কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় - বিস্তারিত জেনে নিন

হাসিবুর
লিখেছেন -

অনেকেই চান যে কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় ? আল কুরআন হলো আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী। হাদিসে পাকে এসেছে, যে ব্যক্তি কুরআন থেকে একটি হরফ পাঠ করবে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে। সুতরাং কুরআন এতটাই মর্যাদাময় এবং ফজিলত পূর্ণ যে এটি আপনি যত বেশি পাঠ করবেন তত বেশি নেকির ভাগীদার হবেন।

কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়
ছবিঃ কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়

অনেকেই জানতে চান কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়, কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়বে এ বিষয় নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি বলব হাদিসের ভাষ্যমতে ৫ ওয়াক্ত নামাযের পর যে সূরা পড়বেন।

সুতরাং কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়

কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় বা ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় অনেকেই জানতে চান। বিভিন্ন সহিহ হাদিস অনুযায়ী ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর যে সূরা পড়বেন তা হলো:

ফজরের পর সুরা ইয়াসিন

যদিও ফজরের নামাজের পর নির্দিষ্ট কোনো সুরা তেলাওয়াতের কথা কোন হাদিসে স্পষ্টভাবে আসে নি। তবুও ফজরের পরে যে আমলগুলো থাকে অর্থাৎ তাসবিহ তাহলিল বা জিকির-আজকার করা ইত্যাদির পাশাপাশি কুরআন মাজীদ থেকে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করাও ভালো।(alert-success)

জোহরের পর সুরা ফাতাহ

ফজর নামাজের মত জোহরের নামাজের পরও নির্দিষ্ট কোন সূরা তেলাওয়াতের কথা কোন হাদিসেই আসেনি। তবে আদিকাল যুগের বহু মুসলিম মনীষী জোহরের পর সূরা ফাতাহ তেলাওয়াত করতেন। তাই চাইলে জোহরের নামাজ সম্পন্ন করে কুরআন মাজিদ থেকে সুরা ফাতাহ পড়া যেতে পারে।(alert-passed)

আছরের পর সূরা নাবা

ফজর এবং যোহরের মত আসরের নামাজের পরও নির্দিষ্ট কোন সূরা তেলাওয়াতের কথা কোনো হাদিসেই আসেনি। তবে যদিও সুরা নাবার ফজিলত সম্পর্কে একটি দুর্বল হাদিস আছে তা হলো‘যে ব্যক্তি সুরা নাবা তেলাওয়াত করবে আল্লাহতায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানী পান করিয়ে তৃপ্ত করবেন।’-(তাফসিরে কাশশাফ : ৬/৩০৩) তাই চাইলেই আসরের পর সূরা নাবা পড়ায় যেতে পারে।(alert-success)

মাগরিবের পর সূরা ওয়াকিয়া

মাগরিবের নামাজের পর অথবা রাতের দিকে সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসিরকারক গণের কিতাবে এসেছে। তাছাড়া হজরত উসমান (রা.) বলেন, “আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করে থাকবে না।’ সুতরাং মাগরিবের নামাজের পর সূরা ওয়াকিয়া পড়া ভালো।(alert-success)

এশার পর সূরা মূলক

এশার নামাজের পর সুরা মুলক তেলাওয়াত সম্পর্কে সহীহ হাদিসে এসেছে। হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.) সুরা সাজদাহ ও সুরা মুলক তেলাওয়াত করা ছাড়া কখনোই ঘুমাতেন না।’এবং প্রতিরাত্রে যে ব্যক্তি সূরা মুলক তিলাওয়াত করে ঘুমাবেন তার কবরের আজাব মাফ হবে। সুতরাং এশার পর সূরা মুলক পড়া অনেক ফজিলতপূর্ণ।(alert-success)

আরো পড়ুনঃ কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন

ফজরের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়

কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় এতক্ষণে তা জেনে গেলেন। এবার অনেকেই আছেন জানেন না যে নামাজের ভিতরে কি সূরা দিয়ে নামাজ পড়তে হয়। বিশেষ করে অনেকেই জানতে চান ফজরের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়।

বাকি সব নামাজের মত ফজরের নামাজের সুন্নত ও ফরজ নামাজের মধ্যে শুরুতেই সুরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং তার সাথে কুরআনের যেকোনো একটি সূরা মিলাতে হবে। তবে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাঃ ফজরের সুন্নতে সূরা কাফিরুন এবং সুরা ইখলাস পড়তেন বলে একাধিক বর্ণনায় এমন তথ্য পাওয়া যায়।

এই সকল হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন, ফজরের সুন্নতের দুই রাকাতে সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস পড়া এক প্রকার সুন্নত। তবে আপনি চাইলে সুরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা দিয়ে ফজরের ফরজ নামাজ এবং সুন্নত নামাজ পড়তে পারবেন।

যোহরের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মূল নিয়ম হলো সূরা ফাতিহার সাথে কুরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করা কিংবা যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে পড়া। সূরা ফাতিহার পর বিশেষ কোনো সূরা পড়ে নামাজ আদায় করতে হবে এমনটি কোন হাদিসেই বলা হয়নি।

তবে আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও জোহরের নামাজে সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত যতগুলো সূরা আছে সেগুলো দিয়ে নামাজ পড়তেন।

আর বিশ্বনবীকে অনুকরণ করে সালাত আদায় করা একপ্রকার সুন্নত। তাই কেউ চাইলে সূরা হুজরাত থেকে বুরুজ পর্যন্ত যতগুলো সূরা আছে সেগুলো ফাতিহার সাথে মিলিয়ে যোহর নামাজ পড়তে পারে।

আরো পড়ুনঃ মহানবী সা এর বিড়ালের নাম কি | নবীজির বিড়ালের নাম

কোন নামাজে কোন সুরা পড়া সুন্নত

সুন্নত মানে হলো বিশ্বনবীকে অনুকরণ করা। তিনি যা করেছেন তাই করা। নামাজের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তরিকা অনুযায়ী নামাজ আদায় করেছেন এবং যে সূরাগুলো দিয়ে নামাজ আদায় করতেন সেই সূরাগুলো নামাজে পড়াই হল সুন্নত। কোন নামাজে কোন সুরা পড়া সুন্নত তা হলো:-

  • যখন সফর অবস্থায় থাকবেন তখন সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা মিলিয়ে পড়লেই চলবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধ্যকতা নেই কারণ বিশ্বনবী ও এমনটাই করতেন।
  • বিশ্বনবী ফজর ও জোহরের নামাজে সুরা হুজুরাত থেকে সুরা বুরুজ পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে পড়তেন। তাই ফজর ও জোহরের নামাজে সূরা হুজরত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত পড়া
  • আসর ও এশার নামাজে সুরা তারিক থেকে সুরা বায়্যিনাহ পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে কিছু অংশ করে পড়া। অথবা এক একটি করে সূরা ফাতিহার সাথে মিলিয়ে পড়া।
  • মাগরিবের নামাজে সূরা জিলজাল থেকে সুরা নাস পর্যন্ত সুরাগুলো থেকে মিলিয়ে পড়া।

ফরজ নামাজ ছাড়া সুন্নতসহ অন্য সকল নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা সুন্নত। সেগুলো হলো:-

  • নবী কারিম (সা.) ফজরের সুন্নত নামাজের প্রথম রাকাতে পড়তেন সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে পড়তেন সূরা ইখলাস।
  •  নবী কারীম (সা.) বিতর নামাজের প্রথম রাকাতে পড়তেন সুরা দুহা, দ্বিতীয় রাকাতে পড়তেন সুরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন।
  • জুমার দিন ফজরের নামাজে নবী (সা.) প্রায়ই সুরা আস-সাজদা এবং সুরা দাহর তিলাওয়াত করে পড়তেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ

কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয় সে বিষয় সম্পর্কে আপনারা ধারণা পেয়ে গেছেন। এখন অনেকেই জানতে চান যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ কি কি রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ গুলো হলো:-

  • ফজরের নামাজের তাসবিহ

হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। অর্থঃ-তিনি চিরজীবিত ও চিরস্থায়ী।

  • জোহরের নামাজের তাসবিহ

হুয়াল আলিয়্যুল আজিম। অর্থঃ- তিনি শ্রেষ্ঠতর অতি মহান।

  • আসরের নামাজের তাসবিহ

হুয়ার রাহমানুর রাহিম। অর্থঃ- তিনি কৃপাময় ও করুণানিধান

  • মাগরিবের নামাজের তাসবিহ

হুয়াল গফুরুর রহিম। অর্থঃ- তিনি মার্জনা কারী ও করুণাময়

  • এশার নামাজের তাসবিহ

হুয়াল লতীফুল খবীর। অর্থঃ- তিনি পাক ও সতর্কশীল।

এছাড়াও এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের পর বেশকিছু ঐচ্ছিক তসবীহ রয়েছে। যেগুলো পাঠ করার কথা হাদিসে এসেছে এবং যেগুলো পাঠ করা সুন্নত ও অনেক ফজিলতপূর্ণ। যেমন প্রত্যেক নামাজে ফরজ সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার এবং ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পড়া সুন্নত।

আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ঔষধের নাম

উপসংহার

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। কারণ আজকের আর্টিকেল আমি বলতে চেষ্টা করেছি কোন নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়। একজন মুসলমান হিসেবে অনেক নেক আমলের ভাগীদার এবং পরকালে সফলকাম হতে অবশ্যই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন। ইসলামের সকল আদেশ-নির্দেশ গুলো মেনে চলবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করুক আমিন।

ব্লগ ক্যাটাগরি: