সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে

লক্ষ্য বা স্বপ্নটা যখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রস্তুতির ব্যাপারে, তখন একটা সাধারণ প্রশ্ন থাকে যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে অথবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন কত?

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বিস্তারিত সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। আশা করি আপনাদের স্বপ্নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এই আর্টিকালিটি অনেক কার্যকরী তথ্য প্রদান করে যাবে।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আরো পরতে পারেন ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া এবং রিস্ক ফ্রি ব্যবসা ও সরকার অনুমোদিত অনলাইন ইনকাম সাইট | বিশ্বস্ত অনলাইন ইনকাম সাইট

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কাকে বলে?

যারা পেশাগত ভাবে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন সমূহকে তৈরি এবং ডেভেলপ করে থাকেন তাদের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়। নতুন নতুন সফটওয়্যার উদ্ভাবন, সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং মানুষের কাছে ব্যবহার উপযোগী করে উপস্থাপন করাই হলো সফটওয়্যার ইন ইঞ্জিনিয়ারের আসল কাজ।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কোন বিষয় নিয়ে পড়তে হবে

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (SWE) বা (SE) বিষয় নিয়ে পড়তে হয়। (SWE) বা (SE) এর পূর্ণরূপ হল Software Engineering.

অনেকে মনে করে যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে আমাদের CSE সাবজেক্টে ভর্তি হতে হবে। সিএসই ডিপার্টমেন্ট এর ফুল ফর্ম হল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। এখানে কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার বিষয়ে পড়ানো হয়। CSE এর ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক বিষয়গুলো পড়ানো হয়ে থাকে।

অন্যদিকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে হাতে কলমে প্রজেক্ট শেখায়। অর্থাৎ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্ট করা হয় যা সফটওয়্যার ইন ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনি যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান তাহলে আপনার জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটি পড়া উত্তম।

ক্যারিয়ার হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

ক্যারিয়ার হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

আমরা সকলেই জানি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন অন্যান্য পেশার থেকে তুলনামূলক বেশি।অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা কম। তাই তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সবাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের দাম অনেক বেশি। তাই অনেকেই অনেক বেতন এবং প্রতিযোগিতাহীন চাকরি হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংকে বেছে নেয়।

আমরা অনেক সময় দেখতে পাই CSE অর্থাৎ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের না হতে পেরে অন্য পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে।কেন এমনটা হচ্ছে?

এর প্রধান কারণ হচ্ছে যে, সে শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর নাম এবং এর বেতনের পেছনে ছুটেছে। এ পেশার প্রতি তার কোনো ভালোবাসা নেই বা আগ্রহ নেই। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রয়োজন প্রোগ্রামিং, কোডিং এর প্রতি ভালোবাসা এবং নিয়মিত অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা।

শুধুমাত্র একাডেমিক পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সম্ভব নয়। সেই সাথে প্রতিনিয়ত কোডিং এবং প্রোগ্রামিং এর অভ্যাস প্রয়োজন। আর তা না হলে কর্মক্ষেত্রে বেশিদিন টিকা থাকা যাবে না।

যে সকল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা বিখ্যাত হয়েছেন তাদের সকলেরই একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের কাজের প্রতি অর্থাৎ প্রোগ্রামিং এর প্রতি বিশেষ ভালোবাসা বা আগ্রহ রয়েছে। তাই যদি এ পেশায় আসতে হয় তাহলে ভালোবেসে আসতে হবে এবং অনেক অনেক অনুশীলন করে আসতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত কোডিং এর অভিজ্ঞতা আমাদের সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

কেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন

কেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন

প্রতিদিনের ব্যবহারে আমরা মোবাইলের কত কত অ্যাপ ব্যবহার করি, কত গেম খেলি, কত সফটওয়্যারে ব্যবহার করি। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি এসব সফটওয়্যারকে তৈরি করে, কিভাবে এবার সমস্যাগুলো ঠিক করা হয় এবং অ্যাপগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা এ সকল কাজ কে করে থাকে? একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।

আধুনিক বিশ্ব এখন যেন ডিভাইসের বিশ্ব হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক মানুষের কাছেই ডিভাইস একটি নিত্য প্রয়োজনীয় সঙ্গী। আর এই ডিভাইস পরিচালনা করার জন্য দরকার সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার তৈরিতে বা বিকাশে ইঞ্জিনিয়ারের দরকার হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

এ পেশায় আপনি আপনার সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পাবেন এবং অনেক ভালো বেতনে চাকরি ও পাবেন। আগেই বলেছি এ পেশায় প্রতিযোগিতা নেই বললেই চলে। সুতরাং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আপনি আপনার ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলতে পারেন।

বাংলাদেশের অনেক মানুষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিদেশে অনেক ভালো ভালো কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। অনেকে আবার দেশে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক টাকা উপার্জন করছে।

কেমন লাগবে যখন আপনার বানানো কোন অ্যাপ, কোন গেম বা কোন সফটওয়্যার মোবাইলে আসবে এবং সেটা সবাই ইউজ করবে নিশ্চয়ই এর প্রতিক্রিয়া অসাধারণ হবে। আর এই অসাধারণ অনুভূতি আপনি তখনই পাবেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হবেন।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা

একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য আরো কিছু যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

ধৈর্য: আপনার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ধৈর্য থাকতে হবে। কেননা একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর সর্বপ্রথম শর্ত হলো তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। কোনো সমস্যার সমাধানের জন্য ধৈর্য একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। ধৈর্য না থাকলে জটিল কাজগুলো করা কখনো সম্ভব হবে না।

গণিতের প্রতি দক্ষতা: গণিতের সব প্রবলেম সলভিং এ দক্ষ হতে হবে। সফটওয়্যার তৈরি করার ক্ষেত্রে এবং সফটওয়্যার এ প্রোগ্রামিং এবং কোডিং এর ক্ষেত্রে গণিত সব জায়গায় রয়েছে।

সৃজনশীলতা: আপনার মধ্যে যদি সফটওয়্যার তৈরি সৃজনশীলতার পরিলক্ষিত হয় তাহলে আপনি এ পেশায় আসতে পারেন। কেননা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারা শুধু পুরাতন কোডিং দিয়ে সফটওয়্যার তৈরি করেন না। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নিত্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করতে হয়। আর এই নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য প্রয়োজন প্রয়োজন তা হলো সৃজনশীলতা।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

যেকোনো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে এসএসসি এবং এইচ এস সি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগের নিয়ে পড়তে হবে। সেই সাথে উভয়ই পরীক্ষার মোট জিপিএ ৯.৫ বা এর বেশি থাকতে হবে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বসা যাবে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৮.৫ বা ৮ পয়েন্ট হলেও ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা কি জানতে লেখাটি পরতে পারেন।

  • এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থাকতে হবে। ডিপ্লোমা হোল্ডারদের জন্য এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
  • এসএসসি ও এইচএসসিতে ৪র্থ বিষয়সহ নূন্যতম জিপিএ ৩.৫ হতে হবে।
  • এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে সর্বনিম্ন জিপিএ ৮ হতে হবে। যারা ডুয়েটে ভর্তি পরিক্ষা দিবেন তাদের ডিপ্লোমা রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.০০ থাকলে হবে।
  • বিভিন্ন ভার্সিটির সার্কুলারে আবেদন এর ভিন্নতা থাকে। যেমন- ঢাবি, বুয়েট, চুয়েট এগুলোতে আবেদন করার জন্য তুলনামূলক বেশী পয়েন্ট চেয়ে থাকে।
  • সবশেষে আপনাকে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকতে হবে।
  • প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে পড়ার জন্য খুব বেশী পয়েন্ট লাগে না।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট রয়েছে

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট এর সংক্ষিপ্ত রূপ SWE বা SE। তবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টটি বিভিন্ন নামে চালু রয়েছে। অর্থাৎ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টিকে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অনুষদ এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের অন্তর্ভুক্ত সাবজেক্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। যেমন - IIT, IT, ICE, ICT, SWE, SE ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা যেখানে SWE সাবজেক্টটি IICT (Institute of Information and Communication Technology) এর আওতাধীন একটি ডিপার্টমেন্ট। 

তাই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে আগে খোঁজ নিতে হবে কোন কোন ইউনিভার্সিটিতে এবং কোন ডিপার্টমেন্টের বা ইনস্টিটিউট এর আওতাধীন হিসেবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টিকে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি রয়েছে। যেমন-

  • ঢাকা ইউনিভার্সিটির 'ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (IIT) অধীনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
  • সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে IICT ইনস্টিটিউটের অধীনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টিকে রাখা হয়েছে।
  • ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
  • নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরো বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে তবে সেটা খুব সীমিত পরিসরে।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ইন্টার্নশিপ এর সুযোগ

ইন্টার্নশিপ

চার বছর মেয়াদী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিএসসি বা অনার্স প্রোগ্রামে চতুর্থ বর্ষের শুরুতে অর্থাৎ সপ্তম সেমিস্টারের শুরুতে ইন্টার্নশিপ দেয়া হয়। ইন্টার্নশিপ হলে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শিক্ষার্থী যে বিষয়ে লেখাপড়া করছে সে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে চাকরি দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং ও কাজে দক্ষ হতে পারে।

ইন্টারশীপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের জন্য ঢাকার বড় বড় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে যেমন- (Brain Station 23, Cefalo, Orion Informatics Ltd) ছয় মাসের জন্য ইন্টার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবে এবং সেখানে বেতনও দেওয়া হয়। তবে ইন্টার হিসেবে দেশের বাইরে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো তো নিয়োগের ব্যবস্থার রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ ভালো করলে অনেকের চাকরি পার্মানেন্ট হয়ে যায়।

ইন্টার্নশিপ এর একটি বিশেষ সুবিধা হলো আপনি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার আগে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। যে কোন কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করলে আপনার কাছে অভিজ্ঞতা চাওয়া হবে সুতরাং আপনি পড়ার মাঝে অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন। তাহলে আপনার সময় অনেক সময় অনেক কম লাগছে এবং কাজের সুযোগও বাড়ছে এই ইন্টার্নশিপ ব্যবস্থার মাধ্যমে।

তাই যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট পড়ার ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হয় সে বিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়া আপনার ক্যারিয়ার জন্য অনেক ভালো হবে।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উপায়

প্রথমে আপনাকে আপনার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে যে, আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবেন কিনা। আপনি যদি ঠিক করেন আপনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবেন তাহলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর কাজগুলো ভালোভাবে জেনে নিন।

পরবর্তী ধাপ হলো আপনার স্কুল পর্যায়ে থেকে আপনি বিভিন্ন কোডিং এ টিউটোরিয়াল দেখবেন কোডিং এর বই পড়বেন এবং অল্প অল্প করে কিছু শিখতে থাকবেন।

এরপর দেখবেন যে আপনি কোডিং করতে পারছেন কিনা, কোডিং করার মাধ্যমে আপনি সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারছেন কিনা, ধৈর্য ধরে কাজ করতে পারছেন কিনা, সফটওয়্যার বেসিক ম্যাথ গুলো আপনার দ্বারা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে কিনা। এ সকল বিষয় দেখে আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনি কোডিং এর সাথে মানিয়ে নিতে পারছেন। তাহলে ঠিক আছে কোডিং আপনার জন্য অর্থাৎ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আপনার জন্য।

এবার আপনাকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি তে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে এবং আপনার টোটাল জিপিএ পয়েন্ট ৯ কিংবা ১০ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

স্কুল কলেজ থেকে প্রোগ্রামিং অনুশীলন শুরু করতে হবে এবং প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে হবে এবং প্রোগ্রামিং এর বেসিক ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো শেখার চেষ্টা করতে হবে। যেমন C, C++ এর কিছুটা বেসিক তৈরি করে নিতে পারেন।

এরপরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট এ কোন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারেন। তবে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকবেন এবং সকল প্রতিষ্ঠানের সহজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিভিন্ন অনলাইন কোর্স এবং টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো শিখে নিতে হবে।

যারা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের পরামর্শ নিতে হবে যে আপনার করণীয় কি কি হতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে অনেক কাজে লাগবে। তাছাড়া বিভিন্ন অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ কি

  • বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যারও অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন করা।
  • সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করা।
  • মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে সফটওয়্যারকে প্রয়োজনীয় এডিট ও আপডেট এর মাধ্যমে সচল রাখা।
  • সফটওয়্যার ত্রুটির সমাধান করা।
  • নতুন ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা।
  • সফটওয়্যার ডেভেলপারদের কোডিং এর সুবিধার্থে বিভিন্ন সফটওয়্যার ডায়াগ্রাম এবং মডেল তৈরি করা।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্র

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কারণ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সফটওয়্যারের এর জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হচ্ছে।

  • নতুন সফটওয়্যার বানানোর জন্য যে কোনো কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারে। ভালোমানের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা google কিংবা মাইক্রোসফট এর মত বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারে।
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এর কাজের ক্ষেত্রে।
  • মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার কাজ।
  • সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কাজ।
  • গেম ডেভেলপমেন্টের কাজ।
  • বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে যেমন আপওয়ার্ক কিংবা ফাইবার।
  • সফটওয়্যারের সমস্যা নিয়ে নির্ণয় এবং তার সমাধানের কাজ।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও সফটওয়্যার ডেভলপারের মধ্যে পার্থক্য

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা সফটওয়্যার এর সিস্টেম ডিজাইন করে এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করে থাকেন। মূলত একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলো একটি সফটওয়্যার উদ্ভাবনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কারী।

অন্যদিকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর তৈরি সফটওয়্যার গুলোকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে উন্নত করে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হল সফটওয়্যার ডেভলপারদের কাজ।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কি কি হতে পারবেন

  • সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
  • মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার
  • আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার
  • ভিডিও গেমস ডেভেলপার
  • কম্পিউটার টেকনিশিয়ান 
  • ডাটাবেজ ইঞ্জিনিয়ার 
  • ওয়েব ডিজাইনার অথবা ওয়েব ডেভেলপার
  • আইটি প্রশিক্ষক
  • সিস্টেম বিশ্লেষক
  • কম্পিউটারের কারিগরি পরামর্শদাতা 
  • মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার 
  • সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের পড়ার সুযোগ সুবিধা

  • বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ থাকবে সারাবছর জুড়ে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, প্রজেক্ট শোকেসিং অথবা কোনো ধরনের হ্যাকাথন।
  • ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড সাবজেক্ট গুলোতে পড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো সফটওয়্যার কোম্পানির স্পেশালিস্টের ইনভাইট করা হয়ে থাকে।
  • অন্যান্য সেক্টরে থেকে দ্রুত জব পাওয়া যায়।

যাদের জন্য সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া উচিত হবে না

  • যাদের ম্যাথের বেসিক অনেক দুর্বল অথবা যারা ম্যাথ করতে পছন্দ করেন না।
  • যাদের ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে কোডিং করার ইচ্ছা বা ধৈর্য নাই।
  • যারা বেশিক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করতে পারেন না।

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ

সাধারণত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ নির্ভর করে শিক্ষার্থী কোন দেশে পড়ছে এবং কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ছে তার উপর ভিত্তি করে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ার খরচের তারতম্য অনেকটা বেশি। 

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া নিয়ে শেষ কথা

পরিশেষে, একটা কথা বলতে চাই আপনি যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে কোন বিষয় বিষয়ে পড়া লাগবে তা আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে চান এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে আপনার এখন থেকে কি কি করনীয় তা জানতে চান। তাহলে অবশ্যই একজন সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আপনার পরিচিত বা কোনো আত্মীয় যদি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকে তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন ধরনের ইউটিউব ভিডিও থেকেও ধারণা নিতে পারেন। আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে একটু হলেও ধারণা দিতে পেরেছি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কোন বিষয়ে পড়তে হবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: