চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা | চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

চিয়া সিড বর্তমানে খুবই পরিচিত একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে অবস্থান করছে। কেননা এর রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ উপাদান। আবার অনেকেই রয়েছেন চিয়া সিড কি, চিয়া সিড এর ব্যবহার কি এ সম্পর্কেও অবগত নন।

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের এই নিবন্ধনটিতে চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করব। তো পাঠক বন্ধুরা, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

কারণ আজকের আলোচনায় আমরা আপনাদেরকে জানাবো চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, চিয়া সিড খাওয়ার সময় এবং চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভালো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রত্যেকটি জিনিসের ভালো এবং মন্দ দুইটি দিক থেকে থাকে। সেটা হোক ব্যবহার করা যেকোন জিনিস অথবা খাওয়ার কোন জিনিস। তাই চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। তবে হ্যাঁ অপকারিতার থেকে উপকারিতা রয়েছে বেশি, যদি আপনি এটা সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খেয়ে থাকেন।

কেননা চিয়া সিড এ রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও উপযোগী।

তবে হ্যাঁ বোঝার সুবিধার্থে আমরা সিয়া সিড এর উপকারিতা এবং চিয়া সিড এর অপকারিতা অর্থাৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরছি। আশা করি আমাদের এই আলোচনা আপনাদের চিয়া সিড এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করবে।

আরো দেখুনঃ ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এর উপকারিতা

  • চিয়া সিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেক বেশি বৃদ্ধি করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • দেহের প্রোটিনের এর ঘাটতি পূরণ করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, এসিডিটির সমস্যা দূর করে।
  • হাড়ের ক্ষয় রোধ এবং হাড়ের সুস্থতায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • শরীরের ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ গুলো বের করে দেয় রক্তকে বিশুদ্ধ করে।
  • ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে এবং রক্তের চিনির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • নিয়মিত চিয়া সিড খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • চিয়া সিড থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং অস্থির শক্তিশালী করে।
  • নিয়মিত খাওয়ার ফলে পেট ভরা থাকে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা কে কমিয়ে দেয়।
  • ত্বকের এবং দেহকোষের থেকে বয়সের চাপ দূর করতে ভূমিকা রাখে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং যেকোনো ধরনের ব্যাথা নিরাময় করতে সক্ষম হয়।
  • চিয়া সিড খেলে চুল নখ ও ত্বক সুন্দর থাকে।
  • চিয়া সিড খেলে ভিটামিন সি এর অভাবজনিত সমস্যার সমাধান মিলে।
  • ভালো ঘুম হয় এবং রাতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • মানসিক চাপ কমে যায়।
  • হৃদপিণ্ড ভালো থাকে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি কমায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করেন।

চিয়া সিড এর অপকারিতা

চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক সেইসাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক, যদি আপনি সেটা সঠিক নিয়ম মেনে না খেতে পারেন। সত্যি বলতে পরিমিত পরিমাণের চিয়া সিড খেলে উপকারিতা পাওয়া যায় আর যদি এটা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তখনই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমাদের শরীরে প্রভাব বিস্তার করে।

তাই এ পর্যায়ে আমরা অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে কি কি সমস্যা হয় সেগুলোই তুলে ধরছিঃ

  • অতিরিক্ত চিয়া সিড হজমের সমস্যা করে, কারণ চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থেকে থাকে। তাই এটা সামান্য পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় আর অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত চিয়া সিডের উপকার পেতে। 
  • চিয়া সিড নিম্ন রক্তচাপ কমাতে পারে ঠিক একইভাবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তচাপের পরিমাণ বৃদ্ধিও করতে পারে। আর তাই যাদের রক্তচাপ জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরবর্তীতে এটি খাওয়া উচিত।
  • চিয়া সিড এলার্জিজনিত সমস্যাকে বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার আবির্ভাব ঘটায় যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া হয়।
  • এটি অতিরিক্ত খেলে রক্তকে পাতলা করে ফেলে এবং কিছু কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটায়।
  • চিয়া সিড বেশি পরিমাণে খেলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণমতো খাওয়া উচিত যদি এর উপকার গুলো পেতে চান।
  • পরিমিত চিয়া সিড ওজন কমায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়, যেটা একদমই মাত্রাতিরিক্ত।
  • এছাড়াও দম বন্ধ হবার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং কিডনির সমস্যা কে আরও বেশি বাড়িয়ে দেয়।

তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাবার এবং পরিমিত পরিমাণে সঠিক নিয়ম মেনে চিয়া সিড গ্রহণ করবার।

আরো দেখুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ঔষধের নাম

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিট মূলত বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। আবার শুধুমাত্র কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। এ পর্যায়ে আমরা চিয়া সিড খাওয়ার কিছু নিয়ম আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। সেগুলো হলোঃ

  • সালাদ অথবা ফলমূলের সাথে সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড খেতে পারেন। এক্ষেত্রে তৈরিকৃত সালাদ অথবা কেটে রাখা ফলমূলের ওপর সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড সিটিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। এমনকি আপনি রান্নাঘারা খাবারের মধ্যেও এই প্রক্রিয়া চিয়া সিড দিয়ে খেতে পারেন অল্প সল্প।
  • যারা নিয়মিত জুস খান অর্থাৎ ফলের জুস বাড়িতেই বানিয়ে খান তারা মূলত সেই জুসে সামান্য পরিমাণ চিয়া সিড মিক্স করেও খেতে পারেন। এমনকি লেবুর সর্বদেব মিশিয়ে নেওয়া যাবে।
  • সুপ খাওয়ার সময় সুখের সঙ্গে মিশিয়েও চিয়া সিড খাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলে এই প্রক্রিয়াও গ্রহণ করতে পারেন।
  • যারা বাড়িতে বিস্কুট পাউরুটি, কেক পুডিং ইত্যাদি এ জাতীয় খাবার তৈরি করেন তারা তৈরিকৃত খাবারের সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড অ্যাড করতে পারেন।

তবে হ্যাঁ সবচেয়ে ভালো এক থেকে দুই চামচ চিয়া সিড হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া। তবে আপনি চাইলে আমাদের উল্লেখিত যে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে খেতে পারেন এই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য পণ্যটি। এবার আসুন জেনে নেই চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময়।

আরো দেখুনঃ কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো

চিয়া সিড খাওয়ার সময়

চিয়া সিড খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকাল এবং রাত। মূলত সকালে খালি পেটে এবং রাতে খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে চিয়া সিড খেলে সর্বোত্তম উপকারিতা পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ পরিমাণের কথা যদি বলেন তাহলে এক থেকে দুই চা চামচ সিয়া সীট কুসুম গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খাবেন।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আপনি চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম এবং চিয়া সিড খাওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় সেইসাথে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

তবে হ্যাঁ আপনি যদি চিয়া সিড এর কাজ এবং এর পুষ্টি উপাদান ও সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এই সম্পর্কিত আরেকটি আর্টিকেল করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারো নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনা পর্বে আপনাদের সাথে দেখা হবে কথা হবে। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: