ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায়

ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় — আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার এখন খুবই প্রয়োজনীয় একটি ডিভাইস। কয়েক বছর পূর্বেও ছিলো ডেস্কটপ কম্পিউটারের ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ডেস্কটপ কম্পিউটারের সেই জায়গাটি দখল করছে ল্যাপটপ। ব্যক্তিগত কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দই এখন ল্যাপটপ। সকলের এই পছন্দের পিছনের প্রথম কারণটি হলাে ল্যাপটপের বহনযোগ্যতা ও দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ।

আপনি অনেক খোঁজ খবর নিয়ে, ঘুরে ফিরে, ব্র্যান্ড চয়েস করে একটি ল্যাপটপ ক্রয় করলেন। কিন্তু সচেতনতা এবং যত্নের অভাবে যদি আপনার পছন্দের ল্যাপটপটি বিভিন্ন কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়? চলুন জেনে নেই অনেক সাধের ল্যাপটপের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় গুলো কি কি। নিম্নে আলোচনা করা ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় গুলো অনুসরণ করে চলুন আপনার পছন্দের ল্যাপটপকে রাখুন চির নতুন।

ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায়v

ল্যাপটপে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুন

প্রথমেই 'স্ক্রিন প্রটেক্টর’ এবং ‘কিবোর্ড প্রটেক্টর’ এই দুটো জিনিস ল্যাপটপ ভালো রাখার জন্য অবশ্যই কিনে নিন। ‘স্ক্রিন প্রটেক্টর’ হচ্ছে টাচ স্ক্রিন। আমরা স্মার্টফোনে যে স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করে থাকি, ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সেই একই জিনিস। এই স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করার কারণে আপনার ল্যাপটপের স্ক্রিনে কোন দাগ পড়বে না, যদিওবা কোনো দাগ অর্থাৎ ছোট খাটো কোনো আঘাত লেগে থাকে তবে সেটা লাগবে স্ক্রিন প্রটেক্টরের উপরে। এতে করে আপনার ল্যাপটপের মূল স্ক্রিন থাকবে দাগবিহীন। বাজারে এই স্ক্রিন প্রটেক্টরের মূল্য পড়বে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা মাত্র।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার নতুনের মতো রাখার উপায়

ল্যাপটপে কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার

কিবোর্ড প্রটেক্টর হলো স্বচ্ছ রবারের একটা পর্দার মতো। কীবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করার কারণে আপনার ল্যাপটপের কিবোর্ড থাকবে নিরাপদ এবং ধুলোমুক্ত। প্রায়ই আমাদের সকলের ল্যাপটপের কিবোর্ড ধূলাবালিতে আক্রান্ত হয় আর পরবর্তীতে পরিষ্কার করতে ল্যাপটপ কীবোর্ড এর সমস্যা হয়। আর কীবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধে রয়েছে। মনে করুন- আপনি ল্যাপটপে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ করছেন সঙ্গে চা-কফি খাচ্ছেন। আপনার বেখায়ালি হওয়ার কারণে গ্লাস অথবা কাপটি উল্টে পড়ে গেলো আপনার ল্যাপটপের কিবোর্ডের উপরে। ব্যাস, হয়ে গেলো ঝামেলা! ল্যাপটপে কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করার কারণে আপনার এই সমস্যাটি আর হবেনা। কেননা কীবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করার কারণে কিবোর্ডে পানি, কফি, চা কোনো কিছুই প্রবেশ করতে পারবে না।

কুলিং ফ্যান ব্যবহার করুন

ল্যাপটপের মাঝে ছোট পরিসরে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় প্রসেসর, মাদারবোবোর্ড, র‍্যাম, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এবং অন্য সকল যন্ত্রপাতি সবকিছুই থাকে। যার কারণে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ল্যাপটপ বেশ কিছুটা হিট হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। ল্যাপটপের অতিরিক্ত গরম হওয়ার সমাধান হচ্ছে কুলিং ফ্যান। কুলিং ফ্যানের উপরে ল্যাপটপ রেখে দিয়ে ব্যবহার করলে ল্যাপটপ গরম কম হবে যার কারণে ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফও বৃদ্ধি পাবে।

ভেন্টিলেটর পরিষ্কার রাখুন

ল্যাপটপের পিছন সাইডে এবং পাশে বাতাস চলাচল করার জন্য যে ভেন্টিলেটর গুলো থাকে, সেগুলোকে সবসময় পরিষ্কার রাখুন। ভেন্টিলেটর পরিস্কার করার কারণে আপনার ল্যাপটপের মাঝে কুলিং ফ্যান ধূলামুক্ত থাকবে যার কারণে আপনি ল্যাপটপটিতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন।

বালিশ কিংবা বিছানার উপরে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না

বিছানা কিংবা বালিশের উপর রেখে কোনো সময় ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন না। বিছনা কিংবা বালিশের উপরে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ল্যাপটপের চেম্বারে খুবই দ্রুততার সাথে গরম বাতাস তৈরি হয় এবং সেই গরম বাতাস ভেন্টিলেটরের মধ্য বাহির হতে পারেনা। নিয়মিত এমন ঘটনা হতে থাকলে যেকোনো সময় আপনার ল্যাপটপটি অচল বা কোমায় চলে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ আপনি ভালো মানের একটি কুলিং ফ্যান ব্যবহার করলে আপনি বিছানা কিংবা বালিশেরর উপরে রেখে ল্যাপটপকে ব্যবহার করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ফাস্ট রাখার সহজ উপায়

ল্যাপটপে বিদ্যুৎ সংযোগে সতর্ক থাকুন

ল্যাপটপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সময়ে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করুন। বৈদ্যুতিক বোর্ডের সুইচ চালু থাকা অবস্থাতে ল্যাপটপের চার্জার প্লাগ প্রবেশ করবেন না আর হঠাৎ করেই অ্যাডাপ্টারের তার খুলে ফেলবেন না। এতে করে আপনার ল্যাপটপের পাওয়ার কানেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ল্যাপটপের চার্জ শেষ করুন

সব সময় ল্যাপটপ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যবহার করবেন না। সপ্তাহে অন্তত ২ বার আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারির চার্জ শেষ করুন। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বা বাইরে ব্যবহার করলে ল্যাপটপের চার্জ হয়তোবা ৭০% থেকে ৮০% শেষ হয়। কিন্তু ব্যাটারির চার্জ নিঃশেষ না হয়ে গেলে ব্যাটারির সবগুলো সেল ব্যবহার হয়না। আর সবগুলো সেল ব্যবহার না হলে ব্যাটারির সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেনা।

সফটওয়্যার ইনস্টল

আপনার ল্যাপটপের মাঝে হয়তোবা এমন অনেক রকম সফটওয়্যার ইনস্টল করা রয়েছে যেগুলো আপনি কখনো ব্যবহার করেননি। এমন সফটওয়্যারগুলোকে এখনি আনইনস্টল করুন এবং অপ্রয়োজনীয় কোনো সফটওয়্যার ল্যাপটপে ইনস্টল করবেন না। যদি ইন্সটল না করেন তবে আপনার ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেমের উপর চাপ কম পড়বে এবং ল্যাপটপের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি পাবে। প্রয়োজনে ল্যাপটপে কোনো ক্লিনার সফটওয়্যার চালিয়ে রান করে নিন।

ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন

যদি আপনি ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই লাইসেন্সড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। তবে আপনার ল্যাপটপ বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। ইন্টারনেটে যেসকল ফ্রি এন্টিভাইরাস পাওয়া যায় সেই সকল এন্টিভাইরাস ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখতে আংশিক কাজ করতে পারে, সম্পূর্ণ নয়।

স্ক্রিনের রেজুলিউশন

যখন আপনি ল্যাপটপ ব্যাটারিতে ব্যবহার করবেন তখন স্ক্রিনের রেজুলিউশন যথাসম্ভব কম দিয়ে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ বাড়বে। অর্থাৎ ল্যাপটপ ব্যাটারিতে ব্যবহার করার সময়ে কম রেজুলিউশনে ল্যাপটপ ব্যবহার করার কারণে ব্যাটারি ব্যাকআপ টাইম বেশি পাবেন।

উপরোক্ত নিয়মগুলো অবলম্বন করলে এবং আপনার ল্যাপটপ ভালো রাখতে পারবেন। যদি এই ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় আর্টিকেল আপনার কাছে ভালো লাগে তবে শেয়ার করুন আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে। আর এই পোস্টের বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আমাদের। ধন্যবাদ। 

আরও পড়ুনঃ নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে জেনে নিন

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)