রক্তদানের আগে যা জানা জরুরি | রক্তদানের আগে যে বিষয়গুলো মানা জরুরি

রক্তদানের আগে যে ৭টি বিষয় খেয়াল রাখবেন | রক্তদানের আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি — বর্তমান সময় আমরা অনেকেই আছি যারা রক্ত দান করতে অনেক ভালোবেশে থাকি। রক্তদান করা একটি মহৎ ব্যাপার হয়ে থাকে। 

আপনি যদি নতুন রক্তদাতা হন বা ইতিমধ্যে রক্ত দিয়েছেন তবে প্রত্যেকের উচিত হয়ে থাকে রক্তদানের আগে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা। সাধারণত রক্তদানের আগে আপনার গুরুত্বপূর্ণ যে ৭টি বিষয়ে খেয়াল রাখা বিশেষ জরুরী সেই ৭টি বিষয় সম্পর্কে আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করবো।

রক্ত কিন্তু তৈরী করা যায়না, তাই রোগীরা তাদের জীবনের জন্য রক্তদাতাদের উপর নির্ভর করে থাকে। যদিও রক্ত দানের গুরুত্বের ক্ষেত্রে প্রায়শই রক্ত গ্রহীতার কথা বলা হয়ে থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রে যিনি রক্ত দান করে থাকে তার ভূমিকা অনেক বেশি উল্ল্যেখযোগ্য হয়ে থাকে। 

সাধারণত যেকোনো ধরনের এক্সিডেন্ট সহ আরো নানা ধরনের রোগের ক্ষেত্রে রক্তসল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লবিনের পরিমাণ করে গেলে রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর একজন রক্তদাতা কাছ থেকে প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করে রক্তসল্পতা রোগীকে সেই রক্তটি প্রদান করা হয়।

কিন্তু এই রক্তদান করার আগে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো জেনে রাখা খুব জরুরী। রক্ত দিতে যাবার আগে আপনাকে এমন ৭টি বিষয়ের উপর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সেই ৭টি বিষয়ের উপর আপনার রক্তদানের বিষয়টি নির্ভর করবে। 

তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক, রক্তদানের আগে যা জানা জরুরি বা রক্তদানের আগে যে ৭টি বিষয় আপনি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তো চলুন দেখে নেই রক্তদানের আগে ও পরে করনীয় কি কি 

শারীরিক সুস্থতা থাকা দরকার

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তবে অবশ্যই আপনার শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকার বিষয়টি খুব জরুরী একটা বিষয় হয়ে থাকে। রক্তদানের জন্য সাধারণত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হয়। 

যেকোনো ধরনের মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আমাদের হয়ে থাকা জ্বর, যেকোনো ধরনের ফ্লু, সর্দি, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের তীব্রতা সহ আরো অনেক কিছু বিষয় আপনার রক্ত দানে সক্ষমতার তার উপর এক ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনি যদি এসব সমস্যা নিজের মধ্যে লক্ষ করেন তবে অবশ্যই রক্ত দান থেকে বিরত থাকুন। তবে যদি আপনার সমস্যা কেটে যায় তবে আপনি রক্তদান করতে পারেন। আপনি যদি যেকোনো ধরনের সংক্রমণ নিয়ে আক্রমণ হওয়ার পর নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আপনার রক্তদান করাটা আপনার উচিত হবেনা। আর যেকোনো বড় ধরনের সংক্রমণ থাকলে আপনি রক্ত দান করবেন না।

আর বর্তমান কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে আপনাকে রক্তদান করতে হলে ১৪ দিন অপেক্ষা করে সম্পূর্ণ সুস্থতা অর্জন করে তারপর রক্তদান করার চিন্তা করবেন তার আগে নয়। যদি আপনার কোনো ধরনের চর্মরোগ থাকে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করুন। চর্ম রোগের সংক্রমণ আপনার শরীর থেকে কেটে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করুন। 

গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণত শিশু জন্মের দুই বছর পর্যন্ত তারা যেন কাউকে রক্তদান করেনা। এক্ষেত্রে তাদের জন্য এক বিশেষ অমঙ্গল বয়ে আনবে। তবে আপনার যেকোনো শারীরিক অসুস্থতা থাকলে আপনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং রক্ত দান থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুনঃ রক্তদানের উপকারিতা এবং অপকারিতা

রক্তদানের আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি পান করুন

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে, এই সিদ্ধান্ত নেবার আগে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি পান করতে হবে। যদি আপনি কাউকে রক্তদান করে থাকেন তাহলে অবশ্যই রক্তদানের ২ ঘণ্টা আগে কমপক্ষে হলেও ৫০০ মিলিমিটার পানি এবং কিছু শর্করা জাতীয় খাবার খেয়ে নিন। রক্তদান করার পরেও আপনি যদি আপনার শরীরকে পুরোপুরি সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনাকে রক্তদান করার আগের দিন। বিভিন্ন মাংস, সামুদ্রিক মাছ, মটরশুঁটি, পালং শাক, ভিটামিন এ, বি, ও সি জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করুন।

রক্তদান করার পরে আপনার শরীরে আয়রনের এক বিশেষ অভাব হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি উপরে এই খাবারগুলো গ্রহণ করে থাকেন তাহলে সেই অভাব খুব দ্রুত দূর করে দেবে। আপনি যদি রক্তদান করে থাকেন তাহলে রক্তদানের আগে অবশ্যই চর্বিযুক্ত খাবার গুলো এড়িয়ে যাবেন। আর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা রক্তদানের আগে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে থাকে।

খালি পেটে রক্তদান করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে অবশ্যই খালি পেটে রক্তদান করা থেকে বিরত থাকবেন। এতে আপনার শরীরে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। খালি পেটে আপনার শরীর থেকে যখন রক্ত টানা হবে অল্প সময়ের জন্য আপনার রক্তচাপে এক বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে। আর এই নিম্ন রক্তচাপের কারণে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন মাথা ঘোরা খিচুনি সহ আরো নানা প্রকার খারাপ অবস্থা আপনার মধ্যে হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে অবশ্যই খালি পেটে রক্ত দান করবেন না।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক চকলেটের অপকারিতা | ডার্ক চকলেট খাওয়ার অপকারিতা

রক্ত নেয়ার পদ্ধতি উপর খেয়াল রাখা

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে রক্ত নেয়ার পদ্ধতির ওপর আপনাকে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। রক্ত দিতে প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো সময় লেগে থাকে। নিবন্ধন করনের জন্য ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় ভালো ভাবে রাখতে পারে। এই সময়ে সাধারণত আপনার পরিচয় দিয়ে আপনি সাইন-ইন করুন রক্তদান প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য করে নিন এবং আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা যাচাই করুন। এক্ষেত্রে সাধারণত আপনি কেমন অনুভব করছেন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি কোথায় ছিলেন, কোথায় ভ্রমণ করেছেন, আগে কোনো ওষুধ গ্রহণ করতেন কি-না, পূর্বে রক্ত দিয়েছেন কি-না ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট সত্য তথ্য দিন।

কতবার রক্ত দিতে পারবেন সে বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে আপনি কতবার রক্ত দিতে পারবেন সে বিষয়ের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখবেন। আপনি যদি শারীরিক ভাবে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ৯০ দিন পর পর অর্থাৎ তিন মাস পর পর রক্ত দান করতে পারবেন। একজন মানুষের শরীরে সাধারণত ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমান রক্ত থাকে। 

রক্তের ভিতরে রক্ত কণিকা গুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ৮০ থেকে ১২০ দিন পরপর ধ্বংস হয়ে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি হয়। আপনার প্রতি বারের রক্তদান করলে আপনার রক্ত বিশোধন হয়। আপনি যদি কোনো রকম সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন তাহলে আপনি প্রতিবার রক্তদান করলে বিনামূল্যে জেনে নিতে পারেন আপনার রক্তে কোন সমস্যা আছে কিনা।

আরও পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার | ক্যালসিয়ামের অভাবের লক্ষণ কি

আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ সঠিকভাবে নির্ণয় করুন

আপনি যদি রক্তদান করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ সঠিকভাবে নির্ণয় করে নিন। কেননা এগুলো ব্যাপার নিয়ে রক্তদানের পরে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সাধারণত রক্ত দেওয়ার জন্য আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আপনার হাইট যদি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি না হয়, তাহলে আপনার ওজন ৫০ কেজির বেশি হতে হবে। আপনার রক্তচাপের দিকে অবশ্যই একবার খেয়াল রাখবে রক্তচাপ ৯০,৫০ এর উপরে এবং ১৮০,১০০ এর নিচে থাকতে হবে। 

রক্ত নেয়ার জায়গায় অবশ্যই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন

আপনি যদি রক্তদান করে থাকেন রক্তদান পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়ে যাবার পর আপনার রক্ত নেয়ার স্থানে একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন এবং তা কনুই এর কাছে হাত ভাঁজ করে চেপে রাখা টাই ভালো হবে। সেই জায়গায় ব্যান্ডেজ এবং চাপের ফলে আপনার শিরা থেকে রক্ত প্রবাহ দ্রুত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার নিশ্চিত করতে আপনাকে কমপক্ষে হলেও ৪ ঘন্টা সেই ব্যান্ডেজ চাপ রাখতে হবে।

পরিশেষে

আপনি যদি রক্তদান করার আগে এই গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে পারেন তাহলে রক্তদান করার পরে আপনাকে কোনো রকম শারীরিক সমস্যা বা যেকোনো ঝামেলায় পড়তে হবেনা। রক্তদানের পরে ২৪ ঘন্টা অবশ্যই কোনো অ্যালকোহল জাতীয় খাবার আপনি খাবেন না এবং রক্তদান করার পরে ভারী কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। রক্তদান করার পরে আপনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, এটি আপনার শরীরের জন্য এক বিশেষ উপকার সাধন করবে।

আরও পড়ুনঃ ভিটামিন বি এর কাজ | ভিটামিন বি ১ বি ৬ বি ১২ এর কাজ

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)