেনা

বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের অন্তরের বিষয়। কর্মের মাঝে সেটা কখনো প্রকাশ পায় আবার কখনো সেটা প্রকাশ পায়না। বিশ্বাসের সৃষ্টি হয় জ্ঞানের আলোয়, বিশ্বাস কখনো চাপিয়ে দেয়া যায়না। এই জন্যই যার যার বিশ্বাস তার তার। তাই কারো বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রূপ, কটূক্তি কিংবা কটাক্ষ করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা আছে। গালমন্দ বা গালা-গালি করা ইসলামে হারাম। আমরা সকলেই জেনে রাখবো ইসলাম হচ্ছে বিশুদ্ধ তাওহিদের ধারক। তাওহিদ বিরোধী ভাবধারার সাথে ইসলামের কোন ধরনের আপস নেই।

মূর্তি পূজা হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণীত কাজ। কোনো দেব দেবীর উপাসনা-আরাধনা তো দূরের কথা, সে সকলের অস্তিত্বও ইসলাম স্বীকার করেনা। অথচ সেই ইসলামই আবার অন্যান্য ধর্মের উপাস্য কিংবা দেবদেবীকে গালাগালি কিংবা নিন্দা করতে নিষেধ করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যে সকল উপাস্যকে ডাকে, তোমরা তাদের গাল-মন্দ করিও না। এই থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা হচ্ছে ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কর্তব্য আর কর্তব্য পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দায়িত্ব।

মানুষের সাথে সম্প্রীতি গড়ে তোলা

মানুষের মাঝে সকল ধর্মের মানুষ অন্তর্ভুক্ত। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি দয়া অনুগ্রহের কথা বলা মানেই হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিবেশ গঠন করা সকল মানুষের মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, ‘হজরত আনাস এবং আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সকল সৃষ্টি জগৎ আল্লাহর তায়ালার পরিবার (নির্ভরশীল)।

সুতরাং সৃষ্টি জগতের মাঝে সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় যে, আল্লাহ তায়ালার পরিবারের সাথে সদ্ব্যবহার করে। আর যেখানে গোটা সৃষ্টি জগতকেই আল্লাহ তায়ালার পরিবার তথা নির্ভরশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়ছে এবং সকলের সাথে সদ্ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে- সেখানে ধর্মীয় বিদ্বেষের কোনো প্রশ্নই ওঠেনা।

বিতর্ক না উত্তম ব্যবহারের আদেশ

ইসলাম ধর্ম মানুষকে জাতি এবং বর্ণ দিয়ে বিচার করেনা। বরং তার বিশ্বাস এবং কর্মের মূল্যায়ন করে। তাই কোন ধরনের বিতর্ক ইসলাম সাপোর্ট করেনা। ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার, দাওয়াত দান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে দাওয়াত দানের পন্থা হতে হবে সুন্দর এবং উত্তম। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের ভাষায় সুন্দর এবং উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করোনা’। যারা ধর্মীয় কারনে মুসলমানদের সাথে প্রত্যক্ষ শত্রতামূলক আচরণ করেনা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, ইসলামের শিক্ষা। ‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, তোমাদের বাড়িঘর থেকে তোমাদেরকে বের করে দেয়নি, তাদের সাথে সদাচরণ এবং ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের বারণ করেননা।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: