কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় - শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে কিডনি। মেরুদন্ডী প্রাণীদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা রেচনতন্ত্রের প্রধান অংশ। এর প্রধান কাজ হচ্ছে রক্তকে ছেঁকে বর্জ্য পদার্থ, যথা মূত্র উৎপাদন করা ও ইউরিয়া পৃথকীকরণ করা। 

দিনে ৪০ বার বৃক্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় মানুষের শরীরের সব রক্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ কিডনির প্রতি অবশ্যই আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত এবং মানব দেহের কিডনি অথবা অন্যান্য অঙ্গ সম্বন্ধে সাময়িক কিছু ধারনা থাকা উচিত।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দিন দিন মানুষের শরীরের মধ্যে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এটা বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক জটিলতার দেখা দেয়, তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আসুন এখন জেনে নেয়া যাক, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

মানবদেহের কিডনি যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনিতে রোগের সমস্যা দেখা দিলে ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন পড়ে। কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা হল, স্বাভাবিকভাবে নারীদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকে 0.5 mg/dl থেকে 1.1 mg/dl এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে থাকে 0.6mg/dl থেকে 1.2 mg/dl। কিডনির পয়েন্ট যদি এই মাত্রাগুলো থেকে বেড়ে যায় তবেই ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে শরীরে।

কিডনি থেকে সমস্যাকে দূরে রাখতে হলে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি থাকলে কিডনিতে ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ান। কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে, সুস্থ জীবনযাপনের আশা করা যায়। কিডনির পয়েন্ট দেখতে কয়েকদিন পর পরই ডায়াবেটিস চেক করুন।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

সাধারণত সুস্থ মানুষের কিডনির স্বাভাবিক পরিসীমা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য 0.7 থেকে 1.4 mg/dl এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য 0.6 থেকে 1.1 mg/dl থাকা ভালো। যাদের একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা 1.8 mg/dl থাকা স্বাভাবিক। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা রক্তে 0.3 mg/dl থেকে 0.7 mg/dl থাকা ভালো।

কিডনির পয়েন্ট এগুলোর মধ্যে থাকলেই বুঝতে পারবেন কিডনি ভালো এবং সুস্থ রয়েছে। কিন্তু তারপরও ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রায় অনেকটা পরিবর্তনশীল বিষয় রয়েছে এবং কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এটা জেনে রাখাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে 5 mg/dl বা তার চেয়েও বেশি এবং শিশুদের মধ্যে 2 mg/dl বা তার চেয়েও বেশি হয় তাহলে রক্ত থেকে বর্জ্য অপসারণের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্য নিতে হয়। মানবদেহের রক্তে ক্ষতিকর বর্জ্য জমতে থাকলে, মানুষ ধীরে ধীরে কোমায় চলে যেতে পারেন এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।

কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা ভালো একটা বিকল্প পদ্ধতি। একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের এবং বয়স্ক রোগীদের ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী কন্টিনিয়াস এম্বু লেটরি ডায়ালাইসিস (pd) করাটা উত্তম।

আরো পড়ুনঃ প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে

কিডনি যখন অতিমাত্রায় বিকল হয়ে পড়ে, তখন প্রয়োজন পড়ে ডায়ালাইসিসের। ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে অনেকে জানতে চান আসলে ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে বা লাগবে?

সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ডায়ালাইসিস এর জন্য ১,৫০০ থেকে ২,০০০ বা তার একটু কমবেশি হতে পারে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস এর ফি অনেক বেশি। অনেক বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ফি প্রায় ৮ হাজার থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ সহ বেশ মোটা অংক এসে দাঁড়ায়।

ডায়ালাইসিস ছাড়া কিডনির চিকিৎসা

ডায়ালাইসিস ছাড়াও হয়েছে কিডনির সুচিকিৎসা। গাছ গাছালি থেকে আবিষ্কৃত করা হয় ঔষধ, যার নাম নেফ্রোজেন এটি একটি ভেষজ ঔষধ। এই ঔষধের পেটেন্ট রাইট অর্জন করা হয় ২০০৩ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট অধিদপ্তর থেকে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই ঔষধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এই ঔষধের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস ছাড়া কিডনির চিকিৎসা করে থাকেন সালাউদ্দিন। যিনি অ্যালোপ্যাথিকের ওপর ৪ বছরের ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন। তাছাড়াও রয়েছে ডায়ালাইসিস এর বিকল্প পদ্ধতি, যা হচ্ছে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট। ডায়ালাইসিস এর বিকল্পে এটাই সবচেয়ে ভালো বিকল্প পদ্ধতি।

কিডনির রোগী কত দিন বাঁচে

কিডনি রোগীদের মধ্যে প্রায় সবাই কোনো না কোনো ভালো ধরনের চিকিৎসা নিয়ে বেশ ভালোভাবেই বেঁচে থাকতে পারেন। এই রোগের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের এই রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা দিয়ে তাদের রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়। এবং তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের রোগী যাদের অবস্থা খারাপ তাদের কেও সুচিকিৎসা দিলে বেশ কয়েক বছর ভালোভাবে দিন অতিবাহিত করতে পারেন।

কিন্তু পঞ্চম স্তরের কিছু রোগী যারা খুবই খারাপ অবস্থায় তাদের জন্য সপ্তাহে দুইবার (আজীবন) ডায়ালাইসিস এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও পঞ্চম স্তরের রোগীদের জন্য বেঁচে থাকার আশঙ্কা অনেকাংশ কম। তাই অবশ্যই আমাদেরকে কিডনির রোগ যাতে না হয় সেই সচেতনতায় থাকতে হবে। কখনো প্রস্রাব চেপে রাখবেন না, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন, ভেজাল ও কীটনাশক যুক্ত বিষাক্ত খাবার থেকে বিরত থাকবেন।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ

ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয়?

ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি অনেকাংশ ভালো হয়। কিডনি রোগের অসংখ্য রোগী ডায়ালাইসিস এর দ্বারা অনেক উপকৃত হয়। আপনার শরীরে কিডনি যখন ব্যর্থ হয়, শরীরের প্রয়োজনীয়তার যত্ন নিতে অক্ষম হয়ে যায়, তখনই কিডনির ভালোর জন্য ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন পড়ে। ডায়ালাইসিস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম, সোডিয়াম এগুলোর মত নির্দিষ্ট ইলেক্ট্রোলাইটের যথাযথ স্তর বজায় রাখতে নিশ্চিত করে।

কিডনি রোগীর শরীর থেকে বর্জ্য, অতিরিক্ত তরল ও লবন অপসারণ করে। একজন সুস্থ মানুষের দুইটি কিডনি প্রতিদিন দেড় হাজার লিটার রক্ত (রক্ত ২৪ ঘণ্টা কিডনির ভেতর দিয়ে বারবার যায় বলে রক্তের মোট পরিমাণ এত বেশি) পরিশোধন এর কাজ করে। কিডনি যদি মানুষের শরীরের রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে না দিত, তবে কখনোই মানুষ বাঁচতে পারত না।

যখন কিডনি এই রক্ত পরিশোধনের কাজ করতে না পারে, তখন ক্ষতিকর বর্জ্য রক্তে জমা হতে থাকে। দিন দিন এই পদার্থের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তবে রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন এমনকি মৃত্যুবরণও করতে পারেন। তাই কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবশ্যই ডায়ালাইসিস অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ পাইলস অপারেশন খরচ কত টাকা লাগে

কিডনিকে সুস্থ রাখতে কী কী করতে হবে

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সচেতনতা ও শরীর চর্চার মাধ্যমে কিডনি রোগের ৬০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। মানবদেহে ছাঁকনির কাজ করে কিডনি, রক্ত থেকে বজ্রকে ছেঁকে এনে প্রস্রাবের মাধ্যমে তা বের করে। তাছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, লোহিত রক্তকণিকা তৈরীতে অনেকাংশ সাহায্য করে। শরীরের সব হারকে সুস্থ রাখে, কিডনিকে সুস্থ রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • পরিমিত পানি পান করুন
  • ধূমপান বন্ধ করুন
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন
  • উচ্চ ঝুঁকি থাকাকালীন নিয়মিত কিডনি পরিক্ষা করুন
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যাথানাশক ঔষধ থেকে বিরত থাকুন

কিডনিকে সুস্থ রাখতে খাদ্যাভাসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের মধ্যে পরিমিত লবন ব্যবহার করবেন, কোনো ভাবেই কাঁচা লবন খাওয়া যাবে না। তাজা ফল ও সবুজ শাকসবজি বেশি পরিমাণে খেতে হবে। পরিমিত পানি পান করবেন এতে ইউরিয়া, সোডিয়াম ও বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করতে কিডনিকে সাহায্য করে। দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত এই সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললেই আমরা কিডনির সমস্যা থেকে দূরে থাকবো।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয়

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় নিয়ে সর্বশেষ

কিডনি জনিত কোন সমস্যার লক্ষণ দেখলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করে নেন। কিডনি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাটি করতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যায় এবং কিছু উপায়ও ফলো করতে পারেন, যেমন: যারা প্রতিদিন বসে থাকার কাজ করেন তারা অন্তত দিনে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করবেন।

পুরো একটা দিন ফিট থাকতে হলে সকালে সকালে আধাঘন্টা জোরে হাঁটুন। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, চিনি, ভাজাপোড়া, ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। স্বাস্থ্য সচেতন থাকুন, তবেই সুস্থ থাকবেন, কিডনি নানারকম সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। যেকোন রোগ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি সময় মত পরিচালনা না করেন, তাহলে আপনার জীবনে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: