অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

বর্তমান সময়ে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এর কারনে আমরা নানা ধরনের রোগ ব্যাধির সম্মুখীন হয়ে থাকি। এই জটিল রোগগুলোর কারণে অনেক সময় নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য অপারেশনের সম্মুখীন হতে হয় এবং অপারেশনের পরে আমরা নানা ধরনের জটিলতায় ভুগি। তার মধ্যে অন্যতম হলো অপারেশনের পরে ক্ষতস্থানে ইনফেকশন।

আমাদের অনেকেরই জানা নেই অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয় কি? আমরা আমাদের আজকের পোস্টে আপনাদের জানাতে চলেছি অপারেশনের পরে ইনফেকশন কেন হয়, অপারেশনের পরে ইনফেকশন এর লক্ষণ, অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয়। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

অপারেশনের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ

অপারেশনের পর ইনফেকশন হওয়া নতুন কিছু নয়। অপারেশনের পরে ইনফেকশন হলে ক্ষতস্থান সহজে শুকাবে না। অপারেশনের পরে ক্ষতস্থানে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হবে। তাই অপারেশনের পরে ইনফেকশন যাতে না হয় সেই দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। কিন্তু তার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে অপারেশনের পরে ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলি কি কি। কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে আমরা বুঝতে পারবো ইনফেকশন হয়েছে কিনা? চলুন জেনে নেওয়া যাক অপারেশনের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ -

  • অপারেশনের পর ক্ষতস্থান ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ক্ষতস্থান থেকে পুজ বা র*ক্ত বের হতে পারে।
  • পুজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে বা পুজ সবুজ রং এর হতে পারে।
  • ইনফেকশনের মাত্রা তীব্র হলে বমি বমি ভাব লাগতে পারে।
  • ক্ষতস্থানের ব্যথা বাড়তে পারে।
  • শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
  • ক্ষতস্থানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।
  • ক্ষতস্থান সহজে শুকায় না।
  • ক্ষতস্থান ছাড়াও এর আশেপাশে ফাংগাল এর আক্রমণ হতে পারে।
  • ক্ষতস্থান জ্বালাপোড়া করতে পারে।

উপরোক্ত লক্ষণ গুলি অপারেশন করার পর দেখতে পারলে বুঝে নিবেন আপনার ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে

অপারেশনের পর ইনফেকশন এর কারণ

অপারেশনের পরে আমাদের নিজেদের সামান্য কিছু কিছু ভুল বা মিসটেক এর কারণে ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হতে পারে। আমাদের সকলেরই উচিত ইনফেকশন না হওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। ক্ষতস্থানের সঠিক পরিচর্যা না করলে ক্ষতস্থানে জীবাণুপ্রবেশ করতে পারে এর ফলে ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়াও ক্ষতের প্রতি অবহেলা ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম কারণ। চলুন ক্ষতস্থানে ইনফেকশন এর সম্ভাব্য কারণ জেনে নেওয়া যাক।

নিজে নিজে ময়লা অপসারণ করা: ক্ষতস্থানে ছোট ছোট ময়লার কনা প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু নিজে নিজেই ক্ষতস্থান থেকে ময়লা অপসারণ করলে সংক্রমনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি দেখেন যে নিজে ময়লা অপসারণ করার ফলে ক্ষতস্থান বড় হয়ে যাচ্ছে তাহলে নিজে অপসারণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তাররা ড্রেসিং এর মাধ্যমে ময়লা অপসারণ করবে এবং আপনার ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

সাবান দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা: আপনি হয়তো ভাবতে পারেন ক্ষতস্থানে সাবান ব্যবহার করলে ক্ষতস্থান জীবাণু মুক্ত হবে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে ক্ষতস্থানে সাবান ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে হাত ধোয়া সাবান ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি ক্ষত নিরাময়ের চেয়ে সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ক্ষতস্থানে সাবান ব্যবহার করার কথা ভাববেন না।

ক্ষতস্থান খোলা রাখা: পরিষ্কার করার পর ক্ষতস্থান খোলা রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে ক্ষতস্থান খোলা রাখলে ক্ষতস্থানে বাতাস ঢুকবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। তাহলে আপনার ধারণা ভুল। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্ষতস্থান ঢেকে রাখলে ক্ষতস্থানের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। ক্ষতস্থান আদ্র রাখলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। ক্ষতস্থানকে আদ্র রাখতে আপনি ভেজলিন জেলি ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ক্রিম

অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

অপারেশনের পরে ইনফেকশন হলে আমরা সকলেই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই। কারণ অপারেশনের পরে ইনফেকশন হলে তা পচে যেতে পারে এবং ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে। অনেক সময় ক্ষতস্থান কেটে বাদ দিতে হতে পারে। তাই ক্ষতস্থানে যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে। কাটা জায়গায় ইনফেকশন হলে করণীয় কি? চলুন জেনে নেই।

যদি ইনফেকশন সামান্য হয়, তবে ক্ষতটি প্রথমে পরিষ্কার জল এবং অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে ৪৮ ঘন্টার জন্য ঢেকে রাখতে হবে। তারপর অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে হবে। ইনফেকশন এর মাত্রা বেশি হলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার আগে হাসপাতালের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না তা দেখে নেওয়া জরুরি।

অপারেশনের পর ড্রেসিং

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অস্ত্রোপচার চিকিৎসায় ড্রেসিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিভিন্ন কাটা, পোড়া, ঘা, ক্ষত বা অপারেশনের পর ড্রেসিং করা হয়। ড্রেসিং উপকরণ গুলি হয় জীবাণুমুক্ত। ড্রেসিং উপকরণ গুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং একটি বিশেষ উপায়ে সংরক্ষিত করা হয়। ড্রেসিং উপকরণগুলি বিশেষ উপায়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়।

যেমন: অটোক্লেভিং, লাইসল, ফরমালডিহাইড, গ্লুটারালডিহাইড ইত্যাদি যা বাইরের কোনো দোকান বা নিম্নমানের ক্লিনিকে কখনই সম্ভব নয়। তাই অপারেশন এরপরে আমাদের ভালো জায়গা থেকে ড্রেসিং করতে হবে। কারণ ড্রেসিং অপারেশনের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট।

অপারেশনের পর লেবু খেলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়

অপারেশন এর পরে আমাদের সকলের একটি চিন্তা থাকে সেটি হলো ক্ষতস্থান কত দ্রুত শুকিয়ে যাবে। ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। যেমন ক্ষতস্থান ঢেকে রাখি। স্থানের আদ্রতা বজায় রাখি।

কিন্তু ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম উপাদান হচ্ছে লেবু। কারণ আমরা সকলেই জানি লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি ক্ষত নিরাময়ে খুব দ্রুত কাজ করে। তাই অপারেশনের পরে আমাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন লেবু, কমলা লেবু, মাল্টা ইত্যাদি খেতে হবে। ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য লেবুর ভূমিকা অপরিহার্য।

আরো পড়ুনঃ পাইলস অপারেশন খরচ কত টাকা লাগে - পাইলস অপারেশন খরচ কত

অপারেশনের পর জ্বর হলে করণীয়

অপারেশন আমাদের শরীরের জন্য অনেক ধকল এর একটি কাজ। তাই অপারেশনের পর সামান্য জ্বর আসা স্বাভাবিক। অপারেশনের পর জ্বর হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর আসলে সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। যদি জ্বর এর মাত্রা যদি অনেক বেশি হয়। এবং এর ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। তাহলে সাথে সাথেই নিকটস্থ ক্লিনিকে ভর্তি করতে হবে।

সিজার ইনফেকশন হলে করণীয়

সিজার একটি নারীর জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। সিজারের মাধ্যমে একজন নারী নতুন মা হয়ে থাকে। এই সময়ে সিজারের জায়গায় ইনফেকশন হলে মা এবং শিশু দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। কেননা মা সুস্থ না থাকলে সন্তানের সঠিক পরিচর্যা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সিজারের হলে কাটা জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শুকনো রাখতে হবে, কাটা জায়গায় ময়লা জমতে দেওয়া যাবে না, যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

হার্নিয়া অপারেশনের পর করণীয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হার্নিয়া অপারেশনের পর দুই দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি চলে যেতে পারেন। তবে ক্ষতস্থান ঠিক হতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তাই ফানি অপারেশনের পর এক থেকে দুই সপ্তাহ পরেই হালকা কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে কমপক্ষে চার সপ্তাহের আগে ভারী কাজ করা উচিত নয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্নঃ অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয়?

উত্তরঃ পারেশনের পরে ইনফেকশন হলে করণীয় হলো সঠিক সময়ের ড্রেসিং করা, এবং ক্ষতস্থান ঢেকে রাখা, যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করা।

প্রশ্নঃ অপারেশনের পর সংক্রমণের চিকিৎসার করণীয়?

উত্তরঃ বেশিরভাগ ক্ষত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। কখনও কখনও, সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য আপনাকে অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে।

প্রশ্নঃ সংক্রামিত ক্ষতের চিকিৎসা কিভাবে করবেন?

উত্তরঃ অ্যান্টিসেপটিক যেমন হাইড্রোজেন পারক্সাইড প্রথম দিনে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে একবারের বেশি নয়। ক্ষত পরিষ্কার করার পরে, এটি শুকিয়ে নিন এবং ক্ষতটির উপর নতুন ত্বক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত একটি অ্যান্টিবায়োটিক মলম, যেমন নিওস্পোরিন এবং একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিন।

অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয় নিয়ে সর্বশেষ

অপারেশনের পর করণীয় কি এই নিয়ে আমরা সকলেই ভয় পেয়ে থাকি। কিন্তু আর ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা অপারেশন এরপরে ইনফেকশন নিয়ে আমাদের সকলেরই একটি ভুল ধারণা থাকে। আজকের ব্লগে আমরা আপনাদেরকে অপারেশনের পর ইনফেকশন হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি। আশা করি আমাদের আলোচনা আপনাদের কাজে লাগবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: